বিষয়বস্তুতে চলুন

হিযবুত তাহরীর (বাংলাদেশ)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হিযবুত তাহরীর (বাংলাদেশ)
حزب التحرير
নেতাবিশ্বনেতা, আতা আবু রাশতা
প্রতিষ্ঠাতাবৈশ্বিক প্রতিষ্ঠাতা, তাকিউদ্দিন নাবহানি
নিষিদ্ধ২২ অক্টোবর ২০০৯; ১৫ বছর আগে (2009-10-22) []
ভাবাদর্শসর্ব-ইসলামবাদ
ইসলামবাদ
মুসলিম আধিপত্যবাদ
খলিফালিজম
সালাফিবাদ
জিহাদিবাদ
ধর্মনিরপেক্ষতা বিরোধী
পাশ্চাত্য বিরোধী মনোভাব
হিন্দুবিদ্বেষী মনোভাব
খ্রিষ্টানবিদ্বেষী মনোভাব
জাতীয়তাবাদ বিরোধী মনোভাব
ইহুদি-বিদ্বেষ
জায়নবাদ বিরোধী
গণতন্ত্র বিরোধী
উদারতাবাদ বিরোধী
কমিউনিজম বিরোধী
নারীবাদ বিরোধী
"হিযবুত তাহরীর সংবিধান"[] (স্ব-ঘোষিত)
ধর্মসুন্নি ইসলাম
আন্তর্জাতিক অধিভুক্তিহিযবুত তাহরীর
পতাকা
Flag of Hizb ut-Tahrir
ওয়েবসাইট
https://ht-bangladesh.info/
বাংলাদেশের রাজনীতি
রাজনৈতিক দল
নির্বাচন

হিযবুত তাহরীর (আরবি: حزب التحرير) একটি আন্তর্জাতিক সর্ব-ইসলামবাদ এবং মৌলবাদী সংগঠন, যার বাংলাদেশে একটি শাখা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই সংগঠনটিকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করেছে।[] এটি তার আন্তর্জাতিক সংগঠন হিযবুত তাহরীর এবং আঞ্চলিক শাখা হিযবুত তাহরীর সেন্ট্রাল এশিয়ার সাথে যুক্ত।[]

নেতৃত্ব

[সম্পাদনা]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন বলে জানা গেছে । ২০০৯ সালে সংগঠনটি নিষিদ্ধ হওয়ার পর তাকে অবসরে যেতে বাধ্য করা হয়। তাকে ২০১৬ সালে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযুক্ত করা হয়।[] মার্চ ২০১৭ সংগঠনের নেতা শফিউর রহমান ফারাবীকে ব্লগার ও ধর্মনিরপেক্ষ কর্মী অনন্ত বিজয় দাস হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।[] এই দলটির সরকার, নিরাপত্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

১৯৯৩ সালে, ডঃ সৈয়দ গোলাম মওলা তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডনে গিয়েছিলেন যেখানে তিনি হিযবুত তাহরীরের সাথে পরিচিত হন। লন্ডনে নাসিমুল গণি ও কাওসার শাহনেওয়াজের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। বাংলাদেশে ফিরে আসার পর তারা ২০০০ সালে ঢাকার ধানমন্ডির রোড ৬এ একটি কোচিং সেন্টারে স্থানীয় অফিস স্থাপন করে।[] 'হিযবুত তাহরীর' ২২ অক্টোবর ২০০৯-এ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। গোষ্ঠীটি বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং দেশে গণতন্ত্র সমর্থন করে না। নিষেধাজ্ঞার সময়, গ্রুপটি তার ঠিকানা এইচএম সিদ্দিক ম্যানশন, ৫৫/এ পুরানা পল্টন, ৪র্থ তলা, ঢাকা হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছিল।[][১০]

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যদের সাথে মিলে দলটি ২০১১ সালের বাংলাদেশ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছিল।[১১] ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি গ্রুপের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।[১২] ২০১৪ সালের অক্টোবরে ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি মিছিল বের করার পর দলের সদস্যরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।[১৩] ১৫ জুন ২০১৬ এ গ্রুপের সদস্য গোলাম ফয়জুল্লাহ ফাহিমকে মাদারীপুরে এক হিন্দু কলেজ শিক্ষককে হত্যার চেষ্টা করার পর গ্রেফতার করা হয়। "পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধের" পরে পুলিশ হেফাজতে তিনি মারা যান।[] গোষ্ঠীটি আটক সদস্যদের আইনি সহায়তা এবং সন্ত্রাসী হামলায় মারা গেলে তাদের পরিবারকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।[১৪] ২০১৬ সাল পর্যন্ত, গ্রুপের ৬৫০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল; যাদের মধ্যে ৪০০ জন জামিন পেতে সক্ষম হন। গোষ্ঠীটি মসজিদের বাইরে বিক্ষোভ পরিচালনা করে এবং এদের সুসংগঠিত অনলাইন উপস্থিতি রয়েছে।[]

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে, গ্রুপের ছয় সদস্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।[১৫] সংগঠনটি বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়োগের চেষ্টা করছে।[১৬] ২০১৬ সালের অক্টোবরে হিযবুত তাহরীর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বলে।[১৭] বাংলাদেশের নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকজন ছাত্র ও অধ্যাপককে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।[১৮] ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করার পর সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নজর রেখেছিল।[১৯][২০] ২০১৫ সালে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিতে এই গোষ্ঠীটির লিফলেট পাওয়া যায়।[২১] ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ঢাকা হামলায় জড়িতদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে নর্থ সাউথের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর গিয়াস উদ্দিন আহসানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।[২২]

২০২৪–বর্তমান

[সম্পাদনা]

২০২৪ সালে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, গোষ্ঠীটি তাদের প্রকাশ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।[২৩] ২০২৫ সালের মার্চ মাসে, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) গোষ্ঠীটির ৩ সদস্যকে ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করে।[২৪][২৫] তারা গোপনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় ‘মার্চ ফর খিলাফত’ র‍্যালির পরিকল্পনা করছিল।[২৫] পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা জুমার নামাজের পর একটি র‍্যালি বের করে এবং পল্টন থেকে বিজয়নগরের দিকে অগ্রসর হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা উপেক্ষা করে তারা এগিয়ে যেতে নিলেই পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।[২৬][২৭][২৮] ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজন কর্মীকে আটক করা হয়।[২৬][২৯]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Hizb ut Tahrir Bangladesh wants withdrawal of its ban"New Age (Bangladesh)। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০২৪ 
  2. Hizb ut-Tahrir (ফেব্রুয়ারি ২০১১)। The Draft Constitution of the Khilafah State (পিডিএফ)। Khilafah। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৭ 
  3. "Hizb-ut-Tahrir man held in Jessore"দৈনিক প্রথম আলো। ৪ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  4. "24 'Islami Samaj members' sent to jail"ঢাকা ট্রিবিউন। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  5. "Hizb ut-Tahrir Bangladesh coordinator Mohiuddin, five others indicted"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  6. "Farabi charged in Ananta Bijoy murder case"ঢাকা ট্রিবিউন। ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  7. "Banned Hizb ut-Tahrir now prefers direct action"archive.dhakatribune.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  8. "Did Hizb ut-Tahrir enjoy impunity?"archive.dhakatribune.com (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  9. "Hizb ut-Tahrir banned"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ অক্টোবর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  10. "Bangladesh Islamist group banned"news.bbc.co.uk। ২৩ অক্টোবর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  11. "Who is militant Zia?"ঢাকা ট্রিবিউন। ৩ আগস্ট ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  12. "Hizb-ut Tahrir coordinator, 5 others indicted"ঢাকা ট্রিবিউন। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  13. "Hizb-ut Tahrir, police clash at Mohammadpur"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  14. "Hizb ut-Tahrir funding families of attackers"archive.dhakatribune.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  15. "Dhaka University expels seven members of Hizb ut-Tahrir"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  16. "Hizb-ut-Tahrir making a comeback"archive.dhakatribune.com (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  17. "Wider support for Rohingya terrorists hints at further attacks"ঢাকা ট্রিবিউন। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  18. "The infrastructure of terror in Bangladesh"www.dailypioneer.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  19. "Spotlight on private universities after ISIS attack"universityworldnews.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  20. "Modern Dhaka varsity battles terror shadow"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  21. "Govt alert about goings-on in North South University, says Nahid"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  22. "NSU promises to uproot militancy after students' link with deadly Bangladesh terror attacks"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০১৭ 
  23. "হিযবুত তাহ্‌রীর: নিষিদ্ধ সংগঠন প্রকাশ্যে কাজ করছে, কী বলছে সরকার?"BBC News বাংলা। ২০২৪-০৯-১৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮ 
  24. "ঢাকার উত্তরা থেকে নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্‌রীরের তিনজন গ্রেপ্তার"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮ 
  25. "রাজধানীতে হিযবুত তাহরীরের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার"সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮ 
  26. "হিজবুত তাহরীরের মিছিল পুলিশের টিয়ারশেল ও সাউন্ডগ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ"BBC News বাংলা। ২০২৫-০৩-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮ 
  27. "পল্টনে নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহ্‌রীরের মিছিল ছত্রভঙ্গ, পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড"Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮ 
  28. "নিষিদ্ধঘোষিত হিযবুত তাহরীরের 'মার্চ ফর খিলাফত', পুলিশের টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ"সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮ 
  29. "হিযবুত তাহরীরের মিছিল থেকে আটক ১০"Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৩-০৮