বিষয়বস্তুতে চলুন

আদিনা মসজিদ

আদিনা মসজিদ
মসজিদের বহির্ভাগ
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিসুন্নি ইসলাম
অবস্থান
অবস্থানপান্ডুয়া, মালদহ জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
আদিনা মসজিদ পশ্চিমবঙ্গ-এ অবস্থিত
আদিনা মসজিদ
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান
আদিনা মসজিদ ভারত-এ অবস্থিত
আদিনা মসজিদ
পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান
স্থানাঙ্ক২৫°০৯′০৮″ উত্তর ৮৮°০৯′৫৩″ পূর্ব / ২৫.১৫২৩° উত্তর ৮৮.১৬৪৭° পূর্ব / 25.1523; 88.1647
স্থাপত্য
ধরনমসজিদ
স্থাপত্য শৈলীইসলামী স্থাপত্য
ভূমি খনন১৩৭৩
সম্পূর্ণ হয়১৩৭৫
আদিনা মসজিদ

আদিনা মসজিদ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহে জেলায় অবস্থিত একটি মসজিদ। এটি সিরিয়ার উমাইয়া মসজিদের আদলে তৈরি। আদিনা মসজিদ তৎকালীন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম মসজিদ ছিল।[][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

এটি বাংলা সালতানাতের সময় সিকান্দার শাহ-এর নির্মিত একটি রাজকীয় মসজিদ। সিকান্দার শাহ ছিলেন ইলিয়াস শাহী রাজবংশের একজন এবং মহিমান্বিত সুলতান এবং বিশ্বাসীদের খলিফার মত উঁচু উপাধি বহন করেন। মসজিদটি সাবেক রাজকীয় রাজধানী পাণ্ডুয়ায় অবস্থিত। বিশাল স্থাপত্য উমাইয়া মসজিদের হাইপোস্টাইলের সাথে যুক্ত, যা নতুন এলাকায় ইসলাম প্রবর্তনের সময় ব্যবহার করা হয়। ১৩৫৩ ও ১৩৫৯ সালে দিল্লি সালতানাতকে দুইবার পরাজিত করার পর প্রথম দিকের বঙ্গ সালতানাত সাম্রাজ্যবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে টেনে নিয়ে যায়। আদিনা মসজিদ ১৩৬৪ সালে কমিশন করা হয়।[] ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘল সাম্রাজ্যের উত্থানের সাথে সাথে বঙ্গ সালতানাত ভেঙ্গে যায়।[]

মধ্যযুগীয় বাংলা

[সম্পাদনা]

মসজিদটি বাংলা সালতানাতের ইলিয়াস শাহী রাজবংশের দ্বিতীয় সুলতান সিকান্দার শাহের রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল। ১৪শ শতাব্দীতে দিল্লি সালতানাতের বিরুদ্ধে দুটি যুদ্ধে বিজয়ের পর, রাজ্যের সাম্রাজ্যিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রদর্শনের জন্য মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। [] ৮ম/১৪শ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং ৯ম/১৫শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে উত্তর ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্য উভয় থেকে বিচ্ছিন্ন মুসলিম বাঙালি রাজারা পশ্চিমা সাংস্কৃতিতে উৎসাহিত হতেন। এজন্য, আদিনা মসজিদের শিলালিপিতে সুলতান সিকান্দারকে "আরব ও পারস্যের সুলতানদের (আরব এ আজম) মধ্যে সবচেয়ে উদার, নিখুঁত, জ্ঞানী, উন্নত এবং ন্যায়পরায়ণ সুলতান " হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে (এস. আহমেদ, পৃষ্ঠা. ৩৮)। [] মসজিদের বাহিরের দেয়ালে কিছু অংশে হাতি এবং নৃত্যশিল্পীদের মূর্তি খোদাই করা আছে। মসজিদের শিলালিপিতে সিকান্দার শাহকে "মহান সুলতান" এবং "বিশ্বাসীদের খলিফা " হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। [] একই সাথে, সুলতানকে মক্কার দিকে মুখ করে দেয়ালের সাথে সংযুক্ত একটি সমাধি কক্ষে সমাহিত করা হয়েছিল।

মসজিদটি বাংলা সালতানাতের প্রাক্তন রাজধানী ঐতিহাসিক পান্ডুয়া শহরে অবস্থিত ছিল। সুলতানি আমলে পান্ডুয়া ছিল একটি সমৃদ্ধ ও বিশ্বজনীন বাণিজ্য কেন্দ্র।

ঔপনিবেশিক ভারত

[সম্পাদনা]

উনিশ শতকে ভূমিকম্পে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি অব্যবহৃত হয়ে পরে। পান্ডুয়ার বেশিরভাগ অঞ্চল লতাপাতা পূর্ণ যায়গা হয়ে যায়।

স্বাধীন ভারত

[সম্পাদনা]

ভারতীয় জনতা পার্টি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা দাবি করে যে মসজিদটি "আদিনাথ মন্দির" ভেঙে তৈরি করা হয়েছে এবং তাই এটি হিন্দুদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। []

অবস্থান

[সম্পাদনা]

পুরাতন মালদহ শহর থেকে ২০ কিলমিটার দূরে ১২ নং জাতীয় সড়কের পাশে অবস্থিত। এর বিপরীতে আছে আদিনা মৃগ উদ্যান।

স্থাপত্য

[সম্পাদনা]

এই মসজিদ উত্তর-দক্ষিণে ৫২৪ ফুট লম্বা ও ৩২২ ফুট চওড়া। এতে ২৬০টি থাম ও ৩৮৭টি গম্বুজ আছে। মসজিদের নকশা বাংলা, আরব, ফার্সি ও বাইজেন্টাইন স্থাপত্য অন্তর্ভুক্ত। যদিও মসজিদটি তার আকারের কারণে দূর থেকে আকর্ষণীয়, কিন্তু সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পিত সাজসজ্জার কারণে এটি থেকে একটি ভাল দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা বৈশিষ্ট্য দেখা কঠিন করে তোলে। এটি ধ্বংসস্তূপের রাজমিস্ত্রি দিয়ে নির্মিত হয়েছিল যা ইট, পাথর, স্তূপের প্রলেপ, প্লাস্টার, কংক্রিট, গ্লেজিং বা চুন মসৃণ দ্বারা আবৃত ছিল।[] পাথরের ফুল ভবনের চারপাশের অভ্যন্তর এবং বহির্ভাগের খিলানে একত্রিত করা হয়।[] এর পরিকল্পনা দামেস্কের বড় মসজিদের অনুরূপ।[১০]

চিত্রসম্ভার

[সম্পাদনা]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. এ.বি.এম হোসাইন (২০১২)। "আদিনা মসজিদ"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন ৯৮৪৩২০৫৯০১ওসিএলসি 883871743ওএল 30677644M
  2. Banerji, Naseem Ahmed (১৯৯৩)। The architecture and architectural decoration of the Adina Mosque, Pandua, West Bengal, India: The problem of the conjoined Buddhist, Hindu and Islamic motifs in the mihrab niches - ProQuest (অভিসন্দর্ভ) (ইংরেজি ভাষায়)। প্রোকুয়েস্ট 304044113
  3. 1 2 "The architecture and architectural decoration of the Adina Mosque"ProQuest (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০
  4. Eaton, Richard M. (৩১ জুলাই ১৯৯৬)। The Rise of Islam and the Bengal Frontier, 1204-1760 (ইংরেজি ভাষায়)। University of California Press। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৫২০-২০৫০৭-৯
  5. Eaton, Richard Maxwell (১৯৯৬)। The Rise of Islam in the Bengal Frontier, 1204-1760University of California Press। পৃ. ৪০–৫০আইএসবিএন ০৫২০২০৫০৭৩
  6. Encyclopaedia Iranica {{বিশ্বকোষ উদ্ধৃতি}}: |title= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)
  7. "Adina Mosque"Banglapedia
  8. "A Journey through India's Major Shrines and Controversies"Outlook India (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ জানুয়ারি ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মার্চ ২০২৪
  9. Banerji, Naseem Ahmed (২০০২)। The Architecture of the Adina Mosque in Pandua, India: Medieval Tradition and Innovation (ইংরেজি ভাষায়)। Edwin Mellen Press। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৭৩৪-৭২০৯-৯
  10. Hasan, Perween; Grabar, Oleg (২৯ জুন ২০০৭)। Sultans and Mosques: The Early Muslim Architecture of Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। Bloomsbury Academic। আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৪৫১১-৩৮১-০

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]