মোহাম্মদ দৌলত হোসেন মোল্লা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মোহাম্মদ দৌলত হোসেন মোল্লা
জন্ম১২ ডিসেম্বর, ১৯৪৭
মৃত্যু
১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম

শহীদ মোহাম্মদ দৌলত হোসেন মোল্লা (জন্ম: ১২ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ - মৃত্যু: ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

মো. দৌলত হোসেন মোল্লার জন্ম গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার চরখামের গ্রামে। তার বাবার নাম মো. আয়েত আলী মোল্লা এবং মায়ের নাম তাহেরা খাতুন। তার স্ত্রীর নাম আমেনা বেগম। তার এক মেয়ে। [২]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

পাকিস্তান নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন মো. দৌলত হোসেন মোল্লা। ১৯৭১ সালের মার্চে ছুটিতে বাড়িতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিবাহিনীর নৌ উইংয়ে যোগ দেওয়ার আগে স্থলযুদ্ধেও অংশ নেন তিনি। অক্টোবরে মুক্তিবাহিনীর নৌ উইং গঠিত হলে পলাশ গানবোটে তাকে গান ক্রুম্যান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এরপর কয়েকটি নৌ অপারেশনে তিনি অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পদ্মা ও পলাশ নামে দুটি জাহাজ ভারত থেকে রওনা হয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে পৌঁছে। জাহাজ দুটি রওনা করে ৭ ডিসেম্বর। মিত্রবাহিনীর বিমান শত্রু পাকিস্তানিদের জাহাজ ভেবে ভুল করে পদ্মা ও পলাশ জাহাজে বোমাবর্ষণ করে। আত্মঘাতী এই বোমা হামলায় দুটি জাহাজই ডুবে যায়। এতে অনেক নৌমুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও গুরুতর আহত হন। গুরুতর আহত মো. দৌলত হোসেন মোল্লা, রুহুল আমিন (বীরশ্রেষ্ঠ), সিরাজুল মওলা (বীর উত্তম), আফজাল মিয়া (বীর উত্তম)সহ আরও কয়েকজন সাঁতরে নদীতীরে যান। কিন্তু সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল আরেক বিপদ। নদীতীরের বিভিন্ন স্থানে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী রাজাকার। মো. দৌলত হোসেন মোল্লা নদীতীরের যে স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হন, সেখানে তিনি একটু পর দেখতে পান তার সহযোদ্ধা আহত সিরাজুল মওলাকে। আহত দৌলত হোসেন নদীতীরে পড়ে ছিলেন। তিনি মারাত্মক আহত হয়েছিলেন। ক্রলিং করে বা হেঁটে যেতে পারছিলেন না। আহত মওলা চেষ্টা করেছিলেন মো. দৌলত হোসেন মোল্লাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু পারেননি। মওলা সামনে যেতে সক্ষম হন। তিনি বেঁচে যান। মো. দৌলত হোসেন মোল্লাকে পরে রাজাকাররা ধরে ফেলে। আহত দৌলত হোসেনকে রাজাকাররা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। রুহুল আমিনকেও একই ভাগ্য বরণ করতে হয়। ভারতের হলদিয়া নৌবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল মুক্তিবাহিনীর দুটি জাহাজ ‘পদ্মা’ ও ‘পলাশ’। পলাশ জাহাজে ছিলেন মো. দৌলত হোসেন মোল্লা। তিনি ছিলেন জাহাজের ক্রুম্যান। তাদের লক্ষ্য, খুলনায় পাকিস্তানি নৌঘাঁটি দখল করা। মুক্তিবাহিনীর দুটি জাহাজের সঙ্গে আছে মিত্রবাহিনীরও একটি জাহাজ। খুলনার রূপসা নদীতে শিপইয়ার্ডের কাছাকাছি আসামাত্র ঘটে সেই আকস্মিক বিপর্যয়। এ সময় আকাশ থেকে তিনটি জঙ্গি বিমান জাহাজগুলো লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ করতে থাকে। প্রথম ধাক্কাতেই বিধ্বস্ত হয় পদ্মা। পলাশের ইঞ্জিনরুমে আগুন ধরে যায়। একটু পর পলাশও ডুবে যায় ডেকে শহীদ নৌমুক্তিযোদ্ধাদের লাশ পড়ে ছিল। সে সময়ে গুরুতর আহত মো. দৌলত হোসেন মোল্লা অনেক কষ্টে পানিতে ঝাঁপ দেন। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২৪-০২-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ২২৭। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ১২৭। আইএসবিএন 9789849025375 

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]