মোহাম্মদ নাসির আলী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মোহাম্মদ নাসির আলী
জন্মমোহাম্মদ নাসির আলী
১৯১০ সালের ১০ই জানুয়ারি
মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলের ধাইদা গ্রামে
মৃত্যু১৯৭৫ সালের ৩০শে জানুয়ারি
ছদ্মনামবাগবান
পেশালেখক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, প্রকাশক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষা১৯৩১ সালে বি.কম
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৩১)

মোহাম্মদ নাসির আলী (১০ জানুয়ারি, ১৯১০ - ৩০ জানুয়ারি ১৯৭৫) বাংলাদেশের একজন শিশুসাহিত্যিক। তিনি সাধারনত ছোটদের জন্য লিখেছেন এবং সাহিত্যচর্চায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেন শিশুসাহিত্যিক হিসেবে। ছোটদের জন্য শিক্ষামূলক গল্প, প্রবন্ধ ও জীবনকথা রচনায় দক্ষতার পরিচয় প্রদান করেন।[১]

জন্ম ও প্রথম জীবন[সম্পাদনা]

ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের একটি গ্রাম দাহদা। লোকমুখে উচ্চারণ হয় ধাইদা। এই ধাইদা গ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের কর্তা ছিলেন মোহাম্মদ ইজ্জত আলী। তার এক পুত্র হায়দার আলী ব্যবসা উপলক্ষে গোয়ালন্দের রাজবাড়ী শহরে বাস করতেন। সেখানে তার একটি জুতার দোকান ছিলো। হায়দার আলীর স্ত্রীর নাম কসিমুন্নেসা। তাদের দুই মেয়েসহ এগারটি সন্তান ছিলো। কিন্তু পুত্র সন্তানদের দু’জন ছাড়া বাকিরা অকালে মৃত্যুবরণ করে। ১৯১০ সালের ১০ জানুয়ারি তাদের কোল জুড়ে আসে একটি পুত্রসন্তান। পুত্রের দিক থেকে তিনি তৃতীয়। বাবা-মা আদর করে নাম রাখলেন মোহাম্মদ নাসির আলী। জন্মের সময় তার গায়ের রং ছিলো খুব ফর্সা। এ জন্য বাবা-মা আদর করে ডাকতেন কফুর অর্থাৎ কর্পূর। জন্ম ধাইদায় হলেও নাসির আলীর শৈশব কেটেছে বাবার বাসস্থান রাজবাড়ী শহরে। তার শিক্ষাজীবনের শুরুও সেখানেই। তবে কিছুদিন পর তিনি চলে আসেন গ্রামের বাড়ি বিক্রমপুরে। সেখানে থেকে পড়াশোনা করতে থাকেন।

পড়াশোনা[সম্পাদনা]

মোহাম্মদ নাসির আলী বিখ্যাত তেলিরবাগ কালীমোহন দুর্গামোহন ইনস্টিটিউট হতে ১৯২৬ সালে স্বর্নপদক সহ এন্ট্রান্স পাস করেন। জগন্নাথ কলেজ হতে ১৯২৮ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে আইএ পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে ১৯৩১ সালে বিকম. পাস করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মোহাম্মদ নাসির আলী ১৯৩৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টে অনুবাদক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৫২ সালে অধুনা লুপ্ত দৈনিক আজাদের শিশু-কিশোর বিভাগে মুকুল মাহফিল পরিচালনা করেন এবং বাগবান ছদ্মনামে দায়িত্ব পালন করেন।[২] পরবর্তী কালে তিনি একটি পত্রিকার শিশুবিভাগের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকায় এসে হাইকোর্টের চাকরিতে যোগদান করেন এবং ১৯৬৭ সালে অবসরগ্রহণ করেন। তবে এর আগেই তিনি ১৯৪৯ সালে বন্ধু আইনুল হক খানের সঙ্গে যৌথভাবে নওরোজ কিতাবিস্তান নামে প্রকাশনা সংস্থা গড়ে তোলেন, যা এখনো পুস্তক প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।[৩]

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

শিশুতোষ বইয়ের লেখক হিসেবেই নাসির আলী বেশি পরিচিত। তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪০টিরও বেশি। তবে তিনি অনেক শিক্ষামূলক গল্প, প্রবন্ধ ও জীবনী লিখেছেন। হাস্যরস সৃষ্টিতে তিনি যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- আমাদের কায়েদে আজম (১৯৪৮), মণিকণিকা (১৯৪৯), শাহী দিনের কাহিনী (১৯৪৯), ছোটদের ওমর ফারুক (১৯৫১), আকাশ যারা করলো জয় (১৯৫৭), আলী বাবা (১৯৫৮), টলস্টয়ের সেরা গল্প (১৯৬৩, ২য় সংস্করণ), ইতালীর জনক গ্যারিবল্ডি (১৯৬৩), বীরবলের খোশ গল্প (১৯৬৪), সাত পাঁচ গল্প (১৯৬৫), বোকা বকাই (১৯৬৬), যোগাযোগ (১৯৬৮), লেবু মামার সপ্তকাণ্ড (১৯৬৮), আলবার্ট আইনস্টাইন (১৯৭৬), মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা (১৯৭৬) ইত্যাদি।[৩]

সম্মাননা[সম্পাদনা]

শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নাসির আলী বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হন। তিনি ১৯৬৭ সালে শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৬৮ সালে ইউনেস্কো এবং একই বছর ইউনাইটেড ব্যাংক অব পাকিস্তান পুরস্কার লাভ করেন। বই প্রকাশনার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও ১৯৮৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাকে স্বর্ণপদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করে।[৩]

অন্যান্য দক্ষতা[সম্পাদনা]

মোহাম্মদ নাসির আলী ১৯৬৯ সালে প্রকাশনা সম্পর্কে করাচি থেকে ইউনেস্কো ট্রেনিং গ্রহণ করেন। তাছাড়া তিনি ভাল ছবি আঁকতে পারতেন। ফোটোগ্রাফিতেও তার প্রশংসনীয় দক্ষতা ছিল।[৩]

জীবনাবাসন[সম্পাদনা]

মোহাম্মদ নাসির আলী ১৯৭৫ সালের ৩০শে জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ৩২১।
  2. http://munshigonj.com/2009/06/24/[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. http://bangla.thereport24.com/article/80113/index.html
  4. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৬