বিষয়বস্তুতে চলুন

আমীন আহম্মেদ চৌধুরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মেজর জেনারেল

আমীন আহম্মেদ চৌধুরী

বীর বিক্রম, পিএসসি, আল নোমান
জন্ম(১৯৪৬-০২-১৪)১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬
ফেনী, বাংলাদেশ
মৃত্যু২০ এপ্রিল ২০১৩(2013-04-20) (বয়স ৬৭)
ঢাকা, বাংলাদেশ
Place of burial
বনানী কবরস্তান
আনুগত্য বাংলাদেশ (১৯৭১-১৯৮৯)
 পাকিস্তান (১৯৬৪-১৯৭১)
সেবা/শাখা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
 পাকিস্তান সেনাবাহিনী
পদমর্যাদা মেজর জেনারেল
যুদ্ধ/সংগ্রামবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ
পুরস্কারবীর বিক্রম
আল নোমান ফাস্ট ক্লাস (ওমান)
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধা সংসদ
অন্য কাজনিরাপত্তা বিশ্লেষক
ওমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরী (জন্ম: ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬ - মৃত্যু: ১৯ এপ্রিল, ২০১৩[]) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। []

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

[সম্পাদনা]

আমীন আহম্মেদ চৌধুরীর জন্ম ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামে। তার বাবার নাম সুলতান আহম্মেদ চৌধুরী এবং মায়ের নাম আজিজের নেছা চৌধুরানী। তার স্ত্রীর নাম সৈয়দা লতিফা আমীন। তাদের দুই ছেলে।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা আমীন আহম্মেদ চৌধুরী ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি চট্টগ্রামে কর্মরত বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধকরণে গোপনে নানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২৫ মার্চ ঢাকায় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকা থেকে পালিয়ে নিজ এলাকা হয়ে ভারতে যান এবং নানা ঘটনাপ্রবাহের পর মুক্তিবাহিনীর জেড ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত হন। স্বাধীনতার পর পর্যায়ক্রমে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন তিনি। সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকাবস্থায় প্রেষণে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে প্রথম সাফ গেমস আয়োজনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট শেরপুর জেলার নকশী বিওপিতে ভয়াবহ এক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই নকশী বিওপির যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন আমীন আহম্মেদ চৌধুরী। পাকিস্তান সেনাবাহিনী নকশী বিওপি দুর্গের আদলে সুসজ্জিত করেছিল। এখানে মোতায়েন ছিল প্রায় এক কোম্পানি সুপ্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সেনা। মুক্তিযোদ্ধারা বেশির ভাগ ছিলেন মাত্র ২৮ দিনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। যুদ্ধের পূর্ব-অভিজ্ঞতা তাদের ছিল না। ওই যুদ্ধই ছিল তাদের জীবনের প্রথম যুদ্ধ। ৩ আগস্ট দুই কোম্পানি যোদ্ধা নিয়ে নকশী বিওপি আক্রমণ করেন আমীন আহম্মেদ চৌধুরী। অ্যাসেম্বলি এরিয়া থেকে যোদ্ধারা অত্যন্ত সাবলীল গতিতে এফইউপিতে (ফর্মিং আপ প্লেস) রওনা হন। মাঝপথে নালা ক্রস করার সময় তারা কোনো শব্দ করেননি। এর আগে যোদ্ধাদের নিয়ে পানির মধ্যে বিনা শব্দে চলার প্র্যাকটিস করেছিলাম। রাত তিনটা ৩৫ মিনিটে এফইউপিতে পজিশন নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। তিনটা ৪৫ মিনিটে মুক্তিযোদ্ধাদের আর্টিলারি গর্জে ওঠে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, যুদ্ধের আগেই এফইউপিতে নিজেদের আর্টিলারির কয়েকটি গোলা এসে পড়ে। এতে ছয় যোদ্ধা (গণবাহিনীর) গুরুতর আহত হন। একই সময় পাকিস্তানি আর্টিলারিও গর্জে ওঠে। এর মধ্যেই এক্সটেনডেড ফরমেশন তৈরি করেন মুক্তিযোদ্ধারা। একটু পর অ্যাসল্ট লাইন ফর্ম করে মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র উঁচু করে ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে এগিয়ে যান। শত্রু পাকিস্তানি সেনাদের বেয়নেট চার্জের জন্য তারা রীতিমতো দৌড়াতে থাকেন। এ সময় একজন মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য ‘নারায়ে তকবির’, ‘জয় বাংলা’, ধ্বনি দিলে মুক্তিযোদ্ধারাও ঘন ঘন ‘আল্লাহু আকবার’, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে যুদ্ধের ময়দান প্রকম্পিত করে তোলেন। ঠিক তখনই শত্রুর আর্টিলারির শেলভো ফায়ার (এয়ার ব্রাস্ট) এসে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এতে কিছু মুক্তিযোদ্ধা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। আমীন আহম্মেদ চৌধুরীর ডান পায়ে একটা শেল লাগে। পরে আমীন আহম্মেদ চৌধুরী এগিয়ে যাওয়ার সময় তার বাঁ পায়ে বাঁশের কঞ্চি বিঁধে। তিনি পড়ে যাই। তখন এক পাকিস্তানি সেনা অস্ত্র উঁচু করে তার দিকে ধেয়ে আসতে থাকলে সালাম (অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র, এক সুবেদার মেজরের ছেলে) নামে এক ছেলে তাকে মেরে ফেলে। কিন্তু অন্য জীবিত পাকিস্তানি সেনারা তাকে ধরার চেষ্টা করে। তিনি সাইড রোল, ক্রল করে সরে যাওয়ার সময় আবার তার ডান কনুইয়ে গুলি লাগে।[]

পুরস্কার ও সম্মাননা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "দৈনিক প্রথম আলো"। ২০১৮-০৯-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৬-০৮-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৯১। আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯০২৫৩৭৫ |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid character (সাহায্য)