আতাউর রহমান (কবি)
আতাউর রহমান | |
|---|---|
![]() | |
| জন্ম | ৮ মে ১৯২৫ |
| মৃত্যু | ২৬ জুন ১৯৯৯ (বয়স ৭৪) |
| জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
| মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
| পেশা | কবি • অধ্যাপক |
| পরিচিতির কারণ | বাংলা ভাষা আন্দোলন |
| পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
আতাউর রহমান (৮ই মে ১৯২৫ - ২৬ জুন ১৯৯৯) একজন ভাষা সৈনিক ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি।[১] তার প্রকাশিত গদ্য ও কাব্যগ্রন্থের মধ্যে দুই ঋতু, একদিন প্রতিদিন , ভালবাসা এবং তারপর, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, নজরুল কাব্য সমীক্ষা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। পেশায় তিনি একজন শিক্ষক ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]কবি আতাউর রহমান ১৯২৭ সালের ৮ই মে বর্তমান জয়পুরহাট (তৎকালীন বগুড়া) জেলার আক্কেলপুর উপজেলাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলাউদ্দীন সরদার এবং মা গোলেজান নেসা।
তিনি ১৯৪৪ সালে আক্কেলপুর সোনামুখী হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৪৬ সালে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ১৯৪৯ সালে কলকাতা সুরেন্দ্র নাথ কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৫২ সালে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেন।
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখির প্রতি তার অনুরাগ ছিল। সপ্তম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় তার প্রথম কবিতা আসলো খুশির ঈদ প্রকাশিত হয়।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]কবি আতাউর রহমান কর্মজীবনের শুরুতে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরবর্তীতে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ, সন্তোষের মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ, জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ এবং পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং আমৃত্যু সেখানেই শিক্ষকতা করেন।
সাহিত্য-জীবন
[সম্পাদনা]ছোটবেলা থেকেই শিল্প-সাহিত্য ও লেখালেখির প্রতি তার অনুরাগ ছিল। সপ্তম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতা আসলো খুশির ঈদ। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সালের মধ্যে দৈনিক আজাদ ও দৈনিক নবযুগ পত্রিকায় তার বহু কবিতা প্রকাশিত হয়।
কাব্যগ্রন্থ
[সম্পাদনা]- দু ঋতু (১৯৫৬)
- একদিন প্রতিদিন (১৯৬৩)
- নিষাদ নগরে আছি (১৯৭৭)
- ভালোবাসা চিরশত্রু (১৯৮১)
- ইদানীং রঙ্গমঞ্চ (১৯৯২)
- সারাটা জীবন ধরে (১৯৯৪)
- ভালোবাসা ও তারপর
আলোচনাগ্রন্থ
[সম্পাদনা]- আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (১৯৬৩)
- কবি নজরুল (১৯৬৮)
- নজরুল কাব্য সমীক্ষা (১৯৭২)
- নজরুল জীবনে প্রেম ও বিবাহ (১৯৯৭)
রাজনৈতিক জীবন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ
[সম্পাদনা]কলেজে অধ্যয়নকালেই আতাউর রহমান ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন । তিনি ১৯৪৬ সালে নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের বগুড়া জেলা শাখার সভাপতি এবং ১৯৪৭ সালে বঙ্গীয় ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালের জানুয়ারি মাসে ছাত্র ফেডারেশনের দিলস্নী সম্মেলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
কবি আতাউর রহমান ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনে বগুড়ার প্রতিনিধি হিসেবে তিনি উপস্থিত ছিলেন। ভাষাসৈনিক গাজীউল হক তখন বগুড়া আজিজুল হক কলেজের ছাত্র ছিলেন। কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন বাংলাভাষা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। সে সময় বগুড়ায় সংগঠিত ভাষা আন্দোলনে আতাউর রহমান বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হলে ভাষা আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করা। ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হয় প্রতিবাদ সভা ও সমাবেশ। ২৮ ফেব্রুয়ারি বগুড়া আজিজুল হক কলেজ প্রাঙ্গণে কবি আতাউর রহমানের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত হয় এক প্রতিবাদ সভা। বগুড়াতে আতাউর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি 'বাংলাভাষা সংগ্রাম কমিটি' গঠন করা হয়।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সারাদেশে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। বগুড়াতে ১১ মার্চের মিছিলে নেতৃত্ব দেন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। উক্ত মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন ভাষাসৈনিক গাজীউল হক এবং কবি আতাউর রহমান। সেদিন বগুড়া জিলা স্কুল ময়দানে সভার সভাপতি ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ৷ সভাপতি হিসেবে বাংলাকে রাষ্ট্র্রভাষা করার দাবির স্বপক্ষে ভাষণ দেন৷
ওই সময়ে বগুড়ার যুব ছাত্রলীগের ভেতরে প্রগতিশীল আন্দোলনকে চাঙ্গা করার জন্য 'প্রগতিশীল লেখক ও শিল্পী সংঘ' নামে আরেকটি সংগঠন গড়ে উঠেছিল৷ এর বৈঠক হতো বগুড়া আজিজুল হক কলেজের ইসলামিক ইতিহাসের অধ্যাপক আবুল খায়ের আহম্মদ-এর বাসায়৷ এই আসরে গাজীউল হক, কবি আতাউর রহমান, ব্যঙ্গ লেখক তাছিকুল আলম খান, জালালউদ্দিন আকবর, কমিউনিস্ট আবদুল মতিন, শ্যামাপ্রসাদ সেন, মমতাজ উদ্দীন তরফদার প্রমুখ তাদের স্বরচিত লেখা পাঠ করতেন৷[২]
১৯৪৯-৫১ সাল পর্যন্ত কবি আতাউর রহমান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এ সময় ভাষা আন্দোলনসহ অন্যান্য প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি নিজ গ্রাম আক্কেলপুরে অবস্থান করছিলেন। ঢাকায় ছাত্র হত্যার খবর শুনে এর প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি আক্কেলপুর হাই স্কুলের মাঠে যে সভা অনুষ্ঠিত হয় সে সভার উদ্যোক্তা ও সভাপতি ছিলেন ভাষাসংগ্রামী আতাউর রহমান। পরর্বতীকালে ১৯৫৩ সালের প্রথম একুশে বার্ষিকী পালন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনসহ বিভিন্ন আন্দোলনেও আতাউর রহমান অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে তিনি ভারত থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
পুরস্কার
[সম্পাদনা]আতাউর রহমান তার লেখা ও কাব্যকর্মের জন্য ১৯৭০ সালে কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।[১] এছাড়াও তিনি ১৯৮৫ সালে নজরুল স্মৃতি পুরস্কার, জনকণ্ঠ প্রতিভা সম্মাননা ও বাংলাদেশ লেখিকা সংঘসহ বহু সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 "বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকা"। বাংলা একাডেমী। ১১ আগস্ট ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুলাই ২০১৯।
- ↑ একুশের সঙ্কলন '৮০, গাজীউল হকের স্মৃতিচারণ, বাংলা একাডেমী।পৃঃ ১০৯
- ১৯২৭-এ জন্ম
- ১৯৯৯-এ মৃত্যু
- বাংলাদেশী সাহিত্যিক
- বাংলাদেশী কবি
- বাংলা ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- সরকারি আজিজুল হক কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষক
- কবিতায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
- আক্কেলপুর উপজেলা
- জয়পুরহাট জেলার ব্যক্তি
- বাঙালি লেখক
- ১৯২৫-এ জন্ম
- বাংলাদেশী পুরুষ কবি
- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
- ২০শ শতাব্দীর বাঙালি
