শওকত আলী
শওকত আলী | |
---|---|
জন্ম | [১] রায়গঞ্জ, বৃহত্তর দিনাজপুর জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান উত্তর দিনাজপুর জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) | ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬
মৃত্যু | ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ | (বয়স ৮১)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
পেশা | কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিক্ষক |
পরিচিতির কারণ | দক্ষিণায়নের দিন, প্রদোষে প্রাকৃতজন |
শওকত আলী (১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬ – ২৫ জানুয়ারি ২০১৮[২]) একজন বাঙালি কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও শিক্ষক। তিনি বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গল্প ও উপন্যাস লিখে খ্যাতি অর্জন করেন।ভিন্নধর্মী লেখার জন্য তাঁর পাঠক সমাজও ভিন্নরকম ছিল। ১৯৯০ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[১][৩]
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]শওকত আলী ১৯৩৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার থানা শহর রায়গঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতার নাম শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাঃ খোরশেদ আলী সরকার এবং মাতার নাম সালেমা খাতুন। শওকত আলী ছিলেন তাদের তৃতীয় সন্তান।তার ছোটভাই বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রচ্ছদশিল্পী আবদুর রোউফ সরকার(জন্ম: ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬, মৃত্যু: ২৪ এপ্রিল ২০১১)।
শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]শ্রীরামপুর মিশনারী স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির মাধ্যমে শওকত আলীর বাল্য শিক্ষা শুরু হয়। কিন্তু ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে কলকাতাতে আক্রমণ শুরু হলে তারা স্বপরিবারে রায়গঞ্জে ফিরে আসেন। রায়গঞ্জে তার মা সেখানকার বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন এবং বাবা ডাক্তারি পেশা শুরু করেন। রায়গঞ্জ করনেশন ইংলিশ হাইস্কুলে শওকত আলীকে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি করে দেওয়া হয়। ১৯৫১ সালে তিনি করনেশন স্কুল থেকেই প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৫১ সালে তিনি দিনাজপুরের সুরন্দ্রনাথ কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন।
তার মায়ের মৃত্যুর পর ১৯৫২ সালে শওকত আলী তার ভাই-বোনদের নিয়ে পূর্ব বাংলার দিনাজপুরে স্থানান্তরিত হন। পরবর্তীতে তার বাবাও ১৯৫৩ সালে দিনাজপুরে চলে যান।
দেরীতে ভর্তি হতে আসার কারণে শওকত আলী আই.এস.সি তে ভর্তি হতে না পেরে ১৯৫১ সালে সুরন্দ্রনাথ কলেজে আই.এ. ভর্তি হওয়ার পর ১৯৫৩ সালে দ্বিতীয় বিভাগে আই.এ. পাস করেন। আই.এ পাস করার পর এই কলেজেই বি.এ. তে ভর্তি হন। কলেজ জীবনে কমিউনিস্ট দলের সাথে সংযুক্ত হন এবং বিভিন্ন মিছিল, আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন। ১৯৫৪ সালে তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয় এবং ডিসেম্বরে তিনি ছাড়া পান। ১৯৫৫ সালে বি.এ পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উর্ত্তীণ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় এম.এ-তে ভর্তি হন ও ১৯৫৮ সালে এম.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬১ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৫৫ সালে বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হতে শুরু করে। একই সময়ে দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার নিউজ ডেস্কে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে দিনাজপুরের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে এবং ১৯৫৯ সালে ঠাকুরগাঁও কলেজে বাংলার প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।[৪] ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) এবং ১৯৮৮ সালে জেলা গেজেটিয়ারের ঢাকার হেড অফিসে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করে পরিচালক পদে উন্নীত হন। ১৯৮৯ সালে সরকারি সঙ্গীত কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯৩ সালে অবসরগ্রহণ করেন।
সাহিত্যকর্ম
[সম্পাদনা]নবম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় লেখালেখি শুরু করলেও ভারত ভাগের পর কলকাতার বামপন্থীদের 'নতুন সাহিত্য' নামে একটি পত্রিকায় প্রথম তার গল্প প্রকাশিত হয়।[৫] এরপর দৈনিক মিল্লাত, মাসিক সমকাল, ইত্তেফাকে তার অনেক গল্প, কবিতা এবং শিশুদের জন্য লেখা প্রকাশিত হয়। তার দক্ষিণায়নের দিন, কুলায় কালস্রোত এবং পূর্বরাত্রি পূর্বদিন যেগুলোকে ত্রয়ী উপন্যাস বলা হয়, যার জন্য তিনি ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬) লাভ করেন।[১]
এই ত্রয়ী উপন্যাস সর্ম্পকে শওকত আলী এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন,
"ষাটের দশকের মানুষের মধ্যে চিন্তাভাবনার যে পরিবর্তন আসছে, সেটাই 'দক্ষিণায়নের দিন' যার মানে হচ্ছে শীতকাল আসছে। 'কুলায় কাল স্রোত' হচ্ছে পরিবর্তন যেখানে আঘাত করছে। আর 'পূর্বরাত্রি পূর্বদিন' হচ্ছে নতুন সময়টি আসার একেবারে আগের সময়টি। মূলত ষাটের দশকে আমাদের মধ্যবিত্ত এবং সমগ্র সমাজব্যবস্থায় একটা পরিবর্তন আসে। নতুন একটা চিন্তা-চেতনা দ্বারা আলোড়িত হয় পুরো সমাজ। ধ্যান-ধারণা চাল-চলন জীবনব্যবস্থায় একটা পরিবর্তনের সুর বেজে ওঠে। সেসবই উপন্যাসে আনতে চেয়েছি।"[৬]
উপন্যাস
[সম্পাদনা]- পিঙ্গল আকাশ (১৯৬৩)
- যাত্রা (১৯৭৬)
- প্রদোষে প্রাকৃতজন (১৯৮৪)
- অপেক্ষা (১৯৮৪)
- দক্ষিণায়নের দিন (১৯৮৫)
- কুলায় কালস্রোত (১৯৮৬)
- পূর্বরাত্রি পূর্বদিন (১৯৮৬)
- সম্বল (১৯৮৬)
- গন্তব্যে অতঃপর (১৯৮৭)
- ভালোবাসা কারে কয় (১৯৮৮)
- যেতে চাই (১৯৮৮)
- ওয়ারিশ (১৯৮৯)
- বাসর ও মধুচন্দ্রিমা (১৯৯০)
- উত্তরের খেপ (১৯৯১)
- প্রেম কাহিনী (১৯৯১)
- পতন (১৯৯২)
- অবশেষে প্রপাত (১৯৯৬)
- দলিল (২০০০)
- জননী ও জাতিকা (২০০১)
- হিসাব নিকাশ (২০০১)
- স্ববাসে প্রবাসে (২০০১)
- তনয়ার স্বীকারোক্তি (২০০১)
- জোড় বিজোড় (২০০১)
- কোথায় আমার ঘরবাড়ি (২০০১)
- শেষ বিকেলের রোদ (২০০১)
- এক ডাইনীর খেলা (২০০১)
- নাঢ়াই (২০০৩)
- বসত (২০০৫)
- স্থায়ী ঠিকানা (২০০৫)
- দুই রকম (২০০৫)
- কাহিনী ও কথোপকথন (২০০৭)
- মাদারডাঙ্গার কথা (২০১১)
গল্প
[সম্পাদনা]- উন্মুল বাসনা (১৯৬৮)
- লেলিহান সাধ (১৯৭৮)
- শুন হে লখিন্দর (১৯৮৮)
- বাবা আপনে যান (১৯৯৪)
- দিনগুজরান (২০০৬)
পুরস্কার
[সম্পাদনা]- বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৮
- হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৭৭
- অজিত গুহ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৩
- ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৮৬
- আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯)
- রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদক, ১৯৯০
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ ঘ "কথাসাহিত্যিক শওকত আলী 'সঙ্কটাপন্ন' - bdnews24.com"। bangla.bdnews24.com। ৬ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৮। line feed character in
|শিরোনাম=
at position 37 (সাহায্য) - ↑ "লাইফ সাপোর্টে কথাসাহিত্যিক শওকত আলী"। বাংলানিউজ২৪।
- ↑ Kantho, Kaler। "লাইফ সাপোর্টে কথাসাহিত্যিক শওকত আলী - কালের কণ্ঠ"।
- ↑ "লাইফ সাপোর্টে কথাসাহিত্যিক শওকত আলী - banglatribune.com"। ১০ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "লাইফ সাপোর্টে কথাসাহিত্যিক শওকত আলী"। jaijaidinbd.com।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৩।
- ১৯৩৬-এ জন্ম
- ২০১৮-এ মৃত্যু
- বাংলাদেশী সাহিত্যিক
- বাংলাদেশী সাংবাদিক
- ছোটগল্পে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
- ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক বিজয়ী
- বাঙালি ঔপন্যাসিক
- আলাওল সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
- বাংলাদেশী পুরুষ ঔপন্যাসিক
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- বাংলাদেশী শিক্ষায়তনিক
- জগন্নাথ কলেজের শিক্ষক
- বাঙালি লেখক
- বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক
- উত্তর দিনাজপুর জেলার ব্যক্তি
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
- একুশে পদক বিজয়ী
- পশ্চিমবঙ্গের লেখক