মানবতাবাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুখি মানুষ (Happy Human) লোগো

মানবতাবাদ হল গবেষণা, দর্শন ও অনুশীলনে এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গী যা মানবিক নীতি ও বিষয়াদি নিয়ে কাজ করে। এই শব্দটির বহু অর্থ হতে পারে, যেমন,

১) একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন যাকে ইতালীয় রেনেসাঁসের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কায়িত করা হয়

২) একটি শিক্ষাবৃত্তিক কার্যপদ্ধতি যা সাহিত্যবিষয়ক উপাদান অথবা মানবিক বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান দান করে

৩) দর্শনসমাজবিজ্ঞানের বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গীগুলো যেগুলো যে কোন প্রকার “মানব প্রকৃতি” এর অস্তিত্ব ঘোষণা করে(এক্ষেত্রে প্রতি-মানবতাবাদ লক্ষণীয়)

৪) একটি ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শ যা যুক্তি, নীতিশাস্ত্র, ও ন্যায়বিচারকে নৈতিকতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ার ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করে এবং সবপ্রকার অলৌকিকতা এবং ধর্মীয় শাস্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করে।

সর্বশেষ এই অর্থটির উপর ভিত্তি করে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদকে একটি জীবনবিধান বলা চলে।[১] আধুনিক অর্থে মানবতাবাদ বলতে তাই অলৌকিকতা ও ঐশী কর্তৃত্বকে অস্বীকার করা বোঝায়।[২][৩] শব্দটির এই ভাবার্থকে প্রথাগত ধর্মীয় বৃত্ত্বে ব্যবহৃত “মানবতাবাদ” শব্দটির ভাবার্থের বিপরীতে দাঁড় করানো যেতে পারে।[৪] জ্ঞান আন্দোলনের প্রত্যাদেশবিরোধী আস্তিকতা বা একাত্মবাদ, পুরোহিততন্ত্রের বিরুদ্ধবাদ, ঊনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলন(যেমন, ইতিবাদ) এবং বিজ্ঞানের প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে এই তরিকার মানবতাবাদের জন্ম হয়েছে।

মানবতাবাদ, মানবতাবাদী সাহিত্যবিষয়ক সংস্কৃতির প্রতিও ইঙ্গিত করতে পারে।[৫]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

“মানবতাবাদ” শব্দটি বহু অর্থদ্যোতক। ১৮০৬ সালের দিকে “হিউম্যানিসমাস” শব্দটি জার্মান বিদ্যালয়গুলোতে পঠিত ধ্রুপদী পাঠ্যসূচীকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহৃত হত। ১৮৩৬ সালের দিকে “হিউম্যানিজম” বা মানবতাবাদ এই অর্থে ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার করা শুরু হয়। ১৮৫৬ সালে জার্মান ইতিহাসবেত্তা এবং ভাষাবিজ্ঞানী Georg Voigt “হিউম্যানিজম” শব্দটিকে রেঁনেসার মানবতাবাদকে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন, শব্দটির এরুপ ব্যবহার বিভিন্ন দেশের(বিশেষ করে ইতালীর) ইতিহাসবেত্তাদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে।[৬] “মানবতাবাদী” শব্দটির উপরিউক্ত ব্যবহার পঞ্চদশ শতাব্দীর ইতালীয় শব্দ “ইউমানিস্তা” থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যা সেই ব্যক্তিকে নির্দেশ করে যিনি ধ্রুপদী গ্রীকলাতিন সাহিত্য নিয়ে শিক্ষকতা বা গবেষণা করেন। শব্দটি এই বৃত্তির পেছনের নৈতিক দর্শনকেও নির্দেশ করে।

অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগে হঠাৎ করেই শব্দটির একটি ভিন্ন অর্থ উদীয়মান হতে থাকে। ১৭৬৫ সালে একটি ফরাসি সাময়ীকপত্রের এক বেনামী প্রবন্ধে দেখা যায়, “মানবপ্রেম….. একটি মহৎ গুণ যার জন্য এখনও কোন নাম আবিস্কৃত হয়নি এবং যাকে আমরা “মানবতাবাদ” বলে অভিহিত করব, কারণ এই মহৎ গুণের নামকরণ করার সময় হয়েছে…..”৭ অষ্টাদশ শতকের শেষের দিকে এবং ঊনবিংশ শতকের শুরুর দিকে তৃণমূল স্তরে বিভিন্ন জনসেবামূলক সংগঠণ গজিয়ে উঠে যারা নিজেদেরকে মানবসেবা ও জ্ঞানের(ধর্মীয় অথবা অধর্মীয়) প্রসারের কাজে নিয়োজিত করেছিল। রুশোর মত জ্ঞান আন্দোলনের দার্শনিকরা ধর্মীয় নির্দেশনা ছাড়া স্রেফ যুক্তির সাহায্যে সদগুণ তৈরি হতে পারে বলে যে দাবি করেছিলেন, তা এডমুন্ড বার্ক এবং জোসেফ দে মাইস্ট্রোর মত ধর্মীয় ও রাজনৈতিক রক্ষণশীলদের কাছে সমালোচিত হয়েছিল। তাঁরা একে মনুষ্য পূজোর সাথে তুলনা করেছিলেন।[৭] মানবতাবাদ শব্দটি নেতিবাচক অর্থ ধারণ করা শুরু করে। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারী মতে ১৮১২ সালে একজন ইংরেজ ধর্মযাজক প্রথম “মানবতাবাদ” শব্দটিক সেসব ব্যক্তিদের নির্দেশ করার জন্য ব্যবহার করেন যারা যীশূর মানবিকতায় বিশ্বাস করতেন (অর্থাৎ, তারা যীশূর অলৌকিকতায় বিশ্বাস করতেন না)।[৮]

একই সময়ে জার্মানীতে মানবকেন্দ্রীক দর্শনের অর্থে “মানবতাবাদ” শব্দটি তথাকথিত বাম হেগেলবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছিল। আর্নল্ড রুজ এবং কার্ল মার্ক্স স্বৈরাচারী জার্মান সরকারে গির্জার প্রভাবের তীব্র সমালোচক ছিলেন। শব্দটির বিভিন্ন অর্থ নিয়ে অনেক আগে থেকেই বিভ্রান্তি বিরাজমান হয়ে আসছে[৯] দার্শনিক মানবতাবাদীরা অনেকটা ভুল করেই মনে করতেন যে অতীতের বিখ্যাত মানবতাবাদী এবং যুক্তিবাদী দার্শনিকরা তাদের মত ধর্মবিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন।

প্রাচীণ গ্রিক মানবতাবাদ[সম্পাদনা]

খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের প্রাক-সক্রেটীয় দার্শনিক থেলিস এবং ক্সেনোফানিজ প্রথম পুরাণ ও প্রথার সাহায্য ছাড়া স্রেফ যুক্তি দিয়ে বস্তু জগতকে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস নেন, অতএব, তাদেরকেই প্রথম গ্রিক মানবতাবাদী বলা যায়। থেলিস নরাত্বারুপ ঈশ্বরের ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন এবং থেলিস তার সময়কার ঈশ্বরদের প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই আয়োনীয় গ্রিকরাই প্রথম দাবি করেছিলেন যে প্রকৃতিকে অলৌকিকতা ছাড়াই ব্যাখ্যা করা যায়। আনাক্সাগোরাস দর্শনশাস্ত্র ও যুক্তিবাদী অনুসন্ধানকে আয়োনিয়া থেকে এথেন্সে আমদানি করেছিলেন। এথেন্সের নেতা পেরিক্লিস আনাক্সাগোরাসের গুণমুগ্ধ ছিলেন। প্রোতাগোরাসদেমোক্রিতোসও একই ঘরানার দার্শনিক। এসব দার্শনিকদের রচনাসমগ্র প্রায় পুরোটাই হারিয়ে গিয়েছে, প্লাতো এবং এরিস্টটলের কর্ম থেকেই মূলত এঁদের সম্পর্কে জানা গিয়েছে। খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে এপিকুরোস পাপের সমস্যা প্রস্তাব করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন প্রথম গ্রিক দার্শনিক যিনি নারী শিক্ষার্থী গ্রহণ করেছিলেন। তিনি পরকালে অবিশ্বাসী ছিলেন।

প্রাচীন এশীয় মানবতাবাদ[সম্পাদনা]

অলৌকিকতাবিরোধী মানবকেন্দ্রীক চিন্তাভাবনা ভারতীয় দর্শনের লোকায়ত ব্যবস্থায়ও দেখা যায়, যা প্রায় এক সহস্র খ্রীষ্টপূর্ব বছর পুরনো। খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে গৌতম বুদ্ধ পালি সাহিত্যে অলৌকিকতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।[১০] চীনে হুয়াংদি, ইয়াও, সুং হলেন কয়েকজন বিখ্যাত মানবতাবাদী। কনফুসিয়াস ধর্মনিরপেক্ষ নৈতিকতার শিক্ষা দিতেন।

মধ্যযুগীয় আরব মানবতাবাদ[সম্পাদনা]

অনেক মধ্যযুগীয় আরব চিন্তাবিদরা জ্ঞান অন্বেষণে মানবতাবাদী, বৈজ্ঞানিক এবং যুক্তিবাদী পদ্ধতি অনুসরণ করেছিলেন। প্রেম, কবিতা, ইতিহাস এবং দার্শনিক ধর্মতত্বের উপর অনেক আরব রচনা ইঙ্গিত করে যে তৎকালীন মুসলমান বিশ্বে ব্যক্তিত্ববাদ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা, সংশয়বাদ ও উদারপন্থী মতবাদের অস্তিত্ব ছিল।[১১] মধ্যযুগে মুসলমান বিশ্বের উন্নতির পেছনে আরেকটি কারণ ছিল মত স্বাধীনতার নিশ্চয়তা। ধর্মীয় প্রতিদ্বন্দ্বীকে যুক্তির মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করার উদ্দেশ্যে খলিফা আল-মামুনের আত্মীয় আল-হাশিমি দ্বারা রচিত একটি পত্রে আমরা দেখতে পাই,

“আপনার ইচ্ছেমত যুক্তি পেশ করুন এবং নিঃসংকোচে আপনার মত প্রকাশ করুন। একজন নিরপেক্ষ বিচারক নিয়োগ করুন যিনি পক্ষপাতিত্ব ছাড়া আমাদেরকে বিচার করবেন এবং সত্যকে অন্বেষণ করবেন; যুক্তিই হবে সেই বিচারক, যেহেতু ঈশ্বর আমাদেরকে আমাদের কর্মের দায়ভার দিয়েছেন। আমি এখন পর্যন্ত আপনার সাথে ন্যায়ানুগ আচরণ করেছি, আপনাকে নিরাপত্তা দিয়েছি, এবং যুক্তির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে সম্পূর্ণ রাজি আছি। ধর্মে কোন বাধ্যবাধকতা নেই (কোরান ২:২৫৬) এবং আমি আপনাকে আপনার ধর্মের বীভৎস দিকগুলো তুলে ধরে কেবলমাত্র আমার ধর্মের দাওয়াত দিচ্ছি, যাতে আপনি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় আমার ধর্ম কবুল করতে পারেন। ঈশ্বর আপনাকে আশীর্বাদ করুন।”[১২]

রেনেসাঁস মানবতাবাদের কিছু কিছু বিষয় আরব মানবতাবাদ থেকে এসেছে, যেমন শ্রুতলিপি (লাতিন ভাষায় ars dictaminis) এবং ধ্রুপদী ভাষার প্রতি মানবতাবাদী মনোভাব।

রেনেসাঁসের মানবতাবাদ[সম্পাদনা]

রেনেসাঁসের মানবতাবাদ হল মধ্যযুগের শেষ ভাগের এবং প্রাক-আধুনিক যুগের একটি বৌদ্ধিক আন্দোলন। ঊনবিংশ শতকের জার্মান ঐতিহাসিক জর্গ ভয়গত্(১৮২৭-৯১) পেত্রারককে প্রথম রেনেসাঁসের মানবতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেন। পল জনসনও স্বীকার করেন যে পেত্রারক ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি বলেছিলেন যে রোমের পতন এবং আধুনিক যুগের মধ্যবর্তী শতকগুলো ছিল অন্ধকারের যুগ। পেত্রারকের মতে, বিশিষ্ট ধ্রুপদী লেখকদের কর্মকে অধ্যায়ন ও অনুশীলন করেই কেবল এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। পেত্রার্ক এবং বোক্কাচ্চিওর প্রধান গুরু ছিলেন সিসেরো, যাঁর লেখনশৈলী লাতিন এবং ইতালীয় ভাষার আদর্শ ছিল।

একটা ভাষার ব্যাকরণকে যখন পুরোপুরি আয়ত্ত করা যাবে, তখন দ্বিতীয় পর্যায়ে গমন করতে হবে- অর্থাৎ, বাগ্মীতা অর্জন করতে হবে। এই বাকপটুতা(যা সিসেরো ধারণ করতেন) এমন একটি শিল্প যা নর ও নারীকে সুন্দর জীবন যাপনে সাহায্য করে। পেত্রার্ক যেমন বলেছেন, সৎ কর্ম সম্পাদনের ইচ্ছা সত্য জানার চেয়ে উত্তম। ভাষাতত্ত্ব এভাবেই দর্শনকে আলিঙ্গন করেছে। লিওনার্দো ব্রুনি(১৩৬৯-১৪৪৪) দাবি করেন যে পেত্রার্কই প্রথম জ্ঞান অর্জনের পথ প্রদর্শনের উপায় বাতলে দিয়েছিলেন, কিন্তু ব্রুনির সময়েই প্রথম ইউম্যানিস্তা শব্দটির প্রচলন হয় এবং এর অধ্যায়নের বিষয় ছিল পাঁচটি- ব্যাকরণ, ভাষাতত্ত্ব, কবিতা, নৈতিক দর্শন এবং ইতিহাস

[১৩]

একজন মানবতাবাদীর মৌলিক প্রশিক্ষণ ছিল স্পষ্ট করে কথা বলায় এবং সুন্দর করে লেখায়। পেত্রারকের অন্যতম শিষ্য ছিলেন কলুচ্চিও স্যালুতাতি যাঁকে ফ্লোরেন্সের মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তিনি তার সাহিত্যিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তার স্বার্থ রক্ষা করতেন। মিলানের ভিসকন্ত দাবি করেছিলেন যে সালুতাতির কলম তিরিশ স্কোয়াড্রন অশ্বারোহী বাহিনীর চেয়ে বেশি ক্ষতি করেছিল।[১৪] সাধারণত রেনেসাঁসের মানবতাবাদকে একটি দার্শনিক আন্দোলন মনে করা হয়, এবং এও মনে করা হয় যে এই আন্দোলনটি খ্রীষ্ট-বিরোধী অথবা যাজকবিরোধী ছিল। পিটার পার্টনারের মত আধুনিক ইতিহাসবেত্তারা এই মনোভাবকে বাতিল করে দিয়ে বলেন যে রেঁনেসা মানবতাবাদ কোন দার্শনিক আন্দোলন না, বরং সাহিত্যিক জ্ঞান ও ভাষাতাত্ত্বিক দক্ষতার কেবল একটি শাখা ছিল।[১৫]

রেনেসাঁসের সময় মনে করা হত যে প্রাচীন জ্ঞানের অধ্যায়ন(যেমন গির্জার ফাদারদের লেখা, গ্রিক ভাষার খ্রীষ্টিয় গসপেল, ইহুদিদের কাব্বালা) একটি সাধারণ বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।[১৬] একারণে রেঁনেসার ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ মানবতাবাদীদের, অতীত পর্যালোচনা করলে, বেশ ভালই মতস্বাধীনতা দিয়েছিল।[১৭][১৮]

রেনেসাঁস মানবতাবাদের পরিণতি[সম্পাদনা]

প্রাচীন পান্ডুলিপিগুলোর পুনঃআবিষ্কার অতীতের দার্শনিক মতবাদ সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানকে দৃঢ় করেছিল। এপিকুরোসবাদ এবং নব্য-প্লাতোবাদের পৌত্তলিক জ্ঞান এই মানবতাবাদীদের কাছে ঐশী মনে হয়েছিল এবং একারণে তাদের কাছে খ্রীষ্টীয় মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়েছিল।[১৯] প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সাহিত্য ইউরোপে বিজ্ঞানের উন্নয়ন সাধনে ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু রেনেসাঁসের মানবতাবাদীরা, যাঁরা প্রাচীন জ্ঞানে মুগ্ধ ছিলেন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে মোটেই আগ্রহী ছিলেন না। ষোড়শ শতাব্দীর মধ্য ও শেষ ভাগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, যদিও তারা স্কল্যাসটিসিজমের বিশ্বাস করত, আরিস্ততলের লেখাগুলোকে রেনেসাঁসের শব্দতত্ত্ব অনুযায়ী সম্পাদনা করে অধ্যায়ন করা শুরু করেছিল। এখানেই স্কল্যাসটিসিজমের সাথে গ্যালিলিওর ভবিষ্যত দ্বন্দ্ব্বের মঞ্চ স্থাপিত হয়েছিল।

লিওনার্দো দা ভিঞ্চি যেমন মানবতাবাদী না হয়েও মানবদেহ, প্রকৃতি এবং আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা কে উৎসাহিত করে রেনেসাঁসের শিল্প-সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করতে চাইতেন, স্প্যানিশ মানবতাবাদী জোয়ান লুই ভিভও পর্যবেক্ষণ, শিল্প-কৌশল ইত্যাদিকে উৎসাহিত করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আরিস্ততোলিয় দর্শনের শিক্ষণ-পদ্ধতিকে উন্নত করার প্রয়াস নিয়েছিলেন। এভাবে তারা মধ্যযুগীয় স্কল্যাসটিসিজমকে উৎখাত করতে চেয়েছিলেন।[২০] এভাবেই প্রকৃতির দর্শনে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ জায়গা করে নিয়েছিল এবং রেঁনেসা পরবর্তীয় বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের যুগের অবতারণা ঘটাতে সাহায্য করেছিল।[২১]

রেনেসাঁস থেকে আধুনিক মানবতাবাদ[সম্পাদনা]

রেনেসাঁস থেকে ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর মানবতাবাদে বিবর্তনের পেছনে দু’জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রয়েছেন- গ্যালিলিও এবং ইরাসমুস। রেনেসাঁসের সময়ে মানবতাবাদ বলতে মানবতা নিয়ে চিন্তাভাবনাকেই বুঝাত, অনেক সমসাময়ীক মানবতাবাদী এর সাথে তাঁদের ধর্মের কোন বিভেদ পরিলক্ষণ করতেন না।

অথচ এই রেনেসাঁস মানবতাবাদ থেকেই আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদের জন্ম হয়েছিল এবং যুক্তি ও ধর্মের মাঝে একতি গুরত্বপূর্ণ ফাটল সৃষ্টি হয়েছিল। গির্জা দু’টো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গনে স্বেচ্ছাচারিতা করায় এটি ঘটেছিল। বিজ্ঞানের অঙ্গনে গ্যালিলিও কোপারনিকাসের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে আঁরিস্ততলের তত্ত্বের প্রতি গীর্জার সমর্থনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিল। ধর্মতত্ত্বে ডাচ পণ্ডিত ইরাসমুস তাঁর গ্রিক পান্ডুলিপির সাহায্যে দেখিয়েছিলেন যে জেরোমের ভুলগাটের প্রতি রোমান ক্যাথলিক গীর্জার সমর্থন অনেকাংশেই ক্রুটিযুক্ত। যুক্তি ও কর্তৃত্বের মাঝে তখন এভাবেই একটি বিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল

[২২]

ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দী[সম্পাদনা]

“মানবতার ধর্ম” কথাটির সাথে মাঝে মাঝে আমেরিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা টমাস পেইনকে সম্পর্কায়িত করা হয়,যদিও এখন পর্যন্ত্য তার কোন লেখায় এ সম্পর্কে কিছু পাওয়া যায়নি। টনি ডেভিসের মতে, পেইন নিজেকে থিওফিলান্থ্রোপিস্ট, গ্রিক “ঈশ্বর”, “ভালবাসা” এবং “মানুষ” শব্দগুলো দিয়ে গঠিত একটি শব্দ, হিসেবে অভিহিত করতেন। এর দ্বারা বোঝা যায় যে তিনি স্রষ্টায় বিশ্বাসী হলেও বিরাজমান ধর্মগুলোর অলৌকিকতাকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করতেন। তিনি যে “সোসাইটি অব থিওফিলান্থ্রোপি” প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তার সম্পর্কে তাঁর জীবনীকার বলেন, “এটি পরবর্তীকালের মানবতাবাদী সংগঠণগুলোর পথপ্রদর্শক ছিল”। পেইনের বই “এইজ অব রীজন” ভলতেয়ারের ব্যঙ্গরীতি এবং পেইনের নিজস্ব লেখনশৈলীকে একীভূত করে লোককথার উপর ভিত্তি করে গঠিত ধর্মগুলোর অলৌকিক দাবিগুলোর তীব্র সমালোচনা করেছিল

[২৩]

ভিক্টোরীয় ঔপন্যাসিক ম্যারি এন ইভান্স, সারা বিশ্বে যিনি জর্জ এলিয়ট হিসেবে পরিচিত, স্ট্রসের Das Leben Jesu(যীশুর জীবন, ১৮৪৬) এবং লুডউইগ ফয়েরবাকের Das Wesen Christianismus(খ্রীষ্টধর্মের মর্মবাণী) অনুবাদ করেছিলেন। এক বন্ধুর কাছে তিনি পত্র লিখেন,

মানুষের ভেতরের সম্পর্ক, যা সামাজিক ও নৈতিক উন্নয়নের চাবিকাঠি, মোটেই এমন কিছুর উপর নির্ভরশীল না যা মানবিক নয়…… ঈশ্বরের ধারণা আসলে মানুষের উৎকৃষ্ট দিকেরই আরেক রুপ

[২৪]

এলিয়ট এবং তার বৃত্তের জর্জ হেনরী লিউয়ী, সমাজতাত্ত্বিক হ্যারিয়ট মারটিনিউ সহ আরও অনেকেই ওগুস্ত কোঁতের প্রত্যক্ষবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। কোঁত একটি নাস্তিক্য দল শুরু করেছিলেন- একটি ধর্মনিরপেক্ষ মানবধর্ম(মৃতরা এই ধর্মের উপাস্য ছিল, কারণ বেশিরভাগ মানুষ যারা একসময় বেঁচে ছিলেন, পরে মারা গিয়েছেন), যার একটা নিজস্ব বর্ষপুঞ্জ ছিল। কোঁতের এই ধর্ম অনেকটা ক্যাথলিক ধর্মেরই একটি মলিন রুপ ছিল।৩৮ এলিয়ট এবং মারটিনিউর মত কোঁতের ইংরেজ অনুসারীরা যদিও তার দর্শন পুরোপুরি গ্রহণ করেননি, তারা মানবধর্মের ধারণাটিকে ঠিকই পছন্দ করেছিলেন। কোঁতের নির্মোহ বিশ্বদর্শন, তার আদর্শবাণী "vivre pour altrui"(“অন্যের জন্য বেঁচে থাকো”, এখান থেকেই altruism শব্দটি এসেছে) এবং নারীর প্রতি তার ইতিবাচক চিন্তাভাবনা জর্জ এলিয়ট, ম্যাথিউ আর্নল্ড এবং থমাস হার্ডির মত অনেক ভিক্টোরীয় সাহিত্যিকের কর্মে প্রতিফলিত হয়েছে।

দ্যা ব্রিটিশ হিউম্যানিস্টিক রিলিজিয়াস এসোসিয়েশন ১৮৫৩ সালে লন্ডনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, যা ছিল সমকালীন মানবতাবাদী সংগঠনগুলোর অগ্রপথিক। এই সংগঠনটি গণতান্ত্রিক কাঠামো মেনে চলত। নারী ও পুরুষ সদস্যরা ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতৃবর্গ নির্বাচন করত। সংগঠনটি বিজ্ঞান, দর্শন ও শিল্পকলাকে উৎসাহিত করত।[২৫]

১৮৭৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শব্দটি প্রথমবারের মত নেতিবাচক অর্থে আমেরিকায় ব্যবহার করা হয়েছিল, মূলত ফেলিক্স এডলারের প্রতি ইঙ্গিত করার জন্যই। এডলার এই শব্দটি পছন্দ করেননি, তিনি তার আন্দোলনের জন্য “নৈতিক সংস্কৃতি” শব্দটি নির্বাচন করেছিলেন- এই আন্দোলনটি এখনও নিউ ইয়র্ক সোসাইটি ফর এথিক্যাল কালচার এ বিদ্যমান।[২৬][২৭]

১৯২৯ সালে চার্লস ফ্রান্সিস পটার নিউ ইয়র্ক শহরের প্রথম মানবতাবাদী সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন, যার উপদেষ্ঠা পরিষদে জুলিয়ান হাক্সলি, জন দিউয়ি, আলবার্ট আইন্সটাইন এবং থমাস ম্যানের মত ব্যক্তিরা ছিলেন। পটার একজন একত্ববাদী যাজক ছিলেন এবং ১৯৩০ এর দশকে তিনি তার পত্নী ক্লারা কুক পটারের সাথে মিলে হিউম্যানিজম: এ নিউ রিলিজিয়ন গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এই সময়টায় পটার নারী অধিকার, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও তালাক বিধানের পক্ষে এবং মৃত্যুদন্ডের বিপক্ষে জোড় প্রচারণা চালান।[২৮]

রেমন্ড বি. ব্র্যাগ, দি নিউ হিউম্যানিস্ট এর সহযোগী সম্পাদক, লিওন মিলটন বার্কহেড, চার্লস ফ্রান্সিস পটার সহ পশ্চিম একত্ববাদী সমাবেশের বিভিন্ন সদস্যদের লেখা ছাপানো শুরু করেন। এসব লেখাগুলই পরে ১৯৩৩ সালে হিউম্যানিস্ট মেনিফেস্টো এর প্রকাশনার পেছনে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। পটারের বই এবং এই মেনিফেস্টোই আধুনিক মানবতাবাদের ভিত্তিপ্রস্তরে রুপান্তরিত হয়; আধুনিক মানবতাবাদ বলে, “কোন ধর্ম যদি মানুষের উন্নতি সাধন করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই যুগের সাথে তাল মেলাতে হবে। এরকম একটি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করাই বর্তমানের দাবি”। মেনিফেস্টোটি তারপর এই নতুন ধর্মের মূলনীতি হিসেবে ১৫টি প্রতিপাদ্য প্রকাশ করে।

১৯৪১ সালে আমেরিকান হিউম্যানিস্ট এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। আইজাক আসিমভ ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯২ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত্য এই সংগঠনটির সভাপতি ছিলেন। গোর ভিদাল ২০০৯ সালে সম্মানসূচক সভাপতির আসন গ্রহণ করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনজন বিখ্যাত মানবতাবাদী জাতিসংঘের তিনটি বিভাগের প্রথম পরিচালকের পদ গ্রহণ করেন: ইউনেস্কোতে ছিলেন জুলিয়ান হাক্সলি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাতে ছিলেন ব্রক খ্রিসহোম এবং খাদ্য ও কৃষী সংস্থায় ছিলেন জন বয়ড-অর।[২৯]

২০০৪ সালে আমেরিকান হিউম্যানিস্ট এসোসিয়েশন অন্য সব নাস্তিক্যবাদী, মুক্তচিন্তক এবং সংশয়বাদী সংগঠনের সাথে সম্মিলিত হয়ে সেকুলার কোয়ালিশন ফর আমেরিকা গঠন করে, যা ওয়াশিংটন ডিসিতে রাষ্ট্র ও উপাসনালয়ের পৃথকীকরণের পাশাপাশি আমেরিকাতে নির্ধার্মিকদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে প্রচারণা চালায়। সংগঠনটির কার্যকরী পরিচালক হলেন শন ফেয়ারক্লথ, আমেরিকার মাইন প্রদেশের বিধানসভার একজন দীর্ঘ দিনের সভ্য।

ধর্মের প্রতি মনোভাব[সম্পাদনা]

১৯৩৩ সালের প্রথম মানবতাবাদী মেনিফেস্টোতে স্বাক্ষর করা ব্যক্তিরা নিজেদেরকে ধার্মিক মানবতাবাদী হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তারা যেহেতু মনে করেছিলেন যে প্রচলিত ধর্মগুলো মানুষের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছিল, তাই তারা একটি নতুন ধর্ম প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। এর পর প্রথমটি আরও দু’টি মেনিফেস্টো দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় মেনিফেস্টোটির মুখবন্ধে পল কুর্টজ এবং এডউইন এইচ. উইলসন(১৯৭৩) ঘোষণা করেন যে বিশ্বাস ও জ্ঞান একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয়। দ্বিতীয় মেনিফেস্টোটিতে ধর্ম সম্পর্কে আলাদা একটি অনুচ্ছেদ রয়েছে যেখানে দাবি করে হয়েছে প্রচলিত ধর্ম মানবসমাজের জন্য ক্ষতিকর। এই মেনিফেস্টোটি অনুগামী লেবেলগুলোকে নিজেদের প্রকৃতিবাদী দর্শনকে ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহার করেছে: “বৈজ্ঞানিক”, “নৈতিক”, “মার্ক্সবাদী”, “গণতান্ত্রিক” এবং “ধর্মীয়”। বিংশ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে মানবতাবাদীরা মানবতাবাদ ধর্ম কিনা এ নিয়ে ধন্ধে পড়ে গিয়েছিল। ধর্মীয় মানবতাবাদীরা যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রাচীন মানবতাবাদী সংগঠনগুলোর মতই মানবতাবাদকে ধর্মের সম্পূরক মনে করতেন। ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদীরা সর্বপ্রকার ধর্মকে(যার মধ্যে ধর্মীয় মানবতাবাদও অন্তর্ভুক্ত) অপসারিত মনে করেন। এই দু’টো দলের মধ্যে আদর্শিক সংঘাত নিরসনে সাম্প্রতিককালে মানবতাবাদকে একটি জীবনদর্শন ঘোষণা করা হচ্ছে। আমেরিকান সুপ্রীম কোর্ট এই মতবাদকে একটি ধর্ম ঘোষণা করলেও এটি ঈশ্বরকে স্বীকৃতি দেয় না, তাই মানবতাবাদ সেই অর্থে ধর্ম না। প্রায়োগিক দৃষ্টি থেকে এই মতবাদগুলো ভিন্ন হলেও এগুলো কোনটাই অলৌকিকতার বন্দনাকে সমর্থন করে না এবং ঈশ্বরের প্রতি কোন প্রকার ইঙ্গিত ছাড়াই নৈতিকতার চর্চা করে। এই মতবাদ নাস্তিকতা[৩০] and agnosticism[৩১] এবং সংশয়বাদের[৩২] সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিন্তু নাস্তিক বা সংশয়বাদী হলেই কেউ মানবতাবাদী হতে পারবে না।[৩৩]

জ্ঞান[সম্পাদনা]

করলিস ল্যামন্ট এবং কার্ল সেগানের মত আধুনিক মানবতাবাদীরা মনে করেন যে যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণই জ্ঞানের একমাত্র উৎস। তাঁরা বৈজ্ঞানিক সংশয়বাদ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জোড় সমর্থক। তাঁরা আরও বলেন যে ভাল-মন্দ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তগুলো ব্যক্তি ও সমাজের উপকারের আলোকে নিতে হবে। একটি নৈতিক দর্শন হিসেবে মানবতাবাদ অমর সত্ত্বার মত কোন অধিবৈদিক অবভাসের অস্তিত্ব নিয়ে মাথা ঘামায় না, এটি শুধুই মানুষের সাথে সম্পর্কিত।[৩৪]

আশাবাদ[সম্পাদনা]

সমসাময়ীক মানবতাবাদ মানুষের ক্ষমতা সম্পর্কে আশাবাদী, কিন্তু মানবতাবাদ বলে না মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই নীতিবান অথবা কোন প্রকার সাহায্য ছাড়াই মানুষের পক্ষে নৈতিক উৎকর্ষ লাভ করা সম্ভব। মানবতাবাদের প্রধান লক্ষ্য হল মানুষের উন্নতি সাধন করা(যেখানে ধর্মের লক্ষ্য হল ঈশ্বরের বন্দনা করা) এবং জীবজগতে সবচেয়ে সচেতন প্রাণী হিসেবে সব অনুভবক্ষম প্রাণী, এবং অবশেষে পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য কাজ করা। অর্থাৎ, মানবতাবাদী কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হল এই জীবনটি সুন্দরভাবে যাপন করা এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য, মনোরম পরিবেশ রেখে যাওয়া।

সাম্প্রতিক মানবতাবাদী মেনিফেস্টো এবং বিবৃতি[সম্পাদনা]

ভিন্ন তরিকার মানবতাবাদ[সম্পাদনা]

শিক্ষাবৃত্তিক মানবতাবাদ[সম্পাদনা]

শিক্ষার ধারা হিসেবে মানবতাবাদ সপ্তদশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা-ব্যবস্থাকে শাসন করেছিল। এই মতাদর্শ দাবি করত যে যেসব বিষয় মানুষের মেধা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, সেসব বিষয়ই মানুষকে “সত্যিকারের মানুষ” এ রুপান্তরিত করে। এর ব্যবহারিক ভিত্তি ছিল বিভাগীয় মনোবিজ্ঞান- গাণিতিক, বিশ্লেষণী, ভাষাবিদ্যা সংক্রান্ত বিভাগের মত বৌদ্ধিক বিভাগে বিশ্বাস। বলা হত যে একটি বিভাগকে উন্নত করলে অন্য বিভাগগুলোও উন্নত হবে। ঊনবিংশ শতকের এই আন্দোলনের একজন গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন উইলিয়াম টোরি হ্যারিস, যাঁর “আত্মার পাঁচ জানালা”(গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, ব্যাকরণ এবং সাহিত্য/শিল্পকলা) এই বৌদ্ধিক বিভাগগুলোর উন্নয়নের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে বিশ্বাস করা হত। কিছু নাৎসী নির্যাতন শিবিরের প্রহরীদের মার্জিত রুচির সংস্কৃতবোধের দিকে ইঙ্গিত করে টেরী ঈগলটনের মত মার্ক্সবাদীরা এরুপ দাবির সমালোচনা করেছেন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Edwords, Fred (১৯৮৯)। "What Is Humanism?"। American Humanist Association। ৩০ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০০৯Secular and Religious Humanists both share the same worldview and the same basic principles... From the standpoint of philosophy alone, there is no difference between the two. It is only in the definition of religion and in the practice of the philosophy that Religious and Secular Humanists effectively disagree. 
  2. Compact Oxford English dictionary। Oxford University Press। ২০০৭। humanism n. 1 a rationalistic system of thought attaching prime importance to human rather than divine or supernatural matters. 2 a Renaissance cultural movement that turned away from medieval scholasticism and revived interest in ancient Greek and Roman thought.  অজানা প্যারামিটার |publicationyear= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) Sometimes abridgments of this definition omit all senses except #1, such as in the Cambridge Advanced Learner's Dictionary ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ ডিসেম্বর ২০০৩ তারিখে, Collins Essential English Dictionary, and Webster's Concise Dictionary। New York: RHR Press। ২০০১। পৃষ্ঠা 177 
  3. "Definitions of humanism (subsection)"। Institute for Humanist Studies। ১৮ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 16 Jauary 2007  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. For example, Populorum Progressio, Section 42: "True humanism points the way toward God and acknowledges the task to which we are called, the task which offers us the real meaning of human life. Man is not the ultimate measure of man. Man becomes truly man only by passing beyond himself. In the words of Pascal: 'Man infinitely surpasses man.' " Also cf. Caritas in Veritate, Section 78: "Only if we are aware of our calling, as individuals and as a community, to be part of God's family as his sons and daughters, will we be able to generate a new vision and muster new energy in the service of a truly integral humanism. The greatest service to development, then, is a Christian humanism."
  5. As in Literacy and the Survival of Humanism by Richard A. Lanham (New Haven: Yale University Press, 1983), or as in the often employed opposition between "scientists" and "humanists" (i.e., teachers of the humanities).
  6. As J. A. Symonds remarked, “the word humanism has a German sound and is in fact modern” (See The Renaissance in Italy Vol. 2:71n, 1877). Vito Giustiniani writes that in the German-speaking world “Humanist” while keeping its specific meaning (as scholar of Classical literature) “gave birth to further derivatives, such as humanistisch for those schools which later were to be called humanistische Gymnasien, with Latin and Greek as the main subjects of teaching (1784). Finally, Humanismus was introduced to denote ‘classical education in general' (1808) and still later for the epoch and the achievements of the Italian humanists of the fifteenth century (1841). This is to say that ‘humanism’ for ‘classical learning‘ appeared first in Germany, where it was once and for all sanctioned in this meaning by Georg Voigt (1859)", Vito Giustiniani, "Homo, Humanus, and the Meanings of Humanism", Journal of the History of Ideas 46 (vol. 2, April-June, 1985): 172.
  7. Although Rousseau himself devoutly believed in a personal God, his book, Emile: or, On Education, does attempt to demonstrate that atheists can be virtuous. It was publicly burned. During the Revolution, Jacobins instituted a cult of the Supreme Being along lines suggested by Rousseau. In the 19th-century French Positivist philosopher Auguste Comte (1798–1857) founded a "religion of humanity", whose calendar and catechism echoed the former Revolutionary cult. See Comtism
  8. The Oxford English DictionaryVII (2nd সংস্করণ)। Oxford: Clarendon Press। ১৯৮৯। পৃষ্ঠা 474–475। 
  9. An account of the evolution of the meaning of the word humanism from the point of view of a modern secular humanist can be found in Nicolas Walter's Humanism – What's in the Word (London: Rationalist Press Association, 1997 আইএসবিএন ০-৩০১-৯৭০০১-৭). From the same perspective, but somewhat less polemical, can be found in Richard Norman's On Humanism (Thinking in Action) (London: Routledge: 2004). For a historical and philologically oriented view see Vito Giustiniani, "Homo, Humanus, and the Meanings of Humanism" (1985), cited above.
  10. "Lesson 1: A brief history of humanist thought"Introduction to Humanism: A Primer on the History, Philosophy, and Goals of Humanism। The Continuum of Humanist Education। ৭ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ আগস্ট ২০০৯ 
  11. Lenn Evan Goodman (2003), Islamic Humanism, p. 155, Oxford University Press, আইএসবিএন ০-১৯-৫১৩৫৮০-৬.
  12. Ahmad, I. A. (জুন ৩, ২০০২), "The Rise and Fall of Islamic Science: The Calendar as a Case Study", "Faith and Reason: Convergence and Complementarity" (পিডিএফ), Al-Akhawayn University, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০০৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০১-৩১ 
  13. Johnson, Paul (২০০০)। The Renaissance। New York: The Modern Library। পৃষ্ঠা 32–34 and 37। আইএসবিএন 0-679-64086-X 
  14. Johnson, Paul (২০০০)। The Renaissance। New York: The Modern Library। পৃষ্ঠা 37 
  15. Peter Partner, Renaissance Rome, Portrait of a Society 1500-1559 (University of California Press 1979) pp. 14-15.
  16. To later generations, the Dutch humanist, Desiderius Erasmus, epitomized this reconciling tendency). According to the Stanford Encyclopedia of Philosophy, "Enlightenment thinkers remembered Erasmus (not quite accurately) as a precursor of modern intellectual freedom and a foe of both Protestant and Catholic dogmatism."Erasmus himself was not much interested in the Kabbala, but several other humanists were, notably Pico della Mirandola. See Christian Kabbala.)
  17. Bergin, Thomas; Speake, Jennifer (১৯৮৭)। The Encyclopedia of the Renaissance। Oxford: Facts On File Publications। পৃষ্ঠা 216–217। 
  18. "Only thirteen of Pico della Mirandola's nine hundred theses were thought theologically objectionable by the papal commission that examined them.... [This] suggests that, in spite of his publicly expressed contempt in his Apologia for their intellectual inadequacies, the Curial authorities hardly saw these theses as the work of a dangerous theological modernist like Luther or Calvin. Unorthodox though they were, most of the issues raised in them had been the subject of theological dispute for centuries and the commission . . . condemned him not for innovations but for 'reviving several of the errors of gentile philosophers which are already disproved and obsolete.'” Davies (1997), p 103.
  19. "Humanism"। Encyclopedic Dictionary of ReligionF–N। Corpus Publications। ১৯৭৯। পৃষ্ঠা 1733। আইএসবিএন 0-9602572-1-7  "Renaissance humanists rejoiced in the mutual compatibility of much ancient philosophy and Christian truths", M. A. Screech, Laughter at the Foot of the Cross (1997), p. 13.
  20. Gottlieb, Anthony (২০০০)। The Dream of Reason: a history of western philosophy from the Greeks to the Renaissance। New York: W. W. Norton & Company। পৃষ্ঠা 410–411। 
  21. Alleby, Brad (২০০৩)। "Humanism"। Encyclopedia of Science & Religion1 (2nd সংস্করণ)। Macmillan Reference USA। পৃষ্ঠা 426–428। আইএসবিএন 0-02-865705-5 
  22. Os Guinness - The Dust of Death (Intervarsity Press 1973) p. 5
  23. Tony Davies, Humanism (Routledge, 1997) p. 26-27.
  24. উদ্ধৃত করা হয়েছে Davies (1997), পৃ ২৭ এ
  25. Morain, Lloyd and Mary (২০০৭)। Humanism as the Next Step (পিডিএফ)। Washington, D.C.: Humanist Press। পৃষ্ঠা 109। আইএসবিএন 978-0-931779-16-2 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য)। ২৭ মার্চ ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১০ 
  26. New York Society for Ethical Culture
  27. "History: New York Society for Ethical Culture"। New York Society for Ethical Culture। ২০০৮। ২০০৯-০৪-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-০৬ 
  28. Stringer-Hye, Richard। "Charles Francis Potter"Dictionary of Unitarian and Universalist Biography। Unitarian Universalist Historical Society। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-০১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  29. "American Humanist Association"। ১৪ জুন ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১০ 
  30. . The world coordinating body, the International Humanist and Ethical Union, London, recommends use of "Humanism," with no qualifying adjective at all, and with the capital "H" befitting a well-defined worldview clearly established after three quarters of a century of scholarly study and exposition. Baggini, Julian (২০০৩)। Atheism: A Very Short Introduction। Oxford: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 3–4। আইএসবিএন 0-19-280424-3The atheist's rejection of belief in God is usually accompanied by a broader rejection of any supernatural or transcendental reality. For example, an atheist does not usually believe in the existence of immortal souls, life after death, ghosts, or supernatural powers. Although strictly speaking an atheist could believe in any of these things and still remain an atheist... the arguments and ideas that sustain atheism tend naturally to rule out other beliefs in the supernatural or transcendental. 
  31. Winston, Robert (Ed.) (২০০৪)। Human। New York: DK Publishing, Inc। পৃষ্ঠা 299। আইএসবিএন 0-7566-1901-7Neither atheism nor agnosticism is a full belief system, because they have no fundamental philosophy or lifestyle requirements. These forms of thought are simply the absence of belief in, or denial of, the existence of deities. 
  32. Winston, Robert (Ed.) (2004). Human. New York: DK Publishing, Inc. p. 299. আইএসবিএন ০-৭৫৬৬-১৯০১-৭. "Neither atheism nor agnosticism is a full belief system, because they have no fundamental philosophy or lifestyle requirements. These forms of thought are simply the absence of belief in, or denial of, the existence of deities."
  33. Note: The topic of this article has a small initial character as Wikipedia guidelines prescribe for the name of a philosophy. The life stance named Humanism is capitalized as prescribed for the name of a religion in its dedicated article, but left lower-case elsewhere to encompass life-stance, religious, and secular "humanism."
  34. Lamont, Corliss (১৯৯৭)। The Philosophy of Humanism, Eighth Edition। Humanist Press: Amherst, New York। পৃষ্ঠা 252–253। আইএসবিএন 0-931779-07-3Conscience, the sense of right and wrong and the insistent call of one's better, more idealistic, more social-minded self, is a social product. Feelings of right and wrong that at first have their locus within the family gradually develop into a pattern for the tribe or city, then spread to the larger unit of the nation, and finally from the nation to humanity as a whole. Humanism sees no need for resorting to supernatural explanations, or sanctions at any point in the ethical process. 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]