সাইফুল আজম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গ্রুপ ক্যাপ্টেন
সাইফুল আজম
পাবনা-৩ আসনের
পঞ্চম জাতীয় সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
৫ এপ্রিল ১৯৯১ – ২৪ নভেম্বর ১৯৯৫
পূর্বসূরীএ কে এম সামসুদ্দিন
উত্তরসূরীসাইফুল আজম
পাবনা-৩ আসনের
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ সদস্য
কাজের মেয়াদ
১৯ মার্চ ১৯৯৬ – ৩০ মার্চ ১৯৯৬
পূর্বসূরীসাইফুল আজম
উত্তরসূরীওয়াজি উদ্দিন খান
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1941-09-11) ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ (বয়স ৮২)
ফরিদপুর, পাবনা, বাংলা প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান রাজশাহী, বাংলাদেশ)
মৃত্যু১৪ জুন ২০২০(2020-06-14) (বয়স ৭৮)
সামরিক হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ
সমাধিস্থলশাহীন কবরস্থান, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা, বাংলাদেশ[১]
জাতীয়তাবাংলাদেশি
রাজনৈতিক দলবাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
পুরস্কার সিতারা-ই-জুরাত[২]
ওয়াসাম আল-ইস্তিকলাল[২]
নুত আস-সিহাজিয়াহ্ (২০০৫ সালে ইরাক প্রদত্ত)[২]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঈগল ফাউন্ডেশন সম্মেলন কর্তৃক "ঈগল" উপাধিতে ভূষিত।
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
শাখা পাকিস্তান বিমানবাহিনী
 বাংলাদেশ বিমানবাহিনী
কাজের মেয়াদ১৯৬০–১৯৭৯
পদ গ্রুপ ক্যাপ্টেন
ইউনিট১৭ নং স্কোয়াড্রন
যুদ্ধভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫
ছয় দিনের যুদ্ধ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ


সাইফুল আজম (১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ –১৪ জুন ২০২০) ছিলেন বাংলাদেশী আকাশযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ। তিনি কর্মজীবনে পাকিস্তান, জর্ডান, ইরাক ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সম্মুখ সমরের যোদ্ধা প্রশিক্ষক, উপদেষ্ঠা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ ও ১৯৬৭ সালের তৃতীয় আরব-ইসরায়েলি ছয় দিনের যুদ্ধে অংশ চারটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করার রেকর্ডধারী, যা ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর বিরুদ্ধে একক যোদ্ধা হিসেবে সর্বাধিক বিমান ধ্বংসের রেকর্ড।[৩][৪][৫] ১৯৭১ সালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এখন পর্যন্ত তিনিই একমাত্র বৈমানিক যিনি সর্বোচ্চ চারটি দেশের বিমানবাহিনীতে চাকরি ও তিনটি দেশের বিমানবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।[৬][৭][৮] বৈমানিক হিসেবে অসামান্য অবদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিমানবাহিনী তাঁকে বিশ্বের ২২ জন লিভিং ঈগলের (জীবন্ত ঈগল) একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং তিনি বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র "লিভিং ঈগল" উপাধি পাওয়া বৈমানিক।[৯][৪][৬][১০]

সাইফুল আজম বাংলাদেশের পাবনা-৩ আসন থেকে পঞ্চমষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে দুবার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সভাপতি এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

সাইফুল আজম ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার পাবনা জেলার খলিশাদহ-খাগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১১] তার পিতার নাম নুরুল আমিন।[১২] বাবার কর্মসূত্রে তাঁর ছোটবেলা কেটেছিল কলকাতায়। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় তার পরিবার ফিরে আসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। ১৫ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে, ১৯৫৬ সালে উচ্চতর শিক্ষার জন্য পশ্চিম পাকিস্তান যান।[১৩] ১৯৫৮ সালে তিনি ভর্তি হন পাকিস্তান এয়ার ফোর্স ক্যাডেট কলেজে। দুই বছর পর ১৯৬০ সালে তিনি পাইলট অফিসার হয়ে শিক্ষা সম্পন্ন করেন। একই বছর তিনি জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে যোগ দেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে[১৪]

পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে অবদান (১৯৬০-১৯৭১)[সম্পাদনা]

সাইফুল আজমের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ হয় মার্কিন সেনাদের প্রশিক্ষণ বিমান সেসনা টি-৩৭ বিমান দিয়ে। প্রশিক্ষণ ও অ্যারিজোনার লুক এয়ার ফোর্স বেসে এফ-৮৬ সেব্রেসের উপর উচ্চ প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন। এই কোর্সে তিনি সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে টপ গান হিসেবে পাশ করেন। আরও পড়াশোনার পর ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ঢাকার কেন্দ্রে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি করাচির মৌরিপুর মাশরুর বিমানঘাঁটিটি-৩৩ বিমানের প্রশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। প্রশিক্ষক থাকাকালীন ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাইফুল আজম পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের হয়ে যোগ দেন[১১][১৫]। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফ্লাইট অফিসার বিজয় মায়াদেবের বিমানকে তিনি ভূপাতিত করেন। পরে বিজয় মায়াদেবকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক করা হয়। ফলে তাকে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক পদক সিতারা–ই–জুরাত প্রদান করা হয়।[১৪] ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ২য় স্কোয়াড্রনের কমান্ড লাভ করেন।

১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে জর্দানের বিমানবাহিনী রয়্যাল জর্দানিয়ান এয়ার ফোর্সে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে যান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম। প্রতিনিধি পাঠানো দুজন পাকিস্তানি অফিসারের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন। অন্যজন ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম. সরোয়ার শাদ। সেখানে তিনি জর্দানের বিমানবাহিনীতে উপদেষ্টা হিসেবে পাইলটদের প্রশিক্ষণের কাজ করেন।

১৯৬৭ সালের ৫ জুন তৃতীয় আরব-ইসরায়েলি ছয়দিনের যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ করে মিশরীয় বিমান বাহিনীর সব বিমান অচল করে দেয়। ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলা থেকে জর্দানের মূল বেস মাফরাকের প্রতিরক্ষার জন্য তাকে ডাকা হয়। সেসময় জর্দান বিমানবাহিনীর হয়ে সাইফুল আজম হকার হান্টার বিমান নিয়ে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর আক্রমণের আগমূহুর্তে জর্দানের বিমান বাহিনীর পক্ষে উড্ডয়ন করেন। তিনি অসামান্য দক্ষতা এবং সাহসিকতার দৃষ্টান্ত রেখে তার বিমানের চেয়ে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির দুইটি ইসরায়েলি মিরাজ ফাইটার বিমান ভূপাতিত করেন[১৬]

দুইদিন পর তাকে ইরাকে জরুরি ভিত্তিতে বদলি করে পাঠানো হয়[১৭]। তিনি ইরাকি বিমান বাহিনীর হয়ে ইসরায়েলি ফাইটারের মোকাবেলা করেন এবং ডগ ফাইটে একটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করেন। বিমানঘাঁটি আক্রমণের সময় তিনি পশ্চিম ইরাকে ছিলেন। ইসরায়েলি পাইলট ক্যাপ্টেন গিডিওন ড্রোর সাইফুল আজমের উইংমেনসহ দুজন ইরাকি যোদ্ধাকে গুলি করতে সক্ষম হন, এর বিপরীতে সাইফুল আজম তাকে গুলি করতে সক্ষম হন। তিনি ক্যাপ্টেন গোলানের বোমারু বিমানকেও ভূপাতিত করতে সক্ষম হন[১৮]। পরে দুই ইসরায়েলি বৈমানিককে যুদ্ধবন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়[৪][১৬]

এটি একটি রেকর্ড। দুই দিনের ব্যপ্তিতে তিনি দুইটি ভিন্ন স্থানে আক্রমণ পরিচালনা করে ৪টি ইসরায়েলি ভূপাতিত করেন। এজন্য তাকে জর্দানের অর্ডার অব ইস্তিকলাল ও ইরাকি সাহসিকতা পদক নুত আল সুজাত প্রদান করা হয়।[১১]

১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন। পাকিস্তানে ফেরার পর ১৯৬৯ সালে শেনিয়াং এফ-৬ জঙ্গি বিমানের ফ্লাইট কমান্ডার হন সাইফুল আজম । এরপর পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ফাইটার লিডারস স্কুল-এর ফ্লাইট কমান্ডারের দায়িত্ব নেন তিনি।[১৯]

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে অবদান (১৯৭১-১৯৭৯)[সম্পাদনা]

সাইফুল আজম ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের প্রশিক্ষক।[৯] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত সময় ফ্লাইট কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার আগেই আজম নিজেও পাকিস্তান এয়ারলাইন্স ও বিমান বাহিনীতে তার সহকর্মী বাঙালিদের সাথে গোপনে পরিকল্পনা করছিলেন করাচি থেকে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের একটি জেটবিমান ছিনতাই করার। পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চের ৬ তারিখেই তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ঢাকায়। পরবর্তীকালে সে পরিকল্পনা আর সফল করতে পারেন নি।[১২]

১৯৭১ সালে সাইফুল আজম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের শুরুতেই তাঁর ওপর পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে সাময়িকভাবে উড্ডয়নে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের টি-৩৩ জঙ্গী বিমান নিয়ে পালিয়ে যাবার সময় মতিউর শহীদ হবার পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা সাইফুল আজমকে রিমান্ডে নেয় এবং টানা ২১ দিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।[১২] মতিউর রহমানের মৃত্যুর পরপর তাকে তার ব্যাচমেট পাকিস্তানি অফিসার সেসিল চৌধুরী বন্দি করে নিয়ে যান এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত অজ্ঞাত স্থানে বন্দি করে রাখেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন[২০] এবং ১৯৭৭ সালে উইং কমান্ডার পদে উন্নীত হন। তাকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঢাকা ঘাঁটির অধিনায়ক করা হয়েছিল। বিমান বাহিনীতে ডিরেক্টর অব ফ্লাইট সেফটি ও ডিরেক্টর অব অপারেশন্স হিসেবে যোগ দেন[২১]। এরপর তিনি ঢাকা বিমানঘাঁটির কমান্ড লাভ করেন এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন তিনি[২২]

তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ক্যাব) চেয়ারম্যান হিসেবে দুইবার দায়িত্ব পালন করেন[১৩]। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (এফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন[২২]

এছাড়াও তিনি নাতাশা ট্রেডিং এজেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে ও নিজ স্ত্রীর সাথে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ব্যবসায় যোগ দেন।[১১]

রাজনৈতিক জীবন[সম্পাদনা]

সাইফুল আজম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হয়ে রাজনীতি করতেন। তিনি পাবনা-৩ আসন থেকে (চাটমোহর উপজেলা, ফরিদপুর উপজেলাভাঙ্গুরা উপজেলা) পঞ্চম ও ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।[২৩]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম (মেয়াদ ২০০২-২০০৭) সম্পর্কে তাঁর চাচাত ভাই ছিলেন[২৪]। সাইফুল আজম নিশাত আজমকে বিবাহ করেন। নিশাত আজম একজন আইনজীবী। তার পুত্র এবং কন্যা সন্তান ছিলো[২৫][২৬]

কৃতিত্ব[সম্পাদনা]

সাইফুল আজম একমাত্র সামরিক পাইলট, যিনি যুদ্ধে চারটি বিমান বাহিনীর (বাংলাদেশ, জর্দান, ইরাকপাকিস্তান) হয়ে কাজ করেছেন।[২৭][২৮] সেই সঙ্গে দুইটি ভিন্ন প্রতিপক্ষের (ভারতইসরায়েল) বিরুদ্ধে লড়াই করার অনন্য কৃতিত্ব রয়েছে তার।[১৪] ২০১২ সালে পাকিস্তান সরকারের মতে যেকোনো পাইলটের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করার রেকর্ড তার রয়েছে।[১৪] তিনি মোট চারটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেন, যা এখন পর্যন্ত যেকোনো পাইলটের জন্য সর্বোচ্চ[৪][২৯]

  • ১৯৬১ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার লুক এয়ার ফোর্স বেস থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর মার্কিন বিমান বাহিনী সাইফুল আজমকে টপ গান উপাধি দেয়।[৩০][৩১]
  • ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কৃতিত্বের পুরস্কার স্বরূপ পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক পদক সিতারা–ই–জুরাত পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
  • একক ব্যক্তি হিসেবে আকাশপথের যুদ্ধের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করার কৃতিত্ব স্বরূপ জর্দান থেকে তাকে হুসাম-ই-ইস্তিকলাল সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
  • ১৯৬৭ সালে ছয়দিনের যুদ্ধে কৃতিত্ব স্বরূপ ইরাকি সাহসিকতা পদক নুত-আল-শুজাত পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাকে।
  • যুদ্ধক্ষেত্রে অনন্য সব অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে সাইফুল আজমকে ২০০১ সালে মার্কিন বিমান বাহিনী বিশ্বের ২২ জন লিভিং ঈগলসের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।[৩২][৩৩]

সাইফুল আজমের আটটি দেশের আটটি পৃথক বিমান বাহিনীতে পরিচালনার প্রশংসাপত্র রয়েছে। দেশগুলো হলো, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জর্দান, ইরাক, রাশিয়া, চীন এবং বাংলাদেশ।[৩৪]

মৃত্যু ও প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

সাইফুল আজম ২০২০ সালের ১৪ই জুন দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় (সিএমএইচ) মৃত্যুবরণ করেন।[২৯][২৩]

ফিলিস্তিনের ইতিহাসবিদ ওসামা আল-আশ্কার প্রশংসা করে বলেন, “তিনি ছিলেন একজন মহান বৈমানিক”। তিনি আরো বলেন, “জেরুজালেমের পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদকে প্রতিরোধ ও রক্ষার জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ভ্রাতৃদ্বয় আমাদের অংশীদার ছিলো”। ফিলিস্তিনি অধ্যাপক নাজি শৌকরি বলেন, “সাইফুল আজম ফিলিস্তিনকে ভালোবাসতেন এবং জেরুজালেমের স্বার্থে লড়াই করেছিলেন”। খ্যাতনামা ফিলিস্তিনি সাংবাদিক তামির আল মিশাল তাকে “আকাশের ঈগল” বলে অভিহিত করেন[৪][৩৫]

১৫ জুন ২০২০, সোমবার দুপুর পৌনে ২টায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার এর প্যারেড গ্রাউন্ডে (বিগটপ হ্যাঙ্গার) সাইফুল আজমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।[৩৬] জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শাহীন কবরস্থানে তার মরদেহ সমাহিত করা হয় এবং একটি যুদ্ধবিমানের ফ্লাইপাস্ট আয়োজন করা হয়।[২৬]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. আইএসপিআর (১৫ জুন ২০২০)। "RETIRED AIR FORCE OFFICER BURIED AT SHAHEEN GRAVEYARD AFTER NAMAJ-E-ZANAJA – ISPR-আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর, বাংলাদেশ"আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ জুলাই ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২৩ 
  2. world, Fighter jets (১৪ জুন ২০২০)। "Group Captain (R) Saiful Azam: The Flying Ace Who Has Been Awarded Gallantry Awards For Valor In Air Combat By 3 Different Countries"ফাইটার জেটস্ ওয়ার্ল্ড (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২৩ 
  3. "'লিভিং ঈগল' গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম আর নেই"Jugantor.com। ১৪ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  4. "Palestinians mourn death of a Bangladeshi war hero"আল জাজিরা (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০২৩ 
  5. হোসেইন, ইমরান (২০২০-০৬-১৯)। "A portrait of an eagle as a young man" [একজন যুবক 'ঈগলের' প্রতিকৃতি]। ঢাকা ট্রিবিউন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১২-২৪During the Six-Day War, he was the only pilot to have downed four Israeli fighter jets 
  6. "'The sky was his home': Bangladeshi pilot's wife remembers the war hero and the man"আরব নিউজ (ইংরেজি ভাষায়)। ১২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০২৩ 
  7. হোসেন, এম সাখাওয়াত (১৮ জুন ২০২০)। "'লিভিং ইগল'-এর বিদায়"প্রথম আলো। ১২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০২৩ 
  8. "সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছিলেন বাংলাদেশি সাইফুল আজম"কালের কণ্ঠ। ১৮ মে ২০২১। ১২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০২৩ 
  9. "'লিভিং ইগলস' সাইফুল আজমের বিদায়"Prothomalo.com। ১৪ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  10. "Prince Hassan mourns renowned fighter pilot Saiful Azam"দ্য জর্ডান টাইমস্ (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ জুন ২০২০। ১২ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০২৩ 
  11. "The Air University 404 Page"। ১২ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  12. "WHEN THE DEVIL DARED"bangladeshdefencejournal.com। জুন ২০১৫। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২০ 
  13. "লিভিং ঈগল সাইফুল আজম আর নেই"banglanews24.com। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  14. "PAKISTAN AIR FORCE – Official website"। ১৭ জুলাই ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  15. "BAF HISTORY"www.baf.mil.bd। ১৬ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুন ২০২০ 
  16. "Saiful Azam"military.wikia.org। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২০ 
  17. "চলে গেলেন 'লিভিং ঈগল' সাইফুল আজম"www.ittefaq.com.bd। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  18. "Tribute: Masters of the sky"Dawn.com। ২০১৫-০৮-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৯-০৫ 
  19. "Welcome to the Air Command and Staff College Gathering of Eagles Homepage!"Au.af.mil। ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-১২ 
  20. "ইসরাইলি বিমান ধ্বংস করা 'লিভিং ঈগল' সাইফুল আজম মারা গেছেন"www.channelionline.com। ১৪ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  21. "চলে গেলেন 'লিভিং ইগল' সাইফুল আজম"kalerkantho.com। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২০ 
  22. "বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল আজমের মৃত্যু"bangla.bdnews24.com। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  23. "'লিভিং ঈগল' গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাইফুল আজম আর নেই"Jugantor.com। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  24. "Bangladesh Air Chief Arrives"Pakistani Defence Forum। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  25. "রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় 'লিভিং ঈগল' সাইফুল আজমের দাফন সম্পন্ন"inews.zoombangla.com। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২০ 
  26. "বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার জানাজা শেষে শাহীন কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন"ispr.gov.bd। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২০ 
  27. "Pakistani pilots who shot-down 10 Israeli jets"Rehmat's World। ১৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  28. "সাবেক এমপি সাইফুল আজম সুজা আর নেই"jagonews24.com। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  29. "ভারত ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা বাংলাদেশি পাইলট সাইফুল আজম আর নেই"bangla.dhakatribune.com। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  30. "লিভিং ঈগল সাইফুল আজম আর নেই"banglanews24.com। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  31. "Legendary fighter pilot Saiful Azam dies at 80"dhakatribune.com। ১৪ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুন ২০২০ 
  32. "The Air University 404 Page"। ১৪ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  33. "Have Jet — Will Travel: The Story of Saiful Azam, Fighter Pilot"militaryhistorynow.com। ২০২০-০৪-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-২১ 
  34. "WHEN THE DEVIL DARED"bangladeshdefencejournal.com। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২০ 
  35. "Palestinians Mourn Death Of A Bangladeshi War Hero"kashmirobserver.net। ১৬ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২০ 
  36. "'লিভিং ঈগল' সাইফুল আজমের দাফন সম্পন্ন"jagonews24.com। ১৫ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]