জাপান: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
১২৫ নং লাইন: ১২৫ নং লাইন:
জাপানের ইংরেজি নামটি [[ন্যানব্যান বাণিজ্য|প্রাচীন বাণিজ্যপথ]] ধরে পাশ্চাত্যে পৌঁছেছিল। [[প্রাচীন মান্ডারিন]] বা সম্ভবত আদি [[ওয়ু চীনা]] ভাষায় জাপান শব্দের যে উচ্চারণটি (吳語) [[মার্কো পোলো]] নথিভুক্ত করেছিলেন, সেটি হল ''সিপ্যাঙ্গু'' (''Cipangu'')। ওয়ু ভাষার একটি উপভাষা আধুনিক [[শাংহাইনিজ|শাংহাইনিজে]] জাপান নামের অক্ষরগুলির ({{nihongo2|日本}}) উচ্চারণ ''যেপ্পেন'' {{IPA-wuu|zəʔpən|}}। প্রাচীন [[মালয় ভাষা|মালয়]] ভাষায় জাপান শব্দটি হয়েছে ''জেপ্যাং''। এই শব্দটি একটি দক্ষিণ উপকূলীয় চীনা উপভাষা থেকে গৃহীত হয়েছে। উক্ত উপভাষাটি হল সম্ভবত [[হোক্কিয়েন|ফুকিয়েনীয়]] বা [[নিংবো উপভাষা|নিংপো]]।<ref>{{cite book|last=Boxer|first=Charles Ralph|title=The Christian century in Japan 1549–1650|year=1951|publisher=University of California Press|isbn=1-85754-035-2|url=https://books.google.com/books?id=2R4DA2lip9gC&lpg=PP1&dq=The%20Christian%20Century%20In%20Japan%201549%E2%80%931650&pg=PA1#v=onepage&q=japang&f=false|pages=1–14}}</ref> ১৬শ শতাব্দীতে [[পর্তুগিজ মালাক্কা|মালাক্কায়]] মালয় শব্দটির সঙ্গে প্রথমে [[পর্তুগিজ সাম্রাজ্য|পর্তুগিজ]] বণিকরা পরিচিত হন। তাঁরাই এই শব্দটি প্রথম [[ইউরোপ|ইউরোপে]] নিয়ে আসেন।<ref>C. R. Boxer, The Christian Century In Japan 1549–1650, University of California Press, 1951p. 11, 28—36, 49—51, ISBN 1-85754-035-2</ref> ইংরেজি ভাষায় এই শব্দটির একটি পুরনো উল্লেখ পাওয়া যায় ১৫৬৫ সালে লেখা একটি চিঠিতে। সেই চিঠিতে এই শব্দটির বানান ছিল ''জিয়াপান'' (''Giapan'')।<ref>{{cite book|last=Mancall|first=Peter C.|title=Travel narratives from the age of discovery: an anthology|year=2006|publisher=Oxford University Press|pages=156–157|chapter=Of the Ilande of Giapan, 1565}}</ref>
জাপানের ইংরেজি নামটি [[ন্যানব্যান বাণিজ্য|প্রাচীন বাণিজ্যপথ]] ধরে পাশ্চাত্যে পৌঁছেছিল। [[প্রাচীন মান্ডারিন]] বা সম্ভবত আদি [[ওয়ু চীনা]] ভাষায় জাপান শব্দের যে উচ্চারণটি (吳語) [[মার্কো পোলো]] নথিভুক্ত করেছিলেন, সেটি হল ''সিপ্যাঙ্গু'' (''Cipangu'')। ওয়ু ভাষার একটি উপভাষা আধুনিক [[শাংহাইনিজ|শাংহাইনিজে]] জাপান নামের অক্ষরগুলির ({{nihongo2|日本}}) উচ্চারণ ''যেপ্পেন'' {{IPA-wuu|zəʔpən|}}। প্রাচীন [[মালয় ভাষা|মালয়]] ভাষায় জাপান শব্দটি হয়েছে ''জেপ্যাং''। এই শব্দটি একটি দক্ষিণ উপকূলীয় চীনা উপভাষা থেকে গৃহীত হয়েছে। উক্ত উপভাষাটি হল সম্ভবত [[হোক্কিয়েন|ফুকিয়েনীয়]] বা [[নিংবো উপভাষা|নিংপো]]।<ref>{{cite book|last=Boxer|first=Charles Ralph|title=The Christian century in Japan 1549–1650|year=1951|publisher=University of California Press|isbn=1-85754-035-2|url=https://books.google.com/books?id=2R4DA2lip9gC&lpg=PP1&dq=The%20Christian%20Century%20In%20Japan%201549%E2%80%931650&pg=PA1#v=onepage&q=japang&f=false|pages=1–14}}</ref> ১৬শ শতাব্দীতে [[পর্তুগিজ মালাক্কা|মালাক্কায়]] মালয় শব্দটির সঙ্গে প্রথমে [[পর্তুগিজ সাম্রাজ্য|পর্তুগিজ]] বণিকরা পরিচিত হন। তাঁরাই এই শব্দটি প্রথম [[ইউরোপ|ইউরোপে]] নিয়ে আসেন।<ref>C. R. Boxer, The Christian Century In Japan 1549–1650, University of California Press, 1951p. 11, 28—36, 49—51, ISBN 1-85754-035-2</ref> ইংরেজি ভাষায় এই শব্দটির একটি পুরনো উল্লেখ পাওয়া যায় ১৫৬৫ সালে লেখা একটি চিঠিতে। সেই চিঠিতে এই শব্দটির বানান ছিল ''জিয়াপান'' (''Giapan'')।<ref>{{cite book|last=Mancall|first=Peter C.|title=Travel narratives from the age of discovery: an anthology|year=2006|publisher=Oxford University Press|pages=156–157|chapter=Of the Ilande of Giapan, 1565}}</ref>


== ইতিহাস ==
==ইতিহাস==
{{Main|জাপানের ইতিহাস}}
===প্রাগৈতিহাসিক যুগ ও প্রাচীন যুগ===
[[File:Horyu-ji11s3200.jpg|thumb|left|[[মেইন হল (জাপানি বৌদ্ধধর্ম)|গোল্ডেন হল]] ও [[হোর্যুা-জি]]-র [[তো|পাঁচ-তলা প্যাগোডা]]। এই দুটি বিশ্বের প্রাচীনতম কাঠের তৈরি ভবনগুলির অন্যতম, [[জাপানের জাতীয় সম্পদ|জাতীয় সম্পদ]] এবং [[জাপানে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির তালিকা|ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।]]
আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০,০০০ অব্দের একটি [[জাপানি পুরনো প্রস্তরযুগ|পুরনো প্রস্তরযুগীয়]] সংস্কৃতি জাপানি দ্বীপমালায় প্রথম মানব জনবসতি গড়ে তুলেছিল বলে জানা গিয়েছে। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ১৪,০০০ অব্দ নাগাদ ([[জামোন যুগ|জামোন যুগের]] শুরুতে) [[মধ্য প্রস্তরযুগ]] থেকে [[নব্য প্রস্তরযুগ|নব্য প্রস্তরযুগের]] মধ্যবর্তী সময়ে একটি সেমি-সেড্যানটারি [[শিকারী-সংগ্রাহক]] সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে সমসাময়িক কালের [[আইনু জাতি]] ও [[ ইয়ামাতো জাতি|ইয়ামাতো জাতির]] পূর্বপুরুষেরাও ছিলেন।<ref>{{cite journal|last=Matsumara|first=Hirofumi; Dodo, Yukio|url=https://www.jstage.jst.go.jp/article/ase/117/2/117_080325/_article |title=Dental characteristics of Tohoku residents in Japan: implications for biological affinity with ancient Emishi|journal=Anthropological Science|year=2009|volume=117|issue=2|pages=95–105|doi=10.1537/ase.080325|last2=Dodo|first2=Yukio}}</ref><ref>{{cite journal|last=Hammer|first=Michael F., et al.|url=http://www.nature.com/jhg/journal/v51/n1/abs/jhg20068a.html |title=Dual origins of the Japanese: common ground for hunter-gatherer and farmer Y chromosomes|journal=Journal of Human Genetics|year=2006|volume=51|issue=1|pages=47–58|doi=10.1007/s10038-005-0322-0|pmid=16328082|last2=Karafet|first2=TM|last3=Park|first3=H|last4=Omoto|first4=K|last5=Harihara|first5=S|last6=Stoneking|first6=M|last7=Horai|first7=S}}</ref> এই মানুষেরা গুহায় বাস করত এবং এদের জীবিকা ছিল মৌলিক কৃষিকাজ।<ref>{{cite web|last=Travis|first=John|title= Jomon Genes|url=http://www.pitt.edu/~annj/courses/notes/jomon_genes.html|publisher=University of Pittsburgh|accessdate=January 15, 2011}}</ref> এই যুগে নির্মিত চিত্রিত মাটির পাত্রগুলি বিশ্বের প্রাচীনতম অধুনা-বর্তমান মৃৎশিল্পের কয়েকটি নিদর্শন। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ নাগাদ [[ইয়ায়োই যুগ#ইয়ায়োই জাতির উৎস|ইয়ায়োই জাতি]] জাপানি দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশ করে জোমনদের সঙ্গে মিশে যেতে শুরু করে।<ref>{{cite book|last=Denoon|first=Donald; Hudson, Mark|title=Multicultural Japan: palaeolithic to postmodern|publisher=Cambridge University Press|year=2001|isbn=0-521-00362-8|pages=22–23}}</ref> খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দ নাগাদ শুরু হওয়া [[ইয়ায়োই যুগ|ইয়ায়োই যুগে]] ভিজে-[[চাল]] উৎপাদন,<ref>{{cite web|title=Road of rice plant|url=http://www.kahaku.go.jp/special/past/japanese/ipix/5/5-25.html|publisher=[[National Science Museum of Japan]]|accessdate=January 15, 2011}}</ref> মৃৎশিল্পের একটি নতিন ধারার বিকাশ,<ref>{{cite web|title=Kofun Period|url=http://www.metmuseum.org/toah/hd/kofu/hd_kofu.htm|publisher=Metropolitan Museum of Art|accessdate=January 15, 2011}}</ref> এবং কোরিয়া ও চীনের অনুসরণে ধাতুবিদ্যার চর্চা শুরু হয়।<ref>{{cite web|title=Yayoi Culture|url=http://www.metmuseum.org/toah/hd/yayo/hd_yayo.htm|publisher=Metropolitan Museum of Art|accessdate=January 15, 2011}}</ref>

চীনা ''[[বুক অফ হান]]''-এ প্রথম জাপানের লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়।<ref>{{cite book | last=Takashi | first=Okazaki | last2=Goodwin | first2=Janet | title=The Cambridge history of Japan, Volume 1: Ancient Japan | year=1993 | publisher=Cambridge University Press | location=Cambridge | isbn=0-521-22352-0 | page=275 | chapter=Japan and the continent}}</ref> ''[[তিন রাজ্যের নথি]]'' অনুযায়ী, খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীর জাপান দ্বীপমালার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্যটির নাম ছিল [[ইয়ামাতাই]]-কোকু। [[কোরিয়া|কোরিয়ার]] [[বায়েকজে]] থেজে জাপানে প্রথম বৌদ্ধধর্মের আগমন ঘটেছিল। তবে [[জাপানে বৌদ্ধধর্ম|জাপানি বৌদ্ধধর্মের]] পরবর্তীকালীন বিকাশ ঘটেছিল প্রধানত চীনা প্রভাবে।<ref>{{cite book |editor=Brown, Delmer M.|year=1993 |title=The Cambridge History of Japan |publisher=Cambridge University Press |pages=140–149}}</ref> প্রথম দিকে জাপানে বৌদ্ধধর্ম বাধাপ্রাপ্ত হলেও, পরে এই ধর্ম জাপানের শাসকশ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে এবং [[অসুকা যুগ|অসুকা যুগে]] (৫৯২-৭১০ খ্রিস্টাব্দ) সর্বত্র মান্যতা পায়।<ref>{{cite book |title=The Japanese Experience: A Short History of Japan |first=William Gerald|last=Beasley |publisher=University of California Press |year=1999 |page=42 |isbn=0-520-22560-0 }}</ref>

৮ম শতাব্দীর [[নারা যুগ|নারা যুগে]] (৭১০-৭৮৪) জাপানে শক্তিশালী রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। এই সময় রাষ্ট্রশক্তির কেন্দ্র ছিল [[জেইজো প্রাসাদ|হেইজো-ক্যো]]-র রাজসভা (আধুনিক [[নারা, নারা|নারা]])। নারা পর্যায়ে [[জাপানি সাহিত্য|জাপানি সাহিত্যের]] বিকাশ ঘটতে শুরু করে। এই যুগেই বৌদ্ধধর্ম-অনুপ্রাণিত শিল্পকলা ও [[প্রাচীন নারার ঐতিহাসিক স্মারকসমূহ|স্থাপত্যেরও]] বিকাশ ঘটতে শুরু করেছিল।<ref>{{cite book |first=Conrad|last=Totman |year=2002 |title=A History of Japan |publisher=Blackwell |pages=64–79 | isbn=978-1-4051-2359-4}}</ref> ৭৩৫-৭৩৭ খ্রিস্টাব্দের বসন্তরোগ মহামারীতে সম্ভবত জাপানের এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসীর মৃত্যু ঘটে।<ref>{{cite book|last=Hays|first=J.N.|title=Epidemics and pandemics: their impacts on human history|year=2005|publisher=[[ABC-CLIO]]|isbn=1-85109-658-2|page=31}}</ref> ৭৮৪ সালে [[সম্রাট [[কাম্মু]] নারা থেকে [[নাগাওকা-ক্যো]]-তে রাজধানী সরিয়ে আনেন। এরপর ৭৯৪ সালে [[হেইয়ান-ক্যো]]-তে (আধুনিক [[ক্যোটো]]) রাজধানী অপসারিত হয়।

[[File:Mōko Shūrai Ekotoba 2.jpg|thumb|[[জাপানে মোঙ্গল অনুপ্রবেশ|জাপানে মোঙ্গল অনুপ্রবেশের]] সময় সামুরাই যোদ্ধারা মোঙ্গলদের সম্মুখীন হচ্ছে। কথিত আছে, ''[[কামিকাজে (টাইফুন)|কামিকাজে]]'' নামে দুটি ঝড় জাপানকে মোঙ্গলদের হাত থেকে রক্ষা করেছিল।]]
এই সময় [[হেইয়ান যুগ]] (৭৯৪-১১৮৫) শুরু হয়। এই যুগেই জাপানের স্বতন্ত্র সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। এই যুগ [[জাপানি শিল্পকলা|শিল্পকলা]], [[জাপানি কবিতা|কবিতা]] ও গদ্য সাহিত্যের জন্য খ্যাত। [[মুরাসাকি শিকিবু|মুরাসাকি শিকিবুর]] ''[[দ্য টেল অফ গেনজি]]'' ও জাপানের জাতীয় সংগীত ''[[কিমিগায়ো]]''-এর কথা এই যুগেই রচিত হয়।<ref>{{cite book |first=Conrad|last=Totman |year=2002 |title=A History of Japan |publisher=Blackwell |pages=79–87, 122–123 | isbn=978-1-4051-2359-4}}</ref>

[[হেইয়ান যুগ]] থেকেই প্রধানত দুটি প্রধান সম্প্রদায়ের ([[সাইচো|সাইচোর]] [[টেন্ডাই]] ও [[কুকাই|কুকাইয়ের]] [[শিংগন]]) মাধ্যমে [[বৌদ্ধধর্ম]] ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১১শ শতাব্দীর শেষার্ধ্বে [[পিওর ল্যান্ড বৌদ্ধধর্ম]] ([[জোদ-শু]], [[জোদ-শিংশু]]) খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।

===সামন্ত যুগ===

== রাজনীতি ==
== রাজনীতি ==
জাপানে একটি সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা বিরাজমান। জাপানের সম্রাট প্রতীকী রাষ্ট্রপ্রধান। জাপানের কেন্দ্রীয় সরকারের স্থানীয় সরকারগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ আছে। তবে জাপানের ৪৭টি জেলা এবং কয়েক হাজার বড় শহর, ছোট শহর গ্রামের স্থানীয় সরকারগুলি স্থানীয় বিষয়গুলির ব্যাপারে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষমতা আছে।
জাপানে একটি সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা বিরাজমান। জাপানের সম্রাট প্রতীকী রাষ্ট্রপ্রধান। জাপানের কেন্দ্রীয় সরকারের স্থানীয় সরকারগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ আছে। তবে জাপানের ৪৭টি জেলা এবং কয়েক হাজার বড় শহর, ছোট শহর গ্রামের স্থানীয় সরকারগুলি স্থানীয় বিষয়গুলির ব্যাপারে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষমতা আছে।

০৭:৩৯, ১৯ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

জাপান

日本国
নিপ্পন-কোকু বা নিহন-কোকু
Golden circle subdivided by golden wedges with rounded outer edges and thin black outlines.
সম্রাটের সিলমোহর
জাতীয় সঙ্গীত: 
জাপানের সরকারি সিলমোহর
  • প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জাপান সরকারের সিলমোহর
  • গো-শিচি-নো কিরি (五七桐)
জাপানের অবস্থান
রাজধানী
ও বৃহত্তম নগরী বা বসতি
টোকিও
সরকারি ভাষানেই[১]
স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা
জাতীয় ভাষাজাপানি
নৃগোষ্ঠী
(২০১১0.4em)
জাতীয়তাসূচক বিশেষণজাপানি
সরকারএককেন্দ্রিক সংসদীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র
আকিহিতো
শিনযো আবে
তারো আসো
আইন-সভাকোক্কাই
লোকসভা পারিষদদ
প্রতিনিধি পরিষদ
প্রতিষ্ঠা
১১ ফেব্রুয়ারি, খ্রিস্টপূর্ব ৬৬০ অব্দ[২]
২৯ নভেম্বর, ১৮৯০
৩ মে, ১৯৪৭
২৮ এপ্রিল, ১৯৫২
আয়তন
• মোট
৩,৭৭,৯৪৪ কিমি (১,৪৫,৯২৫ মা)[৩] (৬২তম)
• পানি (%)
০.৮
জনসংখ্যা
• ২০১৫ আনুমানিক
১২৬,৯১৯,৬৫৯[৪] (১০ম)
• ২০১০ আদমশুমারি
১২৮,০৫৬,০২৬[৫]
• ঘনত্ব
৩৩৭.১/কিমি (৮৭৩.১/বর্গমাইল) (৩৬তম)
জিডিপি (পিপিপি)২০১৫ আনুমানিক
• মোট
৪.৮৪৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (৪র্থ)
• মাথাপিছু
৩৮,২১৬ মার্কিন ডলার (২৯তম)
জিডিপি (মনোনীত)২০১৫ আনুমানিক
• মোট
৪.২১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩য়)
• মাথাপিছু
৩৩,২২৩ মার্কিন ডলার (২৫তম)
জিনি (২০০৮)৩৭.৬[৬]
মাধ্যম · ৭৬তম
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৪)বৃদ্ধি ০.৮৯০
ত্রুটি: মানব উন্নয়ন সূচক-এর মান অকার্যকর · ১৭তম
মুদ্রাইয়েন (¥) / এন্ (JPY)
সময় অঞ্চলইউটিসি+৯ (জাপান মান সময়)
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)
ইউটিসি+৯ (পালিত হয় না)
তারিখ বিন্যাস
গাড়ী চালনার দিকবাম
কলিং কোড+৮১
ইন্টারনেট টিএলডি.jp

জাপান (জাপানি: 日本 নিপ্পন বা নিহন; পুরো নাম 日本国 নিপ্পন-কোকু বা নিহন-কোকু, "জাপান রাষ্ট্র") হল পূর্ব এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এই দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ারাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ওখোস্ক সাগর থেকে দক্ষিণ পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত। যে কাঞ্জি অনুসারে জাপানের নামটি এসেছে, সেটির অর্থ "সূর্য উৎস"। জাপানকে প্রায়শই "উদীয়মান সূর্যের দেশ" বলে অভিহিত করা হয়।

জাপান একটি যৌগিক আগ্নেয়গিরীয় দ্বীপমালা। এই দ্বীপমালাটি ৬,৮৫২টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ হল হোনশু, হোক্কাইদো, ক্যুশুশিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭% এলাকা নিয়ে গঠিত। জাপানের জনসংখ্যা ১২৬ মিলিয়ন। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন।[৭] এই শহরটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার ২য় বৃহত্তম মূল শহর। টোকিও ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য নিয়ে গঠিত বৃহত্তর টোকিও অঞ্চলের জনসংখ্যা ৩৫ মিলিয়নেরও বেশি। এটি বিশ্বের বৃহত্তম মহানগরীয় অর্থনীতি

পুরাতাত্ত্বিক গবেষণার ফলে জানা গিয়েছে যে উচ্চ প্যালিওলিথিক যুগেও জাপানে জনবসতির অস্তিত্ব ছিল। জাপানের প্রথম লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় খ্রিস্টীয় ১ম শতাব্দীতে রচিত চীনা ইতিহাস গ্রন্থগুলিতে। জাপানের ইতিহাসে অন্যান্য বিভিন্ন অঞ্চলের প্রভাব দেখা যায়। এই দেশের ইতিহাসে প্রথমে চীনা সাম্রাজ্যের প্রভাব পড়েছিল। তারপর একটি বিচ্ছিন্নতার যুগ কাটিয়ে এই দেশের ইতিহাসে পড়ে পশ্চিম ইউরোপের প্রভাব। ১২শ শতাব্দী থেকে ১৮৬৮ সাল পর্যন্ত শোগুন নামের সামরিক সামন্ত-শাসকরা সম্রাট উপাধিতে জাপান শাসন করেছিলেন। ১৭শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাপান এক দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতার পর্যায়ে প্রবেশ করে। ১৮৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী পাশ্চাত্যের সামনে জাপানকে খুলে দেওয়ার জন্য চাপ দিলে সেই বিচ্ছিন্নতার যুগের অবসান ঘটে। প্রায় দুই দশক আভ্যন্তরিণ বিবাদ ও বিদ্রোহ চলার পর ১৮৬৮ সালে মেইজি সম্রাট রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হন এবং জাপান সাম্রাজ্য ঘোষিত হয়। এই সাম্রাজ্যে সম্রাট জাতির দিব্য প্রতীকের সম্মান পান। ১৯শ শতাব্দীর শেষভাগে এবং ২০শ শতাব্দীর প্রথম ভাগে জাপান প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ, রুশ-জাপান যুদ্ধপ্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয়লাভ করে। এই ক্রমবর্ধমান সামরিক যুগে জাপান নিজ সাম্রাজ্যের পরিধি বিস্তৃত করে। ১৯৩৭ সালের দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ ১৯৪১ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি বর্ধিত অংশে পরিণত হয়। ১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়। ১৯৪৭ সালে সংশোধিত সংবিধান গ্রহণের পর জাপান একটি এককেন্দ্রিক সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত হয়। এই ব্যবস্থায় সম্রাটের পাশাপাশি কোক্কাই নামে একটি নির্বাচিত আইনসভাও গঠিত হয়।

জাপান জাতিসংঘ, জি-৭, জি৮জি২০ গোষ্ঠীগুলির সদস্য। এই রাষ্ট্রটি একটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্র[৮][৯][১০] নামমাত্র মোট আভ্যন্তরিণ উৎপাদন অনুযায়ী জাপান বিশ্বের ৩য়-বৃহত্তম অর্থনীতি এবং ক্রয়ক্ষমতার সাম্য অনুযায়ী ৪র্থ-বৃহত্তম অর্থনীতি। এছাড়া জাপান বিশ্বের ৫ম-বৃহত্তম রফতানিকারক এবং ৫ম বৃহত্তম আমদানিকারক রাষ্ট্র। সরকারিভাবে জাপান যুদ্ধ ঘোষনার অধিকার বর্জন করলেও এই দেশটি একটি আধুনিক সামরিক বাহিনী রেখেছে। এদেশের সামরিক বাজেট বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম সামরিক বাজেট[১১] অবশ্য জাপানের সামরিক বাহিনীর কাজ হল আত্মরক্ষা ও শান্তিরক্ষা। জাপান একটি উন্নত দেশ। এখানে জীবনযাত্রার মান ও মানব উন্নয়ন সূচক উচ্চ। সারা বিশ্বের মধ্যে এই দেশে গড় আয়ু সর্বাধিক এবং শিশু মৃত্যুর হার তৃতীয় সর্বনিম্ন।[১২][১৩][১৪] দেশীয় তরবার সূচকে জাপানের স্থান প্রথম।[১৫] বিশ্বশান্তি সূচকে এই রাষ্ট্রের স্থান সর্বোচ্চ।[১৬]

নাম-ব্যুৎপত্তি

ইংরেজি শব্দ জাপান শব্দটি সম্ভবত এসেছে জাপানি নাম নিহন-এর ({{nihongo2|日本}) আদি মান্ডারিন চীনা বা উ চীনা উচ্চারণ থেকে। জাপানি ভাষায় এই শব্দটির উচ্চারণ নিপ্পন (listen) বা নিহন (listen)। জাপানি জাতি নিজেদের বলে নিহনজিন (日本人) এবং নিজেদের ভাষাকে বলে নিহঙ্গ (日本語)

মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠা থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত জাপানের পোষাকি নাম ছিল দাই নিপ্পন তেইকোকু (大日本帝國) বা মহান জাপান সাম্রাজ্য। বর্তমানে নিপ্পন-কোকু বা নিহন-কোকু (日本国) নামদুটি রাষ্ট্রের পোষাকি নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জাপানের মতো যেসব দেশগুলির পোষাকি নামে কোনো বর্ণনাত্মক অভিধা যুক্ত নেই, সেগুলিকেই কোকু ()(অর্থাৎ, দেশ, জাতি বা রাষ্ট্র) শব্দ দ্বারা অভিহিত করা হয়।

নিচি () অক্ষরটির অর্থ "সূর্য" বা "দিন" এবং হন () অক্ষরটির অর্থ "ভিত্তি" বা "উৎস"। অক্ষরযুগলের অর্থ "সূর্যের উৎস" বা "সূর্যোদয়" (একটি চীনা দৃষ্টিকোণ থেকে, সূর্য জাপান থেকে ওঠে)। এই অক্ষরযুগলের অর্থ থেকেই জাপানের জনপ্রিয় পাশ্চাত্য বর্ণনা "সূর্যোদয়ের দেশ" ধারণাটি এসেছে। "নিহন" শব্দটির আনুষ্ঠানিক ব্যবহার শুরু হওয়ার আগে জাপান ওয়া () বা ওয়াকোকু (倭国) নামে পরিচিত ছিল।[১৭]

জাপানের ইংরেজি নামটি প্রাচীন বাণিজ্যপথ ধরে পাশ্চাত্যে পৌঁছেছিল। প্রাচীন মান্ডারিন বা সম্ভবত আদি ওয়ু চীনা ভাষায় জাপান শব্দের যে উচ্চারণটি (吳語) মার্কো পোলো নথিভুক্ত করেছিলেন, সেটি হল সিপ্যাঙ্গু (Cipangu)। ওয়ু ভাষার একটি উপভাষা আধুনিক শাংহাইনিজে জাপান নামের অক্ষরগুলির (日本) উচ্চারণ যেপ্পেন টেমপ্লেট:IPA-wuu। প্রাচীন মালয় ভাষায় জাপান শব্দটি হয়েছে জেপ্যাং। এই শব্দটি একটি দক্ষিণ উপকূলীয় চীনা উপভাষা থেকে গৃহীত হয়েছে। উক্ত উপভাষাটি হল সম্ভবত ফুকিয়েনীয় বা নিংপো[১৮] ১৬শ শতাব্দীতে মালাক্কায় মালয় শব্দটির সঙ্গে প্রথমে পর্তুগিজ বণিকরা পরিচিত হন। তাঁরাই এই শব্দটি প্রথম ইউরোপে নিয়ে আসেন।[১৯] ইংরেজি ভাষায় এই শব্দটির একটি পুরনো উল্লেখ পাওয়া যায় ১৫৬৫ সালে লেখা একটি চিঠিতে। সেই চিঠিতে এই শব্দটির বানান ছিল জিয়াপান (Giapan)।[২০]

ইতিহাস

প্রাগৈতিহাসিক যুগ ও প্রাচীন যুগ

[[File:Horyu-ji11s3200.jpg|thumb|left|গোল্ডেন হলহোর্যুা-জি-র পাঁচ-তলা প্যাগোডা। এই দুটি বিশ্বের প্রাচীনতম কাঠের তৈরি ভবনগুলির অন্যতম, জাতীয় সম্পদ এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩০,০০০ অব্দের একটি পুরনো প্রস্তরযুগীয় সংস্কৃতি জাপানি দ্বীপমালায় প্রথম মানব জনবসতি গড়ে তুলেছিল বলে জানা গিয়েছে। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ১৪,০০০ অব্দ নাগাদ (জামোন যুগের শুরুতে) মধ্য প্রস্তরযুগ থেকে নব্য প্রস্তরযুগের মধ্যবর্তী সময়ে একটি সেমি-সেড্যানটারি শিকারী-সংগ্রাহক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। এদের মধ্যে সমসাময়িক কালের আইনু জাতিইয়ামাতো জাতির পূর্বপুরুষেরাও ছিলেন।[২১][২২] এই মানুষেরা গুহায় বাস করত এবং এদের জীবিকা ছিল মৌলিক কৃষিকাজ।[২৩] এই যুগে নির্মিত চিত্রিত মাটির পাত্রগুলি বিশ্বের প্রাচীনতম অধুনা-বর্তমান মৃৎশিল্পের কয়েকটি নিদর্শন। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ নাগাদ ইয়ায়োই জাতি জাপানি দ্বীপপুঞ্জে প্রবেশ করে জোমনদের সঙ্গে মিশে যেতে শুরু করে।[২৪] খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দ নাগাদ শুরু হওয়া ইয়ায়োই যুগে ভিজে-চাল উৎপাদন,[২৫] মৃৎশিল্পের একটি নতিন ধারার বিকাশ,[২৬] এবং কোরিয়া ও চীনের অনুসরণে ধাতুবিদ্যার চর্চা শুরু হয়।[২৭]

চীনা বুক অফ হান-এ প্রথম জাপানের লিখিত ইতিহাস পাওয়া যায়।[২৮] তিন রাজ্যের নথি অনুযায়ী, খ্রিস্টীয় ৩য় শতাব্দীর জাপান দ্বীপমালার সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্যটির নাম ছিল ইয়ামাতাই-কোকু। কোরিয়ার বায়েকজে থেজে জাপানে প্রথম বৌদ্ধধর্মের আগমন ঘটেছিল। তবে জাপানি বৌদ্ধধর্মের পরবর্তীকালীন বিকাশ ঘটেছিল প্রধানত চীনা প্রভাবে।[২৯] প্রথম দিকে জাপানে বৌদ্ধধর্ম বাধাপ্রাপ্ত হলেও, পরে এই ধর্ম জাপানের শাসকশ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে এবং অসুকা যুগে (৫৯২-৭১০ খ্রিস্টাব্দ) সর্বত্র মান্যতা পায়।[৩০]

৮ম শতাব্দীর নারা যুগে (৭১০-৭৮৪) জাপানে শক্তিশালী রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। এই সময় রাষ্ট্রশক্তির কেন্দ্র ছিল হেইজো-ক্যো-র রাজসভা (আধুনিক নারা)। নারা পর্যায়ে জাপানি সাহিত্যের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। এই যুগেই বৌদ্ধধর্ম-অনুপ্রাণিত শিল্পকলা ও স্থাপত্যেরও বিকাশ ঘটতে শুরু করেছিল।[৩১] ৭৩৫-৭৩৭ খ্রিস্টাব্দের বসন্তরোগ মহামারীতে সম্ভবত জাপানের এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসীর মৃত্যু ঘটে।[৩২] ৭৮৪ সালে [[সম্রাট কাম্মু নারা থেকে নাগাওকা-ক্যো-তে রাজধানী সরিয়ে আনেন। এরপর ৭৯৪ সালে হেইয়ান-ক্যো-তে (আধুনিক ক্যোটো) রাজধানী অপসারিত হয়।

জাপানে মোঙ্গল অনুপ্রবেশের সময় সামুরাই যোদ্ধারা মোঙ্গলদের সম্মুখীন হচ্ছে। কথিত আছে, কামিকাজে নামে দুটি ঝড় জাপানকে মোঙ্গলদের হাত থেকে রক্ষা করেছিল।

এই সময় হেইয়ান যুগ (৭৯৪-১১৮৫) শুরু হয়। এই যুগেই জাপানের স্বতন্ত্র সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটে। এই যুগ শিল্পকলা, কবিতা ও গদ্য সাহিত্যের জন্য খ্যাত। মুরাসাকি শিকিবুর দ্য টেল অফ গেনজি ও জাপানের জাতীয় সংগীত কিমিগায়ো-এর কথা এই যুগেই রচিত হয়।[৩৩]

হেইয়ান যুগ থেকেই প্রধানত দুটি প্রধান সম্প্রদায়ের (সাইচোর টেন্ডাইকুকাইয়ের শিংগন) মাধ্যমে বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ১১শ শতাব্দীর শেষার্ধ্বে পিওর ল্যান্ড বৌদ্ধধর্ম (জোদ-শু, জোদ-শিংশু) খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।

সামন্ত যুগ

রাজনীতি

জাপানে একটি সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা বিরাজমান। জাপানের সম্রাট প্রতীকী রাষ্ট্রপ্রধান। জাপানের কেন্দ্রীয় সরকারের স্থানীয় সরকারগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ আছে। তবে জাপানের ৪৭টি জেলা এবং কয়েক হাজার বড় শহর, ছোট শহর গ্রামের স্থানীয় সরকারগুলি স্থানীয় বিষয়গুলির ব্যাপারে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষমতা আছে।

প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ

ভূগোল

জাপান একটি দ্বীপময় দেশ। দেশটি এশিয়ার পূর্ব উপকূল থেকে প্রসারিত হয়েছে। উত্তর থেকে দক্ষিণে চারটি মূল দ্বীপের নাম যথাক্রমে হোক্কাইদো, হনশু, শিকোকু এবং কিয়ুশু। কিয়ুশুর ৩৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে ওকিনাওয়া দ্বীপ অবস্থিত। এছাড়াও দ্বীপপুঞ্জটিতে আরও প্রায় ৩০০০ ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে। জাপানের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকা পর্বতময়। প্রতিটি প্রধান দ্বীপের মধ্য দিয়ে একটি পর্বতশ্রেণী চলে গেছে। বিশ্বখ্যাত ফুজি পর্বত জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত। জাপানের সমতল ভূমি খুব কম বলে অনেক পাহাড়-পর্বতের গায়েই একেবারে চূড়া পর্যন্ত চাষবাস করা হয়। জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের একটি ভূমিকম্প এলাকাতে অবস্থিত বলে দ্বীপগুলিতে প্রায়শই নিম্ন আকারের ভূকম্পন অনুভূত হয় এবং আগ্নেয় তৎপরতা দেখতে পাওয়া যায়। প্রতি শতকেই বেশ কয়েকবার বড় আকারের ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প ঘটে থাকে। জাপানে প্রচুর উষ্ণ প্রস্রবণ আছে এবং এগুলিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

জাপানের জলবায়ু অবস্থানভেদে বেশ ভিন্ন। হোক্কাইদো দ্বীপের সাপ্পোরোতে গ্রীষ্মকাল উষ্ণ এবং শীতকাল দীর্ঘ ও বরফময়। কিন্তু হনশু দ্বীপের মধ্য ও পশ্চিমভাগে অবস্থিত তোকিও, নাগয়া, কিয়োতো, ওসাকা এবং কোবে শহরের শীতকাল বেশ মৃদু এবং বরফ পড়ে না বললেই চলে। কিয়ুশু দ্বীপে শীতকাল মৃদু এবং গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত হয়। ওকিনাওয়া দ্বীপের জলবায়ু উপ-ক্রান্তীয় ধরনের।

অর্থনীতি

জাপান একটি শিল্পোন্নত দেশ যার বাজারভিত্তিক অর্থনীতি বিশ্বের ২য় বৃহত্তম অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সাথে সম্পর্কিত অর্থনৈতিক খাতগুলি অত্যন্ত দক্ষ ও প্রতিযোগিতাশীল। তবে সুরক্ষিত খাত যেমন কৃষি, বিতরণ এবং বিভিন্ন সেবাতে উৎপাদনশীলতা তুলনামূলকভাবে কম। ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত জাপান বিশ্বের সবচেয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিশীল দেশগুলির একটি ছিল। কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে এসে "বুদ্বুদ অর্থনীতিতে" ধ্বস নামলে জাপানের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নাটকীয়ভাবে ধীর হয়ে পড়ে। স্টক এবং রিয়েল এস্টেটের দাম অনেক পড়ে যায়।

শিল্পনেতা, কারিগর, সুশিক্ষিত ও পরিশ্রমী কর্মী বাহিনী, উচ্চ মাত্রায় সঞ্চয়ের প্রবণতা, উচ্চ বিনিয়োগ হার, শিল্প ও বৈদেশিক বাণিজ্য উন্নয়নের জন্য সরকারের জোরালো সমর্থন --- এ সব কিছু মিলে জাপান একতি পরিণত শিল্পোন্নত অর্থনীতি। জাপানের প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ খুব কম। কিন্তু বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে জাপান যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে, তা অর্থনীতির জন্য কাঁচামাল ক্রয়ে ব্যবহার করা হয়।

জাপানের অর্থনীতি ভবিষ্যতে ভাল থাকার সম্ভাবনা আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৯০-এর দশকে এসে প্রথমবারের মত জাপান অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্থবির একটি পর্যায়ে প্রবেশ করে, যে সময় প্রবৃদ্ধির হার ছিল বছরে গড়ে মাত্র ১%। ২০০০ সালের পর থেকে এর কিছুটা উন্নতি হওয়া শুরু হয়েছে। ২০০৭ সালে প্রকৃত প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২%-এর কিছু বেশি।

জাপানের মাত্র ১৫% ভূমি আবাদযোগ্য। কৃষিখাত সরকার থেকে প্রচুর ভর্তুকি পায়। প্রতি হেক্টর জমিতে জাপানের কৃষি উৎপাদনের পরিমাণ বিশ্বের সর্বোচ্চগুলির একটি। জাপান তার নিজের কৃষিজমি ব্যবহার করে কৃষিতে প্রায় ৪০% স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে ধানের উৎপাদন দেশের চাহিদা মিটিয়ে খানিকটা উদ্বৃত্ত থেকে যায়। কিন্তু গম, ভুট্টা, সয়াবিন, ইত্যাদি বিপুল পরিমাণে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই এগুলি আসে। জাপান তাই মার্কিন কৃষি রপ্তানির প্রধানতম বাজার।

জ্বালানিশক্তির জন্য জাপান বিদেশের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু ১৯৭০-এর তেল সংকটের পর থেকে জাপান পেট্রোলিয়ামের পরিবর্তে শক্তির অন্য উৎস ব্যবহারের পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে জাপানের মাত্র অর্ধেক পরিমাণ শক্তি পেট্রোলিয়ামজাত তেল থেকে আসে। অন্য জ্বালানির মধ্যে আছে কয়লা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, নিউক্লীয় শক্তি, এবং জলবিদ্যুৎ। বর্তমানে জাপান বিশ্বের সবচেয়ে শক্তি-সাশ্রয়ী উন্নত অর্থনীতিগুলির একটি।

জাপানে সোনা, ম্যাগনেসিয়াম ও রূপার মজুদ দেশের বর্তমান শিল্প চাহিদা মেটাতে সক্ষম। কিন্তু জাপান আধুনিক শিল্পে ব্যবহৃত অনেক খনিজের জন্য জাপান বিদেশের উপর নির্ভরশীল। লোহার আকরিক, কোক কয়লা, তামা, বক্সাইট এবং বহু বনজ দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

জাপানের শ্রমিকসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি ৭০ লক্ষ। এদের মধ্যে ৪০%-ই নারী। প্রায় ১ কোটি শ্রমিক কোন না কোন শ্রমিক সঙ্ঘের সাথে জড়িত।

যানবাহন

টোকিও স্টেশনে শিনকানসেন, জাপানের দ্রুততম এবং বিশ্বের অন্যতম দ্রুত ট্রেন।

জাপানের পরিবহন ব্যবস্থা অত্যাধুনিক এবং পরিবহন অবকাঠামো ব্যয়বহুল। জাপানে সড়ক নির্মাণে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়।[৩৪] সমগ্র দেশব্যাপী বিস্তৃত ১.২ মিলিয়ন কিলোমিটারের পাকারাস্তা জাপানের প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা।[৩৫] জাপানেরবামহাতি ট্রাফিক পদ্ধতি প্রচলিত। বড় শহরে যাতায়াতের জন্য নির্মিত সড়কসমূহ ব্যবহারের জন্য সাধারণত টোল নেয়া হয়।

জাপানে বেশ কয়েকটি রেলওয়ে কোম্পানি রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগীতা বিদ্যমান। এসব রেল কোম্পানির মধ্যে জাপান রেলওয়েস গ্রুপ, কিনটেটসু কর্পোরেশন , সেইবু রেলওয়ে, কেইও কর্পোরেশন উল্লেখযোগ্য। এসব কোম্পানি রেল পরিবহনকে আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে; যেমন- রেল স্টেশনে খুচরা দোকান স্থাপন। প্রায় ২৫০ কিলোমিটারব্যাপী বিস্তৃত শিনকানসেন জাপানের প্রধান শহরগুলোকে সংযুক্ত করেছে। এছাড়া অন্যান্য রেল কোম্পানিও সময়ানুবর্তিতার জন্য সুপরিচিত।

জাপানে ১৭৩টি বিমানবন্দর রয়েছে। সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর হল হানেদা বিমানবন্দর, এটি এশিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর। জাপানের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলনারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অন্যান্য বড় বিমানবন্দরের মধ্যে রয়েছে কানসাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, শুবু সেন্ট্রেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। জাপানের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর হলনাগোয়া বন্দর

জনসংখ্যা

চিত্র:Japanese Birth and Death rates.png
১৯৫০ সালের পর থেকে জাপানের জন্ম ও মৃত্যহার

২০০৮ সালে জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৭৭ লক্ষ[৩৬], ফলে জাপান বিশ্বের ১০ম জনবহুল দেশ। ১৯শ শতকের শেষ দিকে এবং ২০শ শতকের শুরুর দিকে জাপানে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। তবে সম্প্রতি জন্মহারের পতন এবং বিদেশ থেকে নীট অভিবাসন মোটামুটি শূন্যের কোঠায় হওয়াতে অতি সম্প্রতি, ২০০৫ সাল থেকে, জাপানের জনসংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। জাপানের জনগণ জাতিগতভাবে একই রকম, এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব অত্যন্ত বেশি এবং গড় আয়ু ৮১ বছরের কিছু বেশি, যা পৃথিবীর সর্বোচ্চগুলির একটি।[৩৭] ২০২৫ সাল নাগাদ ৬৫ থেকে ৮৫ বছর বয়সবিশিষ্ট নাগরিকের অংশ ৬% থেকে ১৫%-এ উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জাপান মূলত একটি নগরভিত্তিক রাষ্ট্র। মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪% কৃষিকাজে নিয়োজিত। বহু কৃষক কৃষিকাজের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী শরহগুলিতে অতিরিক্ত কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। শহুরে জনসংখ্যার প্রায় ৮ কোটি হনশু দ্বীপের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে এবং কিয়ুশু দ্বীপের উত্তরাংশে বসবাস করে। সবচেয়ে জনবহুল শহরগুলির মধ্যে আছে টোকিও মহানগর এলাকা (জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ), ইয়োকোহামা (৩৬ লক্ষ), ওসাকা (২৬ লক্ষ), নাগয়া (২২ লক্ষ), সাপ্পোরো (১৮ লক্ষ), কিয়োতো (১৫ লক্ষ), কোবে (১৫ লক্ষ), কাওয়াসাকি (১৪ লক্ষ), ফুকুওকা (১৪ লক্ষ) এবং সাইতামা (১২ লক্ষ)। জাপানের ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলিতে সরু ঘিঞ্জি রাস্তা, জনাকীর্ণতা, বায়ু দূষণ এবং কিশোর অপরাধ প্রধান সমস্যা। জাপানি ভাষা জাপানের সরকারী ভাষা। এই ভাষাতে জাপানের প্রায় ৯৮% লোক কথা বলেন। এছাড়াও জাপানে স্বল্পসংখ্যক লোক (প্রায় ৭ লক্ষ) কোরীয় ভাষাতে কথা বলেন। জাপানের অধীনস্থ রিউকিউ দ্বীপপুঞ্জে রিউকিউয়ান ভাষাসমূহ প্রচলিত; এগুলিতে প্রায় ৯ লক্ষ লোক কথা বলেন।

সংস্কৃতি

হোকুসাইয়ের আকাঁ উকিয়োয়ে চিত্র কানাগাওয়ার মহা ঢেউ

জাপানিরা অনবরত বিদেশি সংস্কৃতি গ্রহণ করে, সেই সংগে জন্মায় তাদের নিজেদের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। খ্রিস্ট-পূর্ব চতুর্থ শতাব্দি থেকে খ্রিস্ট-পূর্ব নবম শতাব্দি পর্যন্ত খেয়ার মাধ্যমে ইউরোপ ও এশিয়ার সংস্কৃতি জাপানে প্রবেশ করে। পরে সুই রাজবংশ ও থাং রাজবংশের ফলে চীনা সংস্কৃতি জাপানে প্রবেশ করে। এরপর দশম শতাব্দিতে জাপান ও অন্যান্য পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের সাথে যোগাযোগ কম হওয়ার কারণে জাপানে আসে তাদের নিজস্ব স্টাইলের সংস্কৃতি। ষোড়শ শতাব্দির মধ্যভাগে ইউরোপের সংস্কৃতি জাপানে প্রবেশ করে তাদের সংস্কৃতির বিরাট পতন ঘটিয়েছে। সপ্তদশ শতাব্দির পরে এডো যুগে পুণরায় আস্তে আস্তে জাপানের সংস্কৃতির উন্নয়ন হতে শুরু করে। মেইজি যুগে জাপানে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি প্রবেশ করে জাপানের সংস্কৃতির বিরাট পরিবর্তন আসে। যেমন: ক্রীড়া, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। কিন্তু ১৯২০ সালের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পাশ্চাত্য সংস্কৃতি বেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর মার্কিন সংস্কৃতির প্রভাবে জাপানিদের সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এতে করে জাপানিদের নিজস্ব প্রাচীন সংস্কৃতির মান ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছিল। জাপানি অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন হয়েছে আর এর পিছনে জাপানি অ্যানিমে এবং ইলেকট্রনিক গেম্‌সের বিরাট অবদান রয়েছে কারণ জাপানি অ্যানিমে এবং ইলেকট্রনিক গেম্‌স বিদেশের বাজারে খুব ভালো চলেছে। বর্তমানে জাপানে রয়েছে ১৪টি বিশ্ব ঐতিহ্য, তারমধ্যে ১১টি হচ্ছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং অবশিষ্ট ৩টি হচ্ছে প্রাকৃতিক ঐতিহ্য।[৩৮]

ধর্ম

জাপানের তোশোদাইজির বৌদ্ধ মন্দির

জাপানের প্রধান দুইটি ধর্ম হলো শিন্তো ধর্মবৌদ্ধ ধর্ম। প্রাকৃতিক শক্তিসমূহের প্রাচীন উপাসনার বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী শিন্তো ধর্মের ভিত্তি। শিন্তো ধর্মে মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে কিছু বলা নেই বলে বৌদ্ধ ধর্ম ও শিন্তো ধর্ম বহু যুগ ধরে জাপানে সহাবস্থান করেছে। অনেক ক্ষেত্রে শিন্তো উপাসনালয় এবং বৌদ্ধ মন্দিরগুলি প্রশাসনিকভাবে সংযুক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানেও বহু জাপানি দুই ধর্মই সমানভাবে অনুসরণ করে। শিন্তো ধর্ম ১৬শ থেকে ১৯শ শতকে বিস্তার লাভ করে।

মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার সময় জাপানি নেতারা শিন্তো ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এটিকে সরকারীভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে জাপানিদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমী অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে ব্যবহার করেন। জাপানের সম্রাটকে ইশ্বরের অবতার মনে করা হত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিন্তো ধর্মের জন্য সরকারী পৃষ্ঠপোষোকতা বন্ধ হয়ে যায় এবং সম্রাট দেবত্ব বিসর্জন দেন। বর্তমান জাপানিদের জীবনে শিন্তো ধর্মের কোন কেন্দ্রীয় ভূমিকা নেই। স্বল্প সংখ্যক অনুসারী বিভিন্ন শিন্তো উপাসনালয়গুলিতে যান। ঐতিহাসিকভাবে বিখ্যাত বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় উপাসনালয়গুলিতে অনেক পর্যটকেরাও বেড়াতে আসেন। এগুলিতে বহু বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় এবং জন্মের পর ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শিশুদের এখানে নিয়ে আসা হয়। প্রতি বছর এগুলিকে কেন্দ্র করে অনেক উৎসব হয়। জাপানের অনেক বাসাতে শিন্তো দেবদেবীদের পূজার উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি তাক বা স্থান থাকে।

৬ষ্ঠ শতকে জাপানে প্রথম বৌদ্ধ ধর্মের প্রচলন হয় এবং এর পরের প্রায় ১০ শতক ধরে এটি জাপানের বুদ্ধিবৃত্তিক, শৈল্পিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। জাপানের বেশির ভাগ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দায়িত্বে থাকেন বৌদ্ধ পুরোহিতেরা। বহু জাপানি পূর্বপুরুষদের স্মরণে বৌদ্ধ মন্দিরে যায়।

৬ষ্ঠ ও ৯ম শতকের মাঝামাঝি সময়ে চীন থেকে কনফুসিয়াসবাদের আগমন ঘটে। কিন্তু বৌদ্ধধর্মের তুলনায় এর গুরুত্ব ছিল কম। ১৯শ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত এটি জাপানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিরাজমান ছিল এবং আজও জাপানি চিন্তাধারা ও মূল্যবোধে কনফুসিয়াসের দর্শনের বড় প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়।

১৫৪৯ সালে জাপানে খ্রিস্টধর্মের আগমন ঘটে এবং এক শতাব্দী পরে এটিকে সরকার নিষিদ্ধ করে দেন। পরে ১৯শ শতকের শেষভাগে এসে এটি আবার জাপানে উপস্থাপিত হয় এবং খুব ধীরে বিস্তার লাভ করতে থাকে। বর্তমানে জাপানে প্রায় ৩০ লক্ষ খ্রিস্টান বাস করে।

বর্তমানে অনেক জাপানি বেশ কিছু নতুন নতুন ধর্মের বা বিশ্বাস ব্যবস্থার অনুসারী হওয়া শুরু করেছে, যেগুলি শিন্তো, বৌদ্ধধর্ম, স্থানীয় কুসংস্কার থেকে ধারণা ধার নিয়েছে এবং স্থানীয় জনগণের সামাজিক চাহিদা মেটাতে গড়ে উঠেছে। এরকম নতুন ধর্মের সংখ্যা কয়েকশ'র মত। এগুলি সব মিলিয়ে কোটি কোটি জাপানি অনুসরণ করে থাকে।

ক্রীড়া

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "法制執務コラム集「法律と国語・日本語」" 法制執務コラム集「法律と国語・日本語」 (জাপানি ভাষায়)। কাউন্সিলর লোকসভার বিধানিক দপ্তর। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৯, ২০০৯ 
  2. According to legend, Japan was founded on this date by Emperor Jimmu, the country's first Emperor.
  3. "Japan Statistical Yearbook 2010" (পিডিএফ)। Statistics Bureau। পৃষ্ঠা 17। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৫, ২০১১ 
  4. "U.S. and World Population Clock"United States Census Bureau। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৩, ২০১৫ 
  5. "Population Count based on the 2010 Census Released" (পিডিএফ)। Statistics Bureau of Japan। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ২৬, ২০১১ 
  6. "World Factbook: Gini Index"CIA। সংগ্রহের তারিখ মে ১১, ২০১১ 
  7. "「東京都の人口(推計)」の概要(平成26年2月1日現在) (2014)"Tokyo Metropolitan Government (JPN)। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ২০, ২০১৪ 
  8. "The Seven Great Powers"। American-Interest। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১, ২০১৫ 
  9. T. V. Paul, James J. Wirtz, Michel Fortmann (২০০৫)। "Great+power" Balance of Power। United States of America: State University of New York Press, 2005। পৃষ্ঠা 59, 282। আইএসবিএন 0-7914-6401-6  Accordingly, the great powers after the Cold War are Britain, China, France, Germany, Japan, Russia, and the United States p.59
  10. Baron, Joshua (জানুয়ারি ২২, ২০১৪)। Great Power Peace and American Primacy: The Origins and Future of a New International Order। United States: Palgrave Macmillan। আইএসবিএন 1-137-29948-7 
  11. "SIPRI Yearbook 2012–15 countries with the highest military expenditure in 2011"। Sipri.org। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২৭, ২০১৩ 
  12. "WHO Life expectancy"। World Health Organization। জুন ১, ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ জুন ১, ২০১৩ 
  13. "WHO: Life expectancy in Israel among highest in the world"Haaretz। মে ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৫, ২০১১ 
  14. "Table A.17" (পিডিএফ)United Nations World Population Prospects, 2006 revision। UN। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৫, ২০১১ 
  15. FutureBrand | News | FutureBrand launches the Country Brand Index 2014–15
  16. Institute for Economics and Peace (2015). Global Peace Index 2015. Retrieved 5 October 2015
  17. Piggott, Joan R. (১৯৯৭)। The emergence of Japanese kingship। Stanford University Press। পৃষ্ঠা 143–144। আইএসবিএন 0-8047-2832-1 
  18. Boxer, Charles Ralph (১৯৫১)। The Christian century in Japan 1549–1650। University of California Press। পৃষ্ঠা 1–14। আইএসবিএন 1-85754-035-2 
  19. C. R. Boxer, The Christian Century In Japan 1549–1650, University of California Press, 1951p. 11, 28—36, 49—51, ISBN 1-85754-035-2
  20. Mancall, Peter C. (২০০৬)। "Of the Ilande of Giapan, 1565"। Travel narratives from the age of discovery: an anthology। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 156–157। 
  21. Matsumara, Hirofumi; Dodo, Yukio; Dodo, Yukio (২০০৯)। "Dental characteristics of Tohoku residents in Japan: implications for biological affinity with ancient Emishi"Anthropological Science117 (2): 95–105। ডিওআই:10.1537/ase.080325 
  22. Hammer, Michael F.; Karafet, TM; Park, H; Omoto, K; Harihara, S; Stoneking, M; Horai, S; ও অন্যান্য (২০০৬)। "Dual origins of the Japanese: common ground for hunter-gatherer and farmer Y chromosomes"Journal of Human Genetics51 (1): 47–58। ডিওআই:10.1007/s10038-005-0322-0পিএমআইডি 16328082 
  23. Travis, John। "Jomon Genes"। University of Pittsburgh। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৫, ২০১১ 
  24. Denoon, Donald; Hudson, Mark (২০০১)। Multicultural Japan: palaeolithic to postmodern। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 22–23। আইএসবিএন 0-521-00362-8 
  25. "Road of rice plant"National Science Museum of Japan। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৫, ২০১১ 
  26. "Kofun Period"। Metropolitan Museum of Art। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৫, ২০১১ 
  27. "Yayoi Culture"। Metropolitan Museum of Art। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ১৫, ২০১১ 
  28. Takashi, Okazaki; Goodwin, Janet (১৯৯৩)। "Japan and the continent"। The Cambridge history of Japan, Volume 1: Ancient Japan। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 275। আইএসবিএন 0-521-22352-0 
  29. Brown, Delmer M., সম্পাদক (১৯৯৩)। The Cambridge History of Japan। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 140–149। 
  30. Beasley, William Gerald (১৯৯৯)। The Japanese Experience: A Short History of Japan। University of California Press। পৃষ্ঠা 42। আইএসবিএন 0-520-22560-0 
  31. Totman, Conrad (২০০২)। A History of Japan। Blackwell। পৃষ্ঠা 64–79। আইএসবিএন 978-1-4051-2359-4 
  32. Hays, J.N. (২০০৫)। Epidemics and pandemics: their impacts on human historyABC-CLIO। পৃষ্ঠা 31। আইএসবিএন 1-85109-658-2 
  33. Totman, Conrad (২০০২)। A History of Japan। Blackwell। পৃষ্ঠা 79–87, 122–123। আইএসবিএন 978-1-4051-2359-4 
  34. Japan's Road to Deep Deficit Is Paved With Public Works, Times in 1997
  35. Chapter 9 Transport, Statistical Handbook of Japan
  36. [১] Japan Statistics Bureau, accessed 26 October 2008. According to this source, the final estimate for May 1, 2008 was 127,662,000 and the provisional estimates for October 1, 2008 was 127,771,000
  37. CIA - The World Factbook - Rank Order- Life expectancy at birth
  38. The Anime Biz - By Ian Rowley, with Hiroko Tashiro, Chester Dawson, and Moon Ihlwan, BusinessWeek, June 27 2005.

বহিঃসংযোগ