বিষয়বস্তুতে চলুন

ইমারত শরিয়াহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা Anupamdutta73 (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৫:৩৩, ২১ জুলাই ২০২২ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

ইমারত শরিয়াহ
امارت شرعیہ
গঠিত১৯২১; ১০৩ বছর আগে (1921)
প্রতিষ্ঠাতাআবুল মুহাসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদ
আইনি অবস্থাধর্মীয় সংগঠন
উদ্দেশ্যশরিয়াহ আইনের প্রচার ও প্রসার, শিক্ষা, কল্যাণ, ত্রাণ, পুনর্বাসন
সদরদপ্তরফুলওয়ারী শরিফ, পাটনা, বিহার, ভারত
যে অঞ্চলে কাজ করে
ভারত-বিহার, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড
মহাসচিব
আনিসুর রহমান কাসেমি
আমিরে শরিয়ত
আহমদ ওয়ালি ফয়সাল রহমানি[]
প্রকাশনাসাপ্তাহিক নকিব
ওয়েবসাইটwww.imaratshariah.com

ইমারত শরিয়াহ (উর্দু: امارت شرعیہ‎‎; পূর্ণনাম: ইমারত শরিয়াহ বিহার, ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড) ভারতের একটি ইসলামি সংগঠন।[] ধরন অনুযায়ী এটি ভারতের অদ্বিতীয় সংগঠন।[] এর কার্যক্রম প্রধানত বিহার, ওড়িশাঝাড়খণ্ড জুড়ে বিস্তৃত। বিহারের রাজধানী পাটনার ফুলওয়ারী শরিফে এর প্রধান কেন্দ্র অবস্থিত। ১৯২১ সালে আবুল মুহাসিন মুহাম্মদ সাজ্জাদ ইসলামের মূল নীতি এবং শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠনের সাথে যুক্ত বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রয়েছেন: মুহাম্মদ আলি মুঙ্গেরি, মিন্নাতুল্লাহ রহমানি, ওয়ালি রহমানি, মুজাহিদুল ইসলাম কাসেমি, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

১৯২১ সালে আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনের মাধ্যমে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। সম্মেলনে বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশা থেকে বহু ইসলামি পণ্ডিত ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। তখন থেকে এই সংগঠনটি ইসলাম প্রচারের জন্য সেবা প্রদানের পাশাপাশি মুসলিমদের শরিয়াহ আইনের অধীনে সামষ্টিক জীবন পরিচালনার জন্য অনুপ্রাণিত ও নির্দেশনা প্রদান এবং শিক্ষা, কল্যাণ, ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:[]

  1. মুহাম্মদ (স.)-এর নির্দেশিত পথে ইসলামি জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যাতে মুসলিমরা ইসলামি আইনের কাঠামোর মধ্যে জীবনযাপন করে।
  2. যতদূর সম্ভব ইসলামি আইনের প্রয়োগ করা। তাদের মধ্যে প্রধান হল: বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার আইন ইত্যাদি।
  3. ইসলামি বিধান যথাসময়ে পালন করা যায় এবং মুসলমানদের মধ্যে ইসলামের বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর করা যায় এমন সম্ভাবনা সৃষ্টির জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো।
  4. মুসলমানদের সকল ইসলামি অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা ও দেখাশোনা করা।
  5. শরিয়তের প্রচার, প্রসার এবং মুসলিম উম্মাহকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে শরীয়তের পবিত্র আইন পালনে শিক্ষিত, অনুপ্রাণিত ও পথপ্রদর্শন করা।
  6. দলমত নির্বিশেষে মুসলমানদেরকে তাদের কালিমা "لا الٰہ الا الله محمد رسول الله" এর ভিত্তিতে কঠোরভাবে একত্রিত করা যাতে তারা আল্লাহর হুকুম এবং নবীর সুন্নত অনুসরণ করে এবং একমাত্র আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে তাদের সম্মিলিত শক্তিকে পরিচালনা করে।
  7. মুসলমানের পরিচয় রক্ষা ও সংরক্ষণ করা এবং ভারতের অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাথে ধর্মীয় সহনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণা প্রচার করা।
  8. দেশের শান্তিকামী শক্তিকে শক্তিশালী করা এবং সমানাধিকারের ভিত্তিতে ভারতে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অধিকারের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের বিকাশ ঘটানো।
  9. ভারতে বসবাসকারী জনগণের বিভিন্ন অংশের যেকোন একটিকে নির্মূল করার লক্ষ্যে যে কোনো একটি বিশেষ মতাদর্শ, ধর্ম এবং বিশ্বাসকে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া এমন প্রতিটি কাজ এবং অনুশীলন বা আন্দোলনকে নিরুৎসাহিত করা এবং নিন্দা করা।
  10. ভারতে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের জীবন, সম্পত্তি এবং সম্মানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং এর ফলে প্রত্যেকের মন থেকে সাম্প্রদায়িক ভিত্তি, বিভেদ ও অনৈক্য দূর করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এমন প্রতিটি সংগঠন এবং আন্দোলনের সাথে উদ্দীপনা ও সহযোগিতা করা।
  11. সাধারণ, কারিগরি ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অন্যান্য সেবা, দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত মানবতার উন্নতি ও ত্রাণের জন্য ফান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালানো।

বিভাগসমূহ

নিম্নোক্ত বিভাগসমূহের মাধ্যমে সংগঠন কর্তৃক গৃহীত সমগ্র কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রিত হয়:[]

  • সংগঠন বিভাগ
  • তাবলীগ বিভাগ
  • বিচার বিভাগ
  • ফতোয়া বিভাগ
  • শিক্ষা বিভাগ
  • আধুনিক ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ
  • প্রকাশনা বিভাগ
  • বায়তুল মাল

সংগঠন বিভাগ

এটি সংগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলির মধ্যে একটি। এই বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিম জনসংখ্যার জরিপ করা হয় এবং গ্রাম/মহল্লার সাথে পরামর্শ করে প্রতিটি গ্রামের জন্য আমীরে শরিয়ত কর্তৃক "নকিব" নামে একজন গ্রাম-প্রধান নিয়োগ করা হয়। নির্দিষ্ট গ্রামের মুসলমানদের একত্রিত রাখা, শরিয়াহ আইনের আলোকে ধর্মীয় ও অন্যান্য সমস্ত কার্যক্রমকে পরিচালনার জন্য জনসাধারণকে উদ্ভুদ্ধ করা তার প্রধান কাজ।

তাবলীগ বিভাগ

এটিও সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোর একটি। এর মাধ্যমে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে মুবাল্লিগরা ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকে। এই বিভাগের অধীনে এক শতাধিক বেতনভুক্ত মুবাল্লিগ রয়েছে।

বিচার বিভাগ

এই বিভাগ প্রতিষ্ঠা সংগঠনটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। একে দারুল কাজাও বলা হয়। এর প্রধান কেন্দ্র পাটনার ইমারত শরিয়াহ’র কার্যালয়ে অবস্থিত। একজন প্রধান কাজী ও ৬ জন অতিরিক্ত কাজীর মাধ্যমে এটি পরিচালিত হয়। বিহার, ঝাড়খন্ড ও ওড়িশার বিভিন্ন জেলায় এর ৫০টি শাখা রয়েছে। এই বিভাগে মুজাহিদুল ইসলাম কাসমি দীর্ঘ ৪০ বছর প্রধান কাজী ছিলেন। বর্তমানে জসিমউদ্দিন রহমানি প্রধান কাজী। দেশের ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বিচারব্যবস্থার তুলনায় স্বচ্ছ বিচারিক কাজের জন্য এটি বেশিরভাগ মুসলমানদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি কেন্দ্রে প্রায় ২০ হাজার এবং শাখাগুলোতে সমপরিমাণ মামলা নিষ্পত্তি করেছে। তবে দেশের বিচারব্যবস্থার সমান্তরাল আরেকটি বিচারিক প্রক্রিয়া চালানোর জন্য এটি সমালোচিত।[]

ফতোয়া বিভাগ

এই বিভাগে যোগ্যতা সম্পন্ন মুফতিদের মাধ্যমে মুসলমানদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান প্রদান করা হয়। এ পর্যন্ত এই বিভাগের মাধ্যমে প্রায় ৫ লক্ষ ফতোয়া জারি করা হয়েছে।

শিক্ষা বিভাগ

এটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে এবং এজাতীয় কাজের জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে।

আধুনিক ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগ

আধুনিক বিশ্বের চাহিদা মতে ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আধুনিক ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চতুর্থ আমিরে শরিয়ত মিন্নাতুল্লাহ রহমানির সময়ে এটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

প্রকাশনা বিভাগ

এই বিভাগের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় মুসলমান ও অমুসলিমদের মধ্যে জাগরণ আনতে মৌলিক ইসলামি জ্ঞান, শরিয়াহ আইন এবং অন্যান্য বিষয়ে পুস্তক-পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। সংগঠনের মুখপত্র সাপ্তাহিক নকিব এই বিভাগের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।

বায়তুল মাল

এটি সংগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। সংগঠনের জন্য ফান্ড সংগ্রহ, তা রক্ষণাবেক্ষণ ও বিতরণ করা এই বিভাগের কাজ।

সাংগঠনিক কাঠামো

সংগঠনের প্রধানকে বলা হয় আমিরে শরিয়ত, তার সহকারী হিসেবে থাকেন নায়েবে আমিরে শরিয়ত। সাংগঠনিক কাঠামোতে ৩টি বোর্ড রয়েছ। যথা:[]

  1. মজলিসে আরবাবে হল ওয়া আকদ
  2. মজলিসে শুরা
  3. মজলিসে আমলা

মজলিসে আরবাবে হল ওয়া আকদ

এটি সংগঠনের সর্বোচ্চ বোর্ড। বিশিষ্ট মুসলিম বুদ্ধিজীবী, উলামা, আইনবিদ এবং সামাজিক কর্মীদের সমন্বয়ে এটি গঠিত। এর সদস্য সংখ্যা ৮৫১ জন। সাধারণত দুই বছরের মধ্যে অন্তত একবার এর সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে আমিরে শরিয়ত প্রয়োজন অনুসারে এটি একাধিকবার আহ্বান করতে পারে।

মজলিসে শুরা

এই বোর্ডের প্রধান কাজ হল আয়-ব্যয় পরীক্ষা করা এবং বিভিন্ন দপ্তরের কাজকর্ম পর্যালোচনা করা এবং উন্নয়ন কাজ করা। এটি বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রমের বিষয়ে বাজেট এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা অনুমোদন করে। প্রতি বছরে অন্তত একবার এই বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়।

মজলিসে আমলা

৩১ জন সদস্য নিয়ে এই বোর্ড গঠিত। মজলিসে শূরা কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ দেখভাল করা এই বোর্ডের দায়িত্ব।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

উদ্ধৃতি

  1. "मौलाना अहमद वली फैसल रहमानी बने इमारते शरिया के आठवें अमीर, पहली बार हुई वोटिंग" [ইমারত শরিয়ার অষ্টম আমির আহমদ ওয়ালি ফয়সাল রহমানি]। জি নিউজ। ৯ অক্টোবর ২০২১। 
  2. খান, বদরে আলম (২০০০)। The Role Of Imarate Sharia In Development Of Muslim Personal Law In India [ভারতে মুসলিম ব্যক্তিগত আইনের বিকাশে ইমারত শরিয়ার ভূমিকা] (গবেষণাপত্র)। ভারত: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। hdl:10603/49839 
  3. আহমদ, ফারজানা (৭ নভেম্বর ২০১৩)। "Imarat-e-Sharia lands in controversy over Kuwaiti Sheikhs visit" [কুয়েতি শেখদের সফর নিয়ে বিতর্কে ইমারত শরিয়া]। ইন্ডিয়া টুডে 
  4. "লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য"ইমারত শরিয়াহ। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২২ 
  5. "বিভিন্ন বিভাগ"ইমারত শরিয়াহ। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২২ 
  6. অ্যাগনেস, ফ্লাভিয়া (১ আগস্ট ২০১৮)। "Darul Qaza row: A storm in a teacup"ডেকান ক্রনিকল 
  7. "সাংগঠনিক কাঠামো"ইমারত শরিয়াহ। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০২২ 

গ্রন্থপঞ্জি

  • আজহার, মোহাম্মদ (২০০৫)। Maulana Minnatullah Rahmani: Analytical Study Of His Life And Religio Intellectual Contributions [মাওলানা মিন্নাতুল্লাহ রাহমানি: তার জীবন এবং ধর্মীয় তাত্ত্বিক অবদানের বিশ্লেষণমূলক অধ্যয়ন]। ভারত: আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়। hdl:10603/57173 
  • সাজ্জাদ, মোহাম্মদ (২০১৪)। Muslim Politics in Bihar: Changing Contours [বিহারে মুসলিম রাজনীতি: রূপ পরিবর্তন] (ইংরেজি ভাষায়)। যুক্তরাজ্য: রাউটলেজআইএসবিএন 978-1-317-55982-5 

বহিঃসংযোগ