ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাস হল ইন্দোনেশিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান, প্রাক্রিতিক সম্পদ, মানব অভিবাসন, যুদ্ধ ও বিজয় এবং বাণিজ্য, অর্থনীতি ও রাজনীতি বিষয়ক আলোচনা। ইন্দোনেশিয়া ১৭,০০০ থেকে ১৮,০০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত দ্বীপবহুল রাষ্ট্র, যার ৮,৮৪৪ নামকরণ করা হয়েছে এবং ৯২২টিতে স্থায়ী জনবসতি রয়েছে। দেশটির কৌশলগত সামুদ্রিক অবস্থান আন্ত-দ্বীপ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারে ভূমিকা পালন করছে, ফলে বাণিজ্য ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসের রূপায়নে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছে। ইন্দোনেশিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অভিবাসিত হয়ে লোকজন বসবাস করছে, ফলে এখানে সংস্কৃতি, জনগোষ্ঠী, ও ভাষার বৈচিত্র দেখা যায়। দ্বীপবহুল ভূমি ও জলবায়ু কৃষি ও বাণিজ্য বিস্তারে ও রাষ্ট্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে।

প্রাক-ইতিহাস[সম্পাদনা]

জাভা মানব খুলির রেপ্লিকা, মধ্য জাভার সাঙ্গিরানে আবিষ্কৃত

২০০৭ সালে সাঙ্গিরানে প্রাপ্ত দুটি হাড় বিশ্লেষণে পাওয়া যায় যে তা ক্লামশেল সরঞ্জাম দিয়ে ১.৫ থেকে ১.৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে নির্মিত হয়েছিল। এটি ইন্দোনেশিয়ায় শুরুর সময়ের মানুষের বসবাসের প্রাচীনতম প্রমাণ। ১৮৯১ সালে ওলন্দাজ কঙ্কালবিদ ইউজিন দ্যুবোয়া ত্রিনিলে হোমো ইরেক্টাসের ফসিলের অবশিষ্টাংশ, "জাভা মানব" নামে পরিচিত, আবিষ্কার করেন, যা কমপক্ষে ৭০০,০০০ বছর পুরনো, যে সময়ে মানুষের প্রাচীনতম পূর্বপুরুষের সন্ধান পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে ১৯৩০-এর দশকে নৃতাত্ত্বিক গুস্তাভ হাইনরিখ রাফ ফন ক্যোনিগসভাল্ড সাঙ্গিরানেই একই সময়ের হোমো ইরেক্টাস ফসিল আবিষ্কার করেন। তিনি একই সময়ে এনগানডঙে আরও আধুনিক সরঞ্জামসহ ফসিল আবিষ্কার করেন। ২০১১ সালে পুনরায় সময়কাল নির্ধারণ করলে তাতে বলা হয় ফসিলগুলো ৫৫০,০০০ থেকে ১৪৩,০০০ বছর পুরনো।[১][২] ১৯৭৭ সালে সামবুংমাকানে আরেকটি হোমো ইরেক্টাস মাথার খুলি আবিষ্কৃত হয়।[৩]

হিন্দু-বৌদ্ধ সভ্যতা[সম্পাদনা]

প্রারম্ভিক রাজ্যসমূহ[সম্পাদনা]

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলসমূহের মত ইন্দোনেশিয়ায় ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাব দেখা যায়। দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত পল্লব, গুপ্ত, পাল, ও চোল সাম্রাজ্যের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সংস্কৃতি সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে।[৪]

অসংখ্য হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজ্যের বিস্তার ও পতন দেখা যায়। কুতাই, পূর্ব কালিমান্তান ও মহাকাম নদীর পাশে তিনটি বেদি পাওয়া যায়, যা চতুর্থ শতাব্দীর শুরুর সময়ের বলে ধারণা করা হয়। বেদিগুলোতে ভারতে পল্লব লিপিতে খোদাই করে লেখা রয়েছে, "ব্রাহ্মণ পুরোহিতকে দেওয়া উপহার"।

মেদাং[সম্পাদনা]

মাতারামের সঞ্জয় রাজবংশ সময়কালে নির্মিত প্রামবানান, জাভা

মেদাং রাজ্য বা পূর্বে মাতারাম রাজ্য নামে পরিচিত ছিল ভারতীয়করণকৃত রাজ্য, যার কেন্দ্র ছিল মধ্য জাভা ও বর্তমান সময়ের যোগ্যকর্তা। অষ্টম থেকে দশম শতাব্দীতে শৈলেন্দ্র রাজবংশ ও পরে সঞ্জয় রাজবংশ রাজ্যটি শাসন করত। এম্পু সিন্দক রাজ্যটির কেন্দ্র মধ্য জাভা থেকে সরিয়ে পূর্ব জাভায় নিয়ে যান। মেরাপি পর্বতের আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে এবং শ্রী বিজয় সাম্রাজ্যের শৈলেন্দ্রনের রাজনৈতিক প্রভাবে এই স্থানান্তর ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়।

শ্রী বিজয় সাম্রাজ্য[সম্পাদনা]

শ্রী বিজয় ছিল সুমাত্রায় বসবাসরত আধিবাসী মালয় রাজ্য, যারা সামুদ্রিক দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেছিল। সপ্তম শতাব্দী থেকে ক্ষমতাধর শ্রীবিজয় নৌ রাজ্য বিস্তৃতি লাভ করে এবং এর ফলে বাণিজ্য ও হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব বেড়ে যায়।[৫][৬]

সিংহসারি ও মজাপহিত[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিক প্রমাণের অপর্যাপ্ততা সত্ত্বেও জানা যায় যে, মজাপহিত ছিল ইন্দোনেশিয়ার প্রাক-ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী। ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষ দিকে পূর্ব জাভায় হিন্দু মজাপহিত রাজ্যটি প্রতিষ্ঠিত হয়। গাজা মাদার শাসনকালকে ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসের স্বর্ণযুগ বলে অভিহিত করা হয়।[৭] এই সময়ে ১২৯৩ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্যটি দক্ষিণ মালয় উপদ্বীপ, বর্নেও, সুমাত্রা ও বালি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।[৮]

ইসলামি রাষ্ট্রসমূহ[সম্পাদনা]

ইসলামের প্রসার[সম্পাদনা]

ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জ প্রথম দিকের উল্লেখ রয়েছে আব্বাসীয় খিলাফত সময়কালে। এতে বলা হয় ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জ মুসলমান নাবিকদের কাছে বিশেষ করে এখানে প্রাপ্ত দামী মসলাজাতীয় পণ্য, যেমন জায়ফল, লবঙ্গ, গালানগল ও অন্যান্য মসলার জন্য বিখ্যাত ছিল।[৯]

আচেহ্ সালতানাত[সম্পাদনা]

মাতারাম সালতানাত[সম্পাদনা]

মাতারাম সুলতানদের সমাধি, যা পাসারিন মাতারাম নামে পরিচিত, কোতা গেদে, যোগিয়াকার্তা।

মাতারাম সালতানাত দেমাক বিনতরো ও পাজাং সালতানাতের পর জাভায় শাসনকারী তৃতীয় সালতানাত। জাভানীয় রেকর্ড অনুসারে, কিয়াই গেধে পামানাহান ১৫৭০-এর দশকে পূর্বের পাজাং রাজ্যের (বর্তমান সময়ের সুরাকাত্রা)[১০] সহায়তায় মাতারাম অঞ্চলের শাসক হন। পামানাহানকে তার সিংহাসনে আরোহণের পর প্রায়ই কিয়াই গেধে মাতারাম বলে অভিহিত করা হতো।

পামানাহানের পুত্র পানেমবাহান সেনাপতি ইঙ্গালাগা ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তার পিতার স্থলাভিষিক্ত হন। সেনাপতির অধীনে মাতারামের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সামরিক অভিযানের ফলে রাজ্যটি আরও বিস্তৃতি লাভ করে। তার সিংহাসন আরোহণের কিছুদিন পরেই তিনি তার পিতার পৃষ্ঠপোষক রাজ্য পাজাং জয় করেন।

বানতেন সালতানাত[সম্পাদনা]

১৫২৪-২৫ খ্রিষ্টাব্দে কিরেবনের সুনান গুনাগ জাতি ও দেমাক সালতানাতের সেনাবাহিনী মিলিতভাবে সুন্দা রাজ্যের নিকট থেকে বানতেন বন্দর দখল করে এবং বানতেন সালতানাত প্রতিষ্ঠা করে। মুসলমান ধর্মপ্রচারকগণ ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন তারাও এতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৫২৬ থেকে ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তারা শাসন করে এবং সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে এই সালতানাত তাদের ক্ষমতার শিখরে আরোহণ করে। এই সময়কালের বেশ কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহাসিক নথি পাওয়া যায়।[১১]

ঔপনিবেশিক আমল[সম্পাদনা]

পর্তুগিজদের আগমন[সম্পাদনা]

পর্তুগীজরা প্রথম আসে ১৫১১ সালে, তাদের আগমন ঘটে দুটি উদ্দেশ্যেকে কেন্দ্র করে। একটি হচ্ছে মসলার জন্য,অন্যটি ধর্ম প্রচারের জন্য।

ওলন্দাজদের উপনিবেশায়ন[সম্পাদনা]

জাপানের দখলদারিত্ব[সম্পাদনা]

স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাস[সম্পাদনা]

নেদারল্যান্ডসের নিকট হতে স্বাধীনতা[সম্পাদনা]

ডাচদের প্রথম আগমন ঘটে ১৫৯৬ সালে। ৩৫০ বছর ধরে তারা ইন্দোনেশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করে। ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তাদের আধিপত্য কমে যা।

সুকর্ণের রাষ্ট্রপতিত্ব (১৯৪৫-১৯৬৭)[সম্পাদনা]

সুহার্তোর শাসনামল (১৯৬৭-১৯৯৮)[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Finding showing human ancestor older than previously thought offers new insights into evolution"টেরা ডেইলি। ৫ জুলাই ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১৮ 
  2. পোপ, জি. জি. (১৯৮৮)। "Recent advances in far eastern paleoanthropology"। অ্যানুয়াল রিভিউ অব অ্যানথ্রোপলজি। ১৭ (১): 43–77. doi:10.1146/annurev.an.17.100188.000355. cited in Whitten, Soeriaatmadja & Suraya (১৯৯৬), পৃ. ৩০৯–৩১২।
  3. ডেলসন, এরিক; হারবাটি, ক্যাটরিনা; রেড্ডি, ডেভিড; মার্কাস, লেসলি এফ.; মোব্রি, কেনেথ; সয়ার, জি. জে.; জ্যাকব, তেউকু; মার্কেজ, স্যামুয়েল (২০০১)। "The Sambungmacan 3 Homo erectus Calvaria: A Comparative Morphometric and Morphological Analysis" (পিডিএফ)দি এনাটোমিক্যাল রেকর্ড২৬২: ৩৮০–৩৯৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১৮ 
  4. বর্মা, পবন কে.। "Becoming Indian: The Unfinished Revolution of Culture and Identity"। পৃ. ১২৫।
  5. টেলর ২০০৩, পৃ. ২২-২৬।
  6. রিকলেফস ১৯৯৩, পৃ. ৩।
  7. লুইস, পিটার (১৯৮২)। "The next great empire"। ফিউচারস। ১৪ (১): ৪৭–৬১। doi:10.1016/0016-3287(82)90071-4.
  8. ক্রিব, রবার্ট (২০১৩)। Historical Atlas of Indonesia (ইংরেজি ভাষায়)। রটলেজ। আইএসবিএন 9781136780578। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৮ 
  9. "Geographic Spice Index"গেরনট ক্যাটজার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৮ 
  10. "Mataram | historical kingdom, Indonesia"এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১৮ 
  11. গিলো, ক্লোদ (১৯৯০)। The Sultanate of Banten। গ্রামেদিয়া বুক পাবলিশিং ডিভিশন। পৃ. ১৭।

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • রিকফেলস, এম. সি. (১৯৯৩)। A History of Modern Indonesia Since c. 1300 (২য় সংস্করণ)। লন্ডন: ম্যাকমিলান। আইএসবিএন 978-0-333-57689-2 
  • টেলর, জিন গেলমান (২০০৩)। Indonesia। নিউ হেভেন ও লন্ডন: ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস। আইএসবিএন 0-300-10518-5