বিষয়বস্তুতে চলুন

গরুমারা জাতীয় উদ্যান

স্থানাঙ্ক: ২৬°৪২′ উত্তর ৮৮°৪৮′ পূর্ব / ২৬.৭° উত্তর ৮৮.৮° পূর্ব / 26.7; 88.8
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গরুমারা জাতীয় উদ্যান
গরুমারা জাতীয় উদ্যান
মানচিত্র গরুমারা জাতীয় উদ্যানের অবস্থান দেখাচ্ছে
মানচিত্র গরুমারা জাতীয় উদ্যানের অবস্থান দেখাচ্ছে
অবস্থানজলপাইগুড়ি জেলা, পশ্চিমবঙ্গ,  ভারত
স্থানাঙ্ক২৬°৪২′ উত্তর ৮৮°৪৮′ পূর্ব / ২৬.৭° উত্তর ৮৮.৮° পূর্ব / 26.7; 88.8
আয়তন১৩০০ বর্গকিলোমিটার
উদ্যানের প্রবেশমুখ

গরুমারা জাতীয় উদ্যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলের জলদাপাড়া-চাপড়ামারি-গরুমারা রেঞ্জের অন্তর্গত এই জাতীয় উদ্যান। এই বনভূমির আয়তন প্রায় ১,৩০০ বর্গকিলোমিটার।[] গরুমারায় হাতি, গণ্ডার, গউর, হরিণ, বুনো শুয়োর, ভারতীয় বাইসন, ময়ূর প্রভৃতি পশুপাখি রয়েছে।[] বনের প্রান্তদেশে রাভা, রাজবংশী, মেচ, কোঁচ, ওঁরাও, মুণ্ডা, টোটো ও কীচক উপজাতি বাস করে।[] গরুমারার মধ্য দিয়ে তিস্তা, তোর্সা, মালঙ্গী, জলঢাকা, রায়ডাক, সঙ্কোষ, মূর্তি, কালজানি প্রভৃতি নদনদী প্রবাহিত।[] গরুমারায় শাল, সেগুন, শিমূল, পলাশ, বহেড়া, পিপল , এলিফ্যান্ট ঘাস প্রভৃতি দেখা যায়।[]

১৯৭৬ সালে এটি জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায়।[] গরুমারায় মোট পাঁচটি ওয়াচ-টাওয়ার রয়েছে। এগুলি হল: মেদলা, চাপড়ামারি, যাত্রাপ্রসাদ রাইনো পয়েন্ট, চুকচুকি ও খুনিয়া চন্দ্রচূড় ওয়াচ-টাওয়ার।[] লাটাগুড়ি শহর এই জাতীয় উদ্যানের প্রবেশদ্বার।[] জাতীয় উদ্যানের পাশ দিয়ে লাটাগুড়ি শহর ঘেঁষে ন্যাওড়া নদী প্রবাহিত। এই নদীকে ঘিরে রয়েছে ন্যাওড়া চা বাগান।[]

গরুমারা জাতীয় উদ্যান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত ভারতের একটি জাতীয় উদ্যান৷ পার্ক বা উদ্যানটি হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ডুয়ার্স অঞ্চলে অবস্থিত৷ উদ্যানটি প্রাথমিকভাবে ভারতীয় গণ্ডার প্রজনন এবং পালনের জন্য বিখ্যাত৷ ২০০৯ সালে পার্কটি ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দ্বারা সেরা বন্যপ্রাণী সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষিত হয়েছে৷[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

গরুমারা জাতীয় উদ্যান ১৮৯৫ সাল হতে একটি সংরক্ষিত বন এলাকা ছিলো৷ ভারতীয় গণ্ডারের প্রজননের উপর ভিত্তি করে ১৯৪৯ সালে উদ্যানটি একটি বন্যপ্রাণীর সংরক্ষিত আবাসস্থল হিসাবে ঘোষিত হয়৷ ১৯৯৪ সালের ৩১ জানুয়ারি এটি ভারতীয় জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষিত হয়৷ যদিও এর মূল এলাকার আয়তন প্রাথমিকভাবে ৭ বর্গ কিলোমিটার ছিল, চারপাশে এর বিস্তৃতি ঘটিয়ে একে ৮০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত স্থান দেয়া হয়৷

অবস্থান

[সম্পাদনা]

রাজনৈতিক পরিচিতি: উদ্যানটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুঁড়ি জেলার মালবাজার এলাকায় অবস্থিত৷

ভৌগোলিক পরিচিতি: গরুমারা জাতীয় উদ্যানটি পূর্ব হিমালয়ের পাহাড়ের মাঝে সৃষ্টি হওয়া টেরাই বেল্টে অবস্থিত৷ এলাকাটিতে প্রচুর বনভূমি এবং নদী তীরবর্তী তৃণভূমি রয়েছে৷ অঞ্চলটিকে পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স বলা হয়৷ উদ্যানটি মূর্তি নদী এবং রাইডাক নদীর পলি হতে জমে উঠা ভূমিতে অবস্থিত৷ উদ্যানটির নিকটবর্তী নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা জলঢাকা নদী৷

জলবায়ু: এখানকার তাপমাত্রা নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ থেকে ২০° সেলসিয়াস(৫০ থেকে ৭০° ফারেনহাইট), মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে ২৪ থেকে ২৭° সেলসিয়াস(৭৫ থেকে ৮১° ফারেনহাইট) এবং মে থেকে অক্টোবর মাসে ২৭ থেকে ৩৭° সেলসিয়াস(৮১ থেকে ৯৯° ফারেনহাইট)৷ এখানে মে মাসের মাঝামাঝি হতে অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সাধারণত অধিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৮২ সেন্টিমিটার(১৫০ ইঞ্চি)৷

উদ্ভিদকূল

[সম্পাদনা]

অঞ্চলটিতে সাধারণত যে ধরনের উদ্ভিদ জন্মে থাকে, তা হলো:

  • শাল, সেগুন, শিরিষ, শিমুল ইত্যাদি৷
  • বাঁশগাছ, বিভিন্ন প্রজাতির ঘাস এবং নল খাগড়া ইত্যাদি৷

এছাড়াও অঞ্চলটিতে প্রচুর পরিমাণে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অর্কিড জন্মে থাকে৷

প্রাণীকূল

[সম্পাদনা]

উদ্যানটিতে প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৯৪ প্রজাতির পাখি, ২২ প্রজাতির সরীসৃপ, ৭ প্রজাতির কচ্ছপ, ২২ প্রজাতির মাছ এবং অন্যান্য ছোট বড় প্রাণী রয়েছে৷

স্তন্যপায়ী প্রাণী

[সম্পাদনা]

পার্কটিতে যে সকল তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভারতীয় গণ্ডার, গৌড়, এশিয়ান হাতি, ভালুক, চিত্রল হরিণ, সাম্বার হরিণ ইত্যাদি৷ ছোট আকৃতির তৃণভোজী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছ শিকারী হরিণ, বন্য শূকর ইত্যাদি৷ পার্কটিতে বড় আকারের মাংসাশী প্রাণীর সংখ্যা কম৷ এ ধরনের প্রাণীর মধ্যে পার্কটিতে শুধু পাওয়া যাবে চিতাবাঘ৷ এখানে অন্য প্রজাতির বাঘ, ভারতীয় বন্য কুকুর কিংবা ভারতীয় নেকড়ের দেখা পাওয়া ভারী দুষ্কর৷ অপরদিকে উদ্যানটিতে প্রচুর পরিমাণে ছোটো আকৃতির মাংসাশী প্রাণী রয়েছে৷ এদের মধ্যে রয়েছে গন্ধগোকুল, বেজি এবং ছোটো আকৃতির বিড়াল৷ গরুমারা জাতীয় উদ্যানটিতে প্রচুর সংখ্যক বন্য শূকর রয়েছে৷ এছাড়া বিপন্ন প্রায় পিগমি হগ এর ব্যাপারে পার্কটি হতে রিপোর্ট করা হয়েছে৷ এখানে প্রচুর সংখ্যক বীবরও রয়েছে৷ পার্কটিতে বড় আকৃতির কাঠবিড়ালিও দেখা যায় এবং বিরল প্রজাতির এক ধরনের খরগোশ সম্পর্কেও পার্কটি হতে রিপোর্ট করা হয়েছে৷

গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে যেসকল পাখি দেখা যায়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হাজারিকা, মৌটুসী, বুলবুলি, ফিঙে এবং ইন্ডিয়ান হর্ণবিল৷ এছাড়া উদ্যানটিতে প্রচুর সংখ্যক কাঠঠোকরা এবং ময়ূর রয়েছে৷ উদ্যানটি বিরল প্রজাতির ব্রাহ্মীণী হাঁসসহ অন্যান্য অভিবাসী পাখিদের অভিবাসন পথের মধ্য পড়ে৷

সরীসৃপ ও উভচর

[সম্পাদনা]

পার্কটিতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর সংখ্যক বিষাক্ত ও বিষহীন সাপ রয়েছে৷ এর মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান পাইথন, যা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ প্রজাতির একটি সাপ৷ এছাড়া রয়েছে কিং কোবরা, যা পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম একটি বিষাক্ত প্রজাতির সাপ৷

মূলত গোরুমারা জাতীয় উদ্যান ভারতে অবস্থিত অন্যতম একটি আকর্ষনীয় উদ্যান৷

জীববৈচিত্র্য

[সম্পাদনা]

এই জাতীয় উদ্যান বিভিন্ন বৃক্ষের জন্য সমৃদ্ধ। এছাড়া এশীয় হাতি, চিতাবাঘ, ভালুক, বুনো শুকর, সম্বর হরিণ প্রভৃতি দেখা যায়।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

চিত্রশালা

[সম্পাদনা]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. "গরুমারা অভয়ারণ্যে", পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়, সাপ্তাহিক বর্তমান, ১ জানুয়ারি, ২০১১
  2. "Centre says Gorumara best among the wild"। telegraphindia.com। 
  3. কল্যাণ চক্রবর্তী, বিশ্বজিত রায়চৌধুরী, ভারতের বন ও বন্যপ্রাণী, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১, কলকাতা, পৃষ্ঠা-১৩৫।