প্রস্তরাঙ্কন
প্রস্তরাঙ্কন বা প্রস্তরলিখন (ইংরেজি: Lithogrpahy লিথোগ্রাফি) বলতে ছাপচিত্র অঙ্কনের একটি পদ্ধতিকে নির্দেশ করা হয়, যে পদ্ধতিতে যে নকশা বা চিত্রটিকে মুদ্রণ করতে হবে, সেটিকে সরাসরি কোনও প্রস্তরফলক বা অনুরূপ মানানসই কোনও শক্ত উপাদানের একটি সমতল পৃষ্ঠের উপরে কালি দিয়ে আঁকা হয় এবং ঐ কালিযুক্ত সমতল পৃষ্ঠটিকে সাদা কাগজের উপরে চাপ দিলে নকশা বা চিত্রটির একটি ছাপচিত্র প্রস্তরপৃষ্ঠ থেকে কাগজে স্থানান্তরিত, অঙ্কিত বা মুদ্রিত হয়।[১] প্রস্তরাঙ্কন একটি সমতল লিখন পদ্ধতি (Planography), কেননা এটিতে কালিযুক্ত মূল নকশা ও কালিহীন অংশ দুইটিই কোনও প্রস্তরফলকের একই মসৃণ সমতল পৃষ্ঠে অবস্থান করে। ছাপানোর পৃষ্ঠটিকে কেটেকুঁদে নতোন্নত (উঁচুনিচু তথা রিলিফ) করা বা এটির গায়ে খোদাই করার কোনও প্রয়োজন পড়ে না।
১৭৯৮ সালে জার্মানির বায়ার্ন (বাভারিয়া) রাজ্যের নাট্যকার আলইস জেনেফেল্ডার ছাপচিত্র তৈরির প্রস্তরাঙ্কন পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন। তেল ও জলের মধ্যকার বিকর্ষণ ধর্মটিকে কাজে লাগিয়ে প্রস্তরাঙ্কন করা হয়। যে চিত্র বা নকশাটিকে ছাপতে হবে, সেটিকে বিশেষ তৈলাক্ত ক্রেয়ন দিয়ে সমতল প্রস্তরপৃষ্ঠে আঁকা হয়। এরপর প্রস্তরপৃষ্ঠটিকে একাধিক ধাপে মুদ্রণের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রথম ধাপে একটি বিশেষ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় (গাম অ্যাারাবিকা ও নাইট্রিক অ্যাসিডের দ্রবণ ব্যবহার করে) নকশাটির একটি তৈলাক্ত ছায়াকে প্রস্তরপৃষ্ঠতলকে ভেদ করে আবদ্ধ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে তারপিন তেল ব্যবহার করে ক্রেয়নে আঁকা মূল নকশাটিকে প্রস্তরপৃষ্ঠ থেকে মুছে ফেলা হয়, ফলে প্রস্তরপৃষ্ঠে কেবলমাত্র নকশাটির একটি প্রায়-অদৃশ্য ছায়াচিত্র (ghost image) অবশিষ্ট থাকে। তৃতীয় ধাপে যে কালিটি দিয়ে কাগজে ছাপচিত্র মুদ্রণ করতে হবে, সেটিকে প্রস্তরপৃষ্ঠে পালিশ করে লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপরে একটি বেলন (রোলার) দিয়ে কালিটিকে প্রস্তরপৃষ্ঠে চাপ দিয়ে লাগানো হয়। এরপর জলপ্রয়োগ করে নকশার কালিবিহীন অংশটিকে সরিয়ে ফেলা হয়। এই প্রক্রিয়াটিকে প্রাথমিক খোদাই বলে। একই প্রক্রিয়াটিকে পুনরাবৃত্তি করে আরও গভীরভাবে ছায়াচিত্রটিকে প্রস্তরপৃষ্ঠে পোক্ত করা হয়, যাকে দ্বিতীয় খোদাই বলে। এরপর একটি মুদ্রণযন্ত্রে কালিযুক্ত প্রস্তরফলকটিকে নিয়ে এর উপর কাগজ রেখে চাপ প্রয়োগ করলে কাগজে ঐ নকশাটি স্থানান্তরিত হয়। শুরুর দিকে এ কাজে বিশেষ ধরনের চুনাপাথর ব্যবহার করা হত। বর্তমানে দস্তা বা অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ধাতব পাত ও আরও সম্প্রতি শক্ত প্লাস্টিকের পাত ব্যবহার করেও একই কাজ সম্পাদন করা হচ্ছে।[১]
বহুবর্ণ প্রস্তরাঙ্কন (Colour lithography) পদ্ধতিতে প্রতিটি বর্ণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তরফলক ব্যবহার করা হয়। ১৮৩০ সালে এর প্রচলন ঘটে।[১] ১৯শ ও ২০শ শতাব্দীতে পাশ্চাত্যের অনেক প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী প্রস্তরাঙ্কন পদ্ধতি ব্যবহার করে ছাপচিত্র অঙ্কন করেন। স্পেনীয় শিল্পী গয়া তাঁর শেষজীবনে এটি করেন। ফরাসি শিল্পী দোমিয়ে তাঁর শিল্পীজীবনের সিংহভাগ সময় এ কাজে কাটান। অন্তর্মুদ্রাবাদী শিল্পী তুলুজ-ল্যত্রেক ছিলেন প্রস্তরাঙ্কন পদ্ধতির এক কারিগরি ওস্তাদ। তিনি দাঁতবুরুশের সাহায্যে প্রস্তরপৃষ্ঠে কালি ছিটিয়ে বিশেষ আবহ তৈরিতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন।[১]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |