চিপকো আন্দোলন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
পুনেতে একটি উন্নয়ন প্রকল্পে একজন চিপকো প্রতিবাদকারী

চিপকো আন্দোলন ( হিন্দি: चिपको आन्दोलन) ভারতের একটি বন সংরক্ষণ আন্দোলন। বাণিজ্যিকভাবে গাছ কাটার এবং বন উজাড়ের বিষয়ে সরকারের নীতির বিরোধিতা করে, ১৯৭০-এর দশকে প্রতিবাদকারীরা গাছকে আলিঙ্গন করে ছিল, তাদের বাহু দিয়ে গাছের চারপাশে জড়িয়ে ধরেছিল যাতে গাছ কাটা না যায়।[১]

আজ, সমাজতন্ত্রের রঙের বাইরে, এটিকে ক্রমবর্ধমানভাবে একটি পরিবেশ নারীবাদ আন্দোলন হিসাবে দেখা হচ্ছে। যদিও এর অনেক নেতা ছিলেন পুরুষ, কিন্তু মহিলারা শুধুমাত্র এর মেরুদণ্ডই ছিল না, বরং এর মূল ভিত্তিও ছিলেন, কারণ তাঁরা ব্যাপকভাবে বন উজাড়ের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।[২] গাছ কাটার ফলে জ্বালানি কাঠ এবং পশুখাদ্যের অভাবের পাশাপাশি পানীয় জল এবং সেচের অসুবিধা ঘটছিল। বছরের পর বছর ধরে এগুলি চিপকো আন্দোলনের অধীনে সংঘটিত বেশিরভাগ বনায়ন কাজের মুখ্য ব্যাপার হয়ে ওঠে।[৩][৪][৫] ১৯৮৭ সালে, চিপকো আন্দোলনকে "ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার এবং পরিবেশগতভাবে সঠিক ব্যবহারে তাদের আত্মোৎসর্গের জন্য" রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছিল।[৬]

পটভূমি[সম্পাদনা]

করণ সিং এবং জ্যোতি কুমারীর আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, ১৯৬৪ সালে, চামোলি গোপেশ্বরেদাশোলি গ্রাম স্বরাজ্য সংঘ ("গ্রাম স্ব-শাসনের জন্য দাশোলি সোসাইটি") প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গান্ধীবাদী সমাজকর্মী চণ্ডী প্রসাদ ভাট। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল বনের সম্পদ ব্যবহার করে ক্ষুদ্র শিল্প স্থাপন। তাঁদের প্রথম প্রকল্প ছিল স্থানীয় ব্যবহারের জন্য খামার সরঞ্জাম তৈরির একটি ছোট কর্মশালা। ১৯৮০-এর দশকে মূল দশোলি গ্রাম স্বরাজ্য সংঘ (ডিজিএসএস) থেকে এটির নাম পরে ডিজিএসএম (দাশোলি গ্রাম স্বরাজ্য মণ্ডল[৭]) করা হয়। এখানে তাঁদের নিয়ন্ত্রণমূলক বন নীতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ঔপনিবেশিক যুগের একটি অপ্রীতিকর পরিণাম এখনও প্রচলিত আছে, সেইসাথে "ঠিকদারী ব্যবস্থা", যেখানে বনভূমির এই অংশগুলিকে পণ্যের মতো ব্যবহার করা হয়েছিল এবং সাধারণত সমভূমির বড় ঠিকাদারদের কাছে নিলাম করা হয়েছিল। তারা তাদের সাথে নিয়ে এসেছিল নিজেদের দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিকদের। ঠিকাদারেরা পাহাড়ি জনগণের জন্য খুব সামান্য বেতনে পাথর তোলার মতো সামান্য কাজই রেখে দিয়েছিল। অন্যদিকে, পার্বত্য অঞ্চলে বাইরে থেকে আরও বেশি লোক আসা শুরু হয়েছিল, যার ফলে ইতিমধ্যেই বিপর্যস্ত পরিবেশগত ভারসাম্যের ওপর আরও চাপ পড়েছিল।[৮]

ক্রমবর্ধমান কষ্টের মধ্যে পড়ে, গাড়োয়াল হিমালয়[৯][৮] শীঘ্রই একটি ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত সচেতনতার কেন্দ্রে পরিণত হয় এবং মানুষ সচেতন হয় যে কিভাবে বেপরোয়া বন উজাড়ের ফলে বনভূমির বেশিরভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, একটি বড় ভূমিধ্বসের ফলস্বরূপ ১৯৭০ সালের জুলাইয়ে বিধ্বংসী অলকানন্দা নদীর বন্যা হয়েছিল। নদী অবরুদ্ধ হওয়ার ফলে, বদ্রীনাথের কাছে হনুমানচটি থেকে শুরু করে নদীর নিম্নধারায় হরিদ্বার পর্যন্ত ৩২০ কিলোমিটার (২০০ মাইল) এলাকা প্রভাবিত হয়েছিল, আরও অসংখ্য গ্রাম, সেতু এবং রাস্তা ভেসে যায়। তারপরে, এই অঞ্চলে, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পগুলির দ্রুত বৃদ্ধির ফলে ভূমিধ্বস এবং ভূমি অবনমনের ঘটনাগুলি সাধারণ হয়ে ওঠে।[১০]

ঘটনা[সম্পাদনা]

মহিলা সহ গ্রামবাসীরা বেশ কয়েকটি ছোট দলের অধীনে নিজেদের সংগঠিত করতে শুরু করেন। এটি ১৯৭৩ সালে শুরু হয়েছিল, কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয় সমস্যাগুলি তাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁদের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলা বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির গাছ কাটার বিরুদ্ধে তাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে, সংঘ কর্মীরা বন বিভাগের নীতির প্রতিবাদে গোপেশ্বরে একটি বিক্ষোভ করে। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে আরও মিছিল এবং কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু খুব কমই কাজ হয়েছিল। প্রথমবারের মতো বন বিভাগ সংঘের খামার সরঞ্জাম কর্মশালার জন্য দশটি অ্যাশ গাছের (জলপাই এবং লিলাক পরিবারের গাছ) বার্ষিক অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে এবং পরিবর্তে টেনিস র‍্যাকেট তৈরির জন্য সুদূর এলাহাবাদের একটি ক্রীড়া সামগ্রী প্রস্তুতকারী সাইমন কোম্পানিকে ৩০০টি গাছের জন্য চুক্তি প্রদান করে। ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে, কাঠমিস্ত্রিরা গোপেশ্বরে এসে পৌঁছান এবং কয়েক সপ্তাহ পর, ১৯৭৩ সালের ২৪শে এপ্রিল মণ্ডল গ্রামে তাদের মুখোমুখি হন। সেখানে প্রায় একশ গ্রামবাসী এবং ডিজিএসএস কর্মীরা ড্রাম বাজিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। এইভাবে তাঁরা ঠিকাদার এবং তাদের কাঠমিস্ত্রিদের পশ্চাদপসরণে বাধ্য করেন।

এটি ছিল আন্দোলনের প্রথম সংঘর্ষ এবং এই চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত বাতিল করে সংঘকে দেওয়া হয়। এতক্ষণে, সমস্যাটি অ্যাশ গাছের বার্ষিক অংশ সংগ্রহের বাইরেও বেড়েছে এবং বাণিজ্যিক গাছ কাটা ও সরকারের বন নীতির জন্য ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ শুরু হয়েছে, এগুলিকে গ্রামবাসীরা তাদের জন্য প্রতিকূল হিসাবে দেখেছিল। সংঘ অহিংস প্রতিবাদের উপায় হিসাবে গাছ-আলিঙ্গন বা চিপকো আন্দোলন অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কিন্তু লড়াই শেষ হয়নি, কারণ একই কোম্পানিকে গোপেশ্বর থেকে ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) দূরে ফাটা জঙ্গলে আরও অ্যাশ গাছের বরাৎ দেওয়া হয়েছিল। এখানে আবার, ১৯৭৪ সালের ২০শে জুন থেকে শুরু ক'রে, স্থানীয় বিরোধিতার কারণে, ঠিকাদাররা কয়েক দিন সংঘর্ষের পর পিছু হটে। তারপরে, ফাটা এবং তরসালির গ্রামবাসীরা একটি নজরদারি দল গঠন করেন এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত গাছগুলি পর্যবেক্ষণ করেন। তখন কর্মীরা সময়মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের আরেকটি অবস্থান সফল করেন। কাঠমিস্ত্রিরা কেটে ফেলা পাঁচটি অ্যাশ গাছ রেখে পিছু হটে।

কয়েক মাস পরে, চূড়ান্ত সংঘর্ষ শুরু হয় যখন সরকার ১৯৭৪ সালের জানুয়ারিতে অলকানন্দা নদীর অপর পাড়ে রেনি গ্রামের কাছে ২,৫০০টি গাছের জন্য একটি নিলামের কথা ঘোষণা করে। চণ্ডী প্রসাদ ভাট রেনি এলাকার গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং গ্রামবাসীদের উস্কে দেন। তাঁরা গাছকে জড়িয়ে ধরে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরের কয়েক সপ্তাহ ধরে রেনি এলাকায় মিছিল-মিটিং চলতে থাকে।[১১]

১৯৭৪ সালের ২৫শে মার্চ, যেদিন কাঠমিস্ত্রিরা গাছ কাটতে যাচ্ছিল, সেই দিন রেনি গ্রামের পুরুষ এবং ডিজিএসএস কর্মীরা চামোলিতে ছিলেন। রাজ্য সরকার এবং ঠিকাদারেরা তাঁদের একটি কাল্পনিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের জায়গায় ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল। অন্যদিকে রেনি গ্রামে শ্রমিকরা ট্রাক বোঝাই করে পৌঁছে গাছ কাটার কার্যক্রম শুরু করেন। স্থানীয় একটি মেয়ে রেনি গ্রামে মহিলা মঙ্গল দলের প্রধান গৌরা দেবীকে খবর দিতে ছুটে যায়। গৌরা দেবী গ্রামের ২৭ জন মহিলাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং শ্রমিকদের মুখোমুখি হন। যখন সমস্ত কথাবার্তা ব্যর্থ হয়, শ্রমিকরা চিৎকার করতে শুরু করে এবং মহিলাদের গালাগালি করতে শুরু করে, তাঁদের বন্দুক দিয়ে হুমকি দেয়, তখন মহিলারা তাদের কাটা বন্ধ করার জন্য গাছগুলিকে জড়িয়ে ধরেন। মহিলারা সারারাত গাছ কাটার বিরুদ্ধে নজরদারি চালিয়েছিলেন, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে কয়েকজন নমনীয় হয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। পরদিন নেতা-কর্মীরা ফিরে এলে আন্দোলনের খবর আশেপাশের লাটা ও হেনওয়ালঘাটিসহ অন্যান্য গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে এবং আরও লোকজন যোগ দেন। অবশেষে চারদিন বসে থাকার পর ঠিকাদাররা চলে যায়।[১১][১২]

প্রভাব[সম্পাদনা]

খবরটি শীঘ্রই রাজ্যের রাজধানীতে পৌঁছেছিল, যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হেমবতী নন্দন বহুগুনা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। কমিটি অবশেষে গ্রামবাসীদের পক্ষে রায় দেয়। এই অঞ্চলে এবং সারা বিশ্বের পরিবেশ-উন্নয়ন সংগ্রামের ইতিহাসে এটি একটি মোড় ঘোরানো লড়াই হয়ে ওঠে।

এই সংগ্রাম শীঘ্রই এই অঞ্চলের অনেক অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয় সম্প্রদায় ও কাঠ ব্যবসায়ীদের মধ্যে এই ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত সংঘর্ষ বেশ কয়েকটি স্থানে ঘটেছে, যেখানে পাহাড়ি মহিলারা অহিংস কর্মী হিসাবে তাঁদের নতুন-আবিষ্কৃত শক্তি প্রদর্শন করেছিলেন। আন্দোলন যখন নেতাদের অধীনে রূপ নেয়, তখন তাঁদের কার্যকলাপের সাথে চিপকো আন্দোলন নামটি যুক্ত হয়। চিপকো ইতিহাসবিদদের মতে, চণ্ডী প্রসাদ ভাট দ্বারা ব্যবহৃত শব্দটি ছিল গাড়োয়ালি ভাষায় "আলিঙ্গন" এর জন্য "অঙ্গলওয়ালথা" শব্দটি, যা পরবর্তীতে হিন্দি শব্দ, চিপকোতে রূপান্তরিত হয়েছিল।[১৩]

পরবর্তী পাঁচ বছরে, আন্দোলনটি অঞ্চলের অনেক জেলায় এবং এক দশকের মধ্যে সমগ্র উত্তরাখণ্ড হিমালয় জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই অঞ্চলের পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক শোষণের বড় সমস্যাগুলি উত্থাপিত হয়েছিল। গ্রামবাসীদের দাবি ছিল যে কোনও বন-শোষণের চুক্তি বহিরাগতদের দেওয়া উচিত নয় এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের ভূমি, জল এবং বনের মতো প্রাকৃতিক সম্পদের উপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত। তাঁরা চেয়েছিলেন সরকার ক্ষুদ্র শিল্পে স্বল্পমূল্যের উপকরণ সরবরাহ করুক এবং পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট না করে এই অঞ্চলের উন্নয়ন নিশ্চিত করুক। এই আন্দোলন ভূমিহীন বনকর্মীদের অর্থনৈতিক সমস্যা সামনে এনেছিল এবং ন্যূনতম মজুরির নিশ্চয়তা চেয়েছিল। বিশ্বব্যাপী চিপকো প্রদর্শন করেছে যে কিভাবে পরিবেশের কারণ, দরিদ্রদের জন্য জীবন ও মৃত্যুর বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, তাঁরা প্রায়শই পরিবেশগত শোকাবহ ঘটনা দ্বারা বিধ্বস্ত হন। আন্দোলনের পর বেশ কিছু পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণা করা হয়। ১৯৭৭ সালে, অন্য একটি এলাকায়, কাটার জন্য নির্ধারিত গাছের চারপাশে, মহিলারা রাখির পবিত্র সুতো বেঁধেছিলেন। রাখি বন্ধনের হিন্দু ঐতিহ্য অনুসারে, রাখি ভাই এবং বোনের মধ্যে বন্ধনকে নির্দেশ করে। তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁরা জীবন দিয়েও গাছগুলি রক্ষা করবেন।[১৪]

চিপকো আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল আন্দোলনের একটি অভিনব দিক। এই অঞ্চলের বন ঠিকাদাররা সাধারণত পুরুষদের মদ্য সরবরাহ করে। মহিলারা মদ্যপানের অভ্যাসের বিরুদ্ধে অবিরাম আন্দোলন চালিয়েছিলেন এবং অন্যান্য সামাজিক সমস্যাগুলিকে তুলে ধরার জন্য আন্দোলনের কার্যাবলীকে প্রসারিত করেছিলেন। আন্দোলনের একটি বিজয় আসে, যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অধীন সরকার ১৯৮০ সালে হিমালয় অঞ্চলে ১৫ বছরের জন্য গাছ কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যতক্ষণ না সবুজ আচ্ছাদন সম্পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে।[১৫] চিপকোর একজন বিশিষ্ট নেতা, গান্ধীবাদী সুন্দরলাল বহুগুনা, ১৯৮১ - ৮৩ সালে ৫,০০০ কিলোমিটার (৩০০০ মাইল) ট্রান্স-হিমালয় পদযাত্রা করেছিলেন এবং চিপকো বার্তাটি আরও বৃহত্তর অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।[১৬] ধীরে ধীরে, মহিলারা স্থানীয় বন রক্ষার জন্য সমবায় স্থাপন করেন এবং স্থানীয় পরিবেশের জন্য উপযুক্ত হারে পশুখাদ্য উৎপাদনের আয়োজন করেন। পরবর্তীতে, তাঁরা পশুখাদ্য সংগ্রহের জন্য শস্য আবর্তন প্রকল্পে যোগদান করেন, ক্ষয়প্রাপ্ত জমি প্রতিস্থাপন করতে সহায়তা করেন এবং তাঁদের নির্বাচিত প্রজাতির গাছ দিয়ে মজুদকৃত নার্সারি প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।[১৭]

১৯৭৪ সালে রেনি গ্রামে প্রথম সর্ব-মহিলা চিপকো আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীরা, ত্রিশ বছর পরে পুনরায় একত্রিত হয়েছিলেন

চিপকোর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল মহিলা গ্রামবাসীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ।[১৮] উত্তরাখণ্ডের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসাবে, মহিলারা পরিবেশগত অবক্ষয় এবং বন উজাড়ের দ্বারা সবচেয়ে বেশি সরাসরি প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাই তাঁরা খুব সহজেই সমস্যাগুলির সাথে সম্পর্কিত। এই অংশগ্রহণ কতটা চিপকোর আদর্শ থেকে উদ্ভূত হয়েছে বা তাকে প্রভাবিত করেছে তা নিয়ে বিদগ্ধ মহলে তীব্র বিতর্ক হয়েছে।[১৯]

তা সত্ত্বেও, গৌরা দেবী, সুদেশা দেবী, বাচনি দেবী, চণ্ডীপ্রসাদ ভাট, সুন্দরলাল বহুগুনা, গোবিন্দ সিং রাওয়াত, ধুম সিং নেগি, শমসের সিং বিষ্ট এবং চিপকো কবি ঘনশ্যাম রাতুরি সহ মহিলা ও পুরুষ উভয় কর্মীরা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাঁদের গান এখনও হিমালয় অঞ্চলে জনপ্রিয়।[১৬] চণ্ডী প্রসাদ ভাট ১৯৮২ সালে রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন,[২০] এবং সুন্দরলাল বহুগুনা ২০০৯ সালে পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন।

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

তেহরি জেলায়, চিপকো কর্মীরা ১৯৮০-এর দশকে দুন উপত্যকায় চুনাপাথর খনির প্রতিবাদ করতে যান, কারণ আন্দোলনটি দেরাদুন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে, যেটি এর আগে বনভূমির বন উজাড় করে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন করেছিল। চিপকো কর্মীদের বছরের পর বছর আন্দোলনের পর অবশেষে খনন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তারপরে বনায়নের জন্য জনসাধারণের একটি বিশাল অভিযান শুরু হয়েছিল, যা ঠিক সময়ে উপত্যকা ঘুরেছিল। এছাড়াও ১৯৮০-এর দশকে, বহুগুনার মতো কর্মীরা ভাগীরথী নদীর উপর তেহরি বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন, যা পরবর্তী দুই দশক ধরে চলেছিল। এরপর এসেছিল বীজ বাঁচাও আন্দোলন, যা আজও অব্যাহত রয়েছে।

সময়ের সাথে সাথে, জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চিপকো কর্মীরা "একটি দূরবর্তী আমলাতন্ত্রের হাত থেকে তাঁদের বনজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ জিতে নিয়ে একটি আর্থ-সামাজিক বিপ্লবের কাজ শুরু করেছেন যা শুধুমাত্র নগরমুখী পণ্য তৈরি করার জন্য বনভূমি বিক্রির সাথে সম্পর্কিত"। চিপকো আন্দোলন হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান এবং বিহারের অন্যান্য বনাঞ্চলে আর্থ-সামাজিক আন্দোলনের জন্য একটি মানদণ্ড হয়ে ওঠে; ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বরে, চিপকো ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে অনুরূপ, অ্যাপিকো আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করেছিল, যেখানে পশ্চিমঘাট এবং বিন্ধ্য অঞ্চলে গাছ কাটা বন্ধ করা হয়েছিল। কুমায়ুন অঞ্চলে, চিপকো একটি পৃথক উত্তরাখণ্ড রাজ্যের জন্য সাধারণ আন্দোলনের সাথে একত্রিত হয়ে আরও উগ্র স্বর নিয়েছিল, যা অবশেষে ২০০১ সালে অর্জিত হয়েছিল।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, আন্দোলনটি শুধুমাত্র জল ব্যবস্থাপনা, শক্তি সংরক্ষণ, বনায়ন এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য কর্মসূচীতে কাজ করার জন্য অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেনি, বরং হিমালয় এবং সমগ্র ভারতে পরিবেশগত অবক্ষয় এবং সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি অধ্যয়ন শুরু করতে পণ্ডিতদের উৎসাহিত করেছে।[২১]

২০০৪ সালের ২৬শে মার্চ, রেনি, লাতা এবং নিতি উপত্যকার অন্যান্য গ্রাম চিপকো আন্দোলনের ৩০তম বার্ষিকী উদযাপন করেছিল, যেখানে বেঁচে থাকা সমস্ত মূল অংশগ্রহণকারীরা একত্রিত হয়েছিলেন। উদযাপনটি গৌরা দেবীর পৈতৃক বাড়ি লাতাতে শুরু হয়েছিল, যেখানে প্রয়াত চিপকো নেতা গোবিন্দ সিং রাওয়াতের স্ত্রী পুষ্পা দেবী, তেহরি গাড়ওয়ালের হেনওয়ালঘাটির চিপকো নেতা ধুম সিং নেগি এবং অন্যান্যরা উদযাপন করেছিলেন। এখান থেকে একটি মিছিল পার্শ্ববর্তী গ্রাম রেনিতে গিয়েছিল, যেখানে প্রকৃত চিপকো আন্দোলন হয়েছিল ১৯৭৪ সালের ২৬শে মার্চ।[১১] এটি বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতির জন্য বিশ্বব্যাপী পদ্ধতির সূচনা করেছে। সম্প্রতি, ২০১৭ সালে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার যশোর রোডে শতাব্দী প্রাচীন গাছগুলি প্রায় একটি ছাউনি তৈরি করে রেখেছিল, সেগুলি দ্রুত উজাড় করা হচ্ছিল। চিপকো আন্দোলনের উত্তরাধিকার অনুসরণ করে, স্থানীয় জনগণের ৪০০০ গাছ বাঁচানোর প্রচারণা একটি বিশাল আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে।।

২০১৮ সালের ২৬শে মার্চ, একটি চিপকো আন্দোলন সংরক্ষণ উদ্যোগকে গুগল ডুডল দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল[২২] এদের ৪৫তম[২৩] বার্ষিকীতে।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

উদ্ধৃতি[সম্পাদনা]

  1. Badri, Adarsh (২০২৪-০২-০৫)। "Feeling for the Anthropocene: affective relations and ecological activism in the global South"আইএসএসএন 0020-5850ডিওআই:10.1093/ia/iiae010অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  2. The women of Chipko Staying alive: ecology, and development, by Vandana Shiva, Published by Zed Books, 1988. আইএসবিএন ০-৮৬২৩২-৮২৩-৩. Page 67
  3. The Chipko Movement Politics in the developing world: a concise introduction, by Jeffrey Haynes. Published by Wiley-Blackwell, 2002. আইএসবিএন ০-৬৩১-২২৫৫৬-০. Page 229.
  4. Chipko Movement The Future of the Environment: The Social Dimensions of Conservation and Ecological Alternatives, by David C. Pitt. Published by Routledge, 1988. আইএসবিএন ০-৪১৫-০০৪৫৫-১. Page 112.
  5. Dankelman, Irene; Davidson, Joan (১৯৮৮)। "[Studying Chipko Movement – ] Pakistani Women Visit India's Environmental NGOs"। Women and Environment in the Third World: Alliance for the FutureEarthscan। পৃষ্ঠা 129। আইএসবিএন 1-85383-003-8ওসিএলসি 17547228। সংগ্রহের তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ 
  6. Chipko ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে Right Livelihood Award Official website.
  7. "Chipko movement"Britannica। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ 
  8. "Hug the Trees!" – Chandi Prasad Bhatt, Gaura Devi, and the Chipko Movement ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ নভেম্বর ২০১১ তারিখে By Mark Shepard. Gandhi Today: A Report on Mahatma Gandhi’s Successors, Simple Productions, Arcata, California, 1987, reprinted by Seven Locks Press, Washington, D.C., 1987.
  9. Starting.. Of myths and movements: rewriting Chipko into Himalayan history, by Haripriya Rangan. Published by Verso, 2001. আইএসবিএন ১-৮৫৯৮৪-৩০৫-০. Page 4-5.
  10. Ecological crisis Water Wars: Privatization, Pollution and Profit, by Vandana Shiva. Published by Pluto Press, 2002. আইএসবিএন ০-৭৪৫৩-১৮৩৭-১. Page 3.
  11. Chipko 30th Anniversary ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে The Nanda Devi Campaign.
  12. Chipko! – Hill conservationists ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে
  13. A Gandhian in Garhwal[অধিগ্রহণকৃত!] The Hindu, Sunday, 2 June 2002.
  14. The Chipko Movement: India’s Call to Save Their Forests ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে womeninworldhistory.com.
  15. Bahuguna, the sentinel of Himalayas ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে by Harihar Swarup, The Tribune, 8 July 2007.
  16. Chipko Movement – India International Institute for Sustainable Development (IISD). December 2007.
  17. India: the Chipko movement ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ আগস্ট ২০১৪ তারিখে Food and Agriculture Organization of the United Nations (FAO).
  18. Mishra, A., & Tripathi, (1978). Chipko movement: Uttaranchal women's bid to save forest wealth. New Delhi: People's Action/Gandhi Book House.
  19. Aryal, M. (1994, January/February). Axing Chipko. Himal, 8–23.
  20. Citation for the 1982 Ramon Magsaysay Award for Community Leadership ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে Ramon Magsaysay Award website.
  21. Chipko ..the first modern Indian environmentalist, and also to being the greatest... ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ মে ২০১৬ তারিখে Ramchandra Guha, The Telegraph, 4 September 2004.
  22. "Today's 'Google Doodle' marks 45th anniversary of Chipko Movement, a conservation initiative"The Times of India। ২৬ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-২৬ 
  23. "Google honours 45th Chipko Movement anniversary with a doodle"The Economic Times। ২০১৮-০৩-২৬। ২৬ মার্চ ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৩-২৬ 

সাধারণ গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

  • জে. বন্দোপাধ্যায় এবং বন্দনা শিব : "দুন উপত্যকায় চুনাপাথর খননের বিরুদ্ধে চিপকো আন্দোলন" ইন: লোকায়ন বুলেটিন, 5:3, 1987, পিপি। 19-25 অনলাইন
  • সোমেন চক্রবর্তী: এ ক্রিটিক অফ সোশ্যাল মুভমেন্টস ইন ইন্ডিয়া: এক্সপেরিয়েন্স অফ চিপকো, উত্তরাখন্ড এবং ফিশওয়ার্কার্স মুভমেন্ট, ইন্ডিয়ান সোশ্যাল ইনস্টিটিউট, 1999।আইএসবিএন ৮১-৮৭২১৮-০৬-১আইএসবিএন 81-87218-06-1
  • গুহ, রামচন্দ্র : দ্য আনকুয়েট উডস: হিমালয়, বার্কলে, ক্যালিফে পরিবেশগত পরিবর্তন এবং কৃষক প্রতিরোধ [ইত্যাদি]: ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, এক্সপেন্ডেড সংস্করণ 2000। [ পৃষ্ঠা প্রয়োজন ]
  • ডাঃ সিন্ধু মেরি জ্যাকব, সত্যেন্দ্র ত্রিপাঠী: চিপকো আন্দোলন: উত্তরাখণ্ডে বন সম্পদ বাঁচাতে নারীদের বিড । মদের দোকান. পাবলিক অ্যাকশন, 1978 দ্বারা।
  • JShiva: Chipko: বন সংকটে ভারতের সভ্যতামূলক প্রতিক্রিয়া । শিল্প ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য ভারতীয় জাতীয় ট্রাস্ট। মদের দোকান. INTACH দ্বারা, 1986।
  • অনুপম মিশ্র, সত্যেন্দ্র ত্রিপাঠী: চিপকো আন্দোলন: উত্তরাখণ্ডে বন সম্পদ বাঁচাতে নারীদের বিড । মদের দোকান. পাবলিক অ্যাকশন, 1978 দ্বারা।
  • রঙ্গন, হরিপ্রিয়া: মিথ এবং আন্দোলনের: হিমালয়ের ইতিহাসে চিপকো পুনঃলিখন, লন্ডন [ইত্যাদি]: ভার্সো, 2000।আইএসবিএন ১-৮৫৯৮৪-৩০৫-০আইএসবিএন 1-85984-305-0[১] উদ্ধৃতি
  • শেপার্ড, মার্ক অধ্যায় 4 - "গাছ আলিঙ্গন করুন"গান্ধী আজ: মহাত্মা গান্ধীর উত্তরসূরিদের উপর একটি প্রতিবেদন । শেপার্ড পাবলিকেশন্স, 1987 দ্বারা প্রকাশিত।আইএসবিএন ০-৯৩৮৪৯৭-০৪-৯আইএসবিএন 0-938497-04-9
  • শিব, বন্দনাঅধ্যায় 4 - "চিপকো আন্দোলন" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ জানুয়ারি ২০১১ তারিখে</link> ইকোলজি অ্যান্ড দ্য পলিটিক্স অফ সারভাইভাল: ভারতে প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব । জাতিসংঘের ইউনিভার্সিটি প্রেস। সেজ পাবলিকেশন্স। 1991।আইএসবিএন ০-৮০৩৯-৯৬৭২-১আইএসবিএন 0-8039-9672-1
  • টমাস ওয়েবার, গাছকে আলিঙ্গন করা: চিপকো আন্দোলনের গল্প, ভাইকিং, 1988।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:Environmentalism