ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা আফতাব বট (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:৫২, ২২ মার্চ ২০১৭ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (টেমপ্লেটে সংশোধন)। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ১৮৫১ সালের ২৯ অক্টোবর কলকাতায় মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা রাধাকান্ত দেব এর প্রথম সভাপতি এবং প্রথম সম্পাদক ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর । বিশিষ্ট সাংবাদিক কৃষ্ণদাস পাল প্রথমে এর সহকারী সম্পাদক এবং পরে (১৮৭৪-১৮৮৪) সম্পাদক ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ ভারতের জনগণের কল্যাণার্থে আন্দোলন পরিচালনা করা। ১৮৫৩ সালের সনদ আইন-১৮৫৩কে কেন্দ্র করে ভারতবাসীর রাজনৈতিক আন্দোলন ও আশা-আকাঙ্ক্ষা সক্রিয় হয়ে উঠে। নতুন সনদ প্রাপ্তিকে সামনে রেখে ভারতবাসীর অভাব-অভিযোগগুলির প্রতি ইংল্যান্ডের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ ও আশু ফল লাভের উদ্দেশ্যে তৎকালীন নেতৃবৃন্দ এই অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার অল্প পরেই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভারত সংস্কারসম্বন্ধীয় একটি স্মারকলিপি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রেরণ করা হয়। স্মারকলিপির প্রধান দাবি ছিল ভারতীয় আইন পরিষদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য হবেন ভারতীয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে এ অ্যাসোসিয়েশন ভারতের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজস্ব, পুলিশ, আইনকানুন ও প্রশাসন বিষয়ে ভারতীয়দের বিভিন্ন দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ব্রিটিশ ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশনই সর্বপ্রথম ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে পারস্করিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। প্রায় ২৫ বছর এ সভা জাতির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। ১৮৭০ সালে সরকার কর্তৃক উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা প্রবর্তনে এ প্রতিষ্ঠান বাঁধা দেয়।

ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রধানত উচ্চবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণীর মিলন ভূমি ছিল এবং তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে এর বিশেষ নজর ছিল। ১৮৭৫১৮৭৬ সালে মধ্যবিত্ত শ্রেণী দ্বারা যথাক্রমে ‘ইন্ডিয়া লীগ’ ও ‘ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশন’ প্রতিষ্ঠিত হলে এটি প্রধানত জমিদার শ্রেণীর স্বার্থরক্ষার জন্য বিশেষভাবে সচেষ্ট হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে নবীন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অগ্রগতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল মিলাতে এই প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হয়। যেহেতু উচ্চবিত্ত জমিদারদের দ্বারা পরিচালিত এবং বার্ষিক চাঁদার হার বেশি ছিল, সে জন্য শিক্ষিত বাঙালি কৃষক/রায়ত ও নিম্নবিত্তের সাধারণ মানুষ এ অ্যাসোসিয়েশনকে কখনও নিজেদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক বলে মনে করে নি। বাংলার মুসলমান সম্প্রদায়ের অধিকাংশই ছিল কৃষক, তাই তারা এই এ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। ১৮৫৬ সালে মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কলকাতায় ‘মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন’ গঠিত হয়। অবশ্য ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন এই নতুন প্রতিষ্ঠানকে স্বাগত জানায়। কলকাতায় ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কনফারেন্স (১৮৮৩ ও ১৮৮৫ সালে) এবং জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনকালে (১৮৮৬) এই এ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ সহযোগিতা করেন।

জমিদার ও অভিজাত শ্রেণীর অনুকূলে এ সংগঠনের কার্যকলাপ থাকা সত্ত্বেও ১৮৫৯ সালের ‘অ্যাক্ট টেন’ এর বিরুদ্ধে নীলকরদের আন্দোলনে এ সংগঠন যোগ দেয় নি, বরং রায়তদের সমর্থন করেছে। নীল চাষের সমস্যা সমাধানকল্পে ১৮৬০ সালে ইংরেজ সরকারকে একটি তদন্ত কমিশন গঠন করতে এ সংগঠন দাবি জানিয়েছে। ১৯৫৪ সালে পশ্চিমবঙ্গে জমিদারি বিলুপ্তির পর এর কার্যক্রম হ্রাস পায়।

তথ্যসূত্র

  • রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ-শিবনাথ শাস্ত্রী, নিউ এজ্‌ পাবলিসার্স পাঃ লিঃ