শরণাগতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শরণাগতি (সংস্কৃত: शरणागति ) বা প্রপত্তি (সংস্কৃত: प्रपत्ति) হলো বৈষ্ণবধর্মের ঐতিহ্যে ঈশ্বরের (নারায়ণ-কৃষ্ণ) কাছে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া। রামানুজচৈতন্য মহাপ্রভু দ্বারা প্রতিষ্ঠিত গৌড়ীয় সম্প্রদায়, শ্রীসম্প্রদায়ের মধ্যে ভক্তি ঐতিহ্যে বিষ্ণুর প্রতি ভক্তির ভিত্তি শরণাগতির প্রক্রিয়াটি গঠন করে। রামানুজ বিষ্ণু ও তাঁর সহধর্মিণী লক্ষ্মীর কাছে আত্মসমর্পণকে জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য বলে মনে করেন, অন্যদিকে চৈতন্য কৃষ্ণ ও তাঁর হ্লাদিনী শক্তি রাধাকে সর্বোত্তম হিসেবে আত্মসমর্পণের ওপর জোর দেন।

সাহিত্য[সম্পাদনা]

শ্রী বৈষ্ণব গ্রন্থগুলি তাদের শরণাগতির অনুশীলনের স্বীকৃতি প্রদান করে। যমুনাচার্য নিন্মলিখিত পদ্ধতিটিকে পরিত্রাণ খোঁজার প্রচলিত অনুশীলনের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছেন:[১]

ন ধর্মমণিস্তোস্মি ন চত্মাবেদি
ন ভক্তিমাম্ স্তবচরণরবিন্দে ।
অকিঞ্চনো অনন্যাগতিসারণ্য
ত্বপদমুলম্ শরণম্ প্রপদে ।।


যে ব্যক্তি কর্ম (কর্মযোগ), জ্ঞান (জ্ঞানযোগ) এবং ভক্তি (ভক্তিযোগ) এর পথ অনুসরণ করতে অক্ষম এবং যার পরিত্রাণের অন্য কোন পথ নেই তার জন্য আত্মসমর্পণের (শরণাগতি) পথ উন্মুক্ত।

এই শ্লোকে বেদান্ত দেশিক এর ভাষ্য তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে:[২]

অহমস্যাপরাধনমালায়োকিঞ্চনো গতিহি ।
ত্বমেভোপয়বতুতো আমি ভবেতি প্রার্থনামতিহি সর্বনাগতিরিত্যুক্ত সা দেবা স্মীন প্রযুজ্যতাম্ ।।

শরণাগতি হল ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার মানসিক অবস্থা যে তিনি একাই ভক্তকে রক্ষা করার উপায় হয়ে উঠুন, এই উপলব্ধির সাথে যুক্ত যে ভক্ত সম্পূর্ণ অসহায়, পাপী, এবং মুক্তির অন্য কোন আশা ছাড়াই।

সংস্কার[সম্পাদনা]

শরণাগতির আনুষ্ঠানিক আচার হল বৈদিকপুরাণ শাস্ত্রীয় এবং ঐতিহ্য সমর্থিত আচার যাকে পঞ্চসংস্কার বা "পাঁচটি ছাপ" বলা হয় এবং অন্য নাম হল সমশ্রায়ণম। ব্যক্তি নিম্নলিখিতগুলি পায়:

  • নাম সংস্কার - দীক্ষার 'আধ্যাত্মিক' নাম যেমন  বিষ্ণুর নাম, বা তাঁর ভক্তদের একজন (যেমন রামানুজ), দাস শব্দের সাথে প্রত্যয়িত (অর্থ "সেবক" বা এর সেবক)। এর উদাহরণ হতে পারে বিষ্ণু দাস, বা রামানুজ দাস।
  • পুন্ড্র সংস্কার - কপালে তিরুমান বা ঊর্ধপুণ্ড্রের প্রয়োগ এবং শরীরের নির্দিষ্ট অংশে ১২টি চিহ্ন, যা নির্দেশ করে যে ব্যক্তিটি বিষ্ণুর অন্তর্গত, এবং তাদের দেহ, মন ও আত্মা হল লক্ষ্মীর মন্দির- নারায়ণ।
  • থপ সংস্কার - গুরুর দ্বারা শঙ্খ (পাঞ্চজন্য) এবং বিষ্ণুর চক্র (সুদর্শন) কাঁধে বিশেষ ছাপ দেত্তয়া।
  • যজ্ঞ সংস্কার - গুরুর কাছ থেকে লক্ষ্মী-নারায়ণের অর্চনা বা পূজা, বা আচার উপাসনা করা শেখা।
  • মন্ত্র সংস্কার - গুরুর কাছ থেকে বিষ্ণুকে উৎসর্গ করা তিনটি বিশেষ মন্ত্র শেখা।

নীতিমালা[সম্পাদনা]

শ্রী বৈষ্ণববাদ[সম্পাদনা]

শ্রী বৈষ্ণব ঐতিহ্যে, শরণাগতি ছয়টি নীতিতে বিভক্ত:

  1. ঈশ্বরের ভক্তির জন্য অনুকূল জিনিসগুলি গ্রহণ করা (অনুকুলস্য সংকল্প)
  2. ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বিরুদ্ধ যে সমস্ত জিনিস প্রত্যাখ্যান করা হয় (প্রতিকুলস্য বর্জনম্)
  3. ঈশ্বরকে সকল পরিস্থিতিতে একজনের রক্ষাকর্তা হিসাবে বিবেচনা করা
  4. ঈশ্বরকে একজনের রক্ষণাবেক্ষণকারী হিসাবে গ্রহণ করা (গোপ্তর্তে বরণম্)
  5. ঈশ্বরের সেবায় সর্বস্ব সমর্পণ (আত্ম-নিক্ষিপ্ত)
  6. নম্র মনোভাব গড়ে তোলা (কর্পণ্য)

গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদ[সম্পাদনা]

গৌড়ীয় ঐতিহ্যে, শরণাগতি দশটি নীতিতে বিভক্ত:

  1. দৈন্য (বিনয়)
  2. আত্ম নিবেদন
  3. গোপতিত্বে বরণ
  4. অবস্য রাক্ষসিবে কৃষ্ণ বিশ্ব পালন- ভক্তিমূলক সেবার জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ প্রত্যাখ্যান
  5. ভক্তি অনুকুল মাত্র করিয়ের স্বীকার
  6. ভক্তি প্রতিকুল ভব বর্জানঙ্গীকার
  7. ভজন লালস
  8. সিদ্ধি লালস
  9. বিজ্ঞপ্তি
  10. শ্রী নাম মাহাত্ম্য

পাঁচটি অঙ্গ[সম্পাদনা]

বিশিষ্টাদ্বৈত দর্শনে, শরণাগতি ৫টি উপাদান বহন করে: এই পাঁচটিকে অঙ্গ বলা হয় এবং এগুলোর অনুগামীরা অঙ্গি নামে পরিচিত।

  1. নিজের অসহায়ত্বের স্বীকৃতি
  2. পুনরায় ভুল না করার সংকল্প
  3. নিয়ম মেনে চলার অঙ্গীকার
  4. অটল বিশ্বাসের অধিকারী যে ঈশ্বরই একমাত্র আশ্রয়
  5. রক্ষাকর্তা হিসাবে ঈশ্বরের সন্ধান করা

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Umakantham. C (২০০১)। Greatness Of Saranagati In Sri Vaishnavism 
  2. Umakantham. C (২০০১)। Greatness Of Saranagati In Sri Vaishnavism 

উৎস[সম্পাদনা]

  • The Hindu newspaper dated january 08-Sunday-2017 (article: Tiruppavai leads us to Sri Vaikuntha) Special Issue - Vaikunta Ekadasi
  • Sri Vaishnavism: an Elementary treatise for beginners, published Sri Thillasthanam Swamy Kainkarya Sabha, Bangalore India & the Sri Vishishtadvaita Research Centre, Madras India