বিষয়বস্তুতে চলুন

নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ
آل پاکستان عوامی لیگ
সংক্ষেপেএএল
প্রতিষ্ঠাতাহোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী
প্রতিষ্ঠাফেব্রুয়ারি ১৯৫০ (1950-02)
নিষিদ্ধ২৬ মার্চ ১৯৭১ (1971-03-26)
একীভূতকরণপূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ
সীমান্ত আওয়ামী মুসলিম লীগ
জিন্নাহ মুসলিম লীগ
পরবর্তীবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
সদর দপ্তরকরাচি
সংবাদপত্রইত্তেফাক
ভাবাদর্শবাঙালী জাতীয়তাবাদ (১৯৬৬-পরবর্তী)
সমাজতন্ত্র
গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র
বিভক্তি:
ধর্মনিরপেক্ষতা
ইসলামি সমাজতন্ত্র
রাজনৈতিক অবস্থানবামপন্থী
জাতীয় অধিভুক্তিকম্বাইন্ড অপোজিশন পার্টিস (১৯৬৫)
আনুষ্ঠানিক রঙ  সবুজ
নির্বাচনী প্রতীক
AL party symbol
নৌকা
দলীয় পতাকা
পাকিস্তানের রাজনীতি

আওয়ামী লীগ, দাপ্তরিক নাম নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ এবং ১৯৫৫ সালের আগে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ, ১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারিতে হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী প্রতিষ্ঠিত একটি পাকিস্তানি রাজনৈতিক দল ছিলো। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের আমিনুল হাসানাত ও খান গোলাম মোহাম্মদ খান এর প্রতিষ্ঠার পরেই এতে যোগ দেন।[][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের প্রাক্তন মুসলিম লীগ রাজনীতিবিদ আমিনুল হাসানাত সীমান্ত আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর কাছ থেকে তিনি এই ধারণা পেয়েছিলেন যিনি তাকে এই নামটি রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সোহরাওয়ার্দী পূর্ববঙ্গের প্রাক্তন মুসলিম লীগ সদস্যদের একই নামে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেন।[] পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আবদুল হামিদ খান ভাসানীইয়ার মোহাম্মদ খান পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।[] এটি পাকিস্তানে উর্দু অধ্যুষিত মুসলিম লীগের বাংলায় বিকল্প হিসেবে এবং সরকারের কেন্দ্রীয়করণের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটি দ্রুত পূর্ব বাংলায় ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করে।[]

১৯৪৯ সালে সোহরাওয়ার্দী এই বলে মুসলিম লীগ ত্যাগ করেন যে দলটি অভিজাতদের দলে পরিণত হয়েছে এবং দলটি জনগণ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।[] একই বছরে ইফতেখার মামদুতকে পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং তিনি জিন্নাহ মুসলিম লীগ নামে একটি দল গঠন করেন।[] ১৯৫০ সালে সোহরাওয়ার্দী পশ্চিম পাকিস্তানে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা করেন।[] ১৯৫১ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনের আগে জিন্নাহ আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের জন্য দুটি দল একীভূত হয়।[] ১৯৫১ সালে পাঞ্জাব প্রাদেশিক নির্বাচনে জিন্নাহ আওয়ামী মুসলিম লীগ ১৮.৩ শতাংশ ভোট পায় ও ৩২টি আসন ল্যাব করে।[] সীমান্তে এটি চারটি আসন জিতে।[] এটি সিন্ধুতেও প্রতিষ্ঠিত হয়।[]

পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের দলটি ১৯৫২ সালে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাথে একীভূত হয়[] এবং নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামটি ব্যবহার করে।[] তবে একীভূত হলেও দলটি স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রেখেছিল।[] বাংলায় ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে দলটি ১৪৩ আসনে জয়লাভ করে। হক, ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দী নেতৃত্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের যুক্তফ্রন্ট দলটি মোট ২২৩ আসনে জয়লাভ করে এবং ১০ আসন নিয়ে মুসলিম লীগ পরাজিত বরণ করে।[] পরবর্তীতে নিখিল পাকিস্তান বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে দলটির নামকরণ হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরবর্তীতে দলটি শেখ মুজিবুর রহমানের (সোহরাওয়ার্দীর প্রাক্তন সহযোগী) নেতৃত্বে বিকশিত হয় এবং এর নাম আওয়ামী লীগ করা হয়।[] রক্তপাত ছাড়াই একক জাতি হিসেবে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ কঠিন পরামর্শ ও আলোচনার পর অবশেষে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং বেসামরিক প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাঙালী জাতীয়তাবাদের বাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়।[]

অপারেশন সার্চলাইটের পর ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় এক রেডিও ভাষণে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রদ্রোহী ঘোষণা করে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এর পাশাপাশি সরকার আওয়ামী লীগের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে।[]

রাষ্ট্রনেতা

[সম্পাদনা]

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
নাম মেয়াদকাল
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৫৬–১৯৫৭

পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী
নাম মেয়াদকাল
আতাউর রহমান খান ১৯৫৬–১৯৫৮

নির্বাচনী ইতিহাস

[সম্পাদনা]

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচন

নির্বাচন দলীয় নেতা ভোট % আসন +/– অবস্থান সরকার
১৯৭০ শেখ মুজিবুর রহমান ১২,৯৩৭,১৬২ ৩৯.২%
১৬০ / ৩০০
বৃদ্ধি ১৬০ বৃদ্ধি ১ম নিষিদ্ধ

পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন

নির্বাচন ভোট % আসন +/– অবস্থান সরকার
১৯৫৪
১৪৩ / ২৩৭
বৃদ্ধি ১৪৩ বৃদ্ধি ১ম সরকার
১৯৭০ ১২,৯৩৭,১৬২ ৭৩.২%
২৮৮ / ৩০০
বৃদ্ধি ৪৫ অপরিবর্তিত ১ম নিষিদ্ধ

পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন

নির্বাচন ভোট % আসন +/– অবস্থান সরকার
১৯৫১ ১৮.৩%
৩২ / ১৯৩
বৃদ্ধি ৩২ বৃদ্ধি ২য় বিরোধীদল

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. কামরান ২০০৯, পৃ. ২৬৯।
  2. চৌধুরী ২০১২, পৃ. ৭২।
  3. ওয়াজেদ, জাফর (২৩ জুন ২০২৪)। প্লাটিনাম জয়ন্তী ও নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগকালবেলা। ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২৪ 
  4. শামসুদ্দীন, আবু জাফর (২০০৫)। আত্মস্মৃতি। ঢাকা: সাহিত্য প্রকাশ। আইএসবিএন 9844654343 
  5. পারাখা, নাদীম এফ. (২৬ জানুয়ারি ২০১৭)। "The Muslim League: A factional history"ডন (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০২৪ 
  6. কামরান ২০০৯, পৃ. ২৬৪।
  7. কামরান ২০০৯, পৃ. ২৭৪।
  8. কামরান ২০০৯, পৃ. ২৭৭–২৭৮।
  9. চৌধুরী ২০২১, পৃ. ৫৮।

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]