জীবন থেকে নেয়া
জীবন থেকে নেয়া | |
---|---|
পরিচালক | জহির রায়হান |
প্রযোজক | জহির রায়হান |
রচয়িতা | আমজাদ হোসেন জহির রায়হান |
শ্রেষ্ঠাংশে | রাজ্জাক সুচন্দা আনোয়ার হোসেন শওকত আকবর রোজী সামাদ খান আতাউর রহমান রওশন জামিল বেবি জামান |
সুরকার | খান আতাউর রহমান |
চিত্রগ্রাহক | আফজাল চৌধুরী |
সম্পাদক | মলয় বন্দ্যোপাধ্যায় |
পরিবেশক | আনিস ফিল্ম |
মুক্তি |
|
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা ভাষা |
জীবন থেকে নেয়া একটি বাংলা চলচ্চিত্র। জহির রায়হান এর নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি ১৯৭০ সালের এপ্রিলে মুক্তি পায়।[১][২] সামাজিক এই চলচ্চিত্রে তৎকালীন বাঙালি স্বাধীনতা আন্দোলনকে রূপকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। ছবিটিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী সামাদ, খান আতাউর রহমান, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেন, প্রমুখ।[১] এই ছবিতে আমার সোনার বাংলা গানটি চিত্রায়িত হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এটি জহির রায়হান নির্মিত শেষ কাহিনী চিত্র।
চলচ্চিত্রটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন চলচ্চিত্র। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবির তাই এই চলচ্চিত্রকে ‘বাংলাদেশের প্রথম জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী চলচ্চিত্র’ বলে অভিহিত করেন।[৩]
কাহিনী সংক্ষেপ
[সম্পাদনা]সিনেমার কাহিনী গড়ে উঠেছে বাংলার অতি সাধারণ এক পরিবারকে কেন্দ্র করে। একটি পরিবারে দুই ভাই আনিস (শওকত আকবর) ও ফারুক (রাজ্জাক), বড়বোন রওশন জামিল এবং বোনের স্বামী খান আতাউর রহমান। বড়বোন রওশন জামিল বিবাহিত। তিনি থাকেন বাবার বাসাতেই। তার স্বামী অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির। সংসারের সব ক্ষমতা রওশন জামিলেরই হস্তগত। এই ক্ষমতার অপব্যবহার করেই তিনি তার স্বামীসহ নিজের দুই ভাইদের উপর একরকম স্বৈরশাসন চালিয়ে থাকেন। আঁচলে চাবির গোছা নিয়ে ঘোরেন তিনি। পেছনে পেছনে পানের বাটা নিয়ে ঘোরে বাড়ির গৃহ পরিচারিকা। তার দোর্দণ্ড প্রতাপে অস্থির সবাই। তৎকালীন পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদেরই মূলত রূপক আকারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ চরিত্রটিতে। রওশন জামিলের স্বামী খান আতাউর রহমান আদালতের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। খান আতাউর রহমান তার এক বন্ধুর পরামর্শে তার শালা শওকত আকবরের বিয়ে ঠিক করেন। পাত্রী সাথী (রোজী সামাদ) নামের এক শান্ত শিষ্ট মেয়ে। কিন্তু রওশন জামিল সম্পূর্ণ বেঁকে বসলেন। তিনি তার ভাইয়ের বিয়ে দিতে একদমই নারাজ। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন যে সংসারের চাবি না আবার তার হাত ফস্কে নতুন বউয়ের হাতে উঠে যায়। ফলশ্রুতিতে রওশন জামিলকে না জানিয়েই তার ভাইয়ের বিয়ে দিয়ে দেন খান আতাউর রহমান। সাথী বউ হয়ে ঘরে আসলে তার উপর রওশন জামিলের অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে। অপর দিকে সাথীর ছোট বোন বীথির (সুচন্দা) প্রেমে পড়ে যান ফারুক ওরফে রাজ্জাক। দুলাভাই আর বড় ভাই অনুমতি দিলে বীথিকে বিয়ে করে ফেলেন তিনিও। সাথী এবং বীথির বড় ভাই আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার হোসেন ছিলেন রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মী। স্বাধিকারের আন্দোলনে তিনি কারারুদ্ধ হন। অন্যদিকে সাথী তথা সুচন্দার নেতৃত্বে বাড়ির সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। নিজেদের বাড়ির ভেতরেই দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়। রওশন জামিলের চাবির গোছা চলে আসে দুই বোনের কাছে। পানের বাটা ঘুরতে থাকে তাদের পেছনে পেছনে। ক্ষমতা হারিয়ে পাগলের মত হয়ে যান রওশন জামিল। নতুন নতুন ষড়যন্ত্র করতে শুরু করেন। এরই মাঝে সাথী ও বীথি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়লে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।দুর্ভাগ্যক্রমে মৃত সন্তান জন্ম দেয় সাথী। ডাক্তার আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে এ শোক হয়তবা সাথী সহ্য করতে পারবে না। তাই বীথির সন্তানকে তুলে দেয়া হয় তার কোলে। নিজের সন্তান ভেবে তাকে লালন পালন করতে শুরু করে সাথী। রওশন জামিল ষড়যন্ত্র করে দুই বোনের মাঝে বিবাদ বাঁধিয়ে দেয়। কৌশলে বীথিকে বিষ খাওয়ান তিনি আর সেই দোষ চাপান সাথীর উপর। বীথি সুস্থ হয়ে বেঁচে উঠলেও বিষ খাওয়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হয় সাথী। আদালতে মামলা উঠলে নিজের স্ত্রীকে দোষী মনে করে শওকত আকবর তার বিরুদ্ধে মামলা লড়েন, আর সাথীর পক্ষের উকিল হন খান আতাউর রহমান। খান আতাউর রহমান আদালতে প্রমাণ করে দেন যে তার নিজের স্ত্রী রওশন জামিলই আসলে বিষ প্রয়োগের মূল হোতা। এভাবেই সিনেমার কাহিনী শেষ হয়।
শ্রেষ্ঠাংশে
[সম্পাদনা]- রাজ্জাক - ফারুক
- সুচন্দা - বিথী
- আনোয়ার হোসেন -
- শওকত আকবর - আনিস
- রোজী সামাদ - সাথী
- খান আতাউর রহমান -
- রওশন জামিল -
- বেবি জামান-
- ব্ল্যাক আনোয়ার
- রাজু আহমেদ - বাদি পক্ষের চৌকশ উকিল
শ্লোগান
[সম্পাদনা]“ | একটি দেশ একটি সংসার একটি চাবির গোছা একটি আন্দোলন একটি চলচ্চিত্র... |
” |
সংগীত
[সম্পাদনা]জীবন থেকে নেয়া ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেন বাংলাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক ও সঙ্গীত শিল্পী খান আতাউর রহমান এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর রবীন্দ্র সংগীত ও কাজী নজরুল ইসলাম এর নজরুল সংগীত থেকে কয়েকটি বিখ্যাত গান গল্পের প্রয়োজনে নেয়া হয়েছিল।
গানের তালিকা
[সম্পাদনা]ট্র্যাক | গান | কন্ঠশিল্পী | টীকা |
---|---|---|---|
১ | এ খাঁচা ভাঙ্গব আমি কেমন করে | খান আতাউর রহমান | |
২ | আমার সোনার বাংলা | অজিত রায়, মাহমুদুন্নবী, সাবিনা ইয়াসমিন, নিলুফার ইয়াসমিন | বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত (বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরে ঘোষিত) |
৩ | আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো | আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত | |
৪ | ''কারার ঐ লৌহ কপাট'' | অজিত রায়, খন্দকার ফারুক আহমেদ ও অন্যান্য | নজরুল সংগীত |
৫ | একি সোনার আলোয় | সাবিনা ইয়াসমিন |
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "Jibon Theke Neya"। Internet Movie Database। ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১০।
- ↑ "এখন সম্ভব নয় 'জীবন থেকে নেয়া' - বাংলা মুভি ডাটাবেজ"। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ জীবন থেকে নেয়া: মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বের চলচ্চিত্র, ৩০ নভেম্বর ২০২২
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে জীবন থেকে নেয়া (ইংরেজি)