ইব্রাহিম হাক্কি এরজুরুমি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইব্রাহিম হাক্কী এর্জুরুমির মারিফেতনামার বিশ্ব মানচিত্র

ইব্রাহিম হাক্কী এর্জুরুমি (১৮ মে, ১৭০৩ - ২২ জুন, ১৭৮০) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের পূর্ব আনাতোলিয়ার এর্জুরুমের একজন জনপ্রিয় তুর্কি সুফি সাধক। তিনি ছিলেন একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ব্যক্তি: একজন রহস্যবাদী, কবি, লেখক, জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিদ, চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, দার্শনিক, হানাফি মাতুরিদি ইসলামী পণ্ডিত এবং বিশ্বকোষকার।[১]

জীবন ও কর্ম[সম্পাদনা]

ইব্রাহিম হাক্কি অল্প বয়সেই তাঁর মা এবং পরে বাবাকে হারান। এরপর তাঁর চাচার কাছে তিনি বড় হন, যিনি তাঁকে কিছুকাল শিক্ষা দিয়েছিলেন। ১৭৪৭ সালে ইস্তাম্বুলে তিনি উসমানীয় সুলতান প্রথম মাহমুদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি এরজুরুমে ফিরে আসেন এবং ধর্ম ও বিজ্ঞান বিষয়ক ব্যাপারে আগ্রহী হতে থাকেন। তিনি 'মানযুম' এবং নিয়মিত শৈলীতে ১৫টি বই রচনা করেন। এছাড়াও তুর্কি, আরবি এবং ফার্সি ভাষায় প্রচুর রচনা করেন। ইব্রাহিম হাক্কির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে 'দিওয়ান' এবং 'মারিফাতনামা'।

১৭৫৬ সালে তিনি 'মারিফাতনামা' (জ্ঞানের বই) প্রকাশ করেন, যেটি জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, শারীরবৃত্ত, মনোবিজ্ঞান, দর্শন এবং ইসলামী রহস্যবাদের একটি সংকলন ও ভাষ্য। এই গ্রন্থে একজন মুসলিম পণ্ডিত ('আলেম) কর্তৃক কোপারনিকাস-পরবর্তী জ্যোতির্বিদ্যার প্রথম আলোচনার জন্য বিখ্যাত। 'মারিফাতনামা' সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় বিস্তৃত বৈজ্ঞানিক ও বিশ্বকোষীয় জ্ঞানের পাশাপাশি তাসাউফ জ্ঞান ধারণ করে। লেখকের মতে, এটি ৪০০টি বই থেকে সংকলিত হয়েছে।

'মারিফাতনামা' একটি বইয়ে একজন পণ্ডিত কর্তৃক সৌরজগতের পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতির্বিদ্যার ব্যাখ্যায় একটি প্রথম উদাহরণ। ২০১০ সালে এর একটি ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।[২]

১৭৮০ সালের ২২ জুন তিনি মারা যান এবং সিয়ার্ট প্রদেশের টিলোতে তাকে সমাহিত করা হয়।

ধর্মতত্ত্ব[সম্পাদনা]

এরজুরুমির দর্শনের মূল ভিত্তি হলো আত্ম-সমীক্ষা বা আত্ম-পর্যালোচনা, যেটি ঈশ্বরকে আবিষ্কার করার প্রক্রিয়ার একটি অপরিহার্য অংশ।

তিনি বলেন, আল্লাহ তাঁর পবিত্র গ্রন্থগুলিতে এই কথা প্রকাশ করেছেন এবং আমাদেরকে সতর্কতার পথে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করার জন্য তাঁর নবীদেরকে নির্দেশক হিসাবে পাঠিয়েছেন। কেবলমাত্র যারা জেগে উঠতে এবং নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান পবিত্রতা পুনরায় আবিষ্কার করতে সক্ষম তারাই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, যিনি পরিপূর্ণতার প্রতীক - এর কাছাকাছি যেতে পারবেন।

তিনি একটি বিখ্যাত উক্তির জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত - সেটি হলো, "আল্লাহর দিকে আমরা যদি এক পা এগিয়ে যাই, তিনি আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে ছুটে আসবেন।" এই উক্তিটি একটি হাদিসে কুদসি থেকে উদ্ভূত।

তার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতা "হক শেরলেরি হায়র আইলার" (সত্য [ঈশ্বর] মন্দকে মঙ্গলে পরিণত করেন)। এটি একটি ধর্মীয় সঙ্গীতে রূপান্তরিত হয়েছে।

টীকা[সম্পাদনা]

  • হাদিসে কুদসি ১৫: আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: আল্লাহ তা'আলা বলেন - "আমি আমার বান্দার ধারণার মতোই। সে যখন আমাকে স্মরণ করে, আমি তার সাথে থাকি। সে যদি মনে মনে আমার স্মরণ করে, আমিও মনে মনে তার স্মরণ করি। আর যদি সে কোনো মজলিসে আমাকে স্মরণ করে, আমি তার চেয়ে উত্তম মজলিসে তাকে স্মরণ করি। সে যদি এক হাত পরিমাণ আমার নিকটবর্তী হয়, আমি এক বাহু পরিমাণ তার নিকটবর্তী হ‌ই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তার দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাই।" [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Wellknown Ottoman book Marifetname translated into English"worldbulletin.dunyabulteni.net/ (তুর্কি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-০৬ 
  2. "Wellknown Ottoman book Marifetname translated into English"worldbulletin.dunyabulteni.net/ (তুর্কি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০১-০৬