মাহবুব উদ্দিন আহমেদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মাহবুব উদ্দিন আহমেদ
মৃত্যু
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

মাহবুব উদ্দিন আহমেদ (জন্ম: ১৯৪৫)বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মাহবুব উদ্দিন আহমেদের পৈতৃক বাড়ি বরিশাল জেলার সদর উপজেলার আমানতগঞ্জে। তার বাবার নাম আলতাফ উদ্দিন আহমেদ এবং মায়ের নাম জেবুননেছা বেগম। তার স্ত্রীর নাম নূপুর আহমেদ। তাঁদের দুই মেয়ে, এক ছেলে। ছেলের নাম অর্ণিব মাহবুব, লস এঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসকারী প্রতিশ্রুতিশীল বাংলাদেশী ফিউশন শিল্পী। তার মঞ্চ নাম বাবা নাইজা (ইংরেজি: BABA NYZA) নামেই বেশি পরিচিত সে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ১৯৭১ সালে ঝিনাইদহ মহকুমার মহকুমা পুলিশ প্রশাসক ছিলেন। মার্চে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে তিনি আশপাশের মহকুমায় কর্মরত কয়েকজন বাঙালি বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তাকে আলোচনার জন্য ঝিনাইদহে আমন্ত্রণ জানান। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা ঝিনাইদহে যান। ২১ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ তারা আলোচনা করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা শুরু করলে মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। ২৬ মার্চ তার নির্দেশে স্থানীয় পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধের প্রস্তুতি শুরু করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

প্রাথমিক প্রতিরোধ শেষে চুয়াডাঙ্গায় যান মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। ১ এপ্রিল ভোরে যশোর সেনানিবাস থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল ঝিনাইদহে রওনা হয়। পথিমধ্যে বিষয়খালীতে ইপিআর, পুলিশ ও ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে প্রতিরোধযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাধা দেন। তখন সেখানে যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানিরা পিছু হটে যায়। এ যুদ্ধে মাহবুব উদ্দিন সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এ যুদ্ধে বিজয়ের পরও নেতৃত্বের অভাবে মুক্তিযোদ্ধারা বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েন। কারণ তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো উপযুক্ত সামরিক কর্মকর্তা ছিল না। এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক অধিনায়ক আবু ওসমান চৌধুরী তার বাহিনীতে মাহবুব উদ্দিনসহ কয়েকজনকে অন্তর্ভুক্ত করেন। এভাবে ঝিনাইদহ এলাকায় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের কর্মকাণ্ড পুনরায় সংগঠিত হয়। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধারা মাহবুব উদ্দিনের নেতৃত্বে ঝিনাইদহ মুক্ত রাখতে সক্ষম হন এবং এপ্রিল মাসের শেষে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ক্রমে সাংগঠনিক রূপ পায়। পরবর্তীতে সেক্টর গঠিত হয় এবং মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ৮ নম্বর সেক্টরের অধীন একটি সাব-সেক্টরে অধিনায়কের দায়িত্ব পান। সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি সাতক্ষীরা জেলার ভোমরা এলাকায় ছিলেন। ২৮-২৯ মে সেখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে তিনি অত্যন্ত বীরত্বের সঙ্গে তার দলকে নেতৃত্ব দেন। সরাসরি যুদ্ধও করেন। তিনি ও তার অধীন মুক্তিযোদ্ধারা অসাধারণ রণকৌশল প্রদর্শন করেন। সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার কাকডাঙ্গা-বেলেডাঙ্গা-সোনাবাড়িয়ায় কয়েক দিন ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধ ছিল ৮ নম্বর সেক্টরের একটি ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় যুদ্ধ। মূল আক্রমণকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন মাহবুব উদ্দিন আহমেদ ও মোহাম্মদ শফিকউল্লাহ (বীর প্রতীক)। তারা বিরামহীনভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে থেকে নিজ নিজ দলের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে দুই দলের মুক্তিযোদ্ধারাই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। মাহবুব উদ্দিনের রণকৌশল ও বিচক্ষণতায় মুক্তিযোদ্ধারা চরম বিপর্যয় থেকে রক্ষা পান। এ যুদ্ধে তিনি আহত হন।[২]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৭-১২-২০১২"। ২০১৭-০১-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-৩১ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ১১৭। আইএসবিএন 9789849025375