হামবুর্গ

স্থানাঙ্ক: ৫৩°৩৩′৫৫″ উত্তর ১০°০০′০৫″ পূর্ব / ৫৩.৫৬৫২৮° উত্তর ১০.০০১৩৯° পূর্ব / 53.56528; 10.00139
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হামবুর্গ
Hamburg
জার্মানির রাজ্য
হামবুর্গের পতাকা
পতাকা
হামবুর্গের প্রতীক
প্রতীক
স্থানাঙ্ক: ৫৩°৩৩′৫৫″ উত্তর ১০°০০′০৫″ পূর্ব / ৫৩.৫৬৫২৮° উত্তর ১০.০০১৩৯° পূর্ব / 53.56528; 10.00139
দেশ জার্মানি
সরকার
 • প্রথম মেয়রOlaf Scholz (SPD)
 • শাসক দলSPD
 • বুনডেসরাটে ভোট3 (of 69)
আয়তন
 • শহর৭৫৫ বর্গকিমি (২৯২ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (2011-09-31)[১]
 • শহর১৭,৯৬,০৭৭
 • জনঘনত্ব২,৪০০/বর্গকিমি (৬,২০০/বর্গমাইল)
 • মহানগর৪৩,০০,০০০
সময় অঞ্চলসিইটি (ইউটিসি+১)
 • গ্রীষ্মকালীন (দিসস)সিইডিটি (ইউটিসি+২)
পোস্ট কোড20001–21149, 22001–22769
এরিয়া কোড040
আইএসও ৩১৬৬ কোডDE-HH
যানবাহন নিবন্ধনHH (1906–1945; again since 1956)
MGH (1945); H (1945–1947), HG (1947); BH (1948–1956)
জিডিপি/নামমাত্র€ 88.31 বিলিয়ন (2010)[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বাদাম অঞ্চলDE6
ওয়েবসাইটhamburg.de
সেন্টিনেল -২ বি স্যাটেলাইট থেকে দেখা হামবুর্গ

হামবুর্গ (জার্মান: Hamburg) উত্তর মধ্য জার্মানির শহর। শহরটি উত্তর সাগরের কাছে এলবে ও আলস্টার নদীর তীরে অবস্থিত। এর পূর্ণ নাম স্বাধীন হানজেয়াটীয় হামবুর্গ শহর (জার্মান: Freie und Hansestadt Hamburg; টেমপ্লেট:Lang-nds)।[২] হামবুর্গ শহরের হামবুর্গ বন্দর ইউরোপের ২য় ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর এবং একটি প্রধান বাণিজ্যিক, শিল্প ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১৯৩৭ সাল থেকে শহরটি হামবুর্গ অঙ্গরাজ্যের রাজধানী। বার্লিনের পরেই হামবুর্গ জার্মানির ২য় বৃহত্তম শহর। হামবুর্গ মূল শহরে ১৭ লক্ষ এবং বৃহত্তর হামবুর্গ এলাকাতে ৪৩ লক্ষ লোকের বাস। এটি অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে সমগ্র উত্তর জার্মানির কেন্দ্র। হামবুর্গ একাধারে একটি শহর এবং জার্মানির একটি রাজ্য। শহরটি আয়তনে প্যারিস শহরের ছয়গুণ।

আলস্টার নদীর পূর্ব তীরে হামবুর্গের প্রাচীন অংশটি অবস্থিত। পশ্চিম তীরে নতুন শহর ও অনেকগুলি শহরতলী গড়ে উঠেছে। পুরনো শহরে হামবুর্গের বাণিজ্যিক কেন্দ্রটি অবস্থিত এবং এর মধ্যে দিয়ে অনেকগুলি খাল চলে গেছে। হামবুর্গ শহরের খাল ও এগুলির উপর নির্মিত অসংখ্য সেতু শহরটির একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। হামবুর্গে ২৩০২টি সেতু আছে, যা আমস্টার্ডাম ও ভেনিসের সম্মিলিত সেতুসংখ্যার চেয়েও বেশি। ১৯৭৫ সালে এলবে নদীর উপর নির্মিত কোলব্রান্ডব্রুকে নামের সাসপেনশন বা ঝুলন্ত সেতুটি শহরের একটি উল্লেখযোগ্য স্থাপনা। আলস্টার নদীর মোহনায় বাঁধ দেবার ফলে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আলস্টার নামের দুইটি হ্রদ তৈরি হয়েছে। পুরনো শহরে প্রাচীন কেল্লা বা গড়গুলিকে বাগানের নেটওয়ার্ক ও বেড়ানোর জায়গায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। আরও আছে হপ্‌ফমার্কট, যা একটি বৃহৎ উন্মুক্ত চত্বর। উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক ভবনের মধ্যে আছে ১৮৯৭ সালে নির্মিত র‌্যনেসাঁস ধাঁচের সিটি হল, ১২শ শতকের সেন্ট পিটারের গির্জা, ১৩শ-১৫শ শতকের সেন্ট জেমসের গির্জা, ১৪শ-১৫শ শতকের সেন্ট ক্যাথেরিনের গির্জা, এবং ১৮শ শতকের উঁচু চুড়াবিশিষ্ট সেন্ট মিখায়েলের গির্জা। হামবুর্গ শহরে সুরকার ফেলিক্স মেন্ডেলজোন এবং ইয়োহানেস ব্রাম্‌স জন্মগ্রহণ করেন। শহরের আল্টোনা অংশে কবি ও নাট্যকার ফ্রিডরিশ গটলিব ক্লপষ্টক সমাধিস্থ আছেন।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ডেনীয় ও স্লাভদের উপর্যুপরি ধ্বংসাত্মক আক্রমণের পরেও হামবুর্গ টিকে থাকে এবং ১১৮৯ সালে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের থেকে স্বীকৃতি লাভ করে। তৃতীয় ক্রুসেডে অবদান রাখার জন্য শহরটিকে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সুবিধাদি প্রদান করা হয়। ১২৪১ সালে লুবেক শহরের সাথে এবং ১২৪৯ সালে ব্রেমেন শহরের সাথে চুক্তির ফলে হানজেয়াটিক লীগের জন্ম হয়। হামবুর্গ এই লীগের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ধনী শহরে পরিণত হয়। ১৫২৯ সালে হামবুর্গের জনগণ রিফর্মেশন মেনে নেয় এবং শহরটি লুথারীয়, ক্যালভিনীয়, এবং ইহুদী উদ্বাস্তুদের আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৬১৮-১৬৪৮ পর্যন্ত ত্রিশ বছরের যুদ্ধে শহরটির বাণিজ্যিক উন্নতি ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। ১৭৮৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে অবস্থার সাময়িক উন্নতি ঘটে। কিন্তু নেপোলিয়নীয় যুদ্ধসমূহের সময় (১৭৯৯-১৮১৫) এই উন্নতির সমাপ্তি ঘটে। ১৮১১ সালে নেপোলিয়নের সেনারা শহরটি দখল করে।

নেপোলিয়নের পতনের পর হামবুর্গ আবার মুক্ত শহরে পরিণত হয় এবং ১৮১৫ সালে জার্মান কনফেডারেশনের সদস্য হয়। শহরটি ফরাসি দখলের সময়কার প্রভাব কাটিয়ে ওঠে। ১৮৪২ সালে চারদিনব্যাপী এক অগ্নিকাণ্ডও হামবুর্গের সম্প্রসারণে তেমন বাধা দেয়নি। ১৮৯২ সালে এক কলেরা মহামারীতে এখানে ৮৬০৫ জন মারা যায়। ১৯১৮ সালের নভেম্বরে হামবুর্গে জনতার বিপ্লব দিয়ে জার্মান সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়। ১৯১৮-১৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য শহরটি একটি সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে পরিচিত ছিল। ১৯৩৮ সালে পার্শ্ববর্তী আল্টোনা, হারবুর্গ এবং ভান্ডসবেক শহরগুলি হামবুর্গের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় হামবুর্গকে একটি ডুবোজাহাজ ঘাঁটি এবং যুদ্ধের একটি বড় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। শহরটির উপর মিত্রশক্তিরা ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে এবং ফলে শহরের বহু ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বহু লোক মারা যায়। যুদ্ধের পর এটিকে আবার গড়ে তোলা হয় এবং ১৯৫০-এর দশক নাগাদ এটি একটি সুন্দর, বর্ধমান মহানগরে পরিণত হয়। বর্তমানে এখানে ১৭ লক্ষেরও বেশি লোক বাস করেন।

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

শহরের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে আছে কুন্‌স্টহালে নামের জাদুঘর, যেখানে ১৯শ ও ২০শ শতকের চিত্রকর্মের বিরাট সংগ্রহ আছে। আরও আছে হস্তশিল্প ও সজ্জাশিল্পের জাদুঘর, একটি জাতিতত্ত্ব জাদুঘর যেখানে দক্ষিণ সাগর, আফ্রিকান, এবং সাইবেরীয় নিদর্শন আছে, হামবুর্গের ইতিহাস জাদুঘর, একটি আধুনিক অপেরা হাউজ, যা সমসাময়িক কালের অপেরা পরিবেশনের জন্য বিখ্যাত এবং অনেকগুলি থিয়েটার বা নাট্যমঞ্চ। হামবুর্গে একটি বড় চিড়িয়াখানা ও একটি বোটানিকাল গার্ডেন আছে। এখানকার সাংকট পাউলি বিনোদন পাড়াটিতে রেপারবান নামের সড়কের ধার ঘেঁষে বহু নাইটক্লাব আছে। শহরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, একাধিক চিকিৎসা ইন্সটিটিউট, এবং সামুদ্রিক স্থাপত্যের একটি স্কুল আছে। এখানে ৮০টিরও বেশি বিদেশী দূতাবাস বিদ্যমান। বেতার ও টিভির অনুষ্ঠান এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের দিক থেকেও এটি একটি নেতৃস্থানীয় কেন্দ্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহর হামবুর্গের ভগ্নী শহর। এই শহরেরই এক নাইটক্লাবে বিখ্যাত ব্রিটিশ সঙ্গীত ব্যান্ড দ্য বিটলস যাত্রা শুরু করে।

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

হামবুর্গ জার্মানির প্রধান সমুদ্র বন্দর এবং একটি প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সমুদ্রগামী জাহাজ পরিচালনার জন্য বিশাল ব্যবস্থাবিশিষ্ট বন্দরটি রেলপথ ও অভ্যন্তরীণ নৌপথের মাধ্যমে মধ্য ইউরোপের বেশির ভাগ এলাকার সাথে সংযুক্ত। হামবুর্গে একটি বিরাট মৎস্যশিকারী নৌকাবহর আছে। এখানে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের বিরাট বিরাট কারখানা আছে। এখানকার কলকারখানায় শোধিত পেট্রোলিয়াম, রাসায়নিক দ্রব্যাদি, যন্ত্রপাতি, ধাতব দ্রব্য, এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদন করা হয়। হামবুর্গ মুদ্রণ ও প্রকাশনা শিল্পের একটি প্রধান কেন্দ্র।

ধর্ম[সম্পাদনা]

৮০৮ সালে রাজা শার্লমাইন এখানে হাম্মাবুর্গ দুর্গ স্থাপন করেন। স্থানীয় লোকদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত করার লক্ষ্যে ৮১১ সালে তিনি দুর্গের অদূরেই একটি গির্জা নির্মাণ করেন। এই গির্জাটি শীঘ্রই উত্তর ইউরোপের মানুষদের খ্রিস্টীয়করণের মূল কেন্দ্রে পরিণত হয়। বিরোধীরা প্রায়ি এটিকে আক্রমণ করত। ৮৩৪ সালে এখানে একজন বিশপকে দায়িত্ব দেয়া হয়, তবে ৮৪৭ সালে নর্সদের আক্রমণে শহরটি ধ্বংস হয়ে গেলে নিকটবর্তী ব্রেমেনে বিশপের কর্মস্থল স্থানান্তর করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "State population"Portal of the Federal Statistics Office Germany। ২০১২-০৩-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-০৩ 
  2. Verfassung der Freien und Hansestadt Hamburg [Constitution of Hamburg] (জার্মান ভাষায়) (11th সংস্করণ), ৬ জুন ১৯৫২, ১০ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০০৮ .

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]