আবিদুর রহমান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবিদুর রহমান
জন্ম৭ নভেম্বর, ১৯৪৮
মৃত্যু
২০ অক্টোবর, ২০১০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

আবিদুর রহমান (জন্ম: ৭ নভেম্বর, ১৯৪৮ - মৃত্যু: ২০ অক্টোবর, ২০১০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

আবিদুর রহমানের জন্ম টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ গ্রামে। তার বাবার নাম শফিকুর রহমান এবং মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম। তার স্ত্রীর নাম হামিদা রহমান। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। [২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন আবিদুর রহমান। ১৯৭১ সালে ফ্রান্সের তুলন নৌঘাঁটিতে সাব মেরিনার হিসেবে প্রশিক্ষণে ছিলেন। তার সঙ্গে আরও ১২ জন বাঙালি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাদের মধ্যে আবিদুর রহমানসহ আটজন ৩১ মার্চ তুলন থেকে পালিয়ে যান। কয়েক দিন পর ভারতে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। আবিদুর রহমান ১৬ আগস্টের পর আরও কয়েকটি অপারেশনে অংশ নেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য তারাবো ফেরিঘাট, সিদ্ধিরগঞ্জে খাদ্যগুদামে আক্রমণ, রসদবাহী জাহাজ ‘তুরাগে’ আক্রমণ উল্লেখযোগ্য।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

নারায়ণগঞ্জের নৌবন্দরে ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট মধ্যরাতে গোপন ক্যাম্প থেকে সহযোদ্ধা নৌ-কমান্ডোদের নিয়ে আবিদুর রহমান বেরিয়ে পড়েন। আবছা আলো, আবছা অন্ধকারের মধ্য দিয়ে নিঃশব্দে হেঁটে এ মুক্তিযোদ্ধারা পৌঁছে যান নদীর পাড়ে। অবস্থান নেন সারিবদ্ধ দোকানের পেছনে। অদূরে নৌবন্দর আর এর মধ্যে তারা দ্রুত অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। এমন সময় ঘটল এক বিপত্তি। দলনেতা আবিদুর রহমান কৌশলে সেই বাধা উপেক্ষা করে অপারেশন সফল করলেন। তোলপাড় পড়ে গেল বন্দরে। মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডোরা দেশের বিভিন্ন নৌবন্দরে একযোগে অপারেশন চালিয়ে গোটা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এই অপারেশনের সাংকেতিক নাম ছিল অপারেশন জ্যাকপট। নির্ধারিত দিন নৌ-কমান্ডোরা আবিদুর রহমানের নেতৃত্বে গোপন ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে অবস্থান নেন নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরের অপর পাড়ে। এ দলে ছিলেন মোট ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা। ১৫ জন নদীতে নেমে অপারেশন করেন। দলনেতা আবিদুর রহমানসহ পাঁচজন থাকেন স্থলভাগের নিরাপত্তায়। ১৫ জনের দলটি তিনজন করে পাঁচটি দলে বিভক্ত ছিল। তিনটি দল পানিতে নামার পর সেখানে হঠাৎ এক অস্ত্রধারী রাজাকার এসে হাজির হয় সেখানে। নৌ-কমান্ডোরা তাকে গুলি করে হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু কৌশলগত কারণে তখন তা করা সম্ভব ছিল না। কারণ কাছাকাছিই পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। এদিকে ওই রাজাকার সেখান থেকে আর সরছিল না। বিপজ্জনক এক অবস্থা হয়ে পড়ে তখন। এ অবস্থায় দলনায়ক আবিদুর রহমান ওই রাজাকারকে নিঃশব্দে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ছুরি হাতে একাই ক্রলিং করে ওই রাজাকারের কাছে গিয়ে অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন তার ওপর। আবিদুর রহমান রাজাকারের রাইফেলটি ছিনিয়ে নিয়ে তাকে বন্দী করেন। এরপর নৌ-কমান্ডোদের বাকি দুটি দল পানিতে নামে। যে তিনটি দল আগে পানিতে নেমেছিল তারা যে যাঁর টার্গেটে (জাহাজ, পন্টুন বা টাগ) মাইন লাগান। পরের দুটি দলও নির্দিষ্ট টার্গেটে মাইন লাগাতে সক্ষম হয়। তারপর তারা দ্রুত ফিরে আসেন আগের স্থানে। একটু পর শুরু হয় বিস্ফোরণ। বন্দরের সমুদয় জলরাশি ও দুই পাড় কেঁপে পরপর ১৫টি মাইন বিস্ফোরিত হয়। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৩-০২-২০১২"। ২০১৭-০৮-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০২-১৪ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ২৩১। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ৮৫। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]