শিখ দর্শন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

শিখ হলেন তিনিই যিনি বিশ্বস্তভাবে বিশ্বাস করেন:[১]
I. এক অমর সত্ত্বা,
II. দশ গুরু, গুরু নানক সাহিব থেকে গুরু গোবিন্দ সিং সাহিব পর্যন্ত,
III. গুরু গ্রন্থ সাহিব,
IV. দশ গুরুর বাণী ও শিক্ষা এবং
V. দশম গুরুর দ্বারা বাপ্তিস্ম প্রাপ্ত এবং যিনি অন্য কোনো ধর্মের প্রতি আনুগত্য করেন না।

শিখ দর্শন বলতে শিখধর্মাবলম্বীরা যেসকল নীতি ও অনুশীলনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় তাদের বোঝানো হয়। শিখধর্মকে বৌদ্ধধর্ম, হিন্দুধর্ম এবং জৈনধর্মের সাথে ভারতীয় ধর্ম হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।[ক][খ][২] শিখধর্মের ভিত্তি গুরু নানক এবং তার উত্তরসূরিদের শিক্ষার মধ্যে রয়েছে।[৩][৪] শিখ দর্শন আধ্যাত্মিক বিকাশ এবং দৈনন্দিন নৈতিক আচরণের মধ্যে সামঞ্জস্যের উপর জোর দেয়। শিখধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক এই দৃষ্টিভঙ্গিকে সংক্ষিপ্ত করেছেন: "সত্য হল সর্বোচ্চ গুণ, কিন্তু উচ্চতর হল সত্য জীবনযাপন।"[৫]:২৩৪ শিখধর্ম 'এক আলো থেকে, সমগ্র মহাবিশ্ব বিকশিত হয়েছে' (Ėk nūr te sab jag upjiā) - এই ধারণার ওপর জোর দেয়।

শিক্ষা[সম্পাদনা]

শিখধর্ম একটি একেশ্বরবাদী এবং সর্বজনীন ধর্ম, যা এক ওঙ্কার শব্দ দ্বারা চিহ্নিত এক সর্বজনীন ঈশ্বরে বিশ্বাসের পক্ষে।[৬][৭] শিখধর্মে, ঈশ্বরের সামগ্রিক ধারণা হল ওয়াহেগুরু ('আশ্চর্য্য শিক্ষক') যাকে নিরঙ্কর ('আকৃতিহীন'), অকাল ('সময়হীন'), কর্তা পুরখ ('স্রষ্টা') এবং আগম অগোচর ('অবোধগম্য এবং অদৃশ্য') বলে মনে করা হয়।[৮] আক্ষরিক অর্থে, শিখধর্মে ঈশ্বরের কোনো লিঙ্গ নেই, যদিও রূপকভাবে, ঈশ্বরকে পুরুষরূপে এবং ঈশ্বরের শক্তিকে নারীরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, দশম গুরু গুরু গোবিন্দ সিং জি কর্তৃক বারবার ঈশ্বরকে আকাল পুরখ ('সময় ও স্থানের বাইরে') এবং নিরঙ্কর ('রূপ ছাড়া') নামে উল্লেখ করা হয়েছে, কিন্তু তিনি ঈশ্বরকে তার পিতা হিসাবেও উল্লেখ করেছেন এবং ঈশ্বরের সৃজনশীল শক্তিকে তার মা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। একইভাবে, আরেকটি উদাহরণ হল শিখ ধর্মগ্রন্থ এবং শাশ্বত গুরু গুরু গ্রন্থ সাহিবে বলা হয়েছে যে সমস্ত মানুষই আত্মা-বধূ যারা তাদের স্বামী প্রভুর সাথে একত্রিত হতে চায়।[৯] এছাড়াও, গুরুরা গুরু গ্রন্থ সাহিবে আরও লিখেছেন যে এমন অনেক জগত রয়েছে যাতে অতীন্দ্রিয় ঈশ্বর জীবন সৃষ্টি করেছেন।[১০]

পার্থিব বিভ্রম[সম্পাদনা]

মায়া একটি অস্থায়ী বিভ্রম বা "অবাস্তবতা" হিসাবে সংজ্ঞায়িত যা ঈশ্বর এবং পরিত্রাণের সাধনা থেকে মূল বিচ্যুতিগুলির মধ্যে একটি: যেখানে জাগতিক আকর্ষণগুলি শুধুমাত্র অলীক অস্থায়ী তৃপ্তি এবং বেদনা দেয় যা ঈশ্বরের ভক্তির প্রক্রিয়া থেকে বিভ্রান্ত করে। যাইহোক, নানক মায়াকে বিশ্বের অবাস্তবতার প্রতিকৃত নয়, বরং এর মূল্যবোধ হিসেবে জোর দিয়েছিলেন। শিখধর্মে অহং, ক্রোধ, লোভ, মৌহ এবং কাম, যা পাঞ্জ চোর ('পাঁচ চোর') নামে পরিচিত, বিশেষভাবে বিভ্রান্তিকর এবং ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়।

কালজয়ী সত্য[সম্পাদনা]

গুরু নানকের মতে, মানব জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য হল অকাল ('দ্য টাইমলেস ওয়ান') এর সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন করা। যাইহোক, অহংবোধ এই সংযোগ তৈরিতে সবচেয়ে বড় বাধা। গুরুর দেয়া শিক্ষা অনুসারে নাম (প্রভুর ঐশ্বরিক নাম)[১১][১২] স্মরণ এই অহংবোধের অবসান ঘটায়।

টীকা[সম্পাদনা]

  1. "As an Indian religion, Sikhism affirms transmigration, the continued rebirth after death". Brekke, Torkel (২০১৪)। Reichberg, G. M.; Syse, H., সম্পাদকগণ। Religion, War, and Ethics: A Sourcebook of Textual TraditionsCambridge University Press। পৃষ্ঠা 672। আইএসবিএন 978-1-139-95204-0 – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  2. "Sikhism, Indian religion founded in the Punjab in the late 15th century." (McLeod 2019/1998).

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Rehat Maryada ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে
  2. "Classification of Religions", Encyclopædia Britannica Online.
  3. Singh, Patwant (2000). The Sikhs. New York: Alfred A. Knopf. p. 17. আইএসবিএন ০-৩৭৫-৪০৭২৮-৬.
  4. [cnbctv18.com/india/when-is-guru-nanak-jayanti-check-date-and-all-you-need-to-know-15064101.htm "When is Guru Nanak Jayanti? Check date and all you need to know"] |url= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। CNBC TV-18। নভেম্বর ৩, ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
  5. Singh, Pashaura; Fenech, Louis E. (2014). The Oxford Handbook of Sikh Studies. Oxford University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৯৬৯৯৩০-৮.
  6. Rose, Tudor (২০১৫)। Agree to DifferUNESCO। পৃষ্ঠা 97। আইএসবিএন 978-92-3-100090-4 
  7. "Sikhism at a glance |Religions: Sikhism." BBC (2014).
  8. The Hans India (১ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "There is One God"The Hans India। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৯ 
  9. Guru Nanak Dev JiGurū Granth Sāhib। পৃষ্ঠা 17। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২১If you long for your Husband Lord, O soul-bride, you must know that He is not met by falsehood. 
  10. Guru Nanak Dev JiGurū Granth Sāhib। পৃষ্ঠা 15। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০০৬You are the One True Lord and Master of all the other beings, of so many worlds. 
  11. Pruthi, Raj (২০০৪)। Sikhism and Indian Civilization। Discovery Publishing House। পৃষ্ঠা 204। আইএসবিএন 978-81-7141-879-4 
  12. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; NaamSimran নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]