রাহিজা খানম ঝুনু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাহিজা খানম ঝুনু
জন্ম(১৯৪৩-০৬-২১)২১ জুন ১৯৪৩
মৃত্যু২৬ নভেম্বর ২০১৭(2017-11-26) (বয়স ৭৪)
ল্যাব এইড হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ
মৃত্যুর কারণহৃদরোগ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
মাতৃশিক্ষায়তনবুলবুল ললিতকলা একাডেমি
পেশানৃত্যশিল্পী, শিক্ষক
কর্মজীবন১৯৫৬-বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীআমান উল্লাহ চৌধুরী (বি. ১৯৬৬)
সন্তান৪ জন
পিতা-মাতাআবু মোহাম্মদ আবদুল্লাহ খান (পিতা)
সফরুন নেছা (মাতা)
পুরস্কারএকুশে পদক (১৯৯০)

রাহিজা খানম ঝুনু (২১ জুন ১৯৪৩ - ২৬ নভেম্বর ২০১৭)[১] ছিলেন একজন বাংলাদেশী নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যশিক্ষক। তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে নৃত্যশিক্ষক এবং বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। নৃত্যকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯০ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

ঝুনু ১৯৪৩ সালের ২১ জুন তৎকালীন পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) মানিকগঞ্জ জেলায় এক শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবু মোহাম্মদ আবদুল্লাহ খান ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার এবং মাতা সফরুন নেছা। ঝুনু ছোটবেলায় কলের গান বাজিয়ে বাড়িতে নাচতেন। তার বাবা এতে খুশি হয়ে তাকে গেন্ডারিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে (মনিজা রহমান গার্লস স্কুল) ভর্তি করান। যেখানে তিনি পড়াশুনার পাশাপাশি নাচ ও গান শিখেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষিক বাসন্তী গুহঠাকুরতা প্রতি বছর স্কুলে নাচ ও গানে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সময়কালে শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার স্ত্রী। ১৯৫৫ সালে ঝুনু পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাসন্তী গুহ "ঘুমন্ত রাজকন্যা" নামে একটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেন। এতে ঝুনু একটি পুরুষ চরিত্রে নাচে অংশগ্রহণ করেন। এই নৃত্যনাট্যের নৃত্য পরিচালক ছিলেন অজিত সান্ন্যাল। তিনি ঝুনুর পিতাকে বলেন তাকে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি করতে।[২] ১৯৫৬ সালে ঝুনু নৃত্যে তালিম নিতে বাফায় ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বাফার প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার সাথে তার ভাই মোজাম্মেল হোসেন সেতার, বোন রুনু রবীন্দ্র সঙ্গীত এবং নীনা ধ্রুপদী সঙ্গীত বিভাগে ভর্তি হন।[৩]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ঝুনু বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার পর বেশ কয়েকটি নৃত্যনাট্যে অংশগ্রহণ করেন। বাফায় ভর্তির পরের বছর ১৯৫৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি বাফার নিউ পিকচার হাউসে মঞ্চস্থ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য চন্ডালিকায় চুড়িওয়ালা চরিত্রে অংশগ্রহণ করেন।[৪] ১৯৫৮ সালে জি এ মান্নান বাফায় নৃত্যশিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীনের নকশী কাঁথার মাঠ মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত নেন। ঝুনু এই নৃত্যনাট্যে সাজু চরিত্রে এবং জি এ মান্নান রূপাই চরিত্রে অংশগ্রহণ করেন। তিনমাস ব্যাপী অনুশীলনের পর নৃত্যনাট্যটি ইস্কান্দার মির্জা হলে (বর্তমান ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট) মঞ্চস্থ হলে এর পরিচালক এবং অংশগ্রহণকারীদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় তারা পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর, ইরাকইরানে এই নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করে। ইরানে ঝুনুর কাজ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন।[৫]

১৯৬০ সালে বাফা থেকে পাস করে তিনি বাফার নৃত্যশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৮ সালে অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।[৫] ঝুনু এসময়ে বেশ কিছু নৃত্যনাট্য পরিচালনা করেন এবং অংশগ্রহণ করেন। ডঃ এনামুল হক রচিত সূর্যমুখী নদী, উত্তরণের দেশে, হাজার তারের বীণা নৃত্যনাট্যসমূহ পরিচালনা ও অংশগ্রহণ করেছেন। উত্তরণের দেশে নৃত্যনাট্যটি একুশে ফেব্রুয়ারির ওপর ভিত্তি করে রচিত এবং সূর্যমুখী নদী গীতিনৃত্যনাট্যটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর রচিত। তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় দি ম্যালডি নৃত্যনাট্য পরিচালনা করেন। শিশুদের জীবনভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ নৃত্যনাট্য দেখব এবার জগত্টাকে পরিচালনা করেছেন।[২]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

১৯৬৬ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি ঝুনু আমান উল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আমান উল্লাহ ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে তিন বার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তাদের দুই মেয়ে লোপা ও ফারহানা চৌধুরী বেবী দুজনেই লোক ও আধুনিক ধারার নৃত্যশিল্পী।[৬] লোপা ১৯৯০ সালে হঠাৎ মারা যান। এছাড়া তাদের দুই ছেলে আহসান উল্লাহ চৌধুরী ও আকরাম উল্লাহ চৌধুরী।[২]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস ও হৃদরোগে আক্রান্ত ঝুনু ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।[৭] ২৬ নভেম্বর তিনি এই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[৮]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "নৃত্যগুরু রাহিজা খানম ঝুনু আর নেই"দৈনিক প্রথম আলো। ২৬ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  2. হাসান, শেখ মেহেদী (৩০ জুন ২০১৭)। "নাচ শিখতে হলে কঠোর পরিশ্রম ও নিয়মিত চর্চা করতে হবে"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৭ 
  3. বিউটি, রওশন আরা (১৩ জুন ২০১৩)। "পল্লীগীতি সম্রাজ্ঞী নীনা হামিদ"দৈনিক আজাদী। ২০১৬-১২-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৭ 
  4. "বাংলাদেশে রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য মঞ্চায়ন"দৈনিক জনকণ্ঠ। ৩১ জুলাই ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. Zaman, Mustafa (১৪ এপ্রিল ২০০৬)। "BAFA: Fifty Years of Nurturing Talent"স্টার উইকেন্ড (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১৭ 
  6. Kavita Charanji (ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০০৬)। "Farhana Chowdhury: Folk and modern dance are her forte"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ডিসেম্বর ১০, ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৭ 
  7. "নৃত্যগুরু মাতা রাহিজা খানম ঝুনু আইসিইউতে"দৈনিক জনকণ্ঠ। ২৪ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. "চলে গেলেন নৃত্যগুরু রাহিজা খানম ঝুনু"দৈনিক মানবজমিন। ২৭ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  9. "বাংলা একাডেমি সম্মানসূচক ফেলোশিপপ্রাপ্ত বিশিষ্টজনের তালিকা"বাংলা একাডেমি। ১ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭