আবুল হাসান হানকারি
আবুল হাসান আলি বিন মুহাম্মাদ কুরেশি হাশেমি হানকারি ا بوالحسن ہنکاری | |
---|---|
উপাধি | শায়খুল ইসলাম |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | আবুল হাসান আলি বিন মুহাম্মাদ কুরেশি হাশেমি হানকারি ৪০৯ হিজরি, ১০১৮ খ্রিস্টাব্দ |
মৃত্যু | ১ম মহরম ৪৮৬ হিজরি, ১ ফেব্রুয়ারি ১০৯৩ খ্রিস্টাব্দ |
ধর্ম | ইসলাম |
যুগ | ইসলামি স্বর্ণযুগ |
অঞ্চল | হানকার (মসুল), ইরাক আব্বাসীয় খিলাফত(বাগদাদ)/(জেরুজালেম)/(দামেস্ক) |
আখ্যা | সুন্নি ইসলাম |
ব্যবহারশাস্ত্র | শাফিঈ |
ধর্মীয় মতবিশ্বাস | আশআরি |
প্রধান আগ্রহ | সুফিবাদ, ধর্মতত্ত্ব, যুক্তিবিদ্যা, ফিকহ |
মুসলিম নেতা | |
যার দ্বারা প্রভাবিত | |
যাদের প্রভাবিত করেন
|
আবুল হাসান হানকারি (আরবি: ابوالحسن ہنکاری; ইংরেজি: Sheikh Abu-Al-Hassan Hankari)[১] Abu Al আবুল হাসান আলি বিন মুহাম্মাদ কুরেশি হাশেমি হানকারি (জন্মঃ ৪০৯ হিজরি , হানকার শহরে ), মসুল ( উত্তর ইরাক-এর শহর, বাগদাদ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে) । মৃত্যুঃ ৪৮৬ হিজরির ১ম মহরম - ১ ফেব্রুয়ারি ১০৯৩ খ্রিস্টাব্দ -বাগদাদ),[২] তিনি খোদাভীরু নিগূঢ় প্রজ্ঞাবান এক মুসলিম ব্যক্তিত্ব ছিলেন ।[৩] হানকারে অবস্থিত তার সময়ের তিনি অন্যতম প্রভাবশালী একজন মুসলিম পণ্ডিত, দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ, আইনবিদ এবং সুফি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন ।[৪]
জীবনী
[সম্পাদনা]তিনি তার পিতা দ্বারা শিক্ষিত হয়েছিলেন । তিনি আধ্যাত্মিক গোপন রহস্যের প্রতি গভীর মনোনিবেশ ছিলেন । দ্বীনি খেদমতের লক্ষ্যে আল্লাহ প্রদত্ত 'কারামত-এর জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন । তিনি ধারাবাহিক নফল সাওম পালন করতেন এবং এশা ও তাহাজ্জুদ-এর মধ্যে ২ টি সম্পূর্ণ কুরআন-খতম পূর্ণ করতেন । তিনি নিষ্ঠার সাথে দিনরাত এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকতেন । অত্যধিক ধর্মীয় অনুশীলন ও তিলাওয়াত (কুরআন আবৃত্তি) করার অভ্যাস ছিল তার । ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেছিলেন - রোম থেকে স্পেন,স্পেন হয়ে হারমাইন, এরকমভাবে বিভিন্ন দেশ তিনি সফর করেন । তিনি অসংখ্য বিজ্ঞ আলেম ও শাইখদের (হাদিসের বিজ্ঞ পণ্ডিত) সাথে সাক্ষাত করেছিলেন যাদের কাছ থেকে তিনি ফিকহ -এর শিক্ষা-জ্ঞান অর্জন করতে শুরু করেন আর ইলমে হাদিস শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য মুহাদ্দিস-দের কাছ থেকে তিনি গভীর একাগ্রচিত্তে হাদিস সমুহ মুখস্থ করে নেন । এমনকি তিনি শায়খ আবু আল-লায়লা মিসরির সাথে দেখা করেছিলেন এবং তার কাছ থেকে হাদিস শুনেছিলেন । উল্লেখ্য যে, সমস্ত হাফিজ ই কুরআন (কুরআনের মুখস্থকারী), মুহাদ্দিস (হাদিসের বর্ণনাকারী), ক্বারী (সঠিক উচ্চারণ ও উচ্চারণ সহ কুরআন তেলাওয়াতকারী ) এরা এদের নিজ বিষয় শিক্ষার্জনের ধারাবাহিকতায় বর্ণনাকারীদের পরস্পর বর্ণনা পরম্পরা তথা একটি সনদ-শৃঙ্খলে ইসলামের নবি ও রাসুল মুহাম্মদের সাথে সংযুক্ত রয়েছে ।[৫] আর আবুল হাসান হানকারিও এই অন্তর্ভূক্ততায় শিক্ষালাভ করেন । তিনি তার সময়ের সর্বাধিক বিশিষ্ট ও প্রভাবশালী পন্ডিতদের নিকট থেকে ইলমে জাহির এবং ইলমে বাতিন শিক্ষা অর্জন করেছিলেন । এমনকি বায়েজিদ বুস্তামির কাছ থেকে তিনি ফয়েজ হাসিল করেন (আধ্যাত্মিক বদান্যতা পান) । একসময় তার নিজ দেশের লোকজন তার দেশ-বিদেশের খ্যাতির কথা জানতে পায । পরবর্তীতে তিনি যখন তার নিজ দেশে ফিরে গেলেন, আশেপাশের লোকেরা তাকে প্রচুর শ্রদ্ধা জানায় এবং তিনি খ্যাতিমান ব্যক্তি হিসেবে বরণীয় হন । তৎকলীন তুলনাহীন ধর্মীয় জ্ঞান এবং ধর্মীয় হিতসাধনের কারণে তিনি 'শায়খুল ইসলাম' উপাধি অর্জন করেছিলেন । তিনি 'আরিফ-ই-কামিল' হওয়ায় আল্লাহর অগণিত 'আরিফগণ'আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের পথে তার দ্বারা উপকৃত হন । তিনি ছিলেন তার সময়ের শরিয়ত ও তরিকত-এর ইমাম । তিনি মুহাম্মদ ইউসুফ আবু আল-ফারাহ তারতুসির কাছ থেকে খিলাফতের খিরকা পান যিনি সে সময়ের কুতুব ছিলেন ।[৬] 'স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফিলোসফি' কর্তৃক আরবি ও ইসলামী দর্শনের "স্বর্ণযুগ" হিসেবে একাদশ এবং চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়টিকে বিবেচনা করা হয়, এতে তিনি (আবুল হাসান হানকারি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, কারণ তিনি ছিলেন সেই সময়ের প্রাথমিক সুফিদের একজন যারা ইসলামি বিদ্যাক্ষেত্রে যুক্তিবিদ্যা এনেছিলেন ।[৭][৮]
পৈতৃক বংশ
[সম্পাদনা]আবুল হাসান হানকারি বিন ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন উমর বিন আবদুল ওহাব বিন আমির জায়েদ বিন ইমাম মুহাম্মদ হারিস বিন আমিরুল মুমিনীন আলি আল মুর্তাজা কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারিম বিন আবি তালিব বিন আবু মুতালিব বিন হাশিম বিন আবদুল মানাফ । তার বংশধররা পরে বাহাওয়ালপুর রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে : আজালাহ, ঝাং, গুজরানওয়ালা, শিয়ালকোট, ফয়সালাবাদ, লাহোর প্রভৃতি (স্থানে) ।[৯]
শাজরা
[সম্পাদনা]ফকরের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার আবুল হাসান হানকারির কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল, যদিও জুনায়েদ আল-বাগদাদির সিলসিলা যা তাকে নিম্নলিখিত ক্রমে ইসলামের নবি মুহাম্মদ-এর আধ্যাত্মিক বংশপরম্পরা করে তুলেছে:[১০][১১]
- মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ
- আলি ইবনে আবি তালিব
- হাসান আল-বাসরী
- হাবিব আল আজমি
- দাউদ তাই
- মারুফ কারখি
- সিররি সাকতি
- জুনাইদ বাগদাদি
- আবু বকর শিবলি
- আবদুল আজিজ বিন হারস বিন আসাদ ইয়েমেনে তামিমি
- আবুল ফজল আবদুল ওয়াহিদ ইয়েমেনে তামিমি
- মুহাম্মদ ইউসুফ আবুল ফারাহ তারতুসি
- আবুল হাসান আলি বিন মুহাম্মাদ কুরেশি হানকারি ।
আবদুল কাদির জিলানির মুর্শিদ, আবু সাঈদ মোবারক মাখজুমি ১৮ বছর আবুল হাসান হানকারির সেবায় ব্যয় করেছিলেন এবং তার পরে সিলসিলার নেতৃত্ব দেন ।[১২]
ছাত্র
[সম্পাদনা]আবু সাঈদ মুবারক মাখজুমি ছিলেন তার 'খলিফা-ই-অাকবর' (জ্যেষ্ঠ আধ্যাত্মিক উত্তরপুরুষ)[১৩]
তাহির (আবুল হাসান হানকারি-এর ছেলে) ছিলেন তার 'খলিফা-ই-আসগর' (কনিষ্ঠ আধ্যাত্মিক উত্তরপুরুষ)
[১৪][১৫][১৬]
মৃত্যু
[সম্পাদনা]তিনি আব্বাসীয় খিলাফত-এর সময় ১ম মহরম ৪৮৬ হিজরি মুতাবেক ১ ফেব্রুয়ারি ১০৯৩ খ্রিস্টাব্দে মারা যান । বাগদাদের 'হানকার'-এ তার মাজার অবস্থিত ।[১৪]
আরও জানতে পড়ুন
[সম্পাদনা]- জিকরে হাসান - আল্লামা গোলাম দস্তগির
- আল-দারুল মুনজিম ফি মানাকিব গাউসুল আজম
- তাজকিরা মাশাইখ কাদরিয়া রিজভিয়া
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]সুফিবাদ এবং তরিকা |
---|
প্রবেশদ্বার |
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Names"। ১৫ জুলাই ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ The works of Shaykh Umar Eli of Somalia of al-Tariqat al-Qadiriyyah.
- ↑ W. Braune, Abd al-Kadir al-Djilani, The Encyclopaedia of Islam, Vol. I, ed. H.A.R Gibb, J.H.Kramers, E. Levi-Provencal, J. Schacht, (Brill, 1986), 69.
- ↑ Muhammad Riyaz Qadri, Abd al-Qadir al-Jilani (২০০২)। Mystical Discourses of Ghaus-e-Azam। Abbasi Publications। আইএসবিএন 9789698510213।
- ↑ Names, Tawassul of Qadiriyya। "The spiritual genealogy from the Prophet Mohammad till Shaikh Abdul Qadir Jilani"। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Francis Burton, Sir Richard (জানুয়ারি ১৯৬৪)। Lineage of khilafat from Shaikh Abdul Qadir Jilani to Muhammed (Personal Narrative of a Pilgrimage to Al-Madinah & Meccah, Volume 2)। Courier Corporation। আইএসবিএন 9780486212180।
- ↑ Tony Street। "Arabic and Islamic Philosophy of Language and Logic"। Stanford Encyclopedia of Philosophy। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১২-০৫।
- ↑ Burton, Richard। Specimen of a Murshid's Diploma, in the Kadiri Order of the Mystic Craft Al-Tasawwuf। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ Riyaz Qadri, Muhammad। Ilhamat-e-Ghaus-e-Azam : Hazrat Shaikh Syed Abdul Qadir Jilani (R.A.)। Abbasi Publications।
- ↑ Sult̤ān Bāhū (১৯৯৮)। Death Before Dying: The Sufi Poems of Sultan Bahu। University of California Press। আইএসবিএন 978-0-520-92046-0।
- ↑ Francis Burton, Sir Richard। Personal Narrative of a Pilgrimage to Al-Madinah & Meccah, Volume 2। Courier Corporation। Lahore, Pakistan। আইএসবিএন 9780486212180।
- ↑ "spiritual golden chain"। ৩ জুলাই ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ "AwliyasWorld"। ৩ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ ক খ Tazkira Mashaikh Qadria Rizvia
- ↑ Zikr Hasan Allama Ghulam Dastgeer
- ↑ Al-Darul Munzim Fi Manaqib Ghaus-ul-Azam