আলচি বৌদ্ধবিহার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আলচি বৌদ্ধবিহার
আলচি বৌদ্ধবিহার
আলচি বৌদ্ধবিহার জম্মু ও কাশ্মীর-এ অবস্থিত
আলচি বৌদ্ধবিহার
আলচি বৌদ্ধবিহার
আলচি বৌদ্ধবিহারের অবস্থান
স্থানাঙ্ক:৩৪°১৩′ উত্তর ৭৭°১০′ পূর্ব / ৩৪.২১৭° উত্তর ৭৭.১৬৭° পূর্ব / 34.217; 77.167
মঠের তথ্য
অবস্থানলেহ জেলা, লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, ভারত
প্রতিষ্ঠাতা? রিন-ছেন-ব্জাং-পো
ধরনতিব্বতি বৌদ্ধধর্ম
ধর্মীয় গোষ্ঠীব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের 'ব্রি-কুং-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মীয় গোষ্ঠী

আলচি বৌদ্ধবিহার বা আলচি ছোস-'খোর (ওয়াইলি: chos-'khor, বৌদ্ধবিহার সমষ্টি) ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লাদাখ অঞ্চলের লেহ জেলার আলচি গ্রামে অবস্থিত একটি প্রাচীন বৌদ্ধবিহার। এই বৌদ্ধবিহার সমষ্টি ছয়টি মন্দির এবং তিনটি চিত্রায়িত স্তূপ বা কা-কা-নি ম্ছোদ-র্তেন (ওয়াইলি: ka-ka-ni mchod-rten) নিয়ে গঠিত।[১][২][৩] লাদাখ অঞ্চলে বৌদ্ধবিহারগুলির মধ্যে একমাত্র আলচি বৌদ্ধবিহারকে বিস্তারিত ভাবে অধ্যয়ন করা হয়েছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

আলচি বৌদ্ধবিহারের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রিন-ছেন-ব্জাং-পো (জীবনকাল: ৯৫৮-১০৫৫) নামক বিখ্যাত তিব্বতী বৌদ্ধ পন্ডিতের উল্লেখ করা হয়। কিন্তু রজার গোয়েপ্পার এই বিহারের সবচেয়ে পুরাতন ভবনগুলির মধ্য অন্যতম গ্সুম-ব্র্তসেগ্স মন্দিরটি ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশে নির্মিত হয়েছিল বলে হিসেব করেছেন। এই মন্দিরের তৃতীয় তলার প্রবেশদ্বারের দেওয়ালে 'ব্রি-কুং-ব্কা'-ব্র্গ্যুদ ধর্মসম্প্রদায়ের যোগীদের চিত্রে এই ধর্মসম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা 'জিগ-র্তেন-ম্গোন-পো-রিন-ছেন-দ্পালের (জীবনকাল: ১১৪৩-১২১৭) চিত্র শেষে আঁকা হয়েছে বলে মনে করা হয় যে এই মন্দির 'জিগ-র্তেন-ম্গোন-পো-রিন-ছেন-দ্পালের মৃত্যুর পর ত্রয়োদশ শতাব্দীর শুরুতে নির্মিত হয়েছে।[৪]:৭৩[৫][৬] এই সময় আলচি সহ নিম্ন লাদাখ মধ্য তিব্বতের 'ব্রো নামক পরিবারগোষ্ঠীর শাসনাধীন ছিল।

স্থাপত্য[সম্পাদনা]

আলচি বৌদ্ধবিহার সমষ্টির ছয়টি মন্দিরের মধ্যে 'দু-খাং (ওয়াইলি: 'Du-khang), গ্সুম-ব্র্তসেগ্স (ওয়াইলি: gSum-brtsegs) এবং 'জাম-দ্পাল ল্হা-খাং (ওয়াইলি: 'Jam dpal lHa khang) উল্লেখযোগ্য। এই সমষ্টিতে লো-ৎসা-বা ল্হা-খাং (ওয়াইলি: Lo tsa ba lHa khang) এবং ল্হা-খাং সো-মা (ওয়াইলি: lHa khang So ma) নামক আরো দুইটি মন্দির বর্তমান। এছাড়াও তিনটি চিত্রায়িত স্তূপ বা কা-কা-নি ম্ছোদ-র্তেনও এই সমষ্টির অন্তর্গত।[১]

'দু-খাং[সম্পাদনা]

আলচি বৌদ্ধবিহার সমষ্টির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ভবন হিসেবে 'দু-খাং বিবেচিত হয়, কিন্তু এই ভবন এবং গ্সুম-ব্র্তসেগ্স ভবনের প্রতিষ্ঠার মধ্যেকার সময়কাল সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। এই মন্দিরের পেছনের দিকে বৈরোচনের ভাস্কর্য ও সংলগ্ন চিত্রগুলির অঙ্কন পদ্ধতির মধ্যে বিশেষ পার্থক্য না থাকলেও মন্দিরের বারান্দা এবং দ্বারদেশের চিত্রগুলির মধ্যে কালের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। এই ভবনের সামনের দিকে পরবর্তীকালে দুই পাশে দুইটি মিনার তৈরী হয়, যার মধ্যে বামদিকের মিনারটি বর্তমানে অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। এই মিনারেরর ওপরের দিকে একটি প্রকোষ্ঠের দুইপাশে ও প্রবেশপথের দেওয়াল চিত্রায়িত। গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা সংক্রান্ত এই চিত্রগুলি গাঢ় বাদামী ও হলুদ রঙ দিয়ে আঁকা এবং আলচি বৌদ্ধবিহারের অন্যান্য চিত্রকলা থেকে ভিন্ন প্রকৃতির। ডানদিকের মিনারে বোধিসত্ত্ব মৈত্রেয়র একটি সাম্প্রতিক চিত্র অঙ্কিত রয়েছে। মিনার ও বারান্দার সামনে পরবর্তীকালে উঠোন তৈরী হয়। এই অংশের চিত্রগুলির বৈশিষ্ট্য সুমস্তেগ ভবনের চিত্রগুলির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলে যায়। এই অংশের মাঝখানে একটি ম্ছোদ-র্তেন অবস্থিত যার মধ্যে একটি অপেক্ষাকৃত ছোট ম্ছোদ-র্তেন বর্তমান। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ভবচক্রের চিত্র বর্তমান।[৪]:৭৮-৮০ দ্বাদশ শতাব্দীতে তৈরী এই মন্দিরের দ্বারদেশটি গৌতম বুদ্ধের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা সংবলিত কারুকার্যময় কাঠ দিয়ে তৈরী।[৭]

গ্সুম-ব্র্তসেগ্স[সম্পাদনা]

তিনতল বিশিষ্ট গ্সুম-ব্র্তসেগ্স মন্দিরটি পাথর দিয়ে নির্মিত একটি তিব্বতী স্থাপত্য, যদিও এই ভবনের কাঠের কাজ, চিত্রকলা ও মাটির মূর্তিগুলি কাশ্মীরি শিল্পীদের দ্বারা নির্মিত।[৮] একতলা ও দোতলার দেবালয়ের প্রত্যেকটির মাপ ৫.৪ মিটার (১৮ ফু) x ৫.৮ মিটার (১৯ ফু) এবং কুলুঙ্গিগুলি ২.১–২.৭ মিটার (৬.৯–৮.৯ ফু) চওড়া এবং ৪ মিটার (১৩ ফু) উচ্চ। কুলুঙ্গিগুলিতে প্রায় ৪ মিটার (১৩ ফু) উঁচু দন্ডায়মান তিনটি বোধিসত্ত্বের মূর্তি, প্রতি কুলুঙ্গিতে চারজন করে বৌদ্ধ দেবমূর্তি ও দুইজন করে দেবীমূর্তি বর্তমান। এই মন্দিরের তিনতলার মূল কাঠের দরজা বাদ দিলে বাকি অংশ অক্ষত রয়েছে। মন্দিরের তৃতীয় তলার পেছনের দিকে ৪.৬৩ মিটার (১৫.২ ফু) উচ্চ মৈত্রেয় বোধিসত্ত্বের চিত্র বর্তমান। এই চিত্রের ডানপাশে অবলোকিতেশ্বর এবং বামপাশে মঞ্জুশ্রীর চিত্র বর্তমান। এই চিত্রগুলির প্রত্যকটির চারটি করে হাত বিভিন্ন মুদ্রায় চিত্রায়িত। এই চিত্রগুলির পরিধানের বস্ত্রগুলিতে বিভিন্ন ঘটনা চিত্রায়িত করা আছে। মৈত্রেয় বোধিসত্ত্বের ধুতিতে গৌতম বুদ্ধের জীবন, অবলোকিতেশ্বরের ধুতিতে পবিত্র স্থান এবং মঞ্জুশ্রীর ধুতিতে চুরাশিজন মহাসিদ্ধের ছবি আঁকা রয়েছে।[১][৮][৯] মৈত্রেয় বোধিসত্ত্বের ধুতিতে গৌতম বুদ্ধের জীবন ১৫ সেন্টিমিটার (৫.৯ ইঞ্চি) মাপের আটচল্লিশটি গোলাকৃতি লাল রঙের পদকের ন্যায় আকৃতিতে চিত্রায়িত। গৌতম বুদ্ধের জীবনের চিত্রগুলি মৈত্রেয় বোধিসত্ত্বের ডান পা থেকে শুরু করে ক্রমানুসারে অণুভূমিকভাবে সজ্জিত পদকে নিচের দিকে গিয়ে বিপরীত পায়ের নীচ থেকে ওপরে চিত্রায়িত। দুই পায়ের মাঝের ধুতির অংশে চিত্রগুলি ওপর থেকে নিচের দিকে সজ্জিত।[১০]

'জাম-দ্পাল ল্হা-খাং[সম্পাদনা]

এই মন্দিরের মধ্য অবস্থিত চারটি মঞ্জুশ্রী মূর্তিকে কেন্দ্র করে ৫.৭ মিটার (১৯ ফু) x ৫.৭ মিটার (১৯ ফু) চতুর্ভূজাকৃতি এই ভবনটি গড়ে উঠেছে। ৮৫ সেন্টিমিটার (৩৩ ইঞ্চি) উচ্চ কেন্দ্রের মঞ্চটি থেকে চারটি স্তম্ভ নির্গত হয়েছে যা ছাদের পরস্পরছেদী কড়িকাঠকে ধরে রেখেছে। এই কেন্দ্রীয় মঞ্চের ওপর প্রায় ৯০ সেন্টিমিটার (৩৫ ইঞ্চি) উচ্চ সিংহাসন অবস্থিত যার ওপর চারটি মঞ্জুশ্রী মূর্তি পরস্পরের দিকে পিঠ রেখে বসে রয়েছে। এই মূর্তিগুলির চারপাশে বিভিন্ন জন্তু, দেবতা, মকর প্রভৃতির মূর্তি রয়েছে।[১১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Luczanits, Christian (২০০৪)। Buddhist sculpture in clay: early western Himalayan art, late 10th to early ...The Alchi Group of Monuments। Serindia Publications, Inc। পৃষ্ঠা 125–127। আইএসবিএন 1-932476-02-4। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-২১ 
  2. Benoy K. Behl (Oct. 23 - Nov. 05, 2004)। "Trans-Himalyan Murals"21 (22)। The Front Line: The Hindu। ২৯ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2010-01-17  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  3. "Alchi Monastery: Chos-'khor"। ২০১০-০৪-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-২০ 
  4. Christian Luczanits. 2011, The Early Buddhist Heritage of Ladakh Reconsidered; Ladakhi Histories, Local and Regional Perspctives, Edited by John Bray, Published: Library of Tibetan Arts and Archives Dharamsala, Himachal Pradesh, India;আইএসবিএন ৯৭৮-৯৩-৮০৩৫৯-৩৯-৭
  5. Goepper, Roger, 1990. Clues for a Dating of the Three-Storeyed Temple (Sumstek) in Alchi, Ladakh. Asiatische Studien: Zeitschrift der Schweizerischen Gesellschaft für Asienkunde/Études Asiatiques: Revue de la Société Suisse d'Études Asiatiques 44, 2:159-175
  6. Goepper, Roger, and Jaroslav Poncar. 1996. Alchi. Ladakh's idden Buddhist Sanctuary. The Sumstek. London:Serindia
  7. Snellgrove, David L., and Tadeusz Skorupski. 1977. The Cultural Heritage of Ladakh. Warminister:Aris and Phillips
  8. "High altitude art"। Chennai, India: The Hindu photo library। ২০০৫-০১-২৩। ২০০৫-০২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-২৩ 
  9. "Alchi Sumtseg"। Archived from the original on ২০০৪-০২-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-২৩ 
  10. "Three-Storeyed Temple"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৫ 
  11. "Alchi Mañjuśrī Temple"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৪-০৫ 

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Kapadia, Harish. (1999). Spiti: Adventures in the Trans-Himalaya. Second Edition. Indus Publishing Company, New Delhi. আইএসবিএন ৮১-৭৩৮৭-০৯৩-৪.
  • Janet Rizvi. (1996). Ladakh: Crossroads of High Asia. Second Edition. Oxford University Press, Delhi. আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৪৫৪৬-৪.
  • Cunningham, Alexander. (1854). LADĀK: Physical, Statistical, and Historical with Notices of the Surrounding Countries. London. Reprint: Sagar Publications (1977).
  • Francke, A. H. (1977). A History of Ladakh. (Originally published as, A History of Western Tibet, (1907). 1977 Edition with critical introduction and annotations by S. S. Gergan & F. M. Hassnain. Sterling Publishers, New Delhi.
  • Francke, A. H. (1914). Antiquities of Indian Tibet. Two Volumes. Calcutta. 1972 reprint: S. Chand, New Delhi.
  • Sarina Singh, et al. India. (2007). 12th Edition. Lonely Planet. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৭৪১০৪-৩০৮-২.
  • Schettler, Margaret & Rolf. (1981) Kashmir, Ladakh & Zanskar. Lonely Planet, South Yarra, Vic., Australia.
  • Tucci, Giuseppe. (1988). Rin-chen-bzan-po and the Renaissance of Buddhism in Tibet Around the Millennium. First Italian Edition 1932. First draft English translation by Nancy Kipp Smith, under the direction of Thomas J. Pritzker. Edited by Lokesh Chandra. English version of Indo-Tibetica II. Aditya Rakashan, New Delhi. আইএসবিএন ৮১-৮৫১৭৯-২১-২.
  • Pal, Pratapaditya & Lionel Fournier (1982) A Buddhist Paradise: The Murals of Alchi - Western Himalayas. Hong Kong, Visual Dharma Publ.
  • Goepper, Roger (1990) 'Clues for a Dating of the Three-Storeyed Temple (Sumtsek) in Alchi, Ladakh.' Asiatische Studien: Zeitschrift der Schweizerischen Gesellschaft für Asienkunde / Études Asiatiques: Revue de la Société Suisse d'Études Asiatiques 44 (2): 159–75.
  • Goepper, Roger & Jaroslav Poncar (1996) Alchi. Ladakh's hidden Buddhist sanctuary. The Sumtsek. London, Serindia.
  • Goepper, Roger. 1999. Akshobhya and His Paradise: Murals in the Dukhang of Alchi. Orientations 30 (1):16–21.
  • Linrothe, Rob (2001) Group Portrait: Mahasiddhas in the Alchi Sumtsek. Embodying Wisdom. Art, Text and Interpretation in the History of Esoteric Buddhism, edited by Rob Linrothe & Henrik H. Sørensen. SBS Monographs, Vol. 6. Copenhagen, The Seminar for Buddhist Studies: 185-208.
  • Tropper, Kurt. 1996. Die Akshobhyayuhasutra-Inschrift in Alchi. Ein Beitrag zur Kanjurforschung. MA (Diplomarbeit), Institute of Tibetan and Buddhist Studies, Vienna University, Vienna.

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]