হারিস ইবনে হিশাম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আল-হারিস ইবনে হিশাম ইবনে আল-মুঘিরা ইবনে আবদুল্লাহ (মৃত্যু: ৬৩৪, ৬৩৬ অথবা ৬৩৯ খ্রিস্টাব্দ) মুহাম্মদ এর একজন সাহাবী, বনু মাখজুমের এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি এবং তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সিরিয়ায় মুসলিম বিজয় অভিযানের সদস্য ছিলেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

আল-হরিস মক্কার বনু মাখজুম গোত্রের বিশিষ্ট প্রাক-ইসলামিক কুরাইশ হিশাম ইবনে আল-মুগিরার ছেলে ছিলেন।[১] হারিসের ভাই ছিলেন আবু জাহল ৬২৪ সালে বদরের যুদ্ধে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইসলামের নবী মুহাম্মদের বিরোধীদের নেতা ছিল।[২] আল-হরিস বদর যুদ্ধের পর ৬২৭ সালে মদিনার নিকটে উহুদের যুদ্ধেও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।[৩] আল-হরিস ৬২৯/৩০ সালে মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন।[২] পরবর্তীকালে তিনি ৬৩০ সালে হুনাইনের যুদ্ধে আরব মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুসলিম সেনাবাহিনী পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং সেই যুদ্ধ থেকে তার যুদ্ধে অংশীদার হওয়া শুরু হয়েছিল।[৩]

আল-হরিস সিরিয়ায় মুসলিম বিজয়ে অংশ নিয়েছেন,[২] এরপর একের পর এক প্যালেস্টাইনের আজনাদায়নের যুদ্ধ এবং ট্রান্সজর্ডানে ফাহলের যুদ্ধে লড়াই করেছেন, উভয় যুদ্ধই ৬৩৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়। তিনি ৬৩৬ সালে ইয়ারমুকের যুদ্ধে তাঁর চাচাত ভাই খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেছিলেন।[৩] ৬৩৭ সালে খলিফা উমর হরিসকে তুলনামূলকভাবে দেরিতে ইসলাম গ্রহণের কারণে সেনাবাহিনীতে অন্যদের চেয়ে কম বেতন প্রদান করেন। তার এই বেতনে অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি পরিবারের সত্তরজন সদস্যকে সাথে নিয়ে সিরিয়ায় নিজেকে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন।[৪] তাঁর মৃত্যুর তারিখ এবং কারণ সম্পর্কে ঐতিহ্যবাহী ইসলামী সূত্রের বিবরণগুলি ভিন্ন হয়, বেশ কয়েকটি সূত্র মতে তিনি ৬৩৪ সালে আজনাদায়নের যুদ্ধে মারা যান বা ৬৩৬ সালে ইয়ারমুকের যুদ্ধে, অন্যদিকে অন্যরা মনে করেন তিনি ৬৩৯ সালে আমওয়াসের প্লেগ মহামারীতে মারা যান।[২][৩][৫] যাই হোক, শেষ তারিখের মধ্যে তার পরিবারের সত্তর সদস্যদের মধ্যে দু-চারজন ছাড়া বাকি সবাই সিরিয়ায় যুদ্ধে বা প্লেগের কারণে মারা যায়।[৬]

বংশধর[সম্পাদনা]

আল-হরিসের বেঁচে থাকা কয়েকজন পুত্রের মধ্যে একজন আবদুল রহমানকে উমর পুনরায় মদীনায় নিয়ে আসেন, তাদের আরেকজন হরিসের কন্যা উম্মে হাকিম ছিলেন এবং তাকে জমি বরাদ্দ দিয়ে সম্মানীত করা হয়েছিল।[৬] তিনি মদীনায় মাখজুমের একটি প্রভাবশালী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তার তেরো বা চৌদ্দজন পুত্র এবং আঠারোজন মেয়ে ছিল।[৬] প্রথমদ্বিতীয় মুসলিম গৃহযুদ্ধ চলাকালীন খিলাফত নিয়ন্ত্রণের প্রতিদ্বন্দ্বী উমাইয়াযুবাইর[৬] উভয় কুরাইশ পরিবার মাখজুমের অন্যান্য পরিবারের পাশাপাশি এই পরিবারের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Hinds 1991, পৃ. 137–138।
  2. Blankinship 1993, পৃ. 97, note 529।
  3. Friedmann 1992, পৃ. 200, note 751।
  4. Hinds 1991, পৃ. 138–139।
  5. Hitti 1916, পৃ. 175, 215।
  6. Hinds 1991, পৃ. 139।

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • ব্লাঙ্কিনশিপ, খালিদ ইয়াহিয়া, সম্পাদনা (১৯৯৩)। আল-তাবারীর ইতিহাস, একাদশ খণ্ড: সাম্রাজ্যের দাবি। নিকট প্রাচ্য গবেষণার সুনি সিরিজ। আলবেনি, নিউ ইয়র্ক: স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক প্রেস। আইএসবিএন 978-0-7914-0851-3।
  • ফ্রিডম্যান, ইয়োহানান, সম্পাদনা (১৯৯২)। আল-তাবারীর ইতিহাস, দ্বাদশ খণ্ড: আল-কাদিসিয়াহর যুদ্ধ এবং সিরিয়া ও ফিলিস্তিন বিজয়। নিকট প্রাচ্য গবেষণার সুনি সিরিজ। আলবেনি, নিউ ইয়র্ক: স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক প্রেস। আইএসবিএন 978-0-7914-0733-2।
  • হিন্ডস, এম. (১৯৯১)। "মাখজুম"। বসওয়ার্থে, সি. ই.; ভ্যান ডোনজেল, ই. এবং পেল্যাট, সিএইচ. (সম্পাদনা)। দ্য এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইসলাম, নতুন সংস্করণ, ষষ্ঠ খণ্ড: মাহক – মিড. লেডেন: ই. জে. ব্রিল। পৃষ্ঠা ১৩৭-১৪০। আইএসবিএন 90-04-08112-7।