আবদুল হাকিম (বীর বিক্রম)
আবদুল হাকিম | |
---|---|
![]() | |
মৃত্যু | ২০০১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ![]() ![]() |
পরিচিতির কারণ | বীর বিক্রম |
আবদুল হাকিম (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
আবদুল হাকিমের জন্ম নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার পাঁচগাঁও নিজ ভাওর গ্রামে। তার বাবার নাম দীন মোহাম্মদ এবং মায়ের নাম সাবেদা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম রুচিয়া খাতুন। তার তিন ছেলে, দুই মেয়ে। [২]
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
ইপিআরে চাকরি করতেন আবদুল হাকিম। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টার্সের অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। এরপর ১ নম্বর সেক্টর এলাকায় কিছুদিন যুদ্ধ করেন। পরে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর তৃতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের আলফা কোম্পানিতে। ছাতক, গোয়াইনঘাটসহ আরও কয়েক স্থানে তিনি সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। আবদুল হাকিম স্বাধীনতার পর আর চাকরি করেননি।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]
১৯৭১ সালের ৫ নভেম্বর সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকার রাধানগর সীমান্ত এলাকায় ছিল ছোট একটি বাজার। বাজারের পূর্ব পাশ দিয়ে পিয়াইন নদীর শাখা। এর উত্তর পারে জাফলং চা-বাগান। উত্তর-পূর্বদিকে কয়েক মাইল দূরে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বিওপি তামাবিল এবং ভারতের ডাউকি বিওপি। রাধানগরসহ গোয়াইনঘাট এলাকায় ছিল পাকিস্তানিদের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা অবস্থান। এখানে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট, পাঞ্জাব রেঞ্জার ও টসি ব্যাটালিয়ন। অক্টোবর মাসের শেষ দিকে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট পাকিস্তানিদের অবস্থানে আক্রমণের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের ভেতরে আসে। ৫ নভেম্বর রাধানগরে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। মুক্তিবাহিনীর ৪ নম্বর সেক্টরের ডাউকি সাব-সেক্টরের একদল মুক্তিযোদ্ধা, জেড ফোর্সের ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও মিত্রবাহিনীর ৫/৫ গুর্খা রেজিমেন্টের একদল সেনা যৌথভাবে এ যুদ্ধে অংশ নেয়। রাতে পাহাড়ি পথে হেঁটে আবদুল হাকিমসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা পৌঁছান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের কাছে। সেখানে কোদাল-খন্তা চালিয়ে শুরু হয় ছোট পরিখা খোঁড়ার কাজ। তারপর মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেন পরিখার ভেতরে। অধিনায়কের সংকেত পেলেই মুক্তিযোদ্ধাদের একযোগে আক্রমণ করার কথা কিন্তু তার আগেই পাকিস্তানিরা তাদের সুরক্ষিত প্রতিরক্ষা অবস্থান থেকে শুরু করে আর্টিলারি ও মর্টারের গোলাবর্ষণ। গোলাবর্ষণ ও গুলিবৃষ্টিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মাথা তোলাই প্রায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের। চরম প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও আবদুল হাকিমসহ কয়েকজন সাহসিকতার সঙ্গে পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকেন। কিন্তু আবদুল হাকিম বেশিক্ষণ লড়াই করতে পারলেন না। হঠাৎ একসঙ্গে চার-পাঁচটি গুলি এসে লাগল তার চোখ, বুক ও কোমরে। গুরুতর আহত হয়ে লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। সেদিন মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর আক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর বিপুলসংখ্যক সেনাসদস্য শহীদ হন। আহত হন আবদুল হাকিমসহ অনেকে। আবদুল হাকিমকে সহযোদ্ধারা উদ্ধার করে ভারতের শিলং হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৪-১১-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884।