পরা-বাসুদেব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পরা-বাসুদেব ( সংস্কৃত: परवासुदेव ) হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব ঐতিহ্যে প্রাপ্ত একটি শব্দ। এটি ঈশ্বরের সর্বোচ্চ ও চিন্ময় রূপকে নির্দেশ করে[১] যেখান থেকে তাঁর সমস্ত প্রকাশ উদ্ভূত হয়। ঈশ্বরের এই রূপের শক্তি (ঐশ্বরিক শক্তি) অবতারগণের পৃথিবীতে আবির্ভাব কালে সহায়তা করে বলে মনে করা হয়।[২]

বর্ণনা[সম্পাদনা]

বাসুদেবের চারটি ব্যূহ (প্রকাশ) পরা-বাসুদেব থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয় যা বিষ্ণুর সাথে চিহ্নিত। [৩]এর মধ্যে বাসুদেবকে জ্ঞান, ঐশ্বর্য, গুণ, বল, বীর্য তেজের সম্পূর্ণ অধিকারী বলে বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যদিকে সংকর্ষণ, প্রদ্যুম্নঅনিরুদ্ধ দুটি গুণের অধিকারী। [৪] [৫] পৌরাণিক ঐতিহ্যে, বাসুদেবকে কৃষ্ণ, সংকর্ষণকে বলরাম, প্রদ্যুম্নকে কৃষ্ণের প্রধান স্ত্রী রুক্মিণীর হতে জাত কৃষ্ণের পুত্র ও অনিরুদ্ধকে প্রদ্যুম্নের পুত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। [৬]

পরা-বাসুদেব তাঁর স্ত্রী শ্রী-লক্ষ্মীকে তাঁর ভূতি (সত্তা) ও ক্রিয়া (করণ) এর দিকগুলির মধ্যে ছয়টি গুণাবলী সমন্বিত বর্ণনা করা হয়েছে যা সমস্ত সৃষ্টির ভিত্তি। [৭]

গৌড়ীয়, বল্লভনিম্বার্ক ঐতিহ্যে, পরা-বাসুদেব বলতে কৃষ্ণকে বোঝায় যিনি আবার স্বয়ম ভগবান শ্রী ঐতিহ্যে, পরা বাসুদেব বিষ্ণুকে নির্দেশ করে। [৮]

বৈদিক সাহিত্য[সম্পাদনা]

ভাগবত পুরাণ-এ, কৃষ্ণকে পরা-বাসুদেব বলা হয়েছে:[৯]

বাসুদেব-পরা বেদা
বাসুদেব-পরা মখাঃ
বাসুদেব-পরা যোগা
বাসুদেব-পরাঃ ক্রিয়াঃ
বাসুদেব-পরং জ্ঞানং
বাসুদেব-পরং তপঃ
বাসুদেবো-পরো ধর্মো
বাসুদেব-পরা গতিঃ


বৈদিক শাস্ত্রে জ্ঞানের পরম উদ্দেশ্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। যজ্ঞ সম্পাদনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবানের প্রীতি-বিধান এবং যোগের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁকে জানা। সমস্ত সকাম কর্মের চরম ফল তিনিই দান করেন। পরম জ্ঞান এবং সমস্ত তপশ্চর্যার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁকে জানা এবং তাঁর প্রতি প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত হওয়াই হচ্ছে ধর্মের উদ্দেশ্য। তিনি হচ্ছেন জীবনের পরম উদ্দেশ্য।

— শ্লোক ১/২/২৮-২৯

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Chari, S. M. S. (২০১৮-০১-০১)। Vaisnavism: Its Philosophy, Theology and Religious Discipline (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 210। আইএসবিএন 978-81-208-4135-2 
  2. T. A. Gopinatha Rao (১৯৯৩)। Elements of Hindu iconography। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 235–237। আইএসবিএন 978-81-208-0878-2 
  3. Atherton, Cynthia Packert (১৯৯৭)। The Sculpture of Early Medieval Rajasthan (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 978-90-04-10789-2 
  4. Sen, Sailendra Nath (১৯৯৯)। Ancient Indian History and Civilization (ইংরেজি ভাষায়)। New Age International। পৃষ্ঠা 94। আইএসবিএন 978-81-224-1198-0 
  5. Alper, Harvey P. (১৯৮৯-০১-০১)। Mantra (ইংরেজি ভাষায়)। SUNY Press। পৃষ্ঠা 227। আইএসবিএন 978-0-88706-599-6 
  6. Rao, Saligrama Krishna Ramachandra (২০০৩)। Encyclopaedia of Indian Iconography: Hinduism, Buddhism, Jainism (ইংরেজি ভাষায়)। Sri Satguru Publications। পৃষ্ঠা 869। আইএসবিএন 978-81-7030-763-1 
  7. Indian History (ইংরেজি ভাষায়)। Allied Publishers। পৃষ্ঠা 221। আইএসবিএন 978-81-8424-568-4 
  8. Barnett, Lionel D. (এপ্রিল ২০০৮)। Hindu Gods and Heroes (ইংরেজি ভাষায়)। Sristhi Publishers & Distributors। পৃষ্ঠা 79। আইএসবিএন 978-93-87022-44-7 
  9. Knapp, Stephen (২০০৫)। The Heart of Hinduism: The Eastern Path to Freedom, Empowerment, and Illumination (ইংরেজি ভাষায়)। iUniverse। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 978-0-595-35075-9