বলিহার রাজবাড়ী
বলিহার রাজবাড়ী | |
---|---|
বিকল্প নাম | বলিহার জমিদার বাড়ি |
সাধারণ তথ্যাবলী | |
অবস্থান | কুড়মইল, বলিহার ইউনিয়ন[১] |
ঠিকানা | নওগাঁ সদর উপজেলা, নওঁগা জেলা |
শহর | রাজশাহী |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্বত্বাধিকারী | বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর |
কারিগরী বিবরণ | |
উপাদান | ইট , কাঁদা মাটি |
পরিচিতি | বলিহার জমিদারের বাসস্থান |
বলিহার রাজবাড়ী নওগাঁ সদর উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীনতম রাজবাড়ী এবং বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।[২]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]বলিহারের জমিদার রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার অন্যতম বিখ্যাত জমিদার ছিল। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অধীনে নওগাঁর বলিহার এলাকার এক জমিদার জায়গির লাভ করেছিলেন। ১৮২৩ সালে জমিদার রাজেন্দ্রনাথ এখানে একটি রাজ-রাজেশ্বরী দেবীর মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তিনি মন্দিরে পিতলের তৈরি রাজেশ্বরী দেবীর একটি মূর্তি স্থাপন করেছিলেন। মূর্তটি বলিহারসহ এই অঞ্চলের প্রসিদ্ধ ছিল।[৩][৪]
বলিহার জমিদার পরিবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নৃসিংহ চক্রবর্তী। সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক জায়গির লাভ করে বলিহারের জমিদাররা এ এলাকায় নানা স্থাপনা গড়ে তোলেন যার মধ্যে বলিহার রাজবাড়ি অন্যতম।
বলিহার জমিদার বাড়ির অনেক রাজা উচ্চশিক্ষিত ছিলেন। তারমধ্যে কৃষ্ণেন্দ্রনাথ রায় বাহাদুর রাজা বিখ্যাত লেখক ছিলেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হল কৃষ্ণেন্দ্র গ্রন্থাবলী প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড।[৪][৫]
দেশ বিভাগের সময়কালে বলিহারের রাজা ছিলেন বিমেলেন্দু রায়। দেশ বিভাগের সময় জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে বলিহারের রাজা বিমেলেন্দু রায় চলে যান ভারতে। এরপর বলিহার রাজবাড়ী ভবনটি দেখভাল করেন রাজ পরিবারের অন্যান্য কর্মচারীরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এবং পরবর্তীতে রাজবাড়ির বিভিন্ন নিদর্শন, আসবাবপত্র, জানালা দরজাসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুট হয়ে যায়।[৬]
জনশ্রুতি আছে,তৎকালীন মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ বাংলার বার ভূঁইয়াদের দমন করতে সৈন্যসামন্ত নিয়ে এই অঞ্চলের বলিহারে পৌঁছেন। সৈন্যবাহিনী দীর্ঘ পথ অতিক্রম করায় ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তাদের বিশ্রামের জন্য এবং সেনাপতি মানসিংহের পাঠানো গুপ্তচরের মাধ্যমে বার ভূঁইয়াদের খবর জানতে মানসিংহ এই রাজবাড়ী এলাকায় যাত্রাবিরতি করেন। সেই সময়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে শুষ্ক মৌসুম চলছিল। সৈন্যরা বেশি দিন কোন কাজ না করে বসে থাকলে অলস হয়ে যেতে পারে এইরকম ভেবে সেনাপতি মানসিংহ সৈন্যবাহিনী দিয়ে এই এলাকায় ৩৩০টি দীঘি এবং পুকুর খনন করে নেন।[৩][৪][৫]
অবকাঠামো
[সম্পাদনা]রাজবাড়ীর সামনেই রয়েছে প্রকাণ্ড তোরন; ভেতরের কম্পাউণ্ডে নাটমন্দির, রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির, জোড়া শিব মন্দির আর বিশাল তিনতলা বিশিষ্ট জমিদার বাড়ি। যদিও বিভিন্ন মন্দিরের দেয়ালের কারুকাজ, মূল্যবান রিলিফের কাজগুলো এখন অস্পষ্ট ও ভাঙ্গা। এই কারুকাজগুলো ছিল এই মন্দির গুলোর শোভাবর্ধক। বলিহারের জমিদারি বাড়ি এলাকায় ৩৩০টি দীঘি এবং পুকুর ছিল। এর মধ্যে মালাহার, সীতাহার, বলিহার, অন্তাহার উল্লেখযোগ্য।[৩]
প্রাসাদের সামনে একটি ছোট চিড়িয়াখানা ছিল। যেখানে বাঘ, ভাল্লুক, বানর, হরিণসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি ছিল।[৪][৫]
অবস্থান
[সম্পাদনা]নওগাঁ সদর উপজেলার বলিহার ইউনিয়নে বলিহার রাজবাড়ি নওগাঁ-রাজশাহী সড়কের পশ্চিমে ও নওগাঁ জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে বলিহার ইউনিয়নের কুড়মইল মৌজায় বলিহার রাজবাড়ি অবস্থিত।[৭]
বর্তমান অবস্থা
[সম্পাদনা]পূর্বে রাজবাড়ির একটি ভবন স্থানীয় একটি স্কুলের শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল কিন্তু নতুন স্কুল ভবন নির্মিত হওয়ায় রাজবাড়ী ভবনটি এখন পরিত্যক্ত। প্রাসাদ এর ভিতরে অবস্থিত দেবালয় পূজা অর্চনার কাজে ব্যবহৃত হয় এবং প্রাসাদের পেছনে বিশাল আকারের ২টি শিবলিঙ্গ পাশাপাশি রয়েছে।[৪]
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "বলিহার রাজরাড়ি"। ৭ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ "নওগাঁ সদর উপজেলা"। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ ক খ গ "জৌলুস হারাচ্ছে বলিহার রাজবাড়ী"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২০।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "নওগাঁর বলিহার রাজবাড়ির হালচাল"। দৈনিক নয়া দিগন্ত। ১৯৭০-০১-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২০।
- ↑ ক খ গ বাবুল আখতার রানা (২০ নভেম্বর ২০১৫)। "অযত্ন অবহেলায় নওগাঁর বলিহার রাজবাড়ী"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৬-২০।
- ↑ "ঐতিহাসিক নিদর্শনের কাছে"। ৩১ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬।
- ↑ "দর্শনীয় স্থান"। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]