বিষয়বস্তুতে চলুন

সুহাইব রুমি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুহাইব রুমী
صُهَيْب ٱلرُّومِيّ
জন্মমেসোপটেমিয়া
জাতিরোমন
জন্ম৩৫ হিজরি পূর্ব
মৃত্যুহিজরি ৩৮
দাফনজান্নাতুল বাকী, হিজাজ
(বর্তমান সৌদি আরব)
কুনিয়াআবু ইয়াহিয়া
(أَبُو يَحْيَىٰ)
ধর্মইসলাম
সুন্নী

সুহাইব রুমি (আরবি: صهيب الرومي) (জন্ম আনু. ৫৮৭), সুহাইব ইবনে সিনান বলেও পরিচিত, ছিলেন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের একজন প্রাক্তন দাস। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং তিনি মুহাম্মদ (স:) এর অন্যতম সাহাবী।[]

প্রাথমিক জীবন

[সম্পাদনা]

সিনান ইবনে মালিক নামক জনৈক আরব ব্যক্তি ৫৯১ সালে আলউবাল্লাহ শহরে পারসিয়ান সাম্রাজ্যের পক্ষে শাসন পরিচালনা করতেন।[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন] শহরটি বর্তমানে বসরার অন্তর্গত এবং ফোরাত নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। সুহাইব ছিলেন তার অন্যতম পুত্র। সুহাইবের মা তাকে একদিন একটি গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে এসময় বাইজেন্টাইন সৈনিকরা আক্রমণ করে এবং বিপুল সংখ্যক লোককে বন্দী করে নিয়ে যায়। সুহাইব তাদের অন্যতম ছিলেন।

সুহাইবকে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের একটি দাস বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তিনি কয়েকজন মনিবের অধীনে থাকতে শুরু করেন। দাস হিসেবে বাইজেন্টাইন ভূখন্ডে তিনি ২০ বছর কাটিয়েছিলেন। তিনি তৎকালীন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ভাষা গ্রীক ব্যবহার করে বেড়ে উঠেন এবং আরবি অনেকাংশে ভুলে যান। সুযোগ পাওয়ার পর তিনি দাসত্ব থেকে পালিয়ে যান এবং আশ্রয়ের জন্য মক্কার দিকে অগ্রসর হন। এখানে লোকেরা তার ভাষা ও উজ্জ্বল চুলের কারণে তাকে সুবাইব আর রুমি বা "রোমান" বলে ডাকতে শুরু করে। তিনি মক্কার অভিজাত আবদুল্লাহ ইবনে জুদানের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে থাকেন এবং তার ব্যবসায় নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ইসলাম গ্রহণ এবং মদিনায় হিজরত

[সম্পাদনা]

মুহাম্মদ ইসলাম প্রচার শুরু করার পর তিনি তার সাথে সাক্ষাত করেন ও এরপর ইসলাম গ্রহণ করেন। তার ইসলাম গ্রহণের খবর শোনার পর মক্কার শাসকশ্রেণীর কুরাইশরা তাকে হয়রানি করতে থাকে। মুসলিমরা মদিনায় হিজরত শুরু করার পর তিনি মক্কায় মুহাম্মদ ও আবু বকরের সাথে থেকে যান। কুরাইশরা এরপর তার প্রতি নজর রাখতে শুরু করে যাতে মক্কা থেকে বেরিয়ে যেতে না পারেন। মুহাম্মদ ও আবু বকরের হিজরতের পর তিনি কয়েকবার চেষ্টা করেও চলে যেতে ব্যর্থ হন।

এক রাতে সুহাইব পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হবার ভান করেন এবং বেশ কয়েকবার প্রাকৃতিক কর্মের জন্য বাইরে যাচ্ছেন বলে বেরিয়ে পড়েন। তার উপর নজর রাখা লোকেরা এসময় অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। সুহাইব এরপর অস্ত্র সজ্জিত হয়ে তার বাহনে করে মদিনার দিকে রওয়ানা হন। বুঝতে পেরে প্রতিপক্ষ তার পিছু ধাওয়া করে তার নিকটে পৌছায়। তাদেরকে অগ্রসর হতে দেখে তিনি একটি পাহাড়ের উপর উঠে ধনুক উচিয়ে ধরে বলেন:

"কুরাইশের লোকেরা! আল্লাহ শপথ, তোমরা জানো যে আমি অন্যতম সেরা তীরন্দাজ এবং আমার নিশানা নির্ভুল। আল্লাহর শপথ, যদি তোমরা আমার কাছে আস, আমার কাছে থাকা প্রত্যেকটি তীর দিয়ে আমি তোমাদের একেকজনকে হত্যা করব। এরপর আমি তলোয়ার হাতে নেব।"

এরপর প্রতিপক্ষের লোকেরা উত্তর দেয়, "আল্লাহর শপথ, আমরা তোমাকে জানমাল নিয়ে আমাদের কাছ থেকে পালাতে দেব না। তুমি মক্কায় দুর্বল ও দরিদ্র হিসেবে এসেছিলে এবং তোমার যা আছে তা তুমি অর্জন করেছ।"

সুহাইব উত্তরে বলেন, "যদি আমি আমার সম্পদ তোমাদের জন্য ছেড়ে যাই তবে কী বল? তোমরা কি আমাকে আমার পথে যেতে দেবে?" এরপর তারা হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয়।

তিনি মক্কায় তার বাড়ির বর্ণনা দেন। এতে তার অর্থ ছিল। এরপর তারা তাকে যেতে দেয়। তিনি কুবায় পৌছালে মুহাম্মদ তাকে দেখেন এবং বলেন, "তোমার লেনদেন ফলপ্রসূ হয়েছে, হে আবু ইয়াহিয়া। তোমার লেনদেন ফলপ্রসূ হয়েছে।" একথা তিনি তিনবার বলেন। একথা শুনে তিনি আনন্দিত হন এবং বলেন, "আল্লাহর শপথ, রাসুলুল্লাহ, আমার পূর্বে কেউ আপনার কাছে আসেনি এবং শুধু জিব্রাইলই আপনাকে একথা বলতে পারে।"

উমরের মৃত্যুর পরবর্তী সময়

[সম্পাদনা]

মুসলিম সমাজে সুহাইবের অবস্থান উচ্চ পর্যায়ে ছিল। খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব তার মৃত্যু থেকে পরবর্তী খলিফা নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সময়ের জন্য তাকে মুসলিমদের নেতৃত্বের ভার দিয়ে যান।

আবু লুলু নামক ব্যক্তি উমর ইবনুল খাত্তাবকে ছুরিকাহত করার পর তিনি উসমান ইবনে আফফান, আলী ইবন আবী তালিব, জুবায়ের ইবনুল আওয়াম, আবদুর রহমান ইবনে আউফসাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসকে ডেকে পাঠান। তিন দিনের মধ্যে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে তার উত্তরসুরি ও মুসলিমদের খলিফা হিসেবে নির্বাচনের জন্য তাদের দায়িত্ব দিয়ে যান।

উসমান ইবনে আফফানের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত এই সংক্ষিপ্ত সময়ে সুহাইব রুমি নামাজের ইমামতি ও মুসলিমদের নেতা হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Suhaib bin Sinan"islamweb.net (আরবি ভাষায়)। ২০২০-০৮-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৪ 

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]