রফিকুল হক

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রফিকুল হক দাদুভাই
জন্ম১৯৩৭
মৃত্যু২০২১
মুগদা, ঢাকা।
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশী
পেশাসাংবাদিকতা
পরিচিতির কারণছড়াকার
অফিসদৈনিক যুগান্তর
দাম্পত্য সঙ্গী১জন
সন্তান২ ছেলে ১ মেয়ে

রফিকুল হক ( ৮ জানুয়ারি ১৯৩৭ - ১০ অক্টোবর ২০২১) [১] ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ছড়াকার। তার রচিত বর্গী এলো দেশে এবং পান্তাভাতে ঘি বাংলা সহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। তাকে বলা হতো ছড়াসাহিত্যের জাদুকর।[২] কেউ বলেছেন তিনি ‘ছড়ার জীবন্ত কিংবদন্তি’।[৩] তিনি বাংলাদেশের প্রবীণতম সাংবাদিক হিসাবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যুগান্তর পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি শিশু সংগঠন চাদেঁর হাটের প্রতিষ্ঠাতা।[৪] তিনি দাদু ভাই নামে সমধিক পরিচিত ছিলেন।[৫] পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক।[৬][৭] বিখ্যাত পল্লীগীতি "নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা কোন দূরে যাও চইলা..." তারই রচনা।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

তার জন্ম ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারী তৎকালীন বৃটিশ ভারতের কুচবিহারে। ১৯৪৭ এ দেশ বিভাগের পর রংপুরে পিতার সাথে চলে আসেন। রংপুর সদর উপজেলার কামাল কাছনায় বসতি স্থাপন করেন। তার বাবার নাম ইয়াসিন উদ্দিন আহম্মদ, মাতার নাম রহিমা খাতুন।[৮] তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে বি, এ পাস করেন।[৯] এছাড়াও তিনি জুরিখের ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইন্সটিটিউট (আইপিআই) থেকে সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।[৮]

ছড়া[সম্পাদনা]


ছেলে ঘুমালো
বুড়ো ঘুমালো

ভোলা দ্বীপের চরে

জেগে থাকা মানুষগুলো

মাতম শুধু করে।

ঘুমো বাছা ঘুমোরে

সাগর দিলো চুমোরে।

খিদে ফুরালো জ্বালা জুড়ালো

কান্না কেন ছিঃ

বাংলাদেশের মানুষ বুকে

পাথর বেঁধেছি।
(টীকা: ১৯৭০-এর উপকূলীয় টর্ণাডো উপলক্ষে লিখিত।)

[১]

তার ছন্দজ্ঞান অসাধারণ, বিষয়বৈচিত্র্য তুলনারহিত এবং শব্দের কারিগরি অভিনব ও দৃষ্টান্তমূলক। তার ছড়া সমাজ সচেতন। ১২ নভেম্বর ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রবল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে মাত্র এক রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে সমুদ্রের উপকূলবর্তী স্থানের কয়েক লক্ষ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ঘরবাড়ি, গবাদি পশু কিছুই রক্ষা পায়নি।

সাংবাদিকতা[সম্পাদনা]

রফিকুল হক সুদীর্ঘ ৫৯ বছর তিনি নানা পদে সংবাদপত্রের জগতে সম্পৃক্ত ছিলেন। বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। সংবাদপত্র প্রকাশনার জগতে তার কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৬১ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসাবে। এরপর দৈনিক জেহাদ, সোনার বাংলা, দৈনিক পয়গাম, দৈনিক পূর্বদেশ, সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা, দৈনিক জনতা, বাংলাদেশ অবজারভার, আজাদ, লালসবুজ প্রভৃতি পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৬৯ সালে সাপ্তাহিক পূর্বদেশ ‘দৈনিক পূর্বদেশ’ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলে সেখানে তিনি ফিচার এডিটর হিসাবে কাজ করেন এবং সরকারী আদেশে ১৯৭৫ সালের ৬ জুন সব পত্রিকা বন্ধ না-হয়ে যাওয়া পর্যন্ত একনাগাড়ে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে সরকারি উদ্যোগে জাতীয় সাপ্তাহিক পত্রিকা কিশোর বাংলা বের হলে সেখানে তিনি কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত তিনি সাফল্যের সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি দৈনিক রূপালী পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় যোগ দেন। যুগান্তরের ফিচার এডিটর হিসেবে তিনি আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন।[১০][১১]

কিশোর বাংলার সম্পাদনা[সম্পাদনা]

তিনি বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা পত্রিকার কার্যনর্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এটি ছিল একটি জাতীয় সাপ্তাহিক। তার দক্ষ সম্পাদনায় কিশোরদের জন্য নিয়মিত সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসাবে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথমে দৈনিক বাংলা থেকে এবং পরে অবজার্ভার ভবন থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হতো। প্রথমে নুরুল ইসলাম পাটোওয়ারী ও পরে এস. এম. পারভেজ-এর নাম সম্পাদক হিসাবে থাকলেও রফিকুল হক দাদুভাই ছিলেন কিশোর বাংলার প্রধান অধিকর্তা ও প্রাণপুরুষ।[১১]

চাঁদের হাট[সম্পাদনা]

তিনি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় শিশুদের পাতা চাঁদের হাট সম্পাদনা করতেন। তারই সূত্রে তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠান চাঁদের হাট প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রকাশনা[সম্পাদনা]

তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি।

  • বর্গী এলো দেশে
  • পান্তাভাতে ঘি
  • নেবুরপাতা করমচা
  • আম পাতা জোড়া জোড়া
  • রফিকুল হক দাদু ভাই-এর সমকালীন ছড়া
  • বই বই হই চই
  • প্রাচীন বাংলার রূপকথা।[৮]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

  • বাংলা একাডেমী পুরস্কার - ২০০৯ [১২]
  • অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরুস্কার
  • নিখিল ভারত শিশু সাহিত্য সংঘ সম্মাননা
  • বিশ্ব সাহিত্য সম্মেলনে (পাটনা ভারত) স্ক্রোল অব অনার।[৮]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

দৈনিক যুগান্তরের ফিচার এডিটর বাংলাদেশের প্রবীণ সাংবাদিক রফিকুল হক দাদুভাই ১০ অক্টোবর ২০২১ রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা রাজধানীর মুগদার নিজ বাসায় মারা যান তিনি। তিনি বাধ্যর্কজনিত বিধি জটিলতায় ভুগছিলেন। ২০২০ সালে পরপর দুইবার তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। [৭]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "রফিকুল হক 'দাদু ভাই' আর নেই, ইত্তেফাক, ১০ অক্টোবর ২০২১"। ১০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০২১ 
  2. "ছড়াসাহিত্যের জাদুকর রফিকুল হক দাদুভাই"। ১০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ অক্টোবর ২০২১ 
  3. রফিকুল হক, ছড়ার জীবন্ত কিংবদন্তি
  4. "রফিকুল হক দাদুভাইয়ের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী আজ"। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  5. "দাদুভাই ও হানিফ সংকেতকে সংবর্ধনা দেবে চাঁদের হাট"। ২০২০-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  6. ছড়াকার রফিকুল হক দাদু ভাইয়ের জন্মদিন আজ[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. না ফেরার দেশে রফিকুল হক ‘দাদু ভাই’
  8. মোর্শেদ, এটিএম (২০১৩)। লেখক এ্যালবাম। ঢাকা: কতকথা প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১৭। 
  9. "রফিকুল হক দাদুভাইয়ের কাল ৭৭তম জন্মদিন"। ২০১৩-০৩-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০২-১২ 
  10. চলে গেলেন প্রবীণ সাংবাদিক রফিকুল হক দাদুভাই
  11. ছড়া বানাতেন রফিকুল হক
  12. "বাংলা একাডেমী পুরস্কার প্রাপ্তরা বললেন, তরুণ বয়সেই লেখককে পুরস্কৃত করা উচিত"। ৬ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩