দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ
![]() | এই নিবন্ধটি উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে পুনঃসংগঠন করা প্রয়োজন। (মার্চ ২০২২) |
![]() |
সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ | |
---|---|
ইসলামের খলিফা আমিরুল মুমিনিন উসমানীয় সুলতান খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন কায়সার ই রোম | |
![]() | |
উসমানীয় সুলতান | |
রাজত্বকাল | ৩১ আগস্ট ১৮৭৬ - ২৭ এপ্রিল ১৯০৯ |
রাজ্যাভিষেক | ৭ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ |
পূর্বসূরি | পঞ্চম মুরাদ |
উত্তরসূরি | পঞ্চম মুহাম্মদ |
জন্ম | [১][২] তোপকাপি প্রাসাদ, ইস্তাম্বুল | ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৪২
মৃত্যু | ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮ বেইলেরবিক প্রাসাদ, ইস্তাম্বুল | (বয়স ৭৫)
সমাধি | সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের সমাধি |
রাজবংশ | উসমানীয় রাজবংশ |
পিতা | সুলতান প্রথম আবদুল মজিদ |
মাতা | • জন্মদায়িনী মা:তিরিমুজগান কাদিন •পালিতা মা:রাহিমে পেরেস্তু কাদিন |
ধর্ম | ইসলাম |
তুগরা | ![]() |
সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ (উসমানীয় তুর্কি: عبد الحميد ثانی; তুর্কি: II. Abdülhamid; ২১ সেপ্টেম্বর ১৮৪২ – ১০ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের ৩৪তম সুলতান।[৩] সুলতান আব্দুল হামিদ ছিলেন উম্মাহ দরদি মুসলিম বিশ্বের খলিফা যাকে ইহুদিরা বায়তুল মুকাদ্দাস হস্তান্তরের জন্য ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ড দিতে চেয়েছিল কিন্তু তিনি মুসলিম বিশ্বের একচুল মাটি ছাড়তেও রাজি হননি।
কেউ একজন বলেছিলেন এবং সত্যই বলেছিলেন যে,“ যখন দেখবে শত্রুরা তোমার কোনো কর্মের প্রশংসা করছে, হোকনা তা মন্দ, বুঝবে তোমার কাজে তাদের কোন স্বার্থরক্ষা হয়েছে। আর যখন তোমার কোন ভাল কাজেরও নিন্দা করবে, বুঝবে এতে তাদের কোন স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।” সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে শত্রুদের আপবাদ ও মিথ্যাচারের যে তাণ্ডব, তা থেকেই বুঝতে পারি, তার পদক্ষেপগুলোর ফলাফলের ব্যাপারে ‘আপনজনেরা’ না বুঝলেও শত্রুরা পূর্ণই সচেতন ছিল। প্রখ্যাত ব্রিটিশ সমাজবিজ্ঞানী আর্লন্ড টয়েনবি লিখেন,“ সুলতান আব্দুল হামিদের ইসলামি রাজনীতির উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বের মুসলমানদের এক পতাকার নিচে একত্রিত করা। নিঃসন্দেহে যা ছিল মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের ঐপনিবেশিক শক্তিগুলোর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক পাল্টা শক্তিশালী প্রতিরোধী পদক্ষেপ।” তাকে নিয়ে ইউরোপিয়রা এত বেশি পরিমাণে লিখেছে যে, সমকালীন ইতিহাসে তো বটেই, সুদীর্ঘ সাড়ে চৌদ্দশত বছরের ইতিহাসে অন্য কোন মুসলিম শাসককে নিয়ে তারা ততটা লেখেনি। যার গুটিকয়েকটি ছাড়া সবগুলোই অপবাদ মিথ্যাচার ও প্রপাগাণ্ডায় পূর্ণ।
জন্ম, শৈশব ও শিক্ষাদীক্ষা[সম্পাদনা]
মহান এই সুলতান ১৮৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন সুলতান আব্দুল মাজিদের ত্রিশজন সন্তানের মধ্যে পঞ্চম ও ৩৪তম উসমানি সুলতান ।[১] দশ বছর মাকে হারালে তিনি সৎ মায়ের কাছে লালিত পালিত হন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি অত্যন্ত স্নেহ মমতায় তাকে লালন পালন করেন। সৎ মাতার ধর্মীয় জীবনাচার ও ব্যক্তিত্বপূর্ণ অবস্থান তার উপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। খলিফা হওয়ার পর তিনি তাকে রাজমাতা ঘোষণা করেন। ছোট থেকেই তিনি অত্যন্ত গম্ভীর ও স্পর্শকাতর প্রকৃতির বলে পরিচিত ছিলেন। রাজপ্রাসাদেই একদল অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীর হাতে তার শিক্ষাদীক্ষা চলতে থাকে। তাদের নিকট তিনি আরবি ফারসি ও ইতিহাসের পাঠগ্রহণ করেন। তিনি সাহিত্যও অধ্যয়ন করেন। এসময় তিনি অশ্বারোহণ, তলোয়ার চালনা ও অন্যান্য অস্ত্রচালনায় দক্ষতা অর্জন করেন।
তিনি কথা অনেক কম বলতেন। কিন্তু অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ও চারপাশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন। শৈশব থেকেই নিয়মিত পত্রিকা ও বিশ্বরাজনীতির খবরাখবর রাখা তার অভ্যাস ছিল। তিনি বিশ্ব রাজনীতিতে খেলাফতে উসমানিয়ার অবস্থান বুঝার চেষ্টা করতেন।
শৈশব থেকেই আরেকটি বৈশিষ্ট্য তাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে রেখেছিল। তা হলো তার সুপরিমিত অর্থনৈতিক বোধ। তিনি অপচয় একদম পছন্দ করতেন না। সে সময়ে তিনি ছিলেন খেলাফতে ওসমানিয়ার সবচেয়ে ধনী যুবরাজ। তার এই অর্থব্যবস্থাপনাগুণ খেলাফতে ওসমানিয়ার জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর প্রমাণিত হয়েছিল। খলিফা হওয়ার পর নিজ অর্থব্যয়ে পুরো সাম্রাজ্যে টেলিগ্রাফলাইন স্থাপন করেন।
ইউরোপ ভ্রমণ[সম্পাদনা]
১৮৬৮ সালে তার চাচা খলিফা আব্দুল আজিজ ওসমানিয় এক প্রতিনিধি দল নিয়ে ইউরোপ ভ্রমণ করেন। সেই প্রতিনিধি দলে তরুণ শাহজাদা আব্দুল হামিদও ছিলেন। তিনি তখন ২৬ বছরের যুবক। সে সময়ে তিনি গভীরভাবে ইউরোপের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। ইউরোপিয়দের কৃষ্টি-কালচার সভ্যতা সংস্কৃতি, তাদের সামরিক সক্ষমতা, বৈশি^ক রাজনীতির তাদের প্রভাব, ওসমানিয়দের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি সবকিছু তিনি অত্যন্ত গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি মনে করতেন, আমরা ইউরোপিয়দের প্রযুক্তি ও টেকনোলজি নিতে পারি। কিন্তু আধুকায়নের প্রচেষ্টা হিসেবে তাদের জীবনাচার ও সংস্কৃতি গ্রহণ করতে পারি না।
খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ[সম্পাদনা]
শুরু থেকে কারো ধারণা ছিল না, সম্ভবত তিনিও ভাবেননি যে তিনি কখনো খলিফা হবেন। কারণ পিতার জীবদ্দশায় প্রায় ১৮ বছর তিনি ছিলেন মসনদের তৃতীয় উত্তরাধিকারী। কিন্তু ১৮৬১ সালে মাত্র ৩৮ বছর বয়সে পিতা সুলতান আব্দুল মাজিদ মৃত্যুবরণ করলে খলিফা হন ৩১ বছর বয়সি চাচা আব্দুল আজিজ। কিন্তু ১৮৭৬ সালে ৪৬ বছর বয়সে তিনিও নিহত হন। যদিও সেটাকে সেসময় আত্মহত্যা বলে চালানো হয়েছিল। এরপর মসনদে বসেন তারই বড় ভাই ৫ম মুরাদ। যিনি তার থেকে দুই বছরের বড় ছিলেন। চাচাকে হত্যাকারীদের সঙ্গে ৫ম মুরাদেরও যোগসূত্র ছিল। এছাড়াও তিনি ছিলেন কুচক্রী ইহুদিদের বিশ্ব সংগঠন ফ্রিমেসনস্ এর সদস্য। মূলত ৫ম মুরাদকে ক্ষমতায় আনা হয়েছিল একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে। তা হল কানুনে আসাসি বা বুনিয়াদি সংবিধান ঘোষণার মাধ্যমে খিলাফতকে একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে পরিণত করা। যাতে খলিফা হবে একটি আলংকারিক পদ। নির্বাহী ক্ষমতা থাকবে পাশা ও উজিরদের হাতে। কিন্তু মসনদে আরোহণের পরপরই তার মস্তিষ্ক বিকৃতির লক্ষণ ফুটে উঠে। সব ধরনের প্রচেষ্টা ও চিকিৎসা সত্ত্বেও যখন তিনি পুরোপুরিভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ডাক আসে ৩৪ বছর বয়সী যুবরাজ আব্দুল হামিদের।মসনদে খিলাফতের চারপাশে তখন ইহুদিবাদী ফ্রি-মেসন ও নব্য তুর্কিদের একক প্রাধান্য। বাধ্য হয়ে সেই কুচক্রীদের শর্ত মেনেই তিনি খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। খেলাফত বিরোধীচক্রের মূল হোতা ইংরেজ এবং ইহুদিদের দালাল মিদহাত পাশাকে প্রধান উজির বানাতে বাধ্য হন। তাদের শর্তমতে তিনি কানুনে আসাসী বা বুনিয়াদি সংবিধান ঘোষণা করেন। যার ফলে খিলাফত ব্যবস্থা তখন মূলত একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রে রূপান্তরিত হয়।
তার শাসনামলের বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]
খলিফা আব্দুল হামিদ তার শাসনামলের শুরুতে ইউরোপিয় চিন্তাধারার নব্য তুর্কি পাশাদের প্রচণ্ড রকম স্বেচ্ছাচারিতার সম্মুখিন হন। পাশাদের স্পর্ধা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে কল্পনা করাও কষ্টসাধ্য। তিনি মসনদে বসার পর মিদহাত পাশা তাকে লিখে,“ সংবিধান ঘোষণার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বেচ্ছাচারিতার গোড়া কেটে দেওয়া। এবং মহামান্য খলিফার দায়িত্ব ও অধিকারের সীমারেখা বুঝিয়ে দেয়া। পাশাপাশি অন্যান্য উজিদের দায়িত্ব ও সাধারণ মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করণ। .. আমি মহামান্যের আদেশ পালনে বদ্ধপরিকর যদি না তা জাতির স্বার্থবিরোধী হয়..।” সুলতান তার ব্যাপারে লিখেন,“ মিদহাত পাশার অবস্থা ছিল এমন যে সে আমাকে নির্দেশ দিত। যেন সে আমার উপর কতৃত্বশীল। আচার আচরণে সে গণতন্ত্রীর তুলনায় স্বেচ্ছাচারীই ছিল বেশি।” শুরু থেকেই তিনি পরিস্থিতির জটিলতা সম্মন্ধে সচেতন ছিলেন। তারপরও উপযুক্ত সময়ের প্রত্যাশায় কুচক্রীদের শর্ত মেনেই তিনি ক্ষমতায় আসেন।এদিকে অটোমানদের দুর্বলতার সুযোগে থাবা দেয় রাশিয়ান শ্বেত ভল্লুক। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে তারা ওত পেতে ছিল। ১৮৭৭ সালের রুশো - অটোমান যুদ্ধ শুরু হয়।যুদ্ধের কারণ দেখিয়ে সুলতান বুনিয়াদি সংবিধান মুলতবি ঘোষণা করেন এবং নির্বাহী ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নেন।যুদ্ধে গাজী ওসমান পাশা প্লেভনায় ঐতিহাসিক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু খাদ্য আর অস্ত্রাভাবে শেষে পরাজয় হয়।
সুলতান বুঝতে পারেন তার সাম্রাজ্য সামরিক, অর্থনৈতিক সব দিক থেকে পিছিয়ে আছে। তিনি সংস্কার শুরু করেন। দ্রুত সেনা চলাচল ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য ব্যাপকভাবে রেল - লাইন নির্মাণ শুরু করেন। অবশেষে ১৮৯৭ সালে অটোমানরা গ্রীসের সাথে যুদ্ধে বিজয় লাভ করে।
তিনি যখন মসনদে বসেন খিলাফত বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণের ভারে জর্জরিত ছিল। ঋণ পরিশোধের জন্য তিনি আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ৩৩ বছরের শাসনামলে ঋণ প্রায় পরিশোধের পর্যায়ে নিয়ে আসেন। তার সময়ে খিলাফত উল্লেখযোগ্য কোন বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করেনি। তার ক্ষমতার কালটি ছিল খিলাফতের জন্য চরম দুর্দিনের। একদিকে তুর্কি জাতিয়তাবাদী আন্দোলন। যা প্রায় শত বৎসর কাল যাবত খিলাফতেকে প্রাণশূণ্য করে ফেলছিল। (উল্লেখ্য এই চিন্তাধারা প্রথম উদ্গাতা ও পরবর্তীতে লালন ও বিস্তারকারীরা ছিল প্রধানত ইহুদি। তাদের মধ্যে থিওডোর হের্জল অন্যতম। যিনি হলেন ইজরাইল জাতির জনক। পরবর্তীতে আধুনিক তুর্কি যুবকরা ব্যাপকভাবে সুলতানের বিরুদ্ধে তার পত্রিকায় প্রকাশিত মিথ্যা অপবাদে বিদ্রোহী চিন্তাধারায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে।) অপরদিকে খিলাফতের ইউরোপিয় অংশের খৃস্টানদেরকে পশ্চিমারা সবসময় উস্কানি দিয়েই চলছিল। তৃতীয় বিপদটা ছিল বিশ্ব ইহুদিবাদীদের পক্ষ থেকে। তারা যে কোন মূল্যে ফিলিস্তিনে তাদের জাতীয় ভূমি স্থাপনে মরিয়া ছিল। সেক্ষেত্রে সুলতান আব্দুল হামিদই ছিলেন তাদের প্রধান বাধা। ইহুদিরা ফিলিস্তিনে তাদের জাতীয় নিবাস স্থাপনের শর্তে খিলাফতের সকল ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সুলতান তা অত্যন্ত ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। এমন চতুর্মুখি চক্রান্ত নির্মূল করার জন্য তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে থাকেন। বিদ্রোহীরা তখন পালিয়ে গিয়ে ইউরোপে সঙ্ঘবদ্ধ হতে থাকে। খলিফা বুঝতে পেরেছিলেন ইউরোপিয় শক্তিবর্গ খিলাফতকে যত দূর্বল করতে পারবে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে তাদের ঐপনিবেশ স্থাপনের পথ ততই সুগম হবে। তাই তিনি প্যান ইসলামিজম বা বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের প্রচেষ্টা শুরু করেন। বিভিন্ন অঞ্চলের ইসলামি ব্যক্তিত্ব ও প্রায় চল্লিশ হাজার সুফী সাহেবকে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য চেতনা জাগ্রত করানোর বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করেন। যাতে রাজনৈতিকভাবে না হলেও যাতে অভিন্ন চেতনায় পুরো মুসলিম বিশ্বের একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হয়। উত্তর আফ্রিকায় ফ্রান্সের দখদারিত্বের বিরুদ্ধে জিহাদকারীদেরকেও এই অভিন্ন চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি হেজাজ রেল প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার সমুদয় অর্থ মুসলমানদের চাঁদা ও হেজাজ ডাকটিকেট বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। প্রখ্যাত লেখক ও দামেশক বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাঈদ আফগানি (রাহঃ) বলেন:“আল্লাহ সুলতান আব্দুল হামিদের উপর রহম করুন। তার সমস্তরের কোন উজির ও সাহায্যকারী তিনি পাননি। তার যুগ গত হয়ে গেছে। অসাধারণ যোগ্যতা ও বিপুল কর্মশক্তি এবং রাজনৈতিক দূরদর্শীতা ও সুগভীর কূটনৈতিক প্রজ্ঞার বদৌলতে প্রায় একক প্রচেষ্টায় তিন দশক কাল তিনি খেলাফতের পতন ঠেকিয়ে রেখেছিলেন। যদি যোগ্য সঙ্গি ও উপযুক্ত সাহায্যকারী পেতেন, তবে খেলাফতকে আবার প্রথম যুগের প্রতাপও শক্তিময় অবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন।”
ক্ষমতা থেকে অপসারণ ও নির্বাসন[সম্পাদনা]
এদিকে দিনদিন নব্য তুর্কিদের আন্দোলন চরমে উঠতে থাকে। সুলতান আব্দুুল হামিদ সবসময় এই আন্দোলনের গতি রোধে সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু তারা দিনদিন তারা অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে।অপরদিকে ১৯০৬ সালে আনোয়ার পাশার নেতৃত্বে স্যালোনিকায় কমিটি আব ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস বা ঐক্য ও উন্নয়ন সংঘ। তার প্রধান সহযোগী ছিলেন তালাত পাশা ও জামাল পাশা। নব্য তুর্কিরা এই কমিটির সঙ্গে মিলে কাজ করতে থাকে। ভিতরে ভিতরে সেনাবাহিনীর বিরাট একটি অংশকেও তারা নিজেদের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়। ১৯০৮ সালে বিভিন্ন শহরে শাসনতান্ত্রিক সংশোধনসহ তাদের বিভিন্ন দাবির পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা চলতে থাকে। সেনাবাহিনীতে তাদের দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশকারী অংশ রাজধানীর উদ্দেশ্যে মার্চ শুরু করে। বাধ্য হয়ে সুলতান তাদের দাবি মত সংবিধান ঘোষণা করেন। শুরু হয় নব্য তুর্কিদের শাসন। কিন্তু তখনও তিনি নিয়মতান্ত্রিকভাবে খিলাফতের প্রধান। তার এই অবস্থানটাই ফিলিস্তিনে ইহুদি পূণর্বাসনের জন্য বড় বাধা ছিল। এদিকে নব্য তুর্কিদের শাসনে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয় । জনমনে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এটাকে কাজে লাগিয়ে ৩১শে এপ্রিল ১৯০৯সালে ইহুদি লবি রাজধানিতে এক সুলতানের পক্ষে এক প্রতিবিপ্লব ঘটায়। যাতে নব্য তুর্কিদের কয়েক নেতা নিহত হয়। তারপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে এ সকল কিছুর জন্য সুলতানকে দায়ী করে তাকে অপসারণ করা হয়। সেই রাতেই তাকে স্যালোনিকায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। সেখানে তাকে এক ইহুদির বাড়িতে কড়া নজরবন্দির মধ্যে রাখা হয়। এরপর তাকে ইস্তাবুলে এনে বায়লারবি প্রাসাদে রাখা হয়। এখানেই এই মহান খলিফা ২৮ রবিউল আউয়াল ১৩৩৬ মোতাবেক ১০ই ফেব্রুয়ারি ১৯১৮ সালে ৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
তার ব্যাপারে বিভিন্নজনের বক্তব্য[সম্পাদনা]
জীবদ্দশায় তিনি যত অপবাদ ও প্রোপাগাণ্ডার শিকার হয়েছেন সমকালীন ইতিহাসে আর কোন শাসক ততটা হয়নি। কিন্তু তার মৃত্যুর যখন তার অশংখার বিষয়গুলো বাস্তবে ঘটতে শুরু করে। তখন অনেকেরই চোখ খুলেছিল। তাদেরই একজন আনোয়ার পাশা। খেলাফতে উসমানীয় যুদ্ধমন্ত্রীও নব্য তুর্কিদের অন্যতম প্রধান নেতা ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তার একক জেদ ও হটকারিতার ফলেই খিলাফত জার্মানির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করে। ফলে খিলাফতের পতন ত্বরান্বিত হয়। সেই আনোয়ার পাশা পরবর্তীতে তিনি বলেন, “ জামাল আমাদের আসল মুসিবতটা কি জান?…আমরা বিপ্লব সংঘটিত করেছি। কিন্তু নিজেদের অজান্তে কখন জায়োনিস্টদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়েছি টেরই পাইনি। আসলে আমরা ছিলাম নির্বোধ।”
তেমনি আরেকজন ছিল কবি রেজা তাওফিক। যে নব্য তুর্কিদের তাত্ত্বিক ও দার্শনিক ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে নিজের ভুল বুঝতে পারে ও সুলতানকে উদ্দেশ্য করে লিখে,“ হে মহান সুলতান, ইতিহাস যখন আপনাকে স্মরণ করবে সত্য আপনার পক্ষেই থাকবে/ আমরা নির্লজ্জভাবে আপনার উপর অপবাদ চাপিয়েছি/ অথচ আপনি ছিলেন আমাদের যুগের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ/ আমরা বলতাম সুলতান জালিম, সুলতান পাগল, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ অপরিহার্য/ শয়তান যা যা বলেছিল আমরা সব বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম/ আমরা ঘুমন্ত ফিতনাগুলোকে জাগিয়ে তুলতাম/ কিন্তু হে আমার মুনিব, আপনি পাগল ছিলেন না/ পাগল ছিলাম আমরা কিন্তু আমরা তা বুঝতেও পারিনি/ না শুধু পাগলই নই; বরং আমরা মানুষ্য চরিত্রও হারিয়ে ফেলেছিলাম/ আমরা আপনার উপর নির্লজ্জভাবে অপবাদ চাপিয়েছি।”
তুর্কি সেনাবাহিনীর কর্ণেল হুসামুদ্দিন আর্তুর্ক বলেন,“ জায়নিস্টদের বিরুদ্ধে সুলতান আব্দুল হামিদের পদক্ষেপের অর্থই ছিল নিজ ক্ষমতা ও সিংহাসন হারানো।” উল্লেখ্য বিশ্ব জায়োনিজমের প্রাণপুরুষ হার্টজেলের দেয়া ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জাতীয় নিবাসের সুযোগদানের বিনিময়ে খিলাফতের সমুদয় ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব যখন সুলতান প্রত্যাখ্যান করেন, তখন ইতালি তার হয়ে সুলতানের কাছে এই বার্তা পাঠায়,“ এই বিরোধিতার মূল্য ক্ষমতা ও জান দিয়ে তোমাকে দিতে হবে।” দিন যতই যাচ্ছে ততই এই সত্য দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হচ্ছে যে, এই মহান সুলতান আরব ও ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে কতটা সংবেদনশীল ছিলেন। মুসলমানদের আবার পূর্বের মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে দেখার ব্যাপারে কতটা ব্যাকুল ছিলেন। কতটা গভীর দূরদৃষ্টি ও কুটনৈতিক প্রজ্ঞায় তিনি শত্রুর প্রতিটি চক্রান্তের পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সকল প্রশংসা সেই মহান সত্তার যার রাজত্বের কোন শেষ নেই। আল্লাহ তায়ালার কাছে একটাই দুআ এই মজলুম খলিফাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন।
আরো দেখুন[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ Hoiberg, Dale H., সম্পাদক (২০১০)। "Abdulhamid II"
। Encyclopedia Britannica। I: A-ak Bayes (15th সংস্করণ)। Chicago, IL: Encyclopedia Britannica Inc.। পৃষ্ঠা 22। আইএসবিএন 978-1-59339-837-8।
- ↑ Some sources state that his birth date was on 22 September.
- ↑ "Abdulhamid II"। The Sultans। theottomans.org। সংগ্রহের তারিখ ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
ইসলামি বিশ্বকোষ,(বাংলা) ১/৭৫০-৭৫১ ইয়ালমায উসতুনা কৃত তারিখুল দাওলাতিল উসমানিয়্যা,২/৯৯-১৬০ ড. ইসমাঈল আহমদ ইয়াগি কৃত আদ দাওলাতুল উসমানিয়া ফিত তারিখিল ইসলামিয়্যিল হাদিস-২১০-২১১ ড. মুহাম্মদ হরব কৃত সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ, ২৮-৪৯ ড. মুহাম্মদ আলি সাল্লাবি কৃত খেলাফতে ওসমানিয়ার ইতিহাস,৩৯৯-৪৭৮ এ.এম.নাজির আহমদ কৃত ওসমানি খলিফাদের ইতিকথা,৫০-৫৫ তুরস্কে তুর্কিস্তানের সন্ধানের ভূমিকা। পৃ:৫
বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

- II. Abdul Hamid Forum in English ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ২০১০ তারিখে II. Abdul Hamid Forum in English
- II. Abdülhamit Dönemi Olayları – ittihat Ve Terakki Ödev Sitesi
- US Library of Congress Abdul Hamid II Photo Collection – about 1,800 photographs mounted in albums, ca. 1880–1893
"Abdul-Hamid II."। কলিয়ার নিউ এনসাইক্লোপিডিয়া। ১৯২১।
- [১] television show series of TV episodes that are true stories about his life written by his right-hand man
দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ জন্ম: 21 September 1842 মৃত্যু: 10 February 1918
| ||
শাসনতান্ত্রিক খেতাব | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী Murad V |
Sultan of the Ottoman Empire 31 August 1876 – 27 April 1909 |
উত্তরসূরী Mehmed V |
সুন্নি ইসলাম পদবীসমূহ | ||
পূর্বসূরী Murad V |
Caliph of the Ottoman Caliphate 31 August 1876 – 27 April 1909 |
উত্তরসূরী Mehmed V |