রাম জন্মভূমি ন্যাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

রাম জন্মভূমি ন্যাস হল ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যা শহরে রাম জন্মভূমি চত্বরে একটি হিন্দু মন্দির গঠনের কাজে উৎসাহ দান ও পর্যবেক্ষণের জন্য গঠিত একটি অছি সংগঠন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রাম উক্ত রাম জন্মভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[১] বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন।[১]

অযোধ্যা বিবাদ
অযোধ্যার পুরাতত্ত্ব
(বিষ্ণু হরি শিলালিপি)
বাবরি মসজিদ
বাবরি মসজিদ ধ্বংস
রাম জন্মভূমি
অযোধ্যা গুলি চালানোর ঘটনা
২০০৫ রাম জন্মভূমি জঙ্গি হানা
সংগঠন
অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ
রাম জন্মভূমি ন্যাস
শিবসেনা
ভারতীয় জনতা পার্টি
লিবারহান কমিশন
নির্মোহী আখাড়া
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ
সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড
ব্যক্তিত্ব
বাবর
অশোক সিংঘল
অটলবিহারী বাজপেয়ী
লালকৃষ্ণ আডবাণী
কল্যাণ সিং
মুরলি মনোহর যোশী
উমা ভারতী

অযোধ্যা বিবাদ[সম্পাদনা]

একাধিক হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন ও রাজনৈতিক দল রাম জন্মভূমি চত্বরে রাম মন্দির নির্মাণের দাবি তুলেছিলেন। উক্ত চত্বরে বাবরি মসজিদ নামে একটি মসজিদ ছিল। হিন্দু সংগঠনগুলির দাবি অনুসারে, মুঘল সম্রাট বাবর রাম জন্মভূমিতে রামের আদি মন্দিরটি ধ্বংস করে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।[২][৩] হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এবং দেশের প্রধান হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই ইস্যুটি উত্থাপন করে। ১৯৯২ সালে ভিএইচপি বাবরি মসজিদের কাছে একটি মিছিল বের করেছিল। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা মসজিদটি ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে ভারতে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে দাঙ্গা বেধে যায়।[৪][৫][৬]

মন্দিরের পক্ষে ভূতাত্ত্বিক প্রমান[সম্পাদনা]

পিলার, বেস এবং কলস : এএসআই-এর প্রাক্তন অধিকর্তা কেকে মহম্মদ জানিয়েছেন, যখন তারা ভিতরে গিয়েছিলেন, তিনি মসজিদের ১২ টি পিলার দেখেছিলেন। যার মন্দিরের ভগ্নাবশেষের ওপর থেকে তোলা হয়েছিল। ১২ এবং ১৩ শতকের মন্দির মতো তারাও পূর্ণ কলসের হদিশ পেয়েছিলেন সেখানে।

পোড়ামাটির ভাস্কর্য  : খনন কার্য চালানোর সময় পোড়ামাটির ভাস্কর্যের হদিশ পেয়েছিলেন তাঁরা। এটা যদি মসজিদ হত, তাহলে তা পাওয়া যেত না। যার অর্থ সেটি একটি মন্দির ছিল।

দ্বিতীয় খনন কার্য : দ্বিতীয় খনন কার্যে ৫০ টির বেশি পিলারের বেস পাওয়া গিয়েছিল। যা ছিল ১৭ টি সারিতে। যার থেকে বলা যায়, কাঠামোটি বড় ছিল। প্রমাণ থেকে বাবরি মসজিদের তলার কাঠামোটি ১২ শতকের বলেই মনে করা হয়।

কলস, অমলকা গ্রিবা এবং শিকারা  : মন্দিরের ওপরে কলসের নিচে নতুন ধরনের কাঠামো পাওয়া গিয়েছে। যা অমলকা নামেই পরিচিত। অমলকার নিচে রয়েছে গ্রিবা এবং শিকারা। যা উত্তর ভারতের মন্দিরে দেখতে পাওয়া যায়।

পোড়ামাটির জিনিস  : খনন কার্য চালিয়ে সেখান থেকে ২৬৩ টি পোড়ামাটির জিনিস পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেব দেবী, মানুষের এবং মহিলার শরীরের মতো জিনিস। যদি সেটা মসজিদই হত, তাহলে পোড়ামাটির জিনিস কিংবা মানবের আকৃতির জিনিস কি পাওয়া যেত, প্রশ্ন উঠেছে। কেননা ইসলামে এইসব জিনিস নিষিদ্ধ। বিজিপি সরকার এগুলো প্রমাণ দেন, যদিও সবগুলো মিথ্যা।

বিষ্ণু হরি শিলা ফলকের শিলালিপি  : সেখান থেকে বিষ্ণু হরি শিলা ফলকের শিলালিপিও পাওয়া গিয়েছে দুটি ভাগে। সেটি খনন কার্যস্থলে পাওয়া না গেলেও, যেখানে বাবরি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, সেখানেই পাওয়া গিয়েছে এটি।[৭]

প্রতিষ্ঠা[সম্পাদনা]

১৯৯৩ সালের ২৫ জানুয়ারি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা রাম জন্মভূমি ন্যাস (আরজেএন) নামে একটি স্বাধীন অছি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল রাম জন্মভূমি ন্যাস দখল করা এবং প্রস্তাবিত রাম মন্দির নির্মাণের কাজ দেখাশোনা করা।[১][৮] রামচন্দ্র দাস পরমহংস (১৯১৩-২০০৩) ছিলেন রাম জন্মভূমি ন্যাসের প্রধান।[৯] সংগঠনের সদস্যরা বলেন, এই সংগঠন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ধর্মনিরপেক্ষ ভারত সরকার যাতে রাম জন্মভূমি চত্বর দখল না করতে পারে এবং রাম মন্দির তৈরির কাজে অংশ না নিতে পারে, তা দেখা।[১] রাম জন্মভূমি ন্যাস অযোধ্যার বাইরে ‘করসেবকপুরম’ নামক এক জায়গায় ‘করসেবক’ নামে পরিচিত স্বেচ্ছাসেবকদের কর্মশালা পরিচালনা করে। এই কর্মশালা মন্দির নির্মাণের প্রস্তুতির কাজের সঙ্গে যুক্ত।[৮]

২০১০ অযোধ্যা রায়[সম্পাদনা]

এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিতর্কিত রাম জন্মভূমি চত্বরকে তিন ভাগে বিভক্ত করে এক-তৃতীয়াংশ মুসলিম সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে ও অবশিষ্ঠাংশ নির্মোহী আখাড়া হিন্দু সংগঠনকে দান করে। রাম জন্মভূমি ন্যাস এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছিল। যদিও রাম জন্মভূমি ন্যাস জানায়, চত্বরটি যোগ্য ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়া উচিত এবং সমগ্র চত্বরের দাবি জানিয়ে তারা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে মামলা করবে।[১০]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. Manjari Katju (২০০৩)। Vishva Hindu Parishad and Indian politics। Orient Blackswan। পৃষ্ঠা 72–102। আইএসবিএন 978-81-250-2476-7 
  2. Flint, Colin (২০০৫)। The geography of war and peace। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-516208-0 
  3. Vitelli, Karen (২০০৬)। Archaeological ethics (2 সংস্করণ)। Rowman Altamira। আইএসবিএন 978-0-7591-0963-6 
  4. Tearing down the Babri Masjid - Eye Witness BBC's Mark Tully BBC - Thursday, 5 December 2002, 19:05 GMT
  5. "Babri Masjid demolition was planned 10 months in advance - PTI"। ১৭ জানুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৫ 
  6. The Ayodhya dispute. BBC News. November 15, 2004.
  7. "Proof for Temple" 
  8. "Celebration in Karsevakpuram is premature"। ২০১০-১০-০৩। ২০১০-১০-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-০৪ 
  9. "Ramchandra Paramhans"The Telegraph। ৬ আগস্ট ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ১৪ অক্টোবর ২০১২ 
  10. "Nyas to move SC, says 'no question of victory or loss'"Indian Express। ২০১০-১০-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১০-০৪