হিযবুত তাহরীর (বাংলাদেশ)
হিযবুত তাহরীর (বাংলাদেশ) حزب التحرير | |
---|---|
নেতা | বিশ্বনেতা, আতা আবু রাশতা |
প্রতিষ্ঠাতা | বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠাতা, তাকিউদ্দিন নাবহানি |
নিষিদ্ধ | ২২ অক্টোবর ২০০৯[১] |
ভাবাদর্শ | সর্ব-ইসলামবাদ ইসলামবাদ মুসলিম আধিপত্যবাদ খলিফালিজম সালাফিবাদ জিহাদিবাদ ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী পাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাব হিন্দুবিদ্বেষী মনোভাব খ্রিষ্টানবিদ্বেষী মনোভাব জাতীয়তাবাদ বিরোধী মনোভাব ইহুদি-বিদ্বেষ জায়নবাদ বিরোধী গণতন্ত্র বিরোধী উদারতাবাদ বিরোধী কমিউনিজম বিরোধী নারীবাদ বিরোধী "হিযবুত তাহরীর সংবিধান"[২] (স্ব-ঘোষিত) |
ধর্ম | সুন্নি ইসলাম |
আন্তর্জাতিক অধিভুক্তি | হিযবুত তাহরীর |
পতাকা | |
![]() | |
ওয়েবসাইট | |
https://ht-bangladesh.info/ | |
বাংলাদেশের রাজনীতি রাজনৈতিক দল নির্বাচন |
হিযবুত তাহরীর (আরবি: حزب التحرير) একটি আন্তর্জাতিক সর্ব-ইসলামবাদ এবং মৌলবাদী সংগঠন, যার বাংলাদেশে একটি শাখা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই সংগঠনটিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করেছে।[৩] এটি তার আন্তর্জাতিক সংগঠন হিযবুত তাহরীর এবং আঞ্চলিক শাখা হিযবুত তাহরীর সেন্ট্রাল এশিয়ার সাথে যুক্ত।[৪]
নেতৃত্ব
[সম্পাদনা]ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন বলে জানা গেছে । ২০০৯ সালে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাকে অবসরে যেতে বাধ্য করা হয়। তাকে ২০১৬ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযুক্ত করা হয়।[৫] মার্চ ২০১৭ সংগঠনের নেতা শফিউর রহমান ফারাবীকে ব্লগার ও ধর্মনিরপেক্ষ কর্মী অনন্ত বিজয় দাস হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।[৬] এই দলটির সরকার, নিরাপত্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।[৭]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১৯৯৩ সালে, ডঃ সৈয়দ গোলাম মওলা তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গিয়েছিলেন যেখানে তিনি হিযবুত তাহরীরের সাথে পরিচিত হন। লন্ডনে নাসিমুল গণি ও কাওসার শাহনেওয়াজের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। বাংলাদেশে ফিরে আসার পর তারা ২০০০ সালে ঢাকার ধানমন্ডির রোড ৬এ একটি কোচিং সেন্টারে স্থানীয় অফিস স্থাপন করে।[৮] 'হিযবুত তাহরীর' ২২ অক্টোবর ২০০৯-এ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। গোষ্ঠীটি বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং দেশে গণতন্ত্র সমর্থন করে না। নিষেধাজ্ঞার সময়, গ্রুপটি তার ঠিকানা এইচএম সিদ্দিক ম্যানশন, ৫৫/এ পুরানা পল্টন, ৪র্থ তলা, ঢাকা হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছিল।[৯][১০]
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যদের সাথে মিলে দলটি ২০১১ সালের বাংলাদেশ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছিল।[১১] ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি গ্রুপের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।[১২] ২০১৪ সালের অক্টোবরে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি মিছিল বের করার পর দলের সদস্যরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।[১৩] ১৫ জুন ২০১৬ এ গ্রুপের সদস্য গোলাম ফয়জুল্লাহ ফাহিমকে মাদারীপুরে এক হিন্দু কলেজ শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা করার পর গ্রেফতার করা হয়। "পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধের" পরে পুলিশ হেফাজতে তিনি মারা যান।[৮] গোষ্ঠীটি আটক সদস্যদের আইনি সহায়তা এবং সন্ত্রাসী হামলায় মারা গেলে তাদের পরিবারকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।[১৪] ২০১৬ সাল পর্যন্ত, গ্রুপের ৬৫০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল; যাদের মধ্যে ৪০০ জন জামিন পেতে সক্ষম হন। গোষ্ঠীটি মসজিদের বাইরে বিক্ষোভ পরিচালনা করে এবং এদের সুসংগঠিত অনলাইন উপস্থিতি রয়েছে।[৮]
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে, গ্রুপের ছয় সদস্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।[১৫] সংগঠনটি বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়োগের চেষ্টা করছে।[১৬] ২০১৬ সালের অক্টোবরে হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বলে।[১৭] বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকজন ছাত্র ও অধ্যাপককে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।[১৮] ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করার পর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নজর রেখেছিল।[১৯][২০] ২০১৫ সালে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে এই গোষ্ঠীটির লিফলেট পাওয়া যায়।[২১] ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ঢাকা হামলায় জড়িতদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে নর্থ সাউথের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গিয়াস উদ্দিন আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।[২২]
২০২৪–বর্তমান
[সম্পাদনা]২০২৪ সালে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, গোষ্ঠীটি তাদের প্রকাশ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।[২৩] ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) গোষ্ঠীটির ৩ সদস্যকে ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে।[২৪][২৫] তারা গোপনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় ‘মার্চ ফর খিলাফত’ র্যালির পরিকল্পনা করছিল।[২৫] পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা জুমার নামাজের পর একটি র্যালি বের করে এবং পল্টন থেকে বিজয়নগরের দিকে অগ্রসর হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে তারা এগিয়ে যেতে নিলেই পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।[২৬][২৭][২৮] ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়।[২৬][২৯]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Hizb ut Tahrir Bangladesh wants withdrawal of its ban"। New Age (Bangladesh)। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৪।
- ↑ Hizb ut-Tahrir (ফেব্রুয়ারি ২০১১)। The Draft Constitution of the Khilafah State (পিডিএফ)। Khilafah। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Hizb-ut-Tahrir man held in Jessore"। দৈনিক প্রথম আলো। ৪ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "24 'Islami Samaj members' sent to jail"। ঢাকা ট্রিবিউন। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Hizb ut-Tahrir Bangladesh coordinator Mohiuddin, five others indicted"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Farabi charged in Ananta Bijoy murder case"। ঢাকা ট্রিবিউন। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Banned Hizb ut-Tahrir now prefers direct action"। archive.dhakatribune.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ ক খ গ "Did Hizb ut-Tahrir enjoy impunity?"। archive.dhakatribune.com (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Hizb ut-Tahrir banned"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ অক্টোবর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Bangladesh Islamist group banned"। news.bbc.co.uk। ২৩ অক্টোবর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Who is militant Zia?"। ঢাকা ট্রিবিউন। ৩ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Hizb-ut Tahrir coordinator, 5 others indicted"। ঢাকা ট্রিবিউন। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Hizb-ut Tahrir, police clash at Mohammadpur"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Hizb ut-Tahrir funding families of attackers"। archive.dhakatribune.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Dhaka University expels seven members of Hizb ut-Tahrir"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Hizb-ut-Tahrir making a comeback"। archive.dhakatribune.com (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Wider support for Rohingya terrorists hints at further attacks"। ঢাকা ট্রিবিউন। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "The infrastructure of terror in Bangladesh"। www.dailypioneer.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Spotlight on private universities after ISIS attack"। universityworldnews.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Modern Dhaka varsity battles terror shadow"। The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "Govt alert about goings-on in North South University, says Nahid"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "NSU promises to uproot militancy after students' link with deadly Bangladesh terror attacks"। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "হিযবুত তাহ্রীর: নিষিদ্ধ সংগঠন প্রকাশ্যে কাজ করছে, কী বলছে সরকার?"। BBC News বাংলা। ২০২৪-০৯-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮।
- ↑ "ঢাকার উত্তরা থেকে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্রীরের তিনজন গ্রেপ্তার"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮।
- ↑ ক খ "রাজধানীতে হিযবুত তাহরীরের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮।
- ↑ ক খ "হিজবুত তাহরীরের মিছিল পুলিশের টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ"। BBC News বাংলা। ২০২৫-০৩-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮।
- ↑ "পল্টনে নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্রীরের মিছিল ছত্রভঙ্গ, পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮।
- ↑ "নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহরীরের 'মার্চ ফর খিলাফত', পুলিশের টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮।
- ↑ "হিযবুত তাহরীরের মিছিল থেকে আটক ১০"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮।