হোসনে আরা (কবি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হোসনে আরা
হোসনে আরা
জন্ম১৯১৬
পিয়ারা গ্রাম, চব্বিশ পরগণা জেলা, পশ্চিমবঙ্গ
মৃত্যু৩০ মার্চ ১৯৯৯
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
জাতীয়তাবাংলাদেশি
অন্যান্য নামহাসি
পেশাসাহিত্যিক
পরিচিতির কারণছড়া
উল্লেখযোগ্য কর্ম
সফদর ডাক্তার

হোসনে আরা (১৯১৬- ৩০ মার্চ ১৯৯৯) বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় সাহিত্যিক যিনি ছড়াকার হিসেবে অধিক জনপ্রিয়। তার লিখিত সফদর ডাক্তার কবিতাটি চল্লিশের দশকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং বর্তমানেও জনপ্রিয়। একসময়ে কবিতাটি বাংলাদেশে পাঠ্য হিসেবে বাংলা বইয়ে পঠিত হতো।

জন্ম ও শিক্ষা[সম্পাদনা]

কবি হোসনে আরা ১৯১৬ সালে পশ্চিম বঙ্গের চব্বিশ পরগণা জেলার পিয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। হোসনে আরার বাবা মুন্সি এবাদুল্লাহ ছিলেন সে সময়কার নামকরা পুথি লেখক।[১] গ্রামে মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ-সুবিধা না থাকায় হোসনে আরাকে মাত্র সাত বছর বয়সে ঢাকায় চাচা ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বাসায় পাঠানো হয়।[২] চাচার বাসায় পড়ালেখার ব্যবস্থা হয়, তবে পর্দার আড়ালে। পর্দার একপাশে মৌলভি সাহেব আর অন্য পাশে হোসনে আরা এবং তার চাচাত বোনেরা। তখন এভাবেই চলত মেয়েদের লেখাপড়া। এক বছর পরে খবর এলো বাবা অসুস্থ। হোসনে আরাকে ফিরে যেতে হলো গ্রামে। শেষ হয় প্রথাগত শিক্ষার, কিন্তু নিজের চেষ্টা তিনি অব্যাহত।[১]

স্বশিক্ষায় শিক্ষিত হোসনে আরাকে মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাংবাদিক মোহাম্মদ মোদাব্বেরের সাথে। পরবর্তীতে বাংলা একাডেমী পুরস্কারএকুশে পদক পাওয়া এই সাংবাদিক ছিলেন উদার মনের মানুষ। তিনি নিজেও সাহিত্যচর্চা করতেন এবং দৈনিক মিল্লাত পত্রিকার প্রধান সম্পাদকও ছিলেন। হোসনে আরার বিপুল আগ্রহ দেখে স্বামী তাকে পড়াশোনার ব্যাপারে সাহায্য করতেন। হোসনে আরা স্বামীর অনুপ্রেরণায় লিখতে শুরু করলেন।[১]

সাহিত্যজীবন[সম্পাদনা]

দৈনিক আজাদের ‘মুকুলের মহফিলে’ হোসনে আরার প্রথম ছড়া প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় ‘হাসি’ ছদ্মনামে নামে প্রচুর ছড়া লেখেন।[২] ১৯৪৯ সালে তার প্রথম ছড়ার বই ‘ফুলঝুরি’ প্রকাশ হয়। কলকাতার ব্যানসন কোম্পানি বইটি প্রকাশ করেছিলেন। বইটি শিশু-কিশোরদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। শিশুদের জন্য তার অন্য বই হলো খেয়াল খুশি, হল্লা, টুংটাং, হট্টোগোল। এ ছাড়া তিনি ‘মিছিল’ নামে একটি কাব্যগ্রন্থ ও ‘আমার কারাবরণ’ নামে রয়েছে একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ লিখেছেন।[২]

আন্দোলনে[সম্পাদনা]

১৯৩২ সালে মাত্র ষোল বছর বয়সে হোসনে আরা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। গান্ধিজী ব্রিটিশদের বাংলার মাটি তথা ভারতবর্ষের মাটি থেকে দূরে সরাতে আন্দোলন করছেন। এর ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশরা ১৪৪ ধারা জারি করে। হোসনে আরা তখন অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে সব বাঁধা পেরিয়ে মিছিল থেকে ছত্রভংগ হয়ে একাই পতাকা হাতে চলে এলেন কলকাতার গড়ের মাঠের মনুমেন্টের সামনে। ১৪৪ ধারা ভংগ করার অপরাধে তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। ছয়মাসের জেল দেওয়া হয় তাকে। তিনিই প্রথম বাঙালি নারী যিনি আন্দোলন করে জেল খেটেছিলেন।

৫২'র ভাষা আন্দোলনে, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজের অবস্থান থেকে অবদান রাখেন তিনি। একাত্তরে তিনি নিজের হাতে কাপড় বুনে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য, রেডক্রসের মাধ্যমে তা পৌঁছে দেয়া হত। অভিনবভাবে তিনি সাহায্য করার চেষ্টা করেছেন যোদ্ধাদের। স্বামী মোদাব্বেরের সংগে মিলে এক বুদ্ধি বের করলেন। কয়েকটা পেনসিল দুই টুকরো করে এক টুকরো রেখে দিতেন নিজের কাছে, অন্য টুকরো থাকত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। বিপদে পড়লে মুক্তিযোদ্ধারা যদি এই পেন্সিলের টুকরো দেখাতে পারতেন, হোসনে আরা যথাসাধ্য সহযোগিতা করার চেষ্টা করতেন।[১]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

হোসনে আরা চার পুত্র ও এক কন্যা নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বাস করতেন। ৩০ মার্চ ১৯৯৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

ছড়াকার হোসনে আরা শিশুসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৬১ সালে বাংলা একাডেমি ও ১৯৯২ সালে পান শিশু একাডেমি পুরস্কার।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "প্রিয় ছড়া-লেখক হোসনে আরা"। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১৭ 
  2. "'সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার'-এর লেখক"। ৬ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুন ২০১৭