চারমিনার

স্থানাঙ্ক: ১৭°২১′৪১″ উত্তর ৭৮°২৮′২৮″ পূর্ব / ১৭.৩৬১৩৯° উত্তর ৭৮.৪৭৪৪৪° পূর্ব / 17.36139; 78.47444
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চারমিনার
অবস্থান হায়দ্রাবাদ, অন্ধ্র প্রদেশ, ভারত
১৭°২১′৪১″ উত্তর ৭৮°২৮′২৮″ পূর্ব / ১৭.৩৬১৩৯° উত্তর ৭৮.৪৭৪৪৪° পূর্ব / 17.36139; 78.47444
প্রতিষ্ঠিত ১৫৯১
স্থাপত্য তথ্য
ধরন ইসলামিক স্থাপনা
মিনার
মিনারের উচ্চতা ৪৮.৭ মিটার (১৬০ ফু)

চারমিনার ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত ভারতের তেলেঙ্গানার হায়দ্রাবাদের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ ও সৌধ।[১] এই স্থাপনাটি হায়দ্রাবাদকে বিশ্ব দরবারে পরিচয় করিয়ে দেয়।[২] এটি ভারতের তালিকাভুক্ত সর্বস্বীকৃত একটি স্থাপনা। চারমিনার পুরাতন হায়দ্রাবাদ শহরের মুসি নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত।[৩] এর উত্তরপূর্বকোণে লাদ বাজার এবং পশ্চিম দিকে গ্রানাইটের তৈরী খুবই উচ্চ কারুকাজ সম্পন্ন মক্কা মসজিদ অবস্থিত।[৪]

চারমিনার দুইটি উর্দু শব্দ চার এবং মিনার এর সমন্বয়ে গঠিত যার ইংরেজি অনুবাদ "Four Towers"। স্থাপনাটিতে চারটি মিনার সংযুক্ত যা এই স্থাপনাটিকে চারটি খিলানের মাধ্যেমে মাটির উপর দাঁড়িয়ে থাকতে সাহায্য করে।[৪]

চারমিনারের নকশা এবং নির্মানশৈলী[সম্পাদনা]

কুতুব শাহি রাজবংশ-এর পঞ্চম সুলতান মোহাম্মদ কুলি কুতব শাহ মসজিদ ও মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে চারমিনার তৈরীর সিদ্ধান্ত নেন। মীর মোমিন আস্তারাবাদী, কুতুব শাহ’র প্রধানমন্ত্রী, যিনি তৎকালীন সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী হায়দ্রাবাদে চারমিনারের নকশা পরিকল্পনায় প্রধান ভূমিকা পালন করেন।[৫]:১৭০ নবতগঠিত রাজধানী শহরের পরিকল্পনা করার জন্য পারস্য থেকে স্থপতি আনা হয়। এই স্থাপনাটির স্থাপনার ধরন ইন্দো-ইসলামিক, যা পারস্যের স্থাপনাশিল্পের প্রমাণ বহন করে। চারমিনার তৈরী হয় গোলকন্দার ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক পথের মিলিত স্থানে, যেখানে গোলকন্দা বাজারের সাথে বাণিজ্যিক শহর মাসুলিপত্তনমের সংযোগ সাধিত হয়েছে।[৬]:১৯৫ হায়দ্রাবাদ শহরের পরিকল্পনা করা হয়েছে চারমিনারকে কেন্দ্র করে। তাই চারমিনারের চারপাশে হায়দ্রাবাদ শহর ছড়িয়ে আছে। চারমিনারের উত্তর দিকে মৌলিক দিক নির্দেশনার জন্য “চার কামান” তৈরী করা হয়।[৬][৭]

চারমিনারের গঠন[সম্পাদনা]

চারমিনার

চারমিনারের আকারে বর্গাকৃতির। যার প্রত্যেক দিকের দৈর্ঘ্য ২০ মিঃ (প্রায় ৬৬ ফুট), যার মধ্যে চারটি বড় বড় খিলান যা চারটি বড় রাস্তার নির্দেশক। এর প্রত্যক কোনায় স্তম্ভগুলো সুন্দর কারুকাজ সম্পন্ন দ্বিস্তর বেলকুনি বিশিষ্ট মিনার, এক একটি মিনারের উচ্চতা ৪৮.৭ মিটার বা ১৬০ ফুট।[৮] প্রত্যেকটি মিনারের মাথায় মুকুটের মতন সুন্দর কারুকাজ করে কাটা এবং প্রত্যেক মিনারের ভিত্তিতে ফুলের পাপড়ির মতন নকশা করা আছে। চারমিনারের চূড়ায় উঠার জন্য ১৪৯ ধাপসম্পন্ন পেচানো সিড়ি রয়েছে। এই স্থাপনাটি গ্রানাইট, চুনাপাথরমার্বেল পাথর দিয়ে তৈরী।

আশপাশ এলাকা[সম্পাদনা]

রমজান মাসের রাতে চারমিনার ও এর আশপাশের এলাকা

চারমিনারের আশপাশ এলাকা একই নামে অর্থাৎ চারমিনার নামেই পরিচিত। এই স্থাপনা হতে আরেকটি ঐতিহ্যবাহী এবং বৃহৎ মসজিদ দেখা যায়, যার নাম মক্কা মসজিদ। কুতুব শাহ বংশের পঞ্চম শাসক মুহাম্মদ কুলি কুতুব শাহ মক্কা থেকে ইট আনিয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করেন।[৯] এই মসজিদ তৈরী করা হয় শহরের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। চারমিনারের চারপাশে একটি বিশাল বাজার আছে, যা লাদ বাজার নামে পরিচিত। এই বাজার অলংকারের জন্য পরিচিত, বিশেষভাবে রেশমী চুড়ি এবং পথের গত্তি মুক্তার জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে চারমিনার বাজারে প্রায় ১৪,০০০ দোকান আছে।

চারমিনারের প্রভাব[সম্পাদনা]

চারমিনারের ক্ষুদের সংস্করণ বাহদুরাবাদ, করাচি, পাকিস্তান

পাকিস্তানে বসবাসরত হায়দ্রাবাদি মুসলমানরা করাচীর বাহাদূরবাদ রোডের পাশে একটি চারমিনারের ক্ষুদে প্রতিরূপ একটি স্থাপনা তৈরী করেন।[১০] ২০১০ সালের ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের হায়দ্রাবাদের ওয়েস্টিনে প্রদর্শনের উদ্দেশ্য চকোলেট দিয়ে নির্মিত চারমিনারের একটি শৈল্পিক স্থাপনা তৈরীতে ৫০ কেজি চকোলেট লেগেছিল। যা তৈরী করতে তিনদিন সময় লেগেছিল। যিনি এই চকোলেট তৈরী করেছিলেন তার নাম হল অ্যাডেলবার্ট বাউচার। [১১]

বিরোধ[সম্পাদনা]

চারমিনারের নিচে একটি মন্দির অবস্থিত যা নাম “ভাগ্যলক্ষী মন্দির”। যা তৈরীর পর থেকে বিরোধের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দ্য হিন্দু পত্রিকা একটী প্রাচীন ছবি প্রকাশ করে যেখানে চারমিনারের ভিত্তিস্থলে কোন মন্দিরে স্থাপনার চিহ্ন খুজে পাওয়া যায় না। তারা প্রেস নোটের মাধ্যমে ঐ ছবি উপযুক্ততা জনসমক্ষে প্রচার করে, সেখানে ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ সালে তোলা ছবিতে চারমিনারের ভিত্তিস্থলে কোন মন্দিরের স্থাপনার চিহ্ন পাওয়া যায় না বলে নিশ্চিত করে। তারা এটাও নিশ্চিত করে যে, ১৯৯০ ও ১৯৯৪ সালে তোলা ছবিতে মন্দিরের কাঠামো দেখা যেতে পারে। আগা খান ভিশুল আর্কাইভে সংরক্ষিত ১৯৮৬ সালে মার্কিন ফটোগ্রাফারের তোলা চারমিনারের একটি ছবিতে আবার মন্দিরের কাঠামো দেখা যায়।[১২][১৩]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Google maps। "Location of Charminar"। Google maps। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  2. "Richard Goslan travels to India - Herald Scotland"। ১৮ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৩ 
  3. Charminar (building, Hyderabad, India), Britannica Online Encyclopedia
  4. Charminar: Hyderabad, Britannica Compton's Encyclopedia
  5. Gayer, Laurent; Jaffrelot, Christophe (২০১২)। Muslims in Indian Cities: Trajectories of Marginalisation (ইংরেজি ভাষায়)। Columbia University Press। আইএসবিএন 978-0-231-80085-3 
  6. Gayer, Lauren; Lynton, Christophe Jaffrelot (২০১১)। Muslims in Indian cities: trajectories of marginalisationColumbia University Pressআইএসবিএন 9780231800853। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১২ 
  7. "Qutb Shahi style (mainly in and around Hyderabad city)"Government of Andhra Pradesh। ২০০২। ১০ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১২ 
  8. "চারমিনারে" 
  9. "Mecca Mosque"Encyclopedia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১১ 
  10. M. Rafique Zakaria, Charminar in Karachi, Dawn, April 22, 2007
  11. "A Charminar to drool and eat"। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৩ 
  12. "A note on the Charminar photograph"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১২-১১-২১। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৬ 
  13. Srivathsan, A. (২০১২-১১-২০)। "As protests roil Charminar, Hyderabad's heritage slowly vanishes"The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৭-১৬ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]