তন্দ্রাবিলাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তন্দ্রাবিলাস
180p
লেখকহুমায়ূন আহমেদ
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
ধারাবাহিকমিসির আলি
বিষয়পরাবাস্তব জগৎ, এক্সট্রা সেন্সরি পারসেপশন
ধরনরহস্য
পটভূমিঢাকা
প্রকাশিতজানুয়ারি, ১৯৯৭
প্রকাশকদিব্য প্রকাশনা
মিডিয়া ধরনশক্ত মলাট
পৃষ্ঠাসংখ্যা৯৬
আইএসবিএন৯৮৪ ৭০১১৬ ০০৭৬ ৫ {{ISBNT}} এ প্যারামিটার ত্রুটি: অবৈধ উপসর্গ
পরবর্তী বইআমিই মিসির আলী 

তন্দ্রাবিলাস হুমায়ূন আহমেদ এর মিসির আলি চরিত্রভিত্তিক উপন্যাসগুলোর ১১ নম্বর উপন্যাস। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩ জানুয়ারি, ১৯৯৭ সালে। এর স্বত্বাধিকারী লেখকের স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদ।এটি প্রকাশিত হয় দিব্য প্রকাশনী থেকে। এর মুদ্রিত মূল্য ছিল ৫৫ টাকা। প্রচ্ছদ অঙ্কন করেন ধ্রুব এষ

তন্দ্রাবিলাস উপন্যাসটি মানুষের অবচেতন মন, পরাবাস্তব জগৎ এর এক অদ্ভুত মেলবন্ধন। পুরো উপন্যাসটিতেই হুমায়ূন আহমেদ তার মিসির আলি চরিত্রের মাধ্যমে মানুষের অদ্ভুত আচরণের এবং অস্বাভাবিক ক্ষমতার যৌক্তিক কারণ উপস্থাপন করেছেন।

কাহিনী সংক্ষেপ[সম্পাদনা]

উপন্যাসের মূল চরিত্র মিসির আলির কাছে এক শীতকালের বেলা এগারোটার সময় অদ্ভুত এক মেয়ে আসে।সকালের নিয়মানুযায়ী মিসির আলির মেজাজ ভালো হওয়ার কথা থাকলেও তাঁর মেজাজ খারাপ হতে থাকে মেয়েটার আচরণ, কথাবার্তা শুনে।মেয়েটা শুরুতেই তাঁকে ভুল নাম হিসেবে সায়েরা বানু বলে। কিন্তু মিসির আলি বুঝতে পারেন মেয়েটার নাম সায়েরা বানু না।এতে মিসির আলি আরো বিরক্ত হন।মেয়েটা একসময় তার হাতের হ্যান্ডব্যাগ আর স্যুটকেস মিসির আলির কাছে রেখে চলে যায়।সেখানে মিসির আলি একটা চিঠি পান।দামী ওনিয়ন স্কিন পেপারে লেখা চিঠি পড়ে মিসির আলি জানতে পারেন, মেয়েটার নাম ফারজানা, বয়স ২৩। সে ছোটবেলাতে এক রোড এক্সিডেন্টে তার মাকে হারায়।তার বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন এবং তার ছোট মা আত্মহত্যা করে।

ফারজানার অনেকগুলো ডাক নাম ছিল।তার অন্যান্য নামগুলো ছিল চিত্রা, নিশী।

ফারজানার সাথে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে।প্রায়ই সে তার মৃত ছোট মা কে দেখতে পায়।তার সাথে কথা বলে, খেলাধুলা করে।কিন্তু এই বিষয়টা সে কাউকে বলেনা।ফারজানার ভাষ্যমতে সে অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারী ছিল।সে যা স্বপ্ন দেখতো তাই সত্য হতো।এমনকি সে চাইলে স্বপ্ন পরিবর্তন করতে পারতো।এতে সে ইচ্ছামতো ঘটনা বদলে দিতে পারতো।

পরবর্তীতে ফারজানার বাবা আবার বিয়ে করেন।সে তার বাবার তৃতীয় স্ত্রীকে নীতু আন্টি বলে ডাকতো।

নীতু আন্টির সাথে তার বাবার বিয়ের পর তিনি ফারজানার সঙ্গী হিসেবে শরীফা নামে এক কাজের লোক নিয়ে আসেন।যার সাথে ফারজানার একরকম সখ্যতা গড়ে উঠে।কিন্তু শরীফার কাছে নারী পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের বিভিন্ন গল্প ফারজানার মানসিক বিকাশকে নানাভাবে বাধাগ্রস্থ করে।

একসময় শরীফার বিয়ে হয়ে যায়।বিয়ের পর স্বামীর সাথে চলে যাওয়ার আগের সন্ধ্যায় শরীফার অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে।সবাই এতে ফারজানাকেই সন্দেহ করে। এরপর থেকেই ফারজানা শরীফার অশরীরি অবয়বকে খাটের নিচে দেখতে পায়।এমনকি ফারজানার নীতু আন্টিও দেখতে পান যার ফলে উনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

ফারজানার বাবা ফারজানাকে মানসিক ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যান।সেখানে ফারজানা ডাক্তারকে নিজের মতো করে প্রভাবিত করে।ডাক্তারের পরামর্শ মতো ফারজানার বাবা তার জন্য নতুন ঘরের ব্যবস্থা করেন, যেখানে বক্স খাট কিনে দেন।তিনি একটা কম্পিউটারও কিনে দেন এবং তার সাথে কম্পিউটার শেখানোর জন্য হাসিব নামে একজন শিক্ষককে স্থায়ীভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

ফারজানা তার শিক্ষক হাসিবের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য এক রাতে নগ্ন অবস্থায় হাসিবের খাটের নিচে বসে থাকে।যদিও তার ভাষ্য ছিল সে হাসিবকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল, কিন্তু মিসির আলি পরবর্তীতে প্রমাণ করেন ফারজানা হাসিবের ঘরে মাঝরাতে ঢুকতে চেয়েছিল।এতে হাসিব তাদের বাসা ছেড়ে চলে যান।

চিঠির এই পর্যন্ত পড়ে মিসির আলি ফারজানাকে ফোন করেন এবং জানান তিনি আর চিঠি পড়ে বিভ্রান্ত হতে চান না।তিনি ফারজানার সমস্যা ধরতে পেরেছেন এবং ফারজানার সাথে দেখা করতে চান।মিসির আলির কোনো টেলিফোন না থাকাতে তিনি যে দোকান থেকে টেলিফোন করেছেন ফারজানা সেই দোকানের মালিকের মেয়ের নাম অদ্ভুত ভাবে বলে দেয়।

মিসির আলি ফারজানার সাথে দেখা করতে তাদের বাড়িতে যান।তাদের বাড়িতে সেদিন কেউ ছিলনা।তিনি ফারজানার জন্য পাঁচটা গোলাপ ফুল কিনে নিয়ে যান।ফারজানা অত্যন্ত সাজগোজ করে মিসির আলির জন্য রাতের খাবারের আয়োজন করে।

রাতের খাবার খাওয়ার আগে মিসির আলি ফারজানাকে তার সমস্যার কথা খুলে বলেন।তিনি বলেন, ফারজানার জীবন কাটছে এক তন্দ্রার মধ্যে, যে জগতটা খুব ভয়াবহ রকমের অসুন্দর।তিনি ব্যাখ্যা করেন, ফারজানা আসলে তার মা বাবার পালক সন্তান।শরীফা তার আপন বোন।ফারজানা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী বলে অল্প বয়সেই এই বিষয়টা ধরতে পারে।এতে তার পুরো জগৎটা এলোমেলো হয়ে যায়।তিনি শরীফার বিষয়টা এভাবে ব্যাখ্যা করেন যে এটা সত্য হতেও পারে আবার নাও হতে পারে।যেহেতু ফারজানা খুব বুদ্ধিমতী তাই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন এর পুরোটাই একটা মায়া।

উপন্যাসের শেষ অংশে ফারজানা খাবার বেড়ে দেয়ার সময় তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।মিসির আলির ইচ্ছে হওয়া সত্ত্বেও তিনি সে পানি মুছিয়ে দিলেন না।কারন তাঁর দায়িত্ব ছিল এ জলের উৎস বের করা।তিনি করেছেন।মেয়েটাকে তার চোখের জল নিজে থেকেই মুছতে হবে।

চরিত্রাবলী[সম্পাদনা]

১.মিসির আলি- অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলোজি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

২. ফারজানা- ডাকনাম নিশি, চিত্রা, ছদ্মনাম সায়েরা বানু

৩. শরীফা- ফারজানার বাসার কাজের লোক

৪. ছোট মা- ফারজানার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী

৫. নীতু আন্টি- ফারজানার বাবার তৃতীয় স্ত্রী

৬. হাসিব- ফারজানার কম্পিউটার শিক্ষক

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

১. মিসির আলি সমগ্র, অনন্যা প্রকাশনী, প্রকাশক মনিরুল হক, তন্দ্রাবিলাস উপন্যাস, পৃৃৃৃৃৃৃষ্ঠা ৬৫৫

২. তন্দ্রাবিলাস, দিব্য প্রকাশনী, স্বত্ব গুলতেকিন আহমেদ, প্রকাশক মঈনুল আহসান সাবের

আরও দেখুন[সম্পাদনা]