বিষয়বস্তুতে চলুন

দুঃশাসন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দুঃশাসন
দুঃশাসন
পরিবার
দাম্পত্য সঙ্গী
  • চন্দ্রমুখী(অস্বিনীরাজ ও সুচিত্রার কন্যা,ভানুমতির কাকাতো বোন)
  • চারুমতী(কম্বোজরাজ সুদক্ষিণ ও হেহেয়ীর কন্যা)
  • জ্যোৎস্না(দুঃশাসনের প্রিয় স্ত্রী)
  • চন্দ্রাবতী(ত্রিগর্তের রাজকন্যা ও ইন্দুমতির ছোট বোন)
  • শ্বেতা ও লতা(ত্রীলোকপুরের বসন্তরাজ ও বৈশালির কন্যাদয়)
  • নির্জরা/মানবতী/ধনিষ্ঠা ও দিবিজা(ঢোলকপুরের রাজকন্যা)
  • সালতানী
  • নীরসরবতী
  • কলাবতী/সুকন্যা(শল্যের ছোট ভাই মদ্রসেনের কন্যা)
সন্তান
  • দ্রুমসেন, দুশমনর, ধুমলেখ(চন্দ্রমুখী থেকে)
  • ভরত ও একটি কন্যা(চারুমতী থেকে)
  • দৃষণ ও উলুক(জ্যোৎস্না থেকে)
  • দুর্জয়(চন্দ্রাবতী থেকে)
  • আরোহী(শ্বেতার কন্যা)
  • দূর্যোধন ও সীরাতকুমারী(নির্জরার পুত্র ও কন্যা)
  • কাইরাত(দিবিজার কন্যা)
  • দুররসন(নীরসরবতীর পুত্র)
আত্মীয়পাণ্ডবগণ (কাকাত ভাই)
দ্রৌপদী (কাকাত ভাই পাণ্ডবদের স্ত্রী)

দুঃশাসন (সংস্কৃত: दुःशासन), মহাকাব্য মহাভারতের অন্যতম প্রধান চরিত্র। আক্ষরিক অর্থে, দুঃশাসন অর্থ যাকে শাসন করা কষ্টসাধ্য। দুঃশাসন মহাভারতের অন্যতম বিরোধী চরিত্র। তিনি কৌরব রাজপুত্রদের মধ্যে দ্বিতীয় এবং হস্তিনাপুরের যুবরাজ ও জ্যেষ্ঠ কৌরব দুর্যোধনের অনুজ এবং প্রধান সহযোগী। তাঁর পিতা-মাতা হলেন যথাক্রমে ধৃতরাষ্ট্র এবং গান্ধারী। ত্রিগর্তের রাজকন্যা চন্দ্রমুখীকে তিনি বিবাহ করেন।তিনি ত্রিলোকাপুরার শ্বেতাকে এবং লতাকেও বিয়ে করেছিলেন। তিনি নির্জারার সাথে যুদ্ধ করেন এবং তিনি তার স্ত্রী হন। তার বোন দিবিজাও তার স্ত্রী ছিলেন। তার পুত্রের নাম দ্রুমসেন। দুঃশাসনের ঈর্ষাপরায়ণতা এবং নীচ মানসিকতা মহাভারতে তার পতন ডেকে আনে।

নামব্যুৎপত্তি

[সম্পাদনা]

দুঃশাসন শব্দটি সংস্কৃত শব্দ "দুঃ" কঠিন, কষ্টকর এবং "শাসন" অর্থ শাসন করা। অর্থাৎ, দুঃশাসন অর্থ "যাকে শাসন করা দুঃসাধ্য"। []

জন্ম ও ক্রমবৃদ্ধি

[সম্পাদনা]

গান্ধারী ব্যাসদেবের সেবা করায় তিনি বর দিয়েছিলেন গান্ধারী শতপুত্রের জননী হবেন। যথাকালে গান্ধারী গর্ভবতী হলেন কিন্তু কুড়ি মাস চলে গেলেও তার প্রসব হল না।[] এদিকে কুন্তীর পুত্রলাভের খবর পেয়ে গান্ধারী অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে ধৃতরাষ্ট্রকে না জানিয়ে লোহার মুগুর দিয়ে নিজের গর্ভপাত করেন। এর ফলে তার গর্ভ হতে এক লৌহকঠিন মাংসপিণ্ড নির্গত হল। গান্ধারী দাসীদের তা নষ্ট করার হুকুম দিতে যাচ্ছিলেন এমন সময় ব্যাসদেব এসে তাকে নিষেধ করলেন। তিনি ভ্রুণকে শীতল জলে ভিজিয়ে শত ভাগে ভাগ করেন এবং তা ঘৃতপূর্ণ কলসে রাখেন। একবছর পর দুর্যোধন এবং একবছর এক মাসের মধ্যে দুঃশাসন, দুঃসহ, বিকর্ণ প্রভৃতি শতপুত্র ও দুঃশলা নামে একটি কন্যার জন্ম হল। দুঃশাসন তার বড়ভাই দুর্যোধনের অনুগত ছিলেন এবং দুর্যোধনের সকল অপকর্মের সহযোগী ছিলেন। দুর্যোধন এবং মামা শকুনির সাথে মিলে পাণ্ডবদেরকে হত্যার নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।[]

কুরুসভায় দ্রৌপদীর নিগ্রহ

[সম্পাদনা]
দুঃশাসন কর্তৃক দ্রৌপদীর নিগ্রহ

শকুনির সাথে পাশা খেলায় যুধিষ্ঠির সর্বস্বান্ত হওয়ার পর নিজের ভাইদের এবং নিজেকে পণ করে হেরে যান। এরপর তিনি তাদের ধর্মপত্নী দ্রৌপদীকে পণ করে তাকেও হারান। দুঃশাসন দ্রৌপদীকে তার অন্তঃপুর থেকে কেশ ধরে সভায় টেনে আনেন এবং কর্ণের আদেশে[][] তাকে বিবস্ত্রা করার চেষ্টা করেন। এসময় দ্রৌপদী শ্রীকৃষ্ণকে আহ্বান করতে থাকেন। কৃষ্ণ ধর্মের অবতার নিয়ে বস্ত্ররূপে দ্রৌপদীকে আবৃত করতে থাকেন। দুঃশাসনের আকর্ষণেও তা শেষ হয় না। সভায় এই ভাবে স্ত্রীকে অপমানিত হতে দেখে ভীম প্রতিজ্ঞা করেন যে যুদ্ধভূমিতে তিনি দুঃশাসনের বক্ষ বিদারণ করে তার রক্তপান করবেন।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ এবং মৃত্যু

[সম্পাদনা]

দুঃশাসন কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং অনেক যোদ্ধার সাথে যুদ্ধ করেন।

যুদ্ধের প্রথম দিনে দুঃশাসনই প্রথম তীর নিক্ষেপ করেছিলেন। তিনি নকুল এবং পরে যুধিষ্ঠিরের সাথে ভয়ানক যুদ্ধ করেন এবং তাদের কাছে পরাজিত হন।

যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে, দুঃশাসন নকুলের দেহরক্ষীকে হত্যা করেন। ক্রুদ্ধ নকুল তলোয়ার যুদ্ধে দুঃশাসনকে পরাজিত করে প্রায় হত্যা করতে যাচ্ছিলেন, তবে, তখন নকুলের, ভীমের প্রতিজ্ঞা অর্থাৎ ভীম কর্তৃক দুঃশাসনকে বধ করার কথা স্মরণে এলে, নকুল, দুঃশাসনকে ছেড়ে দেন।

যুদ্ধের দশম দিনে, ভীষ্মকে রক্ষা করার জন্য দুঃশাসন, শিখণ্ডীকে আক্রমণ করেন এবং আহত করেন। যুদ্ধের ত্রয়োদশ দিনে, দুঃশাসন ছিলেন শক্তিশালী সপ্তরথীদের অন্যতম যারা অন্যায় যুদ্ধে অভিমন্যুকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। ঐদিনের যুদ্ধে অভিমন্যু প্রচণ্ডভাবে দুঃশাসনকে আহত করেছিল। পরে, দুঃশাসনপুত্র দ্রুমসেন অভিমন্যুকে হত্যা করে।

১৪তম দিনে, দুঃশাসন, অর্জুনকে আক্রমণ করেন এবং জয়দ্রথের কাছে পৌঁছতে না দেওয়ার জন্য বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু, একটি ছোট তীর-ধনুকের দ্বন্দ্বে অর্জুনের কাছে দুঃশাসন পরাজিত হন। রাত্রিকালীন যুদ্ধের সময়, দুঃশাসন বিরাটের দেহরক্ষীদের পরাজিত করে হত্যা করেন।

ভীম, দুঃশাসনের বুক বিদীর্ণ করে এবং বুকের রক্ত পান করছে।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ১৬তম দিনে, দুঃশাসন মগধের মন্ত্রী বৃহন্তকে হত্যা করেন। পরবর্তীতে, ভীম এবং দুঃশাসনের সাথে গদা যুদ্ধ হয়। ভীম, তাকে পরাজিত করেন। যখন, দুঃশাসন যুদ্ধে অসমর্থ এবং আহত হলে ভীম দুঃশাসনের উভয় হাত উপড়ে ফেলেন। তারপর ভীম, তার (দুঃশাসনের) বর্ম এবং রক্ষাকবচ খুলে ফেলে এবং খালি হাতে বুক চিড়ে দুঃশাসনকে হত্যা করে। পুরো মহাভারত কাব্যে, দুঃশাসনের মৃত্যু সবচেয়ে নৃশংস মৃত্যু। প্রতিজ্ঞা অনুসারে, ভীম দুঃশাসনের বুকের রক্ত পান করে। এই নৃশংস দৃশ্যের প্রত্যক্ষকারী সব সৈন্য, ভীমকে দানব মনে করে এবং অনেকে তা দেখে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। সমস্ত কৌরব সমর্থক এবং সহকারী যোদ্ধা এই দৃশ্য দেখে অত্যন্ত বিমর্ষ হয়। ভীম দুঃশাসনের রক্ত ​​সংগ্রহ করেন এবং দ্রৌপদীর খোলা চুল ধুয়ে দেন। কারণ, কুরু রাজসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করেছিল দুঃশাসন। তখন, দ্রৌপদী প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি শুধু দুঃশাসনের বুকের রক্ত দিয়ে চুল ধুয়ে চুলের খোঁপা বাঁধবেন। না হলে, কখনো চুলের খোঁপা বাঁধবেন না।[]





তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. John Dowson (১৮৮৮)। "A Classical Dictionary of Hindu Mythology and Religion, Geography, History, and Literature" (2nd সংস্করণ)। London: Trubner & Co.। 
  2. কাশীদাসী মহাভারত
  3. "The Mahabharata, Book 1: Adi Parva: Sambhava Parva: Section CXV"www.sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৯-০১ 
  4. http://www.sacred-texts.com/hin/m02/m02067.htm |title=The Mahabharata, Book 2: Sabha Parva: Section LXII |publisher=Sacred-texts.com
  5. https://archive.org/stream/mahabharata_nk/mahabharata_nilakanthas_commentary#page/n403/mode/2up
  6. "The Mahabharata, Book 8: Karna Parva: Section 83"www.sacred-texts.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-১০