পূর্ব তিমুরের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পূর্ব তিমুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ তিমোর-লেস্ট নামে পরিচিত। দেশটি তিমুর দ্বীপের পূর্ব অর্ধেক এবং তার কাছাকাছি অবস্থিত আতোরো এবং জ্যাকো দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত। এই দেশের প্রথম দিকের অধিবাসীরা অস্ট্রালয়েড এবং মেলানেশিয়ানদের বংশধর ছিল বলে মনে করা হয়। পর্তুগিজরা ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে তিমুরের সাথে বাণিজ্য শুরু করে এবং ঐ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এখানে তাদের উপনিবেশে স্থাপন করে। এই অঞ্চলে ওলন্দাজদের সাথে সংঘর্ষের ফলে শেষ পর্যন্ত ১৮৫৯ সালে একটি চুক্তি হয় যার জন্য পর্তুগাল দ্বীপের পশ্চিম অর্ধেকাংশ আলাদা করে দেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ঔপনিবেশিক জাপান পূর্ব তিমোর দখল করে, কিন্তু জাপানি আত্মসমর্পণের পর পর্তুগাল আবার সেখানে তার ঔপনিবেশিক পুণর্বহাল করেছিল।

পূর্ব তিমুর ১৯৭৫ সালের ২৮ নভেম্বর পর্তুগাল থেকে নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করে, কিন্তু তার নয় দিন পরেই পূর্ব তিমুরকে আক্রমণ করে প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়া। তখন দেশটি ইন্দোনেশিয়ার একটি প্রদেশ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তী দুই-দশক সময়ে দখলদার ইন্দোনেশিয়ার শাসনে পরিস্থিতি শান্ত করার একটি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল। যদিও ইন্দোনেশিয়া পূর্ব তিমুরের দখলের সময় অবকাঠামোগত ক্ষাতে যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ করেছিল,[১] কিন্তু তারপরও অসন্তুষ্টি ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৯-এর মধ্যে সঙ্ঘাতে প্রায় ১০০,৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল (প্রায় ১৮,৬০০ হত্যাকাণ্ড এবং খিদে ও অসুস্থতায় মৃত্যূ আরও ৮৪,২০০), যার বেশিরভাগই ইন্দোনেশিয়ান দখলকালে ঘটেছিল।

৩০ শে আগস্ট ১৯৯৯, জাতিসংঘ-প্রস্তাবিত গণভোটে পূর্ব তিমুরের জনগণ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছিল। গণভোটের সাথে সাথেই পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতাবিরোধী মিলিশিয়ারা - ইন্দোনেশিয়ান সামরিক বাহিনী দ্বারা সংগঠিত ও সমর্থিত হয়ে- ব্যাপক জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে। মিলিশিয়ারা প্রায় ১,৪০০ জন তিমোরিকে হত্যা করেছিল এবং ৩০০,০০০ লোককে শরণার্থী হিসাবে পশ্চিম তিমুরের দিকে ঠেলে দেয়। এই আক্রমণে দেশের বেশিরভাগ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ১৯৯৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল ফোর্স ফর ইস্ট তিমুর (ইন্টারফেট) পূর্ব তিমুরে মোতায়েন করা হয় যার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সহিংসতার অবসান ঘটিয়েছিল। জাতিসংঘ-পরিচালিত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের পর ২০ ই মে ২০০২ তারিখে পূর্ব তিমুর আন্তর্জাতিকভাবে একটি স্বতন্ত্র দেশ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে।

প্রাক-ঔপনিবেশিক ইতিহাস[সম্পাদনা]

তিমুর দ্বীপটিতে অভিবাসনের মাধ্যমে জনবসতি গড়ে ওঠে যা প্রকৃতপক্ষে অস্ট্রালেশিয়াকে গঠন করেছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত, মানব বসতির প্রাচীনতম চিহ্নগুলি ৪৩,০০০ থেকে ৪৪,০০০ বছর পুরানো এবং মানাতুতো শহরের লাইলি গুহায় পাওয়া গেছে। [২] এই প্রাথমিক বসতি স্থাপনকারী জনগোষ্ঠীর উচ্চমানের সমুদ্র দক্ষতা ছিল এবং অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য দ্বীপগুলিতে পৌঁছানোর জন্য সমুদ্র পাড়ি দেবার প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগুলো জানা ছিল, যেহেতু তারা বিশাল সংখ্যায় টুনার মতো গভীর সমুদ্রের মাছ ধরত এবং খেতো। [৩] বিশ্বের প্রাচীনতম মাছ ধরার বড়শিগুলোর একটি জেরিমালাই গুহায় খনন করে পাওয়া যায় যা প্রায় ১৬,০০০ থেকে ২৩,০০০ বছরের পুরনো। [৪] বিশ্বাস করা হয় যে তিন দফায় অভিবাসন থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষেরা এখনও এ দেশে বাস করে। ভেডো-অস্ট্রালয়েড জাতীয় মানুষকে নৃবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন এখানকার প্রথম মানুষ।

প্রায় ৩০০০ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দের দিকে, দ্বিতীয় একটি অভিবাসন মেলানেশিয়ানদের এখানে নিয়ে আসে। পূর্বের ভেডো-অস্ট্রোলয়েডের লোকেরা এই সময়ে আরও ভেতরের দিকের পার্বত্য অঞ্চলে ফিরে গিয়েছিল। শেষ অবধি, দক্ষিণ চীন এবং উত্তর ইন্দোচীন থেকে প্রোটো-মালয়রা এ অঞ্চলে আসে। [৫] তিমুরীয় পুরাণ অনুযায়ী এদের পূর্বসূরীরা তীমোরের পূর্ব প্রান্ত ঘুরে সমুদ্রপথে দক্ষিণের ভূখণ্ডে পৌঁছেছিল। কিছু গল্পে তিমুরীয় পূর্বপুরুষদের মালয় উপদ্বীপ বা সুমাত্রার মিনাংকাবাউ উচ্চভূমি থেকে এখানে এসে বসতি গড়ার বিবরণ পাওয়া যায়[৬]

পরবর্তীকালে তিমুরীয়রা আর সমুদ্রে যেত না, বরং তারা স্থল-কেন্দ্রিক মানুষ হয়ে ওঠে যারা অন্যান্য দ্বীপের সাথে খুব কমই যোগাযোগ করত। তিমুর ছিল ছোট দ্বীপপুঞ্জের এমন একটি অঞ্চল যা এখন পূর্ব ইন্দোনেশিয়াকে গঠন করে যেখানে একই রকমভাবে বাস করত স্থল-কেন্দ্রিক কিছু ছোট ছোট জনগোষ্ঠী। বাইরের বিশ্বের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল চীন এবং ভারত থেকে সমুদ্রপথে আসা বিদেশী ব্যবসায়ীরা। বাইরে থেকে এই অঞ্চলে আনা পণ্যগুলির মধ্যে ধাতব পণ্য, চাল, সূক্ষ্ম কাপড় ও মুদ্রা অন্যতম যেগুলো বিনিময় করা হত স্থানীয় মশলা, চন্দন কাঠ, হরিণের শিং, মোম এবং দাসের সঙ্গে। [৬]

তিমুরে বেশ কিছু কয়েকটি দুর্গ পাওয়া গিয়েছে যেগুলো ১০০০ থেকে ১৩০০ সালের মধ্যে নির্মান করা হয়েছিল। বিশেষত ক্ষুদ্র তুষারযুগের সময়ে জলবায়ুর পরিবর্তন এবং চন্দনের কাঠের অতিরিক্ত বাণিজ্যের ফলে সে সময়ে সম্পদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল বলে মনে করা হয়। [৭]

তিমুরের প্রথম লিখিত পরিচিতি পাওয়া যায় ১৩শ শতাব্দীর চীনা ঝু ফান চিতে যা চীনের বাইরে পাওয়া বিভিন্ন পণ্য ও সভ্যতার বর্ণনা দেয়। ঝু ফান চি-তে, তিমুরকে তি-ওয়েন নামে উল্লেখ করা হয় এবং বলা হয় এটি চন্দন কাঠের জন্য বিখ্যাত। ১৩৬৫ সালে, নাগরক্রেতাগামা তিমুরকে মাজাপাহিতের রাজ্যের অন্তর্গত একটি দ্বীপ হিসাবে বলা হয়েছে, যাতে মাজাপাহিত সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগের বিবরণ পাওয়া যায়। যাহোক, ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ কালানুক্রমিক টোম পাইরেস জাভার পূর্ব দিকের সমস্ত দ্বীপপুঞ্জকে "তিমুর" বলা হত বলে উল্লেখ করেছেন। [৮]

প্রথম দিকের ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের কাছ থেকে জানা যায় যে দ্বীপটিতে ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট সর্দার ও নৃপতি শাসিত রাজ্য ছিল। এদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মধ্য তিমুরের ওয়েহালি রাজ্য, যা তেতুম, বুনাক এবং কেমাক জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা বাস্তুকৃত। [৯]

পর্তুগিজ শাসন[সম্পাদনা]

পর্তুগিজ তিমুরের অস্ত্র (1935-1975) [১০]

পর্তুগিজরাই ইউরোপ থেকে প্রথম এই অঞ্চলে আসে। এরা ছিল ১৫০৯ থেকে ১৫১১ সালের মধ্যে আগত ব্যবসায়ী, যারা এখনকার পান্তে ম্যাকাসারের কাছে এসে পৌছেছিল। তবে, ১৫৫৬ সালে একদল ডোমিনিক ফ্রিয়ার এখানে তাদের মিশনারি প্রতিষ্ঠা করেছিল। সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যে লিফাউ গ্রাম (বর্তমানে ওকুসি ছিটমহলের অংশ) এই এলাকায় পর্তুগিজদের বিভিন্ন কাজকর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। এই সময়ে পর্তুগিজরা তিমুরীয়দেরকে ক্যাথলিক খ্রীষ্টধর্মে রূপান্তরিত করতে শুরু করে। ১৬৪২ সালে পর্তুগিজ ফ্রান্সিসকো ফার্নান্দেসের নেতৃত্বে একটি সামরিক অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল তিমুর রাজাদের শক্তি দুর্বল করা। এমনকি এই অভিযানটি যেহেতু টোপাজদের (ব্ল্যাক পর্তুগিজ) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিল, তাই এটি দেশের অভ্যন্তরে প্রতিটি এলাকাতেই পর্তুগিজ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৭০২ সালে এই অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে একটি পর্তুগিজ উপনিবেশে পরিণত হয় এবং পর্তুগিজ তিমুর নামে পরিচিত হয়, যখন লিসবন তার প্রথম গভর্নর প্রেরণ করেছিল, লিফাউকে এর রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এই অঞ্চলটির উপর পর্তুগিজ নিয়ন্ত্রণ ছিল বিশেষত অভ্যন্তরের পার্বত্য এলাকায়। ডোমিনিকান ফ্রিয়ার্স, মাঝেমধ্যে ডাচ আক্রমণ এবং তিমুরীয়রা নিজেরাই পর্তুগিজদের সাথে বিরোধিতায় লিপ্ত হত। ঔপনিবেশিক প্রশাসকদের নিয়ন্ত্রণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দিলির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তাই তাদেরকে সাধারণত প্রথাগতভাবে উপজাতীয় সর্দারদের উপরই নির্ভর করতে হত। [১১]

পর্তুগিজদের জন্য পূর্ব তিমুর উনিশ শতকের শেষ অবধি শুধুমাত্র একটি অবহেলিত ব্যবসায়ীক পোস্টের চেয়ে কিছুটা বেশিই ছিল। অবকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষায় বিনিয়োগ ছিল ন্যূনতম। এই দ্বীপটিকে তাদের জন্য নির্বাসনের জায়গা হিসাবে দেখা হত যাদেরকে লিসবনের সরকার "সমস্যা" হিসাবে দেখত - এদের মধ্যে রাজনৈতিক বন্দির পাশাপাশি সাধারণ অপরাধীরাও ছিল। পর্তুগিজরা গতানুগতিক লিউরাই (স্থানীয় প্রধানগণ) পদ্ধতিতে শাসন করত। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে কফির রফতানি উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠলেও চন্দনকাঠই তখনও মূল রফতানি ফসল হিসাবে থেকে যায়। যে জায়গাগুলিতে পর্তুগিজদের শাসনে জোর দেওয়া হয়েছিল, সেসব জায়গা ছিল নৃশংস ও শোষণমূলক। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে, একটি বিশৃঙ্খল গার্হস্থ্য অর্থনীতি পর্তুগিজদের এই উপনিবেশ থেকে আরও বেশি সম্পদ আহরণে উৎসাহিত করে। [১১]

স্বাতন্ত্রপন্থী ইউরোশীয় গোষ্ঠী টোপাসদের আক্রমণের কারণে ১৭৬৯ সালে তিমুরের রাজধানী লিফাউ থেকে ডিলিতে স্থানান্তর করা হয়। এদিকে, ওলন্দাজরা দ্বীপের বাকী অংশ এবং আশেপাশের দ্বীপপুঞ্জে উপনিবেশ স্থাপন করে যা এখন ইন্দোনেশিয়া নামে পরিচিত। ১৮৫৯ সালে লিসবন চুক্তির মাধ্যমে পর্তুগিজ তিমুর এবং ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের মধ্যে সীমানাটির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওকুসির উত্তর উপকূলের পকেট সহ পূর্ব দিকের অর্ধেকটা পেয়েছিল পর্তুগাল। ১৯১০-১২ সালে পূর্ব তিমুরীয়রা পর্তুগালের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। বিদ্রোহীদের দমন করতে মোজাম্বিক থেকে সেনা এবং নৌবাহিনী আনা হয়েছিল। ১৯৪৪ সালে হেগ-এ সুনির্দিষ্ট সীমানাটি আঁকা হয়েছিল,[১২] যা এখনকার পূর্ব তিমুর ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমানা হিসাবে এখনও রয়ে গেছে।

যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পর্তুগাল নিরপেক্ষ ছিল, ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে পর্তুগিজ তিমুর অস্ট্রেলীয় এবং ওলন্দাজ বাহিনী দখল করে নেয়, যদিও তারা জাপানের কাছ থেকে একটি আগ্রাসন প্রত্যাশা করেছিল। অস্ট্রেলিয়ার এই সামরিক হস্তক্ষেপ পর্তুগিজ তিমুরকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধে টেনে নিয়েছিল তবে এটি জাপানিদের আগ্রাসনও কিছুটা কমিয়ে দিয়েছিল। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপানিরা যখন তিমুর দখল করে নেয়, তখন ৪০০-শক্তিশালী ডাচ-অস্ট্রেলিয়ান বাহিনী এবং প্রচুর সংখ্যক তিমুরীয় স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধারা এক বছর ব্যাপী এক গেরিলা সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিল। ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিত্র বাহিনীকে সরিয়ে নেওয়ার পরে পূর্ব তিমুরীয়রা জাপানের সাথে লড়াই চালিয়ে যায়, শত্রুর সাথে তুলনামূলকভাবে সামান্যই আপোশ করা হয়। এইর ফলে বেসামরিক জনগণকে প্রচুর মূল্য দিতে হয়েছিল: জাপানি বাহিনী বহু গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে এবং রসদের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। জাপানি দখলদারিত্বের কারণে প্রায় ৪০,০০০-৭০,০০০ তিমুরি মারা যায়।

যুদ্ধের পরে পর্তুগিজ তিমুরকে ফের পর্তুগালের হাতে তুলে দেওয়া হয়, কিন্তু পর্তুগাল তার উপনিবেশকে অবহেলা করে চলল। অবকাঠামো, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবাতে খুব কম বিনিয়োগ করা হচ্ছিল। উপনিবেশটিকে ১৯৫৫ সালে পর্তুগিজ প্রজাতন্ত্রের একটি 'বিদেশস্থ প্রদেশ' হিসাবে ঘোষণা করে। স্থানীয়ভাবে পর্তুগিজ গভর্নর এবং আইন পরিষদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রধান বা লিউরাইরাও সরকারের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিমুরে শিক্ষিত লোকের সংখ্যা ছিল খুবই কম এবং এমনকি আরও কম লোক পর্তুগালের বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিল ( আর ২০০০ সাল পর্যন্ত এখানে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ও ছিল না)।

এই সময়ে, রাষ্ট্রপতি সুকর্ণোর উপনিবেশ-বিরোধী বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্যসমূহ বাদে পর্তুগিজ তিমুরের প্রতি ইন্দোনেশিয়া তেমন কোনও আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এর আংশিক কারণ ছিল ইন্দোনেশিয়া পশ্চিম ইরিয়ানের নিয়ন্ত্রণ অর্জনে ব্যস্ত ছিল, যা বর্তমানে পাপুয়া নামে পরিচিত, এবং ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার পরে নেদারল্যান্ডস এর কর্তৃত্ব ধরে রেখেছিল। প্রকৃতপক্ষে, ইন্দোনেশিয়ান কূটনীতিকরা জাতিসংঘে জোর দিয়ে বলেছিলেন যে তাদের দেশ প্রাক্তন নেদারল্যান্ডস ইস্ট ইন্ডিজের বাইরে কোনও অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করতে চায় না, এবং স্পষ্টভাবে পর্তুগিজ তিমুরের কথা সেখানে উল্লেখ করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Indonesia: From Economic Crisis to Political Turmoil Dr. Udai Bhanu Singh, Research Fellow, IDSA
  2. Hawkins, Stuart; O'Connor, Sue (সেপ্টেম্বর ২০১৭)। "Oldest human occupation of Wallacea at Laili Cave, Timor-Leste, shows broad-spectrum foraging responses to late Pleistocene environments": 58–72। ডিওআই:10.1016/j.quascirev.2017.07.008 
  3. "Archived copy"। ১৫ মে ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-০৬ 
  4. O'Connor, S.; Ono, R. (২৪ নভেম্বর ২০১১)। "Pelagic Fishing at 42,000 Years Before the Present and the Maritime Skills of Modern Humans": 1117–1121। ডিওআই:10.1126/science.1207703পিএমআইডি 22116883 
  5. Timor-Leste.gov.tl ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে, Timor Leste History.
  6. Taylor, Jean Gelman (২০০৩)। Indonesia: Peoples and Histories। Yale University Press। পৃষ্ঠা 378আইএসবিএন 0-300-10518-5 
  7. O’Connor, Sue; McWilliam, Andrew (মে ২০১২)। "Examining the Origin of Fortifications in East Timor: Social and Environmental Factors": 200–218। ডিওআই:10.1080/15564894.2011.619245 
  8. Population Settlements in East Timor and Indonesia ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ তারিখে – University of Coimbra
  9. Seasite.niu.edu ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ আগস্ট ২০২০ তারিখে, Precolonial East Timor.
  10. "Flags of the World"। Fotw.net। ৮ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুলাই ২০১১ 
  11. Schwarz, A. (১৯৯৪)। A Nation in Waiting: Indonesia in the 1990s। Westview Press। পৃষ্ঠা 198আইএসবিএন 1-86373-635-2 
  12. Deeley, Furness, and Schofield (2001) The International Boundaries of East Timor p. 8