ভিতরগড় দুর্গ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভিতরগড় দুর্গনগরী
স্থানীয় নাম
ইংরেজি: Bhitargarh
খননকাজ চলছে ভিতরগড়ে
ধরনপ্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
অবস্থানপঞ্চগড় সদর উপজেলা, অমরখানা ইউনিয়ন
অঞ্চলপঞ্চগড় জেলা
পরিচালকবর্গবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
মালিকবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
সূত্র নংBD-F-52-40

ভিতরগড় পঞ্চগড় জেলার সদর থেকে ১৬ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল[১] এটি মধ্যযুগের একটি দুর্গ নগরী। সম্পূর্ণ এলাকার আয়তন ২৫ বর্গ কিলোমিটার। ইঙ্গ-আইরিশ সরকারী কর্মকর্তা রবার্ট মন্টগোমারি মার্টিন কর্তৃক লিখিত দ্য হিস্ট্ররী, এন্টিকুইটিয, টপোগ্রাফি এণ্ড স্ট্যাটিসটিকস অব ইস্টার্ণ ইন্ডিয়া গ্রন্থটির ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ৩য় খণ্ডে সর্বপ্রথম ভিতরগড় দুর্গের উল্লেখ দেখা যায়। ভিতরগড় দূর্গের অভ্যন্তরে ২২ প্রত্নস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। এইসব প্রত্নস্থল থেকে বেশ কিছু প্রত্ননিদর্শনও সংগ্রহ করা হয়েছে।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

ভিতরগড় দুর্গ পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নে অবস্থিত। এই দুর্গনগরীটি প্রায় ২৫ বর্গকিলোমিটার ব্যাপ্ত এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। পুরো দুর্গটি কয়েকটি স্তরে চারটি আবেষ্টনী দেওয়াল দিয়ে বিভক্ত ও এর উত্তর দিকের দেওয়াল এবং পূর্ব-পশ্চিম দেওয়ালের কিছু অংশ ভারতের জলপাইগুড়ি জেলায় পড়েছে। ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে বুকানন হ্যামিল্টন ভিতরগড় পরিদর্শন শেষে লিখেছিলেন যে, “ভিতরগড় নগরীটি চারটি আভ্যন্তরীক গড়ের সমবায়ে গঠিত। গড়গুলির একটি অপরটির অভ্যন্তরভাগে অবস্থিত। রাজার প্রাসাদ অবস্থিত ছিল সবচেয়ে ভিতরের গড়ে। সবচেয়ে ভিতরের এবং মধ্যবর্তী নগরীর উপবিভাগ ছিল। প্রতিটি নগরী সুইচ্চ দুর্গপ্রাচীর ও সুবৃহৎ পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল যার প্রস্থ প্রায় ৫০ ফুট এবং গভীরতা ১০ থেকে ১৫ ফুট। দুর্গর প্রাচীর মাটি ও ইটের মিশ্রণে তৈরী ছিল। দুর্গ নগরীটি কয়েকটি ক্ষুদ্র নগরীতে বিভক্ত ছিল। পূর্ববাহুর সবচেয়ে বাইরের নগরীতে নিম্নবর্গীয় মানুষজন বসবাস করতো এবং স্থানটির নাম ছিরৎল হরিরঘর।”

ইতিহাস[সম্পাদনা]

দ্য হিস্ট্ররী, এন্টিকুইটিয, টপোগ্রাফি এণ্ড স্ট্যাটিসটিকস অব ইস্টার্ণ ইন্ডিয়া গ্রন্থের (৩য় খণ্ড) টাইটেল পাতা, ১৮৩৮ খ্রি.

প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন, দুর্গটি নির্মাণ করেছেন রাজা পৃথু ও এটিকে তিনি রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করতেন। ইতিহাসবিদদের মতে, ১২৫৭ সালে সুলতান মুঘিসউদ্দীন কামরূপ রাজ্য আক্রমণ করলে এটি সুলতানী শাসনে চলে আসে। ১৪৫৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভিতরগড় অঞ্চলটি কামরূপ রাজ্যের হোসেন শাহ শাসন করেছেন। এছাড়াও এ অঞ্চলটি একসময় গৌড়প্রাগজ্যোতিষপুরের অংশ ছিলো বলে মনে করা হয়। খনন কাজের সময় দুর্গটিতে দুটি প্রাচীন মন্দিরও আবিষ্কৃত হয়।

প্রত্নখনন কার্যক্রম[সম্পাদনা]

সম্প্রতিকালে প্রাচীন ভিতরগড় দুর্গটিতে ২০০৯ সালের পর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ আগস্ট ২০১৬ তারিখে বাংলাদেশের সহযোগী অধ্যাপক প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. শাহনাজ হুসনে জাহান লীনার তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকবার খননকাজ পরিচালনা করা হয়েছে।[২] এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এখানে সামগ্রিক জরীপ পরিচালনা করেছে।

ভিতরগড় সংরক্ষণ সমিতি[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব সুহেল আহমেদ চৌধুরী, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এন. এম. হাবিবুল্লাহ এবং শাহনাজ হুসনে জাহানের নেতৃত্বে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ভিতরগড় সংরক্ষণ সমিতি (ইং: Bhitargarh Promotional Society) গঠিত হয়। এই সমিতি ভিতরগড় দুর্গ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে। এছাড়া ভিতরগড়ে উৎখনন এবং উৎখননে প্রাপ্ত প্রত্ননিদর্শনের সংরক্ষণের বিষয়েও এই সমিতি সক্রিয় রয়েছে। এই সমিতি ইতোমধ্যে ভিতরগড়দুর্গের অভ্যন্তরে ২২ প্রত্নস্থল চিহ্নিত করেছে। এ প্রত্নস্থলসমূহ খালপাড়া গ্রাম ছাড়াও প্রধানপাড়া, ছোট কামাত, চুমানুপাড়া, কমলাপাড়া, সেনপাড়া, পেশকার পাড়া, জমাদার পাড়া, বড় কামাত, মেহনা ভিটা ও সিপাহি পাড়া গ্রাম জুড়ে অবস্থিত। [৩][৪]

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]