বেন হলিউক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বেন হলিউক
২০০১ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে বেন হলিউক
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামবেঞ্জামিন কেইন হলিউক
জন্ম(১৯৭৭-১১-১১)১১ নভেম্বর ১৯৭৭
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু২৩ মার্চ ২০০২(2002-03-23) (বয়স ২৪)
পার্থ, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়া
উচ্চতা৬ ফুট ২ ইঞ্চি (১.৮৮ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাঅল-রাউন্ডার
সম্পর্কএজে হলিউক (ভ্রাতা)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৫৮৮)
৭ আগস্ট ১৯৯৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ টেস্ট৩১ আগস্ট ১৯৯৮ বনাম শ্রীলঙ্কা
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১৪৬)
২৫ মে ১৯৯৭ বনাম অস্ট্রেলিয়া
শেষ ওডিআই২৮ জানুয়ারি ২০০২ বনাম ভারত
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৯৬ - ২০০১সারে
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ২০ ৭৫ ১৩৬
রানের সংখ্যা ৪৪ ৩০৯ ২৭৯৪ ২৪৮১
ব্যাটিং গড় ১১.০০ ২০.৬০ ২৫.৮৭ ২৪.০৮
১০০/৫০ ০/০ ০/২ ৩/১৪ ০/১৪
সর্বোচ্চ রান ২৮ ৬৩ ১৬৩ ৯৮
বল করেছে ২৫২ ৬৪২ ৭২৯৩ ৪৮৩৩
উইকেট ১২৬ ১৪২
বোলিং গড় ৪৯.৭৫ ৬৬.৫০ ৩৩.৪৫ ২৮.২২
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট - -
সেরা বোলিং ২/১০৫ ২/৩৭ ৫/৫১ ৫/১০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২/– ৬/– ৬৮/– ৪৪/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৫ এপ্রিল ২০২০

বেঞ্জামিন কেইন হলিউক (ইংরেজি: Ben Hollioake; জন্ম: ১১ নভেম্বর, ১৯৭৭ - মৃত্যু: ২৩ মার্চ, ২০০২) মেলবোর্নে জন্মগ্রহণকারী অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করতে পারতেন বেন হলিউক

অস্ট্রেলিয়া থেকে ইংল্যান্ডে চলে যান। ১৯৯৬ সালে সারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৯৯৭ সালে স্বীয় ভ্রাতা অ্যাডাম হলিউকের সাথে একত্রে ইংল্যান্ডের একদিনের দলে যোগ দেন। ঐ বছর পর তারা একই খেলায় টেস্টে অংশ নেন। এরফলে, দুই ভাইয়ের একত্রে টেস্টে অংশগ্রহণের তৃতীয় ঘটনা সৃষ্টি করেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হবার পূর্বে তিনি দুইটি টেস্ট ও ২০টি ওডিআইয়ে অংশ নিয়েছিলেন।

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

অস্ট্রেলীয় প্রকৌশলী ও ইন্দোনেশীয় রমণীর সন্তান বেন হলিউক অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন এলাকায় ১৯৭৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।[১] হংকংয়ে ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনা ঘটে তার। সেখানে তার বয়স পাঁচ বছর হবার পূর্বে তার পরিবার দুই বছর অবস্থান করেছিলেন। এরপর তারা ইংল্যান্ডে চলে যান।[২]

সিডনিতে কিশোরদের ক্রিকেটে অংশ নেন। ৯ বছর বয়সে গ্ল্যাডেসভিল ডিস্ট্রিক্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিত্বকারী গ্ল্যাডেসভিল ডিস্ট্রিক্টের পক্ষে খেলেন। ঐ বয়সেই ফাস্ট বোলিং ও প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান হিসেবে বেশ পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৮৪ সালে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অ্যাডাম হলিউকের সাথে ইংল্যান্ডে চলে যান। দুই বছর সেখানে থাকেন। তারপর আরও ৩ বছর হংকংয়ে অবস্থান করে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে আসেন।[৩] মিলফিল্ড প্রিপারেটরি স্কুলে পড়াশুনো করার পর ওয়েসলি কলেজ পার্থে অধ্যয়ন করেন।[১]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বেন হলিউকের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। কাউন্টি ক্রিকেটের দ্বিতীয় মৌসুমে তিনি মাত্র পাঁচটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও ২১টি একদিনের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। কোন সেঞ্চুরি কিংবা কোন পাঁচ-উইকেট লাভ না করলেও সানডে লীগে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে অভিষিক খেলায় ৫/১০ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান।

১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সদস্যরূপে পাকিস্তানে সিরিজ জয়ে সবিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সারের দলীয় সঙ্গী অ্যালেক্স টিউডরের সাথে বোলিং উদ্বোধনে নামেন ও মাঝারিসারিতে রান সংগ্রহে অগ্রসর হন। এপ্রিলে, এজবাস্টনে অনুষ্ঠিত খেলায় বাদ-বাকী একাদশের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড এ দলের বিপক্ষে অপরাজিত ৪৬ রানসহ ৩/২২ পান ও সকলের নজর কাড়েন।

দর্শনীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমায় খেলতেন। কার্যকর মিডিয়াম পেসার হিসেবে উইকেট লাভে সক্ষমতা দেখাতেন। ১৯৯৪ সালে ভাইয়ের সাথে সারে দলে যোগ দেন।[১] ১৯৯৬ সালে সারের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন। মিডলসবোরার অ্যাকলাম পার্কে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ৪/৭৪ লাভ করেছিলেন তিনি।[৩] ঐ একই বছর এনবিসি ডেনিস কম্পটন পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে লর্ডসে ম্যান অব দ্য ম্যাচের অধিকারী হন। বেনসন এন্ড হেজেস কাপের চূড়ান্ত খেলায় কেন্টের বিপক্ষে খেলতে নামেন তিনি। দুই উইকেট লাভের পাশাপাশি ১১২ বলে ৯৮ রান তুলে সারে দলকে বিজয়ী হতে সহায়তা করেন।[১]

১৯৯৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপকে ঘিরে বিতর্কের বাইরে অবস্থান করেন ও অ্যাডাম হলিউককে ইংল্যান্ড দলে খেলার সুযোগ দেয়া হয়। এর পরিবর্তে ১৯৯৯ সালে সারের চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা বিজয়ে ১২ খেলায় চারটি অর্ধ-শতরান ও ২০ উইকেট নিয়ে তিনি প্রভূতঃ ভূমিকা রাখেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে কেবলমাত্র একবারই পাঁচ-উইকেট লাভের কৃতিত্ব দেখান। ওভালে গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে ৫/৫১ পান তিনি। পরের বছর সারে দলের শিরোপা জয়সহ একদিনের লীগে দ্বিতীয় বিভাগে শীর্ষস্থানে থাকলেও আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তাকে দলের বাইরে রাখা হয়। পূর্ববর্তী চ্যাম্পিয়নশীপের নয়টি খেলায় তিনি মাত্র ১৩৮ রান ও আট উইকেট দখল করতে পেরেছিলেন।

১৯৯৯ সালে সারে দলের সদস্যরূপে বেন হলিউককে কাউন্টি ক্যাপ প্রদান করা হয়। এরপর থেকে তার খেলার মান নিম্নমূখী হতে থাকে। আগস্ট, ২০০০ সাল থেকে কাউন্টি দলে নিয়মিতভাবে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। তবে, কাউন্টি দলটি উপর্যুপরী দুইবার কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভে সক্ষম হয়েছিল।

জুলাই, ২০০১ সালে লর্ডসের বেনসন এন্ড হেজেস কাপের চূড়ান্ত খেলায় আবারও ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কারের অধিকারী হন। ৭৩ রান তুলে সারে দলকে গ্লুচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে বিজয়ী হতে সহায়তা করেন।[৪] এ বিজয়কে অস্ট্রেলিয়ায় গাড়ি দূর্ঘটনায় নিহত সারের তরুণ উইকেট-রক্ষক গ্রাহাম কার্সিকে উৎসর্গ করেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দুইটিমাত্র টেস্ট ও বিশটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন বেন হলিউক। ৭ আগস্ট, ১৯৯৭ তারিখে নটিংহামে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ২৭ আগস্ট, ১৯৯৮ তারিখে ওভালে সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

তিন-খেলার সিরিজে ২-০ ব্যবধানে আগুয়ান অবস্থায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডাম হলিউকের অপরাজিত অর্ধ-শতরানের ইনিংস সত্ত্বেও দল নির্বাচকমণ্ডলী ফাস্ট বোলিং অল-রাউন্ডারের সন্ধান করতে থাকে। তার ছোট ভাইকে এ স্থানে নেয়া হয়। মে, ১৯৯৭ সালে ১৯ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের ওডিআই দলে তাকে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

অধিনায়ক মাইক অ্যাথারটন তিন নম্বরে তাকে ব্যাটিংয়ে নামান। গ্লেন ম্যাকগ্রা’র তৃতীয় বলেই চার হাঁকান। ম্যাকগ্রা’র পরের ওভারে ১৩ রান তুলেন। এক হাঁটু নিচু রেখে শেন ওয়ার্নের বলে মিড-উইকেটের বাইরে বল ফেললে লর্ডসের ময়দান কেঁপে উঠে। লর্ডসে সিরিজের চূড়ান্ত খেলায় তিনি ৪৮ বলে ৭৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন।[৫] খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান। ইংল্যান্ড ঐ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জয়লাভের মাধ্যমে সফরকারী অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করে। তার এ ধরনের সুন্দর ক্রীড়াশৈলী গণমাধ্যমে বিখ্যাত ইংরেজ অল-রাউন্ডার ইয়ান বোথামের সাথে তুলনা করে।[৬][৭][৮]

টেস্ট ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯৯৭ সালের অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের ফলাফল ভালো হয়নি। ছয়-টেস্ট নিয়ে গড়া সিরিজে ২-১ ব্যবধানে স্বাগতিক দল পরাজয়বরণ করে। ৭ আগস্ট, ১৯৯৭ তারিখে সিরিজের পঞ্চম টেস্টে বেন ও অ্যাডামের একত্রে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। এরফলে, একই টেস্টে দুই ভাইয়ের ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্টে খেলার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও, গ্রেস ও হার্ন ভ্রাতৃদ্বয়ের পর অভিষেকে তাদের অংশগ্রহণের তৃতীয় ঘটনার উৎপত্তি হয়। ১৯৪৯ সালে ব্রায়ান ক্লোজের পর ১৯ বছর ২৬৯ দিন বয়সে খেলে ইংল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট খেলোয়াড়ের সম্মাননা লাভ করেন।[৩][৯]

নিজস্ব অষ্টম ওভারে গ্রেগ ব্লিউয়েটের উইকেট পান। তবে, দশ ওভার ফাস্ট-মিডিয়াম বোলিং করে ৫৭ রান খরচ করে ফেলেন। ৭ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে কয়েকটি ধ্রুপদী বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ২৮ রান তুলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২ রানে শেন ওয়ার্নের বলে এলবিডব্লিউ হন ও উভয় ইনিংসে বিদেয় নেন। ওডিআইয়ে হোয়াইটওয়াশের এক মাসের মধ্যে লর্ডসে গ্ল্যান ম্যাকগ্রা তার স্বরূপধারন করেন। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৮/৩৮ নিয়ে ইংল্যান্ডকে মাত্র ৭৭ রানে গুটিয়ে দেন।

তবে, অ্যাডাম হলিউক ৪৫ ও ২ রান তুলে দলে থেকে যান ও ওভালের স্বান্তনাসূচক জয়ের অংশীদার হন। তাসত্ত্বেও, ক্রিকেট রাইটার্স ক্লাব তরুণ বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন বেন হলিউক।

দলে প্রত্যাখ্যান[সম্পাদনা]

অ্যাশেজ সিরিজের পরপরই তাকে দলচ্যূত হতে হয়। ঐ বছরের শীতকালে শ্রীলঙ্কা গমন করেন। ইংল্যান্ড এ দলের সদস্যরূপে দুইটি শতরানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।[১] এরপর, ১৯৯৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরও একটি টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন বেন হলিউক।[১০] ব্যাট হাতে ১৪ ও ০ এবং বল হাতে ২/১০৫ পান।[১]

অ্যাডাম হলিউক শীতকালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করলেও তিনি কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কায় ইংল্যান্ড এ দলের সদস্যরূপে যান। শ্রীলঙ্কা এ দলের বিপক্ষে বোলিং উদ্বোধনে নামেন। বড়দের খেলায় প্রথমবারের মতো ১০৩ ও ১৬৩ রানের শতরানের সন্ধান পান। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। তবে, ২০০১ সালে ওভালে নিজস্ব সর্বশেষ খেলায় ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ১১৮ রানের ইনিংস খেলার পূর্ব-পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণী কিংবা একদিনের খেলায় আর শতরানের সন্ধান পাননি তিনি। মাইক অ্যাথারটনের পদত্যাগের কারণে অ্যাডাম হলিউককে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওডিআই সিরিজে অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে, ৫৫ রান ও দুই উইকেট লাভে তাকে আর দলে নেয়া হয়নি।

অন্যদিকে, ম্যাথু ফ্লেমিং, মার্ক ইলহাম, ক্রিস লুইসইয়ান অস্টিনকে দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলার জন্যে একদিনের দলে রাখা হয়। তাসত্ত্বেও, ওভালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের পরিবর্তে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবারও তিনি বল হাতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। মুত্তিয়া মুরালিধরনের ১৬ উইকেটের খেলায় ১৪ রান ও গোল্ডেন ডাক পান। ঐ মৌসুমের শীতকালে অস্ট্রেলিয়ায় অ্যালেক স্টুয়ার্টের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্যরূপে গমন করেন। শুরুতেই আঘাতের সমস্যায় জর্জড়িত হন ও খেলায় ছন্দ ফিরিয়ে আনতে পারেননি। এ সফরে তিনি মাত্র দুইটি প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও একটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নিতে পেরেছিলেন। হোবার্টে তাকে বিকল্প বোলারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়।

ঘরোয়া পর্যায়ের কয়েকটি একদিনের খেলায় বিরাট রান সংগ্রহ ও উইকেট লাভের ন্যায় সুন্দর ক্রীড়াশৈলী স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালের শুরুতে ইংল্যান্ডের ওডিআই দলে পুনরায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১] ব্রিস্টলে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৭ ও হেডিংলিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫৩ রান তুলেন। তন্মধ্যে, পাকিস্তানের বিপক্ষে দলের সংগ্রহ এক পর্যায়ে ৩৯/৫ ছিল।

মূল্যায়ন[সম্পাদনা]

৭৫টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২৫.৮৭ গড়ে ২,৭৯৪ রান ও ৩৩.৪৫ গড়ে ১২৬ উইকেট পান। পাশাপাশি, ১৩৬টি একদিনের খেলায় ২৪.৯৮ গড়ে ২৪৮১ রান ও ২৮.২২ গড়ে ১৪২ উইকেট পান। ১৯৯৯ ও ২০০০ সালের কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভসহ ১৯৯৭ ও ২০০১ সালের বেনসন এন্ড হেজেস কাপের শিরোপা বিজয়ী সারে দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

উইকেট-রক্ষকের দায়িত্বে নিয়োজিত অ্যালেক স্টুয়ার্ট মন্তব্য করেছিলেন যে, প্রতিষ্ঠিত ফাস্ট বোলারদের চেয়েও তার বল গ্লাভসবন্দী করতে বেশ কষ্টকর ছিল।

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

২৩ মার্চ, ২০০২ তারিখে মাত্র ২৪ বছর বয়সে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পার্থ এলাকায় বেন হলিউক নিহত হন। তার শবানুষ্ঠানে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ শেষে ইংরেজ অধিনায়ক নাসের হুসেনসহ সারের দলীয় সঙ্গী ও অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড়দের উপস্থিতি ছিল। শৈশবকালের বিদ্যালয় পার্থের ওয়েসলি কলেজের কাছাকাছি পারিবারিক অনুষ্ঠান নৈশ আহার শেষে হাল্কা বৃষ্টিতে পিচ্ছিল অবস্থায় কিনানা ফ্রিওয়ের মিল পয়েন্ট রোডের শেষপ্রান্তে নিজস্ব পর্শ ৯৪৪ দেয়ালে সংঘর্ষে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।[১০][১১] ২৪ বছর ১৩২ দিন বয়সে সর্বকনিষ্ঠ ইংরেজ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে তার মৃত্যু হয়।[১২]

তার মৃত্যুর পর অ্যাডাম হলিউক ও তার পরিবার চেজ হসপিস কেয়ার ফর চিলড্রেন নামীয় প্রতিষ্ঠানের তহবিল গঠনে বেন হলিউক ফান্ড গঠন করে।[১৩] এছাড়াও, অর্থ সংগ্রহ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০০৪ সালে ধারাবাহিকভাবে ১০০-মিটার রিলে দৌড় আয়োজনে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি হয়।[১৪]

হংকং ক্রিকেট সিক্সেস প্রতিযোগিতায় সেরা খেলোয়াড়কে তার সম্মানার্থে বেন হলিউক পুরস্কার প্রদান করা হয়।[২][১৫] তার ক্লাব সারেতে ২০০৩ সালে শিক্ষানবীশ তরুণ খেলোয়াড়কে বেন হলিউক পুরস্কার প্রদান করা হয়।[১৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Ben Hollioake: Obituary"telegraph.co.uk। ২৫ মার্চ ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২ 
  2. Sixes pay tribute to Ben Hollioake, SCMP, 22 Oct 2002
  3. Gough, Martin (২২ মার্চ ২০০২)। "Tragedy of burgeoning star"bbc.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২ 
  4. James, Steve (২০ সেপ্টেম্বর ২০১১)। "Surrey finally begin to emerge from shadows cast by Ben Hollioke's tragic death"telegraph.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  5. Ronay, Barney (২০ মার্চ ২০১২)। "Ben Hollioake: a glorious talent that never got the chance to wither"guardian.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২ 
  6. Brace, Matthew (২৪ মার্চ ২০০২)। "He said his farewells. Then a patch of oil cost cricket star Ben his life"guardian.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২ 
  7. "Ben Hollioake obituary"। scotsman.com। ২৫ মার্চ ২০০২। ১৭ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২ 
  8. Hobbs, David (২৫ মার্চ ২০০২)। "Obituary: Ben Hollioake"guardian.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২ 
  9. Randall, Charles (২২ মার্চ ২০০২)। "Hollioake death is 'devastating news'"telegraph.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২ 
  10. "Hollioake killed in car crash"bbc.co.uk। ২৩ মার্চ ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২ 
  11. "Police continue to probe Hollioake death crash"dailymail.co.uk। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১২ 
  12. "Obituary: Ben Hollioake"Wisden। espncricinfo.com। ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০১২ 
  13. Brett.O (2005) Life after cricket, BBC sport website, 21 June 2005. Retrieved 2011-05-29.
  14. World relay record for Hollioake, BBC sport website, 22 October 2004. Retrieved 2011-05-29.
  15. Pakistan knock-out England to win KARP Group Hong Kong Sixes 2011, espncricinfo.com, 30 Oct 2011
  16. Surrey set the title standard, The Guardian, 15 April 2003

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]