গুরু অর্জন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গুরু অর্জন
ਗੁਰੂ ਅਰਜਨ
গুরু অর্জন, অস্বচ্ছ জলরং, কাগজে অঙ্কিত
দ্য গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম, চণ্ডীগড়
জন্ম১৫ এপ্রিল ১৫৬৩ (1563-04-15)
মৃত্যু৩০ মে ১৬০৬(1606-05-30) (বয়স ৪৩)[১]
অন্যান্য নামপঞ্চম গুরু
কর্মজীবন১৫৮১–১৬০৬
পরিচিতির কারণআদি গ্রন্থ সম্পাদনা ও প্রতিষ্ঠা; হরমন্দির সাহিব নির্মাণ, তার্ন তরান সাহিব শহর প্রতিষ্ঠা
পূর্বসূরীগুরু রামদাস
উত্তরসূরীগুরু হরগোবিন্দ
দাম্পত্য সঙ্গীমাতা গঙ্গা
সন্তানগুরু হরগোবিন্দ
পিতা-মাতাগুরু রামদাসমাতা ভানি

গুরু অর্জন ([ɡʊru əɾdʒən]; ১৫ এপ্রিল, ১৫৬৩ – ৩০ মে, ১৬০৬)[১] ছিলেন শিখধর্মের প্রথম শহিদ ও দশ জন শিখ গুরু মধ্যে পঞ্চম। তিনি একাদশ তথা বর্তমান শিখ গুরু গুরু গ্রন্থসাহিবের রচনা সম্পাদনা করেছিলেন। গুরু অর্জনের জন্ম অধুনা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পাঞ্জাব রাজ্যে। তিনি ছিলেন গুরু রামদাসমাতা ভানির (গুরু অমর দাসের কন্যা) কনিষ্ঠ পুত্র।[২]

গুরু অর্জন প্রায় পঁচিশ বছর শিখ গুরুর পদে আসীন ছিলেন। তিনি অমৃতসর শহরের নির্মাণকার্য সম্পূর্ণ করেন এবং তার্ন তরানকার্তারপুরের মতো শহর প্রতিষ্ঠা করেন। গুরু অর্জনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল পূর্বতন শিখ গুরুদের রচনাবলি সম্পাদনা। তাদের রচনা এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের কয়েকজন সন্তের কিছু রচনা, যা তিনি শিখধর্মের শিক্ষার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন, তা তিনি একটি বইতে সংকলিত করেন। এই বইটি এখন শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থসাহিব। এটিই সম্ভবত একমাত্র রচনা, যা গুরু অর্জনের হস্তে লিখিত পাণ্ডুলিপির প্রথম প্রকাশনাটির আকারে আজও পাওয়া যায়।[৩]

গুরু অর্জন মসন্দ নামে একটি প্রতিনিধি দল গঠন করেছিলেন। এঁদের কাজ ছিল শিখ গুরুদের আদর্শ শিক্ষাদান ও প্রচার করা। তিনি দসভন্দ প্রথাও চালু করেন। এই প্রথায় শিখরা তাদের উপার্জনের একাংশ অর্থ, দ্রবসামগ্রী বা সেবার মাধ্যমে স্বেচ্ছায় দান করেন। গুরুদ্বারালঙ্গর (সার্বজনীন সাধারণ ভোজনশালা) নির্মাণের জন্য শিখরা দসভন্দ দেন। লঙ্গরের প্রবর্তনা গুরু নানক করলেও, গুরু অর্জনই এটিকে একটি ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। সেই থেকে লঙ্গর প্রথা আজও অব্যাহত আছে।[৪]

মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির গুরু অর্জনকে গ্রেফতার করে তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলেন।[৫][৬] কিন্তু গুরু অর্জন ইসলাম গ্রহণ করতে অসম্মত হলে ১৬০৬ সালে তাকে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়।[৫][৭] ঐতিহাসিক নথিপত্র ও শিখ প্রথাগত ইতিহাস থেকে সঠিক বোঝা যায় না যে, গুরু অর্জনকে জলে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছিল নাকি অত্যাচারের সময়ই তার মৃত্যু ঘটেছিল।[৫][৮] তার মৃত্যুবরণ শিখধর্মের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা।[৫][৯]

পরিবার[সম্পাদনা]

গুরু অর্জন ছিলেন চতুর্থ শিখ গুরু গুরু রামদাসের পুত্র। গুরু অর্জনের দুই দাদা ছিলেন পৃথী চন্দ (পৃথিয়া) ও মহাদেব। গুরু অর্জনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা পৃথিয়া পঞ্চম গুরু হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গুরু রামদাস গুরু অর্জনকেই পঞ্চম শিখ গুরু হিসেবে নির্বাচিত করেন। ১৭ম শতাব্দীর বিশিষ্ট শিখ রাজাবলিকার ভাই সুরদাস তিন ভাইকেই ছেলেবেলা থেকে চিনতেন।[১০] ভাই সুরদাসের রাজাবলি অনুসারে, গুরু অর্জনের জীবদ্দশায় পৃথিয়া একাধিকবার মিথ্যা পরিচয়ে নিজেকে শিখ গুরু বলে উল্লেখ করেছিলেন। গুরু অর্জনের মৃত্যুর পর পর তিনি নানকের ছদ্মনামে স্তোত্রও রচনা করেন। কিন্তু শিখ প্রথানুসারে গুরু অর্জনকেই পঞ্চম এবং গুরু হরগোবিন্দকে ষষ্ঠ শিখ গুরুর মর্যাদা দেওয়া হয়।[৯][১০][১১]

১৫৮১ খ্রিটাব্দে পিতার উপাধি অর্জন করে গুরু অর্জন শিখ গুরুর পদে আসীন হন। ১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর তার পুত্র হরগোবিন্দ ষষ্ঠ শিখ গুরুর পদে আসীন হয়েছিলেন।[৯]

জীবন[সম্পাদনা]

গুরু অর্জনকে পঞ্চম গুরু ঘোষণা করা হচ্ছে।

গুরু রামদাসের প্রচেষ্টাকে সফল করে গুরু অর্জন অমৃতসর শহরটিকে প্রধান শিখ তীর্থস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। জনপ্রিয় সুখমণি সাহিব সহ একাধিক বিশালাকার শিখ ধর্মশাস্ত্র তিনিই রচনা করেছিলেন।

আদি গ্রন্থ সম্পাদনার মাধ্যমে গুরু অর্জন শিখদের ধর্মীয় ও নৈতিক আচার-আচরণের উদাহরণগুলি তুলে ধরেন এবং একটি সমৃদ্ধ ধর্মীয় কাব্য লিপিবদ্ধ করেন। নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মসন্দ দান সংগ্রহের প্রথা চালু করে তিনি শিখদের একটি নিয়মিত সরকার ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত করে তোলেন। তিনি ঘোড়ার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এই ব্যবসা খুব সুদূরপ্রসারী না হলেও তিনি তার অনুগামীদের ধর্মের মতো ব্যবসার ব্যাপারেও একনিষ্ঠ করে তোলার পরামর্শ দিতেন।[১২] গুরু অর্জন তার ভক্ত ও জীবনীদের সঙ্গেই খ্যাতি লাভ করেন। একাধিক সন্ত ও ধর্মগুরুর রচনা তিনি ধর্মোপদেশ রচনার সময় সম্পাদনা করেছিলেন।[১২] উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরাও তাকে সম্মান করতেন। তার সময়কালে গুরু নানকের শিক্ষা ও দর্শন তার অনুগামীদের মধ্যে গভীর প্রভাব বিস্তার করে।

দেশের আর্থিক সমৃদ্ধি বর্ষা ঋতুর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কযুক্ত। কৃষকদের দুর্দশা মোচনের জন্য গুরু অর্জন গ্রামবাসীদের ছয় চ্যানেলের পার্সি চাকার (ছেহরতা) কুয়ো খুঁড়তে সাহায্য করতে। এগুলি সেচের মাধ্যমে খেতে জলের জোগান দিত। এটি তার একটি বিশেষ কীর্তির মধ্যে পরিগণিত হয়।

মৃত্যুবরণ[সম্পাদনা]

গুরু অর্জনের সময়কালে শিখ পন্থ পাঞ্জাব অঞ্চলের বিশেষত গ্রামীণ জনতা ও জাট জাতির মধ্যে বিশেষ প্রসার লাভ করেছিল। পাঞ্জাবের মুঘল শাসকরা পন্থের বিস্তারলাভে শঙ্কিত হয়েছিলেন। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির তার আত্মজীবনী তুজক-ই-জাহাঙ্গিরি (জাহাঙ্গিরনামা) গ্রন্থে লিখেছিলেন যে, এত লোক গুরু অর্জনের শিক্ষা অনুসরণ করছিলেন যে, তাকে ইসলামে ধর্মান্তরিত না করতে পারলে শিখ পন্থের গতি রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। জাহাঙ্গির মনে করতেন, গুরু অর্জন একজন হিন্দু, যিনি সন্ত হওয়ার ভান করছে। এবং সেই কারণে তিনি পরিকল্পনা করেছিলেন তাকে বন্দী করে হয় ইসলামে ধর্মান্তরিত করার জন্য নয় তাকে হত্যা করার জন্য।[৫][৬]

বিপাশা নদীর তীরে গোবিন্দওয়ালে অর্জন নামে এক হিন্দু বাস করে। সে একজন আধ্যাত্মিক শিক্ষক হওয়ার ভাব দেখায়। এভাবেই সে অনেক সরল-মনস্ক ভারতীয় এবং কিছু অজ্ঞান মূর্খ মুসলমানকে নিজের ভক্ত হিসেবে পেয়েছে এবং নিজেকে সন্ত বলে দাবি করছে। তারা তাকে গুরু বলে। আশেপাশের অনেক মূর্খ তাকে সাহায্য করে এবং তাকেই পুরোপুরি মেনে চলে। তিন বা চার প্রজন্ম ধরে এরা একই ব্যবসা চালিয়ে আসছে। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছি হয় এই ভণ্ড ব্যবসা নির্মূল করা দরকার অথবা একে ইসলামের ছত্রছায়ায় আনা দরকার। ঘটনাচক্রে খুসরো যখন সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন, এই সামান্য ব্যক্তিটি তাঁকে সম্মান জানাতে চান। খুসরো যখন তার বাসভবনে যান, [অর্জন] বেরিয়ে আসে এবং [তাঁর সঙ্গে] সাক্ষাৎ করে। এখান ওখান থেকে সংগৃহীত কিছু মৌলিক ধর্মোপদেশ দেওয়ার পর, লোকটি তাঁর কপালে গেরুয়া রঙের তিলক পরিয়ে দেয়। এটিকে কাশকা বলে। হিন্দুরা এটিকে সৌভাগ্যদায়ক চিহ্ন মনে করে। এই কথা আমাকে জানানো হলে, আমি বুঝতে পারি, লোকটা কী পরিমাণে ভণ্ড। আমি আদেশ করি, তাকে যেন আমার কাছে আনা হয়। আমি তার এবং তার সন্তানদের বাড়ি ও বাসস্থানগুলি মুর্তাজা খানকে উপহার দি। আমি আদেশ করি, তার বিষয়সম্পত্তি যেন বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। [সিয়াসাত ও ইয়াসা রাসানান্দ]।

— সম্রাট জাহাঙ্গিরের স্মৃতিকথা, জাহাঙ্গিরনামা ২৭খ-১৮ক, (হুইলার এম. থাকস্টনের ইংরেজি অনুবাদ থেকে অনূদিত)[৭]

১৬০৬ সালে গুরু অর্জনকে লাহোর দুর্গে বন্দী করা হয়। এখানেই তাকে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়।[৫] শেখ ফরিদ বুখারি (মুর্তাজা খান) জাহাঙ্গিরের আদেশ অনুসারে গুরু অর্জনকে হত্যা করেন। তারপরই শেখ আহমেদ সিরহিন্দি লেখেন,[১৩]

সম্প্রতি সৌভাগ্যক্রমে গোবিন্দওয়ালের অভিশপ্ত অবিশ্বাসীটিকে হত্যা করা হল। এটি পাজি হিন্দুদের একটি মহাপরাজয়ের কারণ। যে কারণেই বা যে উদ্দেশ্যেই তাদের হত্যা করা হোক না কেন, মুসলমানেদের কাছে অবিশ্বাসীদের উপর অত্যাচার করা হল জীবনস্বরূপ। এই কাফেরটিকে হত্যা করার আগে আমি একটি স্বপ্নে দেখেছিলাম, সম্রাট অবিশ্বাসীর মুকুটটি ধ্বংস করছেন। এটি সত্য যে এই অবিশ্বাসীটি [গুরু অর্জন] ছিল অবিশ্বাসীদের প্রধান এবং কাফেরদের নেতা। এদের উপর জিজিয়া (অমুসলমানদের দেয় কর) জারি করার অর্থ হল কাফেরদের অত্যাচার ও অপমান করা। এদের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা এবং তাদের প্রতিকূল আচরণ হল ইসলাম ধর্মের প্রয়োজনীয় একটি পদক্ষেপ।

— শেখ আহমেদ সিরহিন্দি, মুর্তাজা খানকে লেখা চিঠি, গুরু অর্জনের হত্যা বিষয়ে,[৫][১৩][১৪]

শিখ প্রথা অনুসারে, নিহত হওয়ার আগে গুরু অর্জন তার পুত্র ও উত্তরাধিকারী গুরু হরগোবিন্দকে অস্ত্রধারণের নির্দেশ দেন। গুরু অর্জনের হত্যাকাণ্ডের পরেই শিখ পন্থ সশস্ত্র বিদ্রোহের পথ নেয় এবং ইসলামি শাসনে ধর্মীয় অবদমনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।[১৫]

কোনো কোনো গবেষকের মতে, গুরু অর্জন অত্যাচারের ফলে মারা গিয়েছিলেন না তাকে ইরাবতী নদীতে ডুবিয়ে মারা হয়েছিল, তা স্পষ্ট নয়।[১৬][১৭][১৮][১৯] জে. এস. গ্রেওয়াল বলেছেন, ১৭শ ও ১৮শ শতাব্দীর শিখ সূত্র থেকে গুরু অর্জনের মৃত্যু সংক্রান্ত পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যায়।[২০]

জে. এফ. রিচার্ড বলেছেন, শুধু শিখধর্ম নয়, জাহাঙ্গির সকল অমুসলমান জনপ্রিয় ধর্মগুরুদের প্রতি প্রতিকূল আচরণ করতেন।[২১]

গুরু অর্জনের সমসাময়িক ১৭শ শতাব্দীর বিশিষ্ট শিখ রাজাবলিকার ভাই গুরদাস[২২] গুরু অর্জনের জীবনকাল স্বচক্ষে দেখেছিলেন। তিনি গুরু অর্জনের জীবনী ও সম্রাট জাহাঙ্গিরের আদেশে তার অত্যাচার ও মৃত্যুর ঘটনা লিপিবদ্ধ করে যান।[২৩]

স্প্যানিশ জেসুইট মিশনারী জেরোম জেভিয়ার (১৫৪৯-১৬১৭) সেই সময় লাহোরে ছিলেন। তার রচনা থেকে জানা যায়, শিখরা প্রচুর অর্থ দিয়ে গুরু অর্জনকে মুক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা বিফল হয়।[২৪] দাবিস্তান-ই মাজাহিব মোবাদ লিখেছেন, জাহাঙ্গির অর্থ আদায় ও জনসমক্ষে গুরু অর্জনকে হেয় করার উদ্দেশ্যে তাকে অত্যাচার করেন। জাহাঙ্গিরের উদ্দেশ্য ছিল, ধর্মগুরু হিসেবে গুরু অর্জনের প্রভাব খণ্ড করা। কিন্তু গুরু অর্জন তার প্রস্তাবে অসম্মত হলে তাকে হত্যা করা হয়।[২৫] জেরোম জেভিয়ার গুরু অর্জনের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে লিসবনে লিখে পাঠান,[২৬]

এইভাবেই তীব্র যন্ত্রণা, অত্যাচার ও অসম্মান ভোগ করে তাদের সজ্জন ধর্মগুরু মৃত্যুবরণ করলেন।

— জেরোম জেভিয়ার, লিসবনে গ্যাসপার ফার্নান্ডেজকে লেখা চিঠি, গুরু অর্জনের হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে,[২৬]

মাইকেল বার্নস বলেছেন যে, গুরু অর্জনের দৃঢ় ধর্মনিষ্ঠা ও মৃত্যু শিখদের মনে একটি জিনিস গেঁথে দিয়েছিল যে, “ব্যক্তিগত পবিত্রতার নিশ্চিত একটি নৈতিক শক্তির কেন্দ্র। একটি ধর্মনিষ্ঠ আত্মা নিশ্চিত একটি সাহসী আত্মা। কারোর অভিযোগে বিচারে দণ্ডিত হওয়ার ইচ্ছা ধর্মক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”[২৬]

ঐতিহাসিক সংশোধনবাদ, পুনর্গঠন ও বিবাদ[সম্পাদনা]

গুরু অর্জন কোথায় কীভাবে মারা গিয়েছিলেন সেই সম্পর্কে একাধিক কাহিনি প্রচলিত আছে।[২৭][২৮][২৯] আধুনিক গবেষকেরা[৩০][৩১] এগুলির অনেকগুলি সম্পর্কে প্রশ্ন তুলেছেন। এই সব গল্পের অনেকগুলিকেই তারা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে প্রচারিত গল্পগাথা অথবা ‘ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের খণ্ডিত তথ্যগত প্রমাণ থেকে গৃহীত অতিরঞ্জন’ বলেছেন। অন্য একটি গল্প অনুসারে, গুরু অর্জন মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির ও জাহাঙ্গিরের বিরুদ্ধে পিতৃঘাতী এক অভ্যুত্থানের চক্রান্তকারী জাহাঙ্গিরের কোনো পুত্রের বিবাদের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছিলেন। আরেকটি গল্প অনুসারে, চান্দু শাহ নামে জাহাঙ্গিরের এক হিন্দু মন্ত্রী গুরু অর্জনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। কারণ, চান্দু শাহের কন্যার সঙ্গে গুরু অর্জন তার পুত্র গুরু হরগোবিন্দের বিবাহে সম্মত হননি। লাহোরে প্রচলিত আরেকটি গল্প অনুসারে, গুরু অর্জনের অত্যাচার ও হত্যা বন্ধ করার জন্য চান্দু শাহ জাহাঙ্গিরকে ২০০,০০০ টাকা (১০০,০০০ ক্রুসাদোস) দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে চান্দু শাহ গুরু অর্জনকে বন্দী করে রেখে দেন এবং নিজের বাড়িতেই মানসিকভাবে অত্যাচার করে হত্যা করেন।[৩২] ১৯শ শতাব্দীর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সাহিত্যিক ম্যাক্স আর্থার ম্যাকালিফ প্রমুখের রচনার মাধ্যমে এই সব গল্পগাথা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।[৩৩] আরও কয়েকটি গল্পে জাহাঙ্গির ও মুঘল সাম্রাজ্যকে গুরু অর্জনের হত্যাকাণ্ডের দায় থেকে অব্যহতি দেবার চেষ্টা করা হয়েছে।[২৮][৩৪] কিন্তু জেসুইট ধর্মপ্রচারক জেরোম জেভিয়ার বা জাহাঙ্গিরের আত্মজীবনীর মতো ১৭শ শতাব্দীর কোনো তথ্য থেকেই সেগুলি প্রমাণ করা যায় না।[৫][৭][৩৫]

বানান[সম্পাদনা]

কোনো কোনো গবেষক গুরু অর্জন নামটিকে ‘গুরু অর্জুন’ বলে উল্লেখ করেছেন।[২৬][৩৬]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. "Arjan, Sikh Guru"। Encyclopaedia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ৫ মে ২০১৫ 
  2. Mcleod, Hew (১৯৯৭)। Sikhism। London: Penguin Books। পৃষ্ঠা 28আইএসবিএন 0-14-025260-6 
  3. Mahajan, Vidya Dhar। "Ch. 10"। Muslim Rule In India (fifth সংস্করণ)। পৃষ্ঠা 232। 
  4. DS Dhillon (1988), Sikhism Origin and Development Atlantic Publishers, pp. 204-207
  5. Pashaura Singh (2005), Understanding the Martyrdom of Guru Arjan ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে, Journal of Philosophical Society, 12(1), pp. 29-62
  6. Kulathungam, Lyman (২০১২)। Quest : Christ amidst the quest। Wipf। পৃষ্ঠা 175–177। আইএসবিএন 978-1-61097-515-5 
  7. Wheeler M. Thackston (1999), Translator and Editor, The Jahangirnama: Memoirs of Jahangir, Emperor of India, Oxford University Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০১৯৫১২৭১৮৮, p. 59
  8. Louis E. Fenech, Martyrdom in the Sikh Tradition, Oxford University Press, pp. 118-121
  9. WH McLeod (১৯৮৯)। The Sikhs: History, Religion, and Society। Columbia University Press। পৃষ্ঠা 26-51। আইএসবিএন 978-0231068154 
  10. Prītama Siṅgha (১৯৯২)। Bhai Gurdas। পৃষ্ঠা 27–28। আইএসবিএন 978-8172012182 
  11. DS Dhillon (1988), Sikhism Origin and Development Atlantic Publishers, pp. 99-110
  12. Cunningham, J.D. (১৮৫৩)। "Gooroo Arjoon"। A History of the Sikhs। John Murray। 
  13. Sirhindi, Maktubat-i Imam-i Rabbani, I-iii, letter No. 193, pp. 95-6
  14. Friedman Yohanan (1966), Shaikh Ahmad Sirhandi: An Outline of His Image in the Eyes of Posterity, Ph.D. Thesis, McGill University, pp. 110-112
  15. Pashaura Singh, Louis Fenech। The Oxford handbook of Sikh studies। Oxford University Press year=2014। পৃষ্ঠা 236–237। আইএসবিএন 9780199699308 
  16. W.H. McLeod (২০০৯)। The A to Z of Sikhism। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 9780810863446 
  17. Rajmohan GandhiPunjab:A History from Aurangzeb to Mountbatten। Aleph Book Company। পৃষ্ঠা 34। আইএসবিএন 9789383064410। ১৪ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৫ 
  18. A.S. Bhalla (২০০৮)। In Search of Roots: Guru Amar Das and BhallasRupa Publications। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 9788129113337 
  19. Subodh Kapoor (২০০২)। Indian Encyclopaedia, Volume 1। Genisis Publishing Pvt. Ltd.। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 9788177552577 
  20. J.S. Grewal, The Sikhs of the Punjab, in The New Cambridge History of India. 2, 3. Gen eds. Chris Bayly, Gordon Johnson, John F. Richards. Cambridge: Cambridge University Press, 1998, pp. 63-64.
  21. Richards, John F. The Mughal Empire, in The New Cambridge History of India. 1, 5. Gen eds. Chris Bayly, Gordon Johnson, John F. Richards. Cambridge: Cambridge University Press, 1993, p. 97.
  22. Vir Singh, ed. Varam Bahi Gurdas Satki, 9th edition. New Delhi: Bhai Vir Singh Sahitya Sadan, 1997), p. 386.
  23. Prītama Siṅgha (১৯৯২)। Bhai Gurdas। পৃষ্ঠা 25–32। আইএসবিএন 978-8172012182 
  24. Father Jerome to Father Gasper Fernandes, (BM add MS 9854, ff. 38-52), 1617, in Sicques, Tigers or Thieves: Eyewitness Accounts of the Sikhs (1606-1809). Eds. Amandeep Singh Madra and Parmjit Singh. Palgrave Macmillan, 2004, p. 7.
  25. Mobad', Dabistan-i Mazahib, 1645-46, in Sikh history from Persian sources. Eds. J.S. Grewal and Irfan Habib. Indian History Congress: Tulika, 2001. p. 67.
  26. Barnes, Michael (২০১২)। Interreligious learning : dialogue, spirituality, and the Christian imagination। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 245–246। আইএসবিএন 978-1-107-01284-4 
  27. Sajida S. Alvi (1987), “Religion and State during the Reign of Mughal Emperor Jahangir (1605-27): Nonjuristical Perspectives,” in Studia Islamica, pp. 113-114
  28. Pashaura Singh (২০০৬)। Life and work of Guru Arjan: history, memory, and biography in the Sikh tradition। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 211-219, 233। আইএসবিএন 978-0-19-567921-2 
  29. Gandhi, Rajmohan (১৯৯৯)। Revenge and reconciliation। New Delhi New York, NY: Penguin Books। পৃষ্ঠা 93-95। আইএসবিএন 978-0-14-029045-5 
  30. Pashaura Singh (2005), Understanding the Martyrdom of Guru Arjan ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে, Journal of Philosophical Society, 12(1), pp. 38-39
  31. Louis Fenech (2001), Martyrdom and the Execution of Guru Arjan in Early Sikh Sources, Journal of the American Oriental Society, 121(1), pp. 20-31
  32. Kirpal Singh (2000), Perspectives on Sikh Gurus, National Book Shop, pp. 125-127
  33. Max Arthur Macauliffe (1883), The Sikh Religion: Its Gurus, Sacred Writings and Authors, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১৮৭৫২৬০৩২, Volume 3
  34. Pashaura Singh (2011), Reconsidering the Sacrifice of Guru Arjan ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, Journal of Punjab Studies, University of California Press, 18(1&2), pp. 295-316
  35. Louis E. Fenech (2010), Martyrdom: W.H. McLeod and his Students, Journal of Punjab studies, University of California Press, 17(1&2), pp. 75-94
  36. Dehsen, Christian (১৯৯৯)। Philosophers and religious leaders। Routledge। পৃষ্ঠা 14। আইএসবিএন 978-1-57958-182-4 

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Tuzuk-i-Jahagiri or Memoirs of Jahagir, Translated by Alexander Rogers. Edited by Henry Beveridge Published by Low Price Publication. lppindia.com. আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৫৩৬-১৪৮-৫
  2. History of the Panjab, Syad Muhammad Latif, Published by: Kalyani Publishers, Ludhiana, Punjab, India. আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭০৯৬-২৪৫-৮
  3. Philosophy of 'Charhdi Kala' and Higher State of Mind in Sri Guru Granth Sahib, Dr. Harjinder Singh Majhail, 2010, Published by: Deepak Publishers, Jalandhar, Punjab, India. আইএসবিএন ৮১-৮৮৮৫২-৯৬-১
  4. SIKH HISTORY IN 10 VOLUMES, Dr Harjinder Singh Dilgeer, Published by: The Sikh University Press, Brussels, Belgium. ISBN 2- 930247-41-X

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী
গুরু রামদাস
শিখ গুরু
১ সেপ্টেম্বর, ১৫৮১ – ২৫ মে, ১৬০৬
উত্তরসূরী
গুরু হরগোবিন্দ