আন্দ্রে শাখারভ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আন্দ্রে শাখারভ
Андрей Сахаров
আন্দ্রে শাখারভ
জন্ম(১৯২১-০৫-২১)২১ মে ১৯২১
মৃত্যু১৪ ডিসেম্বর ১৯৮৯(1989-12-14) (বয়স ৬৮)
মস্কো, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন
জাতীয়তাসোভিয়েত রাশিয়া
নাগরিকত্বসোভিয়েত ইউনিয়ন
মাতৃশিক্ষায়তনমস্কো স্ট্যাট ইউনিভার্সিটি
লেবেদেভ ফিজিক্যাল ইন্সটিটিউট
পরিচিতির কারণতৃতীয় চিন্তা
সোভিয়েত পরমাণু পরিকল্পনা
ভিন্নমতাবলম্বী
মানবাধিকার কর্মী
পুরস্কারহিরো অব সোশিয়্যালিস্ট লেবার (১৯৫৩, ১৯৫৫, ১৯৬২), স্ট্যালিন পুরস্কার (১৯৫৩), লেনিন পুরস্কার (১৯৫৬), নোবেল শান্তি পুরস্কার (১৯৭৫), এলিয়ন ক্রিসন পদক (১৯৮৫)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রপরমাণু পদার্থবিদ্যা
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেনইভান শাখারভ
২য় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপণ
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেনশাখারভ পুরস্কার
আন্দ্রে শাখারভ পুরস্কার
আন্দ্রে শাখারভ লেখকদের সাহসী পুরস্কার

আন্দ্রে দিমিত্রিভিচ শাখারভ (রুশ: Андре́й Дми́триевич Са́харов; জন্ম: ২১ মে, ১৯২১ - মৃত্যু: ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৮৯) মস্কোয় জন্মগ্রহণকারী সাবেক সোভিয়েত পরমাণু বিজ্ঞানী, ভিন্নামতাবলম্বী এবং মানবাধিকার কর্মী ছিলেন। তিনি সোভিয়েত হাইড্রোজেন বোমা’র জনক হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছেন।

শৈশবকাল[সম্পাদনা]

২১ মে, ১৯২১ সালে আন্দ্রে শাখারভ মস্কোয় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দিমিত্রী ইভানোভিচ শাখারভ। তিনি একজন বেসরকারী বিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক ছিলেন। এছাড়াও শৌখিন পিয়ানোবিদ হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন।[১] পরবর্তীকালে তার বাবা সেকেন্ড মস্কো স্ট্যাট ইউনিভার্সিটিতেও অধ্যাপনা করেছিলেন।[২]

দাদা ইভান শাখারভ ছিলেন জারশাসিত রাশিয়ায় একজন প্রখ্যাত আইনজীবী। তার সামাজিক সচেতনতামূলক এবং মানবতাধর্মী কর্মকাণ্ডই পরবর্তীকালে নাতি আন্দ্রে শাখারভের উপর ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মস্কো স্ট্যাট ইউনিভার্সিটিতে ১৯৩৮ সালে পড়াশোনা করেন শাখারভ। অতঃপর ১৯৪১ সালে সংঘটিত মহান দেশপ্রেমের যুদ্ধ যা ২য় বিশ্বযুদ্ধ নামে পরিচিত, ঐ সময়ে তিনি বর্তমান তুর্কমেনিস্তানের আসখাবাদে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। তারপর ১৯৪৫ সালে লেবেদেভ ফিজিক্যাল ইন্সটিটিউটের (রাশিয়ান একাডেমি অব সাইন্সেস) 'থিওরেটিক্যাল ডিপার্টমেন্টে' পড়াশোনা করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ডক্টর অব ফিলোসোফী বা পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৪২ সালের দিকে আলিয়ানোভস্কের একটি গবেষণাগারে কাজ করেছেন তিনি। ২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষে মহাজাগতিক রশ্মি নিয়ে গবেষণা করে। ১৯৪৮ এর মাঝামাঝি সময়ে ইগোর কুর্চাতোভ এবং ইগোর ট্যামকে নিয়ে সোভিয়েত আণবিক বোমা প্রকল্পে অংশ নেন শাখারভ। ২৯ আগস্ট, ১৯৪৯ সালে প্রথমবারের মতো সোভিয়েত আণবিক অস্ত্র পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। ১৯৫০ সালে সারোভে চলে যান তিনি। সেখানে তিনি প্রথমবারের মতো মেগাটন-দূরত্বের সোভিয়েত হাইড্রোজেন বোমা নক্সার মান উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা নেন। এ নক্সাই পরবর্তীকালে শাখারভের তৃতীয় চিন্তা নামে রাশিয়া এবং টেলার-উলাম নক্সা নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৫৫ সালে আরডিএস-৩৭ নামে প্রথম পরীক্ষা চালানো হয়। এরচেয়েও ব্যাপক মাত্রায় ও একই নক্সায় শাখারভ কাজ করেছিলেন। ৫০এমটি জার বোম্বা নামে অক্টোবর, ১৯৬১ সালে পরীক্ষা চালানো হয় যা স্মরণাতীতকালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছিল।

পরমাণু বোমা তৈরী ও প্রযুক্তিকে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে নিকিতা ক্রুশ্চেভের সাথে তার মতবিরোধ ঘটে। ১৯৫০-এর দশকের শেষ লগ্ন থেকে শাখারভ তার কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক চাপের অস্তিত্ব টের পান। ১৯৬০-এর দশকে তিনি পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের বিরুদ্ধে অবস্থান করেন। মহাকাশে পরীক্ষণের সমাপণের লক্ষ্যে ১৯৬৩ সালে মস্কোয় আংশিক পরীক্ষা বন্ধ চুক্তি প্রণয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব[সম্পাদনা]

বেরিয়ন অপ্রতিসাম্য বিষয়টি এখনও বোধগম্য নয় - কেন মহাবিশ্বে পদার্থের থেকে প্রতিপদার্থের পরিমাণ বেশি। ধারণা করা হয়, মহাবিশ্ব যখন নবীন এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত ছিল তখন, এটি পরিসাংখ্যিক সাম্যাবস্থা বজায় রাখছিল অর্থাৎ এতে বেরিয়ন এবং প্রতি বেরিয়নের পরিমাণ সমান ছিল। কিন্তু বর্তমান পর্যবেক্ষণ প্রমাণ করেছে যে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব প্রায়ো পুরোটাই পদার্থ দ্বারা গঠিত। এর সমাধানে বলা হয়েছে, বেরিওজেনেসিস নামক একটি অজ্ঞাত পদ্ধতি এই অপ্রতিসাম্যের সৃষ্টি করেছে। বেরিওজেনেসিস ঘটার জন্য আন্দ্রেই শাখারভ কতকগুলো শর্ত উত্থাপন করেন। এই শর্তগুলোতে বলা হয়েছে, মহাবিশ্বে সেই বেরিয়ন সংখ্যা থাকতে হবে যা সংরক্ষিত নয়, সি-প্রতিসাম্য এবং সিপি-প্রতিসাম্য লঙ্ঘন করতে হবে এবং মহাবিশ্বকে তাপগতীয় সাম্যাবস্থা থেকে দূরে থাকতে হবে।[৩]

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

শাখারভের রাজনৈতিক উত্থান ঘটে ১৯৬৭ সালে। এ সময় এন্টি-ব্যালেস্টিক মিসাইল সংক্রান্ত বিষয়ে সোভিয়েত-মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্কে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। ২১ জুলাই, ১৯৬৭ সালে সোভিয়েত নেতৃবৃন্দের কাছে একটি গোপন বার্তা প্রেরণ করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন যে, আমেরিকানদেরকে তাদের কথা রক্ষা করতে দাও। সরকার তার চিঠির বিষয়বস্তুকে নাকচ করে দেন। সোভিয়েত সরকার এন্টি-ব্যালেস্টিক মিসাইল বা এবিএম নিয়ে সোভিয়েত সংবাদ সংস্থা কিংবা অন্য কোন প্রচারমাধ্যমে কোন কিছু আলোচনা করতে বারণ করেন।

মে, ১৯৬৮ সালে তিনি রিফ্লেকশন্স অন প্রোগ্রেস, পিসফুল কয়েক্সিসটেন্স, এন্ড ইনটেলেকচুয়াল ফ্রিডম শিরোনামে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন। এতে তিনি এন্টি-ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিফেন্সকে বিশ্বের পরমাণু যুদ্ধের প্রধান নিয়ামক শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন। ভিন্নমতাবলম্বীদের সংবাদপত্র স্যামিজডেটে প্রবন্ধটি প্রচারিত হয়। তারপর সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে ৬ জুলাই, ১৯৬৮ সালে ডাচ শিক্ষাবিদ ও লেখক ক্যারেল ভ্যান হেট রীভের মাধ্যমে ডাচ সংবাদপত্র হেট পেরোলে প্রকাশিত হয়। এরপর নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশের কারণে শাখারভকে সকল ধরনের সমর-সংক্রান্ত গবেষণা কর্ম থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় ও ফিয়ানে ফেরৎ পাঠানো হয়। ১৯৭০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে মানবাধিকার কমিটির প্রতিষ্ঠাতা - ভ্যালেরি চালিডজ্‌ এবং আন্দ্রে ভার্দোখলেবভের সাথে তিনিও সরকারের পক্ষ থেকে উত্তরোত্তর ব্যাপক চাপ প্রয়োগের সম্মুখীন হন।

তিনি প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়নে স্বাধীন ও বৈধ রাজনৈতিক সংগঠন তৈরীতে সাহায্য করেন। এছাড়াও, সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের বিরোধী পক্ষ হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৯ সালের মার্চ মাসে তিনি অল-ইউনিয়ন কংগ্রেস অব পিপিল'স ডেপুটিস দলের পক্ষ থেকে নতুন পার্লামেন্টের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ইন্টার-রিজিওনাল ডেপুটিস গ্রুপের সহ-নেতৃত্বে ছিলেন।

নজরবন্দী[সম্পাদনা]

নিঝনি নোভগোরোডে ১৯৮০-১৯৮৬ সাল পর্যন্ত অন্তরীণ ছিলেন শাখারভ।

১৯৭৩ এবং ১৯৭৪ সালে সোভিয়েত প্রচার ও গণমাধ্যমগুলো আন্দ্রে শাখারভ এবং আলেকজাণ্ডার সোলঝেনিতসিনের কর্মকাণ্ডের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে শুরু করে। শাখারভ সোলঝেনিতসিনকে সাথে নিয়ে রাশিয়ান দাসোবৃত্তিতে প্রত্যার্পণ করা থেকে বিরত থাকেন। ঐ সময়ে স্বল্প কয়েকজন ব্যক্তির অন্যতম হিসেবে তারা যে-কোনরূপ শাস্তিকে ভয় পেতেন না। আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন ঘটে ১৯৭৯ সালে। এর প্রেক্ষিতে শাখারভ ২২ জানুয়ারী, ১৯৮০ সালে জনসমক্ষে এ ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেন। ফলে তাকে গোর্কি শহরে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। শহরটি বর্তমানে নিঝনি নোভগোরোড নামে পরিচিত। ঐ সময় শহরটিতে বিদেশীদের পদচারণা বন্ধ করে রাখা হয়েছিল।

তিনজন রুশ বিজ্ঞানী - শাখারভ, অরলভ ও স্কারানস্কিকে তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে জেলে বন্দী করা হয়। তাদেরকে সমর্থন করে সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা যে আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন তার নাম ছিল সাইন্টিস্ট্‌স ফর শাখারভ, অরলভ অ্যান্ড স্কারানস্কি। এই আন্দোলনের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন ওয়েন চেম্বারলেইন

সম্মাননা[সম্পাদনা]

১৯৭৩ সালে আন্দ্রে শাখারভ প্রথমবারের মতো নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রিক্স মনডিয়াল সিনো ডেল ডুকা পদক লাভ করেন। অতঃপর তিনি ১৯৭৫ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ত্যাগে সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা ছিল তার। সেজন্য তার স্ত্রী নরওয়ের অসলোতে তার স্ব-লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।[৪][৫] নরওয়ের নোবেল কমিটি শাখারভকে মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও অগ্রদূত হিসেবে বর্ণনা করেন।[৬]

১৯৮০ সালে অ্যামেরিকান হিউম্যানিস্ট এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে 'মানবতাবাদী' হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮৮ সালে শাখারভ ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট এন্ড ইথিক্যাল ইউনিয়ন কর্তৃক 'ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট পদক' লাভ করেন।

বৈবাহিক জীবন[সম্পাদনা]

আলিয়ানোভস্কের গবেষণাগারে কর্মরত থাকা অবস্থায় ১৯৪৩ সালে ক্ল্যাভডিয়া অল্যাকসেভনা ভিখিরেভাকে বিয়ে করেন শাখারভ। তাদের এ সংসারে দুই কন্যা (লাইউবা, তানিয়া) ও এক পুত্র (দিমা) সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে ৮ মার্চ, ১৯৬৯ সালে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর অল্যাকসেভনা ভিখিরেভা মৃত্যুবরণ করেন।[৭] এরপর ১৯৭২ সালে ইয়েলেনা বোনার নামীয় এক মানবাধিকার কর্মীকে বিয়ে করেন।

১৯৮০ থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে শাখারভ সোভিয়েত পুলিশের নজরদারীতে ছিলেন। ১৯৮৪ সালে তার স্ত্রী ইয়েলেনা বোনারকে আটক করা হয়। এর ফলে স্ত্রীর হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের অনুমোদন ও তার মুক্তির দাবীতে তিনি অনশন করেছিলেন। তাকে জোরপূর্বক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তাকে তার অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও জোরপূর্বক খাওয়ানো হয়। চারমাস তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। আগস্ট, ১৯৮৪ সালে ইয়েলেনা বোনারকে ৫ বছরের জন্য গোর্কিতে নির্বাসনে পাঠানো হয়।

এপ্রিল, ১৯৮৫ সালে শাখারভ পুনরায় চিকিৎসাজনিত কারণে স্ত্রীর বিদেশ ভ্রমণের ব্যাপারে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। ফলে তাকে আবারো হাসপাতালে প্রেরণ ও জোরপূর্বক খাদ্যগ্রহণে বাধ্য করা হয়। স্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন হবার পূর্বে অক্টোবর, ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে ছিলেন। বোনার তার হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হবার পর জুন, ১৯৮৬ সালে গোর্কীতে ফিরে আসেন।

শাখারভের বন্ধুমহলের অনেকেই মানব অধিকার আন্দোলনকে ব্যর্থ হিসেবে বিবেচনায় এনে তাকে অনশন ধর্মঘট করা থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ প্রয়াস চালান। পাশাপাশি তার এ দুঃখ-দূর্দশার জন্য বোনারকে তিরস্কার ও দোষী সাব্যস্ত করেন। কিন্তু শাখারভ দাবী করেন যে, তার মানব অধিকার সংক্রান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনাগুলো নিজের নৈতিক মূল্যবোধ থেকে সৃষ্ট।

১৯ ডিসেম্বর, ১৯৮৬ সালে তৎকালীন সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গর্বাচেভ পেরেস্ত্রোইকা এবং গ্লাসনস্ত নীতি প্রবর্তন করেন। তিনি শাখারভ এবং তার স্ত্রীকে মস্কোয় ফিরে আসার অনুমতিপত্র প্রদান করেন।[৮]

শাখারভ পুরস্কার[সম্পাদনা]

মানবাধিকার ও স্বাধীনতা বিষয়ে আজীবন সোচ্চার ছিলেন তিনি। তাই, তার নামকে চিরভাস্বর করে রাখতে জীবিতকালেই ডিসেম্বর, ১৯৮৫ সালে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট বার্ষিকভিত্তিতে শাখারভ পুরস্কার প্রবর্তনের ঘোষণা দেয়।[৬] অতঃপর ১৯৮৮ সাল থেকে অদ্যাবধি সাংবাৎসরিকভাবে মানবাধিকার ও মুক্তচিন্তার মৌলিক বিকাশে অবদানের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত ব্যক্তি কিংবা সংগঠনকে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

মহাপ্রয়াণ[সম্পাদনা]

আর্মেনিয়ার ইয়েরেভানে আন্দ্রেই সাখারভের ভাস্কর্য

১৪ ডিসেম্বর, ১৯৮৯ সালে স্থানীয় সময় রাত ৯টার পর শাখারভ তার পাঠকক্ষে যান। উদ্দেশ্য ছিল কংগ্রেসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতার প্রস্তুতি-পর্ব সেড়ে নেয়া। স্ত্রী এলেনা বোনার রাত ১১টায় শাখারভের পূর্ব-ঘোষণার প্রেক্ষাপটে তাকে ডাকতে যান। কিন্তু তিনি মেঝেতে তার নিশ্চল দেহ দেখতে পান। আকস্মিকভাবে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধজনিত কারণে ৬৮ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে মস্কোয় অবস্থিত ভোসট্রায়াকোভস্কোয় সিমেট্রিতে তাকে সমাহিত করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Autobiography, The Nobel Foundation 1975
  2. Sidney David Drell, Sergeǐ Petrovich Kapitsa, Sakharov Remembered: a tribute by friends and colleagues (1991), p. 4
  3. A. D. Sakharov, "Violation of CP invariance, C asymmetry and baryon asymmetry of the universe", Pisma Zh. Eksp. Teor. Fiz. 5, 32 (1967), translated in JETP Lett. 5, 24 (1967).
  4. Y.B. Sakharov: Acceptance Speech, Nobel Peace Prize, Oslo, Norway, December 10, 1975.
  5. Y.B. Sakharov: Peace, Progress, Human Rights, Sakharov's Nobel Lecture, Nobel Peace Prize, Oslo, Norway, December 11, 1975.
  6. "Biography, by American Institute of Physics"। ২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১১ 
  7. Drell, Sidney D., and Sergei P. Kapitsa (eds.), Sakharov Remembered, pp. 3, 92. New York: Springer, 1991.
  8. Perestroïka and Soviet national security। Brookings Institution Press। ১৯৯১। পৃষ্ঠা 275। আইএসবিএন 0815755538  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]