বিষয়বস্তুতে চলুন

আবদুস সাত্তার (বীর বিক্রম)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবদুস সাত্তার
মৃত্যু২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

শহীদ আবদুস সাত্তার (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। []

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

[সম্পাদনা]

শহীদ আবদুস সাত্তারের পৈতৃক বাড়ি নেত্রকোনার মদন উপজেলার তালুককানাই গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আবদুল বারী এবং মায়ের নাম আছিয়া খাতুন। তার স্ত্রীর নাম মহিমা খাতুন। তাঁদের সন্তান নেই।

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

আবদুস সাত্তার ইপিআরে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর সেক্টরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাবসেক্টরে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

[সম্পাদনা]

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার অন্তর্গত যাদবপুর-রাজাপুর। জেলা সদর থেকে পশ্চিমে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই এলাকায় নিয়মিত টহল দিত। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল, ভারত থেকে যাতে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে অণুপ্রবেশ করতে না পারেন। ভারতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা প্রায়ই সীমান্ত অতিক্রম করে অ্যাম্বুশ করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২১ সেপ্টেম্বর আবদুস সাত্তারসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল দলকে অ্যাম্বুশ করেন। তারা সুবিধাজনক একটি স্থানে অবস্থান নেন। জায়গাটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। আশপাশে বাড়িঘর বা মানুষজন ছিল না। মুক্তিযোদ্ধাদের সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এতে তারা ধৈর্যচ্যুত হননি। অপেক্ষার প্রায় শেষ পর্যায়ে সেনা টহল দল সেখানে হাজির হয়। তারা ফাঁদের মধ্যে আসামাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র গর্জে ওঠে। পাকিস্তানি সেনারা এমন আক্রমণের জন্য প্রস্তুতই ছিল। তারাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। শান্ত এলাকা নিমেষে পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। গোলাগুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্রশস্ত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল। প্রথম দিকে তারা ব্যাপক গোলাগুলি করে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধারা বিচলিত না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। এ ছাড়া তাঁদের অবস্থান ও প্রস্তুতি ছিল যথেষ্ট ভালো। পাকিস্তানি সেনারা কিছুক্ষণের মধ্যেই কোণঠাসা ও পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। গুলির আঘাতে একের পর এক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। তিন-চারজন সঙ্গে সঙ্গে নিহত হয়। বাকিরা আহত। এরপর পাকিস্তানিরা পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। কিন্তু সে পথও ছিল প্রায় রুদ্ধ। এ অবস্থায় তারা মরিয়া হয়ে যুদ্ধ শুরু করে। অন্যদিকে সাফল্য ও জয়ের নেশা পেয়ে বসে আবদুস সাত্তার ও তার কয়েক সহযোদ্ধার মধ্যে। প্রবল গোলাগুলির মধ্যে তারা নিরাপদ স্থান থেকে বেরিয়ে ক্রল করে এগিয়ে যান পাকিস্তানি সেনাদের দিকে। বিপুল বিক্রমে চড়াও হন শত্রুর ওপর। তাঁদের অস্ত্রের গুলিতে হতাহত হয় আরও কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। এমন সময় হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হন অদম্য সাহসী ও বিক্রমী যোদ্ধা আবদুস সাত্তার। শত্রু পাকিস্তানিদের এলএমজির বুলেট বিদীর্ণ করে দেয় তার দেহ। লুটিয়ে পড়েন তিনি। রক্তে ভেসে যায় মাটি। সঙ্গে সঙ্গে নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। শহীদ হন তিনি। সেদিন যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহল দলের প্রায় সবাই নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আবদুস সাত্তারসহ দুজন শহীদ ও তিন-চারজন আহত হন। যুদ্ধ শেষে সহযোদ্ধারা আবদুস সাত্তারকে সমাহিত করেন শার্শা উপজেলার অন্তর্গত কাশীপুরে। তার সমাধি চিহ্নিত। সেখানে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ সহ আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি রয়েছে। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ০৩-১০-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ৮৪। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ

[সম্পাদনা]