মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মো. ইদ্রিস আলী খান
মৃত্যু৩১ মার্চ, ১৯৭২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

মো. ইদ্রিস আলী খান (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ৩১ মার্চ, ১৯৭২) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খানের জন্ম মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের তেঘরিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম নওশের আলী খান এবং মায়ের নাম হাবিবুন নেছা। তার স্ত্রীর নাম সুলতানা খান। তার তিন ছেলে, দুই মেয়ে। [২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে জয়পুরহাট চিনিকলে কর্মরত ছিলেন মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান। চিনিকলে যোগ দেওয়ার আগে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইএমই কোরে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রতিরোধযুদ্ধে যোগ দেন। এ সময় বৃহত্তর বগুড়া রাজশাহী জেলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সফল অ্যামবুশে তিনি নেতৃত্ব দেন। পরে মুক্তিবাহিনীর ৭ নম্বর সেক্টরের হামজাপুর সাব-সেক্টরে সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধেও প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। ১০ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলার বিরলে এক যুদ্ধে তিনি আহত হন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ২৫ মে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার অন্তর্গত গোবিন্দপুরের অবস্থান ছিল পার্বতীপুর-সান্তাহার রেলপথ পাঁচবিবি এলাকায় ভারতীয় সীমান্তের খুব কাছে। সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খানের নেতৃত্বে সেখানে চলন্ত ট্রেনে অ্যামবুশ করেন। ২৪ মে গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা ভারতের অভ্যন্তরের সোবরা ক্যাম্প থেকে গোবিন্দপুরে যান। সোবরা থেকে গোবিন্দপুরের দূরত্ব কম ছিল না। এই অপারেশনের জন্য মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান নিজ উদ্যোগে ভারতের বালুরঘাটে একটি লেদ মেশিনের দোকানে হাই কার্বন স্টিলের এমএস পাইপ দিয়ে ছয়টি তিন ইঞ্চি মর্টার ব্যারেল তৈরি করেন। সেগুলো দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নিখুঁতভাবে গোলা নিক্ষেপ করেন। এ ছাড়া মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট তাদের আরআর গান ও রকেট লাঞ্চার এবং সেগুলো চালানোর জন্য লোকবল দিয়ে সাহায্য করে। সেদিন গভীর রাতে ভারত থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে একদল মুক্তিযোদ্ধা প্রবেশ করলেন বাংলাদেশের ভেতরে। তাদের নেতৃত্বে মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী খান। দ্রুত তারা পৌঁছে গেলেন নির্দিষ্ট স্থানে। মুক্তিযোদ্ধারা অন্ধকারে শুরু করলেন বাংকার খোঁড়ার কাজ। সকাল হওয়ার আগেই শেষ করলেন সব প্রস্তুতিমূলক কাজ। তারপর অবস্থান নিলেন বাংকারের ভেতরে। মুক্তিযোদ্ধারা ওত পেতে বসে ছিলেন। তারা অপেক্ষায় ছিলেন ট্রেনের জন্য। একটু পর দেখা গেল, একটি ট্রেন এগিয়ে আসছে। ট্রেন আওতার মধ্যে আসামাত্র গর্জে উঠল তাদের আরআর গান ও রকেট লাঞ্চার। একই সঙ্গে শুরু হলো মেশিনগান ও লাইট মেশিনগানের গুলি। নির্ভুল গোলাগুলিতে ট্রেনের বেশির ভাগ বগি বিধ্বস্ত। অর্ধেক বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে গেল। এরপর মুক্তিযোদ্ধারা সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত সরে পড়লেন সেখান থেকে। ওই অপারেশনে ট্রেনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ট্রেনে ছিল অনেক পাকিস্তানি সেনা ও বিপুলসংখ্যক সশস্ত্র বিহারি। অ্যামবুশে প্রায় ৮০ জন পাকিস্তানি সেনা ও সশস্ত্র বিহারি হতাহত হয়। জীবিতরা রেললাইনকে আড়াল করে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। ওই অপারেশনের পর পার্বতীপুর-সান্তাহার রেলপথে বেশ কয়েক দিন রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ:০১-১১-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]