বিজন ভট্টাচার্য: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
WikitanvirBot I (আলোচনা | অবদান)
বট কসমেটিক পরিবর্তন করছে; কোনো সমস্যা?
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Image:Bijon bhattacharya.jpg|thumb|বিজন ভট্টাচার্য নবান্ন নাটকে]]
[[চিত্র:Bijon bhattacharya.jpg|thumb|বিজন ভট্টাচার্য নবান্ন নাটকে]]
'''বিজন ভট্টাচার্য''' ([[জুলাই ১৭]], [[১৯১৭]] [[ফরিদপুর]], [[বাংলাদেশ]] - [[জানুয়ারি]], [[১৯৭৮]]) একজন [[বাঙালি]] নাট্যব্যক্তিত্ব।
'''বিজন ভট্টাচার্য''' ([[জুলাই ১৭]], [[১৯১৭]] [[ফরিদপুর]], [[বাংলাদেশ]] - [[জানুয়ারি]], [[১৯৭৮]]) একজন [[বাঙালি]] নাট্যব্যক্তিত্ব।


==নাট্যজীবন==
== নাট্যজীবন ==
বিজন ভট্টাচার্যের নাট্যজীবনের শুরু হয় [[১৯৪০]] এর দশকে। প্রচলিত বাণিজ্যিক থিয়েটারের ধারার বাইরে স্বতন্ত্র নাট্য আন্দোলনের সূচনা করেন কিছু ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখক শিল্পী গোষ্ঠী । এঁদেরই সাংস্কৃতিক শাখা ছিল [[ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ]] বা ইণ্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েসন যা আইপিটিএ নামে বেশি পরিচিত। বিজন ভট্টাচার্য ছিলেন এই গণনাট্য সঙ্ঘের প্রথম সারির নাট্যকর্মী।
বিজন ভট্টাচার্যের নাট্যজীবনের শুরু হয় [[১৯৪০]] এর দশকে। প্রচলিত বাণিজ্যিক থিয়েটারের ধারার বাইরে স্বতন্ত্র নাট্য আন্দোলনের সূচনা করেন কিছু ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখক শিল্পী গোষ্ঠী । এঁদেরই সাংস্কৃতিক শাখা ছিল [[ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ]] বা ইণ্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েসন যা আইপিটিএ নামে বেশি পরিচিত। বিজন ভট্টাচার্য ছিলেন এই গণনাট্য সঙ্ঘের প্রথম সারির নাট্যকর্মী।
চিন্তা, চেতনা এবং সংগ্রামের প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনার দিশারী ছিল ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ। বিজন ভট্টাচার্যের নাটক রচনা, অভিনয় এবং নির্দেশনা সাফল্য লাভ করেছিল এই গণনাট্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।
চিন্তা, চেতনা এবং সংগ্রামের প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনার দিশারী ছিল ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ। বিজন ভট্টাচার্যের নাটক রচনা, অভিনয় এবং নির্দেশনা সাফল্য লাভ করেছিল এই গণনাট্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।


গণনাট্য সঙ্ঘের (সেই সময় ফ্যাসিবিরোধী লেখক শিল্পী সঙ্ঘ) প্রথম নাটক [[আগুন (নাটক)|আগুন]] বিজন ভট্টাচার্যের রচনা । এই নাটকটি [[১৯৪৩]] সালে মঞ্চস্থ হয়েছিল। [[১৯৪৪]] সালে তাঁর লেখা নাটক [[জবানবন্দী (নাটক)|জবানবন্দী]] এবং [[নবান্ন (নাটক)|নবান্ন]] অভিনীত হয়েছিল। এই নাটকগুলিতে তিনি প্রধান অভিনেতা এবং নির্দেশকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
গণনাট্য সঙ্ঘের (সেই সময় ফ্যাসিবিরোধী লেখক শিল্পী সঙ্ঘ) প্রথম নাটক [[আগুন (নাটক)|আগুন]] বিজন ভট্টাচার্যের রচনা । এই নাটকটি [[১৯৪৩]] সালে মঞ্চস্থ হয়েছিল। [[১৯৪৪]] সালে তাঁর লেখা নাটক [[জবানবন্দী (নাটক)|জবানবন্দী]] এবং [[নবান্ন (নাটক)|নবান্ন]] অভিনীত হয়েছিল। এই নাটকগুলিতে তিনি প্রধান অভিনেতা এবং নির্দেশকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।


[[১৯৪৪]] সালের ২৪ অক্টোবর শ্রীরঙ্গম মঞ্চে নবান্নের প্রথম অভিনয় হয়। এই নাটকটির পটভূমিকা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্থিরতা, [[১৯৪২]] সালের আগস্ট আন্দোলন, [[পঞ্চাশের মন্বন্তর]] এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। গণনাট্য আন্দোলন এবং বিজন ভট্টাচার্যের নাটক বাংলা নাটক রচনা এবং অভিনয়ের এক যুগবদলের সূচনা করে।
[[১৯৪৪]] সালের ২৪ অক্টোবর শ্রীরঙ্গম মঞ্চে নবান্নের প্রথম অভিনয় হয়। এই নাটকটির পটভূমিকা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্থিরতা, [[১৯৪২]] সালের আগস্ট আন্দোলন, [[পঞ্চাশের মন্বন্তর]] এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। গণনাট্য আন্দোলন এবং বিজন ভট্টাচার্যের নাটক বাংলা নাটক রচনা এবং অভিনয়ের এক যুগবদলের সূচনা করে।
১৪ নং লাইন: ১৪ নং লাইন:
[[১৯৭০]] সালে তিনি [[ক্যালকাটা থিয়েটার]] ছেড়ে দিয়ে [[কবচ-কুণ্ডল]] নামে নতুন দল গঠন করেন। এখানে তাঁর রচিত নাটকগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল [[কৃষ্ণপক্ষ (নাটক)|কৃষ্ণপক্ষ]], [[আজবসন্ত]], [[চলো সাগরে]], [[লাস ঘুইর‌্যা যাউক]] প্রভৃতি।
[[১৯৭০]] সালে তিনি [[ক্যালকাটা থিয়েটার]] ছেড়ে দিয়ে [[কবচ-কুণ্ডল]] নামে নতুন দল গঠন করেন। এখানে তাঁর রচিত নাটকগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল [[কৃষ্ণপক্ষ (নাটক)|কৃষ্ণপক্ষ]], [[আজবসন্ত]], [[চলো সাগরে]], [[লাস ঘুইর‌্যা যাউক]] প্রভৃতি।


==পারিবারিক জীবন==
== পারিবারিক জীবন ==
বিখ্যাত লেখিকা [[জ্ঞানপীঠ]] পুরস্কার বিজয়ী [[মহাশ্বেতা দেবী]] বিজন ভট্টাচার্যের স্ত্রী। তবে পরবর্তীকালে তাঁরা বিবাহ বিচ্ছিন্ন হন। তাঁদের এক সন্তান [[নবারুণ ভট্টাচার্য]] যিনি ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নবারুণ ভট্টাচার্য একজন [[সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার]] প্রাপ্ত লেখক এবং কবি।
বিখ্যাত লেখিকা [[জ্ঞানপীঠ]] পুরস্কার বিজয়ী [[মহাশ্বেতা দেবী]] বিজন ভট্টাচার্যের স্ত্রী। তবে পরবর্তীকালে তাঁরা বিবাহ বিচ্ছিন্ন হন। তাঁদের এক সন্তান [[নবারুণ ভট্টাচার্য]] যিনি ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নবারুণ ভট্টাচার্য একজন [[সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার]] প্রাপ্ত লেখক এবং কবি।


==সমালোচনা ও কৃতিত্ব==
== সমালোচনা ও কৃতিত্ব ==
বিজন ভট্টাচার্য মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা ও বাঁচবার কথা তাঁর নাটকগুলির মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তিনি এই ভাবনা থেকে সরে যান। গণনাট্য সঙ্ঘ ত্যাগ এবং নিজের নাটকের দল একাধিক বার ভেঙে গড়ে তিনি তৈরি করেন। ক্রমে মার্কসীয় দর্শনের পরিবর্তে বা সঙ্গে তাঁর রচনায় লোকায়ত ধর্ম দর্শন, হিন্দু ধর্মের সমন্বয় প্রয়াসী মানসিকতা কাজ করেছিল। চিরকালীন মাতৃকা ভাবনা তাঁর নাটকে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়।
বিজন ভট্টাচার্য মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা ও বাঁচবার কথা তাঁর নাটকগুলির মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তিনি এই ভাবনা থেকে সরে যান। গণনাট্য সঙ্ঘ ত্যাগ এবং নিজের নাটকের দল একাধিক বার ভেঙে গড়ে তিনি তৈরি করেন। ক্রমে মার্কসীয় দর্শনের পরিবর্তে বা সঙ্গে তাঁর রচনায় লোকায়ত ধর্ম দর্শন, হিন্দু ধর্মের সমন্বয় প্রয়াসী মানসিকতা কাজ করেছিল। চিরকালীন মাতৃকা ভাবনা তাঁর নাটকে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়।


২৪ নং লাইন: ২৪ নং লাইন:
নাট্যনির্দেশক হিসাবেও তিনি সমান সফল ছিলেন। গণনাট্য সঙ্ঘে তাঁর নাটক [[জবানবন্দী (নাটক)|জবানবন্দী]] এবং [[নবান্ন (নাটক)|নবান্ন]] ছিল অসাধারণ দুটি প্রযোজনা। পরে তিনি তাঁর নিজের গ্রুপ থিয়েটারেও বহু নাটকের সফল প্রযোজক এবং নির্দেশক ছিলেন।
নাট্যনির্দেশক হিসাবেও তিনি সমান সফল ছিলেন। গণনাট্য সঙ্ঘে তাঁর নাটক [[জবানবন্দী (নাটক)|জবানবন্দী]] এবং [[নবান্ন (নাটক)|নবান্ন]] ছিল অসাধারণ দুটি প্রযোজনা। পরে তিনি তাঁর নিজের গ্রুপ থিয়েটারেও বহু নাটকের সফল প্রযোজক এবং নির্দেশক ছিলেন।


==রচিত নাটক==
== রচিত নাটক ==
{|
{|
|
|
*[[আগুন]](১৯৪৩)
* [[আগুন]](১৯৪৩)
*[[জবানবন্দী (নাটক)|জবানবন্দী]] (১৯৪৩)
* [[জবানবন্দী (নাটক)|জবানবন্দী]] (১৯৪৩)
*[[নবান্ন (নাটক)|নবান্ন]] (১৯৪৪)
* [[নবান্ন (নাটক)|নবান্ন]] (১৯৪৪)
*[[জীয়নকন্যা]] (১৯৪৫)
* [[জীয়নকন্যা]] (১৯৪৫)
*[[মরাচাঁদ]] (১৯৪৬)
* [[মরাচাঁদ]] (১৯৪৬)
*[[অবরোধ]](১৯৪৭)
* [[অবরোধ]](১৯৪৭)
|
|
*[[কলঙ্ক]](১৯৫০)
* [[কলঙ্ক]](১৯৫০)
*[[জননেতা]](১৯৫০)
* [[জননেতা]](১৯৫০)
*[[জতুগৃহ]](১৯৫২)
* [[জতুগৃহ]](১৯৫২)
*[[মাস্টারমশাই]](১৯৬১)
* [[মাস্টারমশাই]](১৯৬১)
*[[গোত্রান্তর (নাটক)|গোত্রান্তর]] (১৯৬১)
* [[গোত্রান্তর (নাটক)|গোত্রান্তর]] (১৯৬১)
*[[ছায়াপথ (নাটক)|ছায়াপথ]] (১৯৬১)
* [[ছায়াপথ (নাটক)|ছায়াপথ]] (১৯৬১)
|
|
*[[দেবীগর্জন]] (১৯৬৬)
* [[দেবীগর্জন]] (১৯৬৬)
*[[কৃষ্ণপক্ষ (নাটক)|কৃষ্ণপক্ষ]] (১৯৬৬)
* [[কৃষ্ণপক্ষ (নাটক)|কৃষ্ণপক্ষ]] (১৯৬৬)
*[[ধর্মগোলা]] (১৯৬৭)
* [[ধর্মগোলা]] (১৯৬৭)
*[[গর্ভবতী জননী (নাটক)|গর্ভবতী জননী]] (১৯৬৯)
* [[গর্ভবতী জননী (নাটক)|গর্ভবতী জননী]] (১৯৬৯)
*[[আজ বসন্ত]] (১৯৭০)
* [[আজ বসন্ত]] (১৯৭০)
*[[লাস ঘুইর‌্যা যাউক]] (১৯৭০)
* [[লাস ঘুইর‌্যা যাউক]] (১৯৭০)
|
|
*[[স্বর্ণকুম্ভ]](১৯৭০)
* [[স্বর্ণকুম্ভ]](১৯৭০)
*[[চলো সাগরে]] (১৯৭২)
* [[চলো সাগরে]] (১৯৭২)
*[[চুল্লি]](১৯৭৪)
* [[চুল্লি]](১৯৭৪)
*[[হাঁসখালির হাঁস]] (১৯৭৬)
* [[হাঁসখালির হাঁস]] (১৯৭৬)
|}
|}


==তথ্যসূত্র==
== তথ্যসূত্র ==
{{reflist}}
{{reflist}}
*বাংলা থিয়েটারের ইতিহাস – দর্শন চৌধুরী
* বাংলা থিয়েটারের ইতিহাস – দর্শন চৌধুরী
*[http://revolutionarydemocracy.org/rdv5n2/devi.htm মহাশ্বেতা দেবীর সাক্ষাৎকার]
* [http://revolutionarydemocracy.org/rdv5n2/devi.htm মহাশ্বেতা দেবীর সাক্ষাৎকার]
*[http://www.imdb.com/name/nm0080346/ আইএমডিবিতে বিজন ভট্টাচার্য]
* [http://www.imdb.com/name/nm0080346/ আইএমডিবিতে বিজন ভট্টাচার্য]


==বহিঃসংযোগ==
== বহিঃসংযোগ ==
* {{IMDb name|0080346}}
* {{IMDb name|0080346}}
*[http://revolutionarydemocracy.org/rdv5n2/devi.htm Interview with Mahashweta Devi]
* [http://revolutionarydemocracy.org/rdv5n2/devi.htm Interview with Mahashweta Devi]


{{Bengali Theatre}}
{{Bengali Theatre}}

১৪:৩৬, ৭ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

বিজন ভট্টাচার্য নবান্ন নাটকে

বিজন ভট্টাচার্য (জুলাই ১৭, ১৯১৭ ফরিদপুর, বাংলাদেশ - জানুয়ারি, ১৯৭৮) একজন বাঙালি নাট্যব্যক্তিত্ব।

নাট্যজীবন

বিজন ভট্টাচার্যের নাট্যজীবনের শুরু হয় ১৯৪০ এর দশকে। প্রচলিত বাণিজ্যিক থিয়েটারের ধারার বাইরে স্বতন্ত্র নাট্য আন্দোলনের সূচনা করেন কিছু ফ্যাসিবাদ বিরোধী লেখক শিল্পী গোষ্ঠী । এঁদেরই সাংস্কৃতিক শাখা ছিল ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ বা ইণ্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েসন যা আইপিটিএ নামে বেশি পরিচিত। বিজন ভট্টাচার্য ছিলেন এই গণনাট্য সঙ্ঘের প্রথম সারির নাট্যকর্মী। চিন্তা, চেতনা এবং সংগ্রামের প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনার দিশারী ছিল ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ। বিজন ভট্টাচার্যের নাটক রচনা, অভিনয় এবং নির্দেশনা সাফল্য লাভ করেছিল এই গণনাট্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।

গণনাট্য সঙ্ঘের (সেই সময় ফ্যাসিবিরোধী লেখক শিল্পী সঙ্ঘ) প্রথম নাটক আগুন বিজন ভট্টাচার্যের রচনা । এই নাটকটি ১৯৪৩ সালে মঞ্চস্থ হয়েছিল। ১৯৪৪ সালে তাঁর লেখা নাটক জবানবন্দী এবং নবান্ন অভিনীত হয়েছিল। এই নাটকগুলিতে তিনি প্রধান অভিনেতা এবং নির্দেশকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

১৯৪৪ সালের ২৪ অক্টোবর শ্রীরঙ্গম মঞ্চে নবান্নের প্রথম অভিনয় হয়। এই নাটকটির পটভূমিকা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অস্থিরতা, ১৯৪২ সালের আগস্ট আন্দোলন, পঞ্চাশের মন্বন্তর এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। গণনাট্য আন্দোলন এবং বিজন ভট্টাচার্যের নাটক বাংলা নাটক রচনা এবং অভিনয়ের এক যুগবদলের সূচনা করে।

১৯৪৮ সাল থেকে গণনাট্য সঙ্ঘের সঙ্গে বিজন ভট্টাচার্যের মতান্তর ঘটে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ তিনি বোম্বাইতে হিন্দি সিনেমার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। ১৯৫০ সালে তিনি আবার বাংলায় ফিরে আসেন এবং নিজের নাটকের দল ক্যালকাটা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন। এখানেও তিনি নাট্যকার, প্রধান অভিনেতা এবং নির্দেশকের ভূমিকা পালন করেন। এই থিয়েটারে তাঁর রচিত নাটকের মধ্যে অন্যতম ছিল কলঙ্ক, গোত্রান্তর, মরাচাঁদ, দেবী গর্জন, গর্ভবতী জননী প্রভৃতি।

১৯৭০ সালে তিনি ক্যালকাটা থিয়েটার ছেড়ে দিয়ে কবচ-কুণ্ডল নামে নতুন দল গঠন করেন। এখানে তাঁর রচিত নাটকগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কৃষ্ণপক্ষ, আজবসন্ত, চলো সাগরে, লাস ঘুইর‌্যা যাউক প্রভৃতি।

পারিবারিক জীবন

বিখ্যাত লেখিকা জ্ঞানপীঠ পুরস্কার বিজয়ী মহাশ্বেতা দেবী বিজন ভট্টাচার্যের স্ত্রী। তবে পরবর্তীকালে তাঁরা বিবাহ বিচ্ছিন্ন হন। তাঁদের এক সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্য যিনি ১৯৪৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। নবারুণ ভট্টাচার্য একজন সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক এবং কবি।

সমালোচনা ও কৃতিত্ব

বিজন ভট্টাচার্য মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী ছিলেন। কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের জীবন সংগ্রামের কথা ও বাঁচবার কথা তাঁর নাটকগুলির মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে তিনি এই ভাবনা থেকে সরে যান। গণনাট্য সঙ্ঘ ত্যাগ এবং নিজের নাটকের দল একাধিক বার ভেঙে গড়ে তিনি তৈরি করেন। ক্রমে মার্কসীয় দর্শনের পরিবর্তে বা সঙ্গে তাঁর রচনায় লোকায়ত ধর্ম দর্শন, হিন্দু ধর্মের সমন্বয় প্রয়াসী মানসিকতা কাজ করেছিল। চিরকালীন মাতৃকা ভাবনা তাঁর নাটকে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়।

অভিনেতা হিসাবে বিজন ভট্টাচার্য অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। নানারকম চরিত্রকে মূর্ত করে তুলতে তিনি দক্ষ ছিলেন । নানা উপভাষার সংলাপ উচ্চারণেও তিনি সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য চরিত্রের মধ্যে ছিল বেন্দা (জবানবন্দী), প্রধান সমাদ্দার (নবান্ন), পবন ও কেতকাদাস (মরাচাঁদ), হরেন মাস্টার (গোত্রান্তর), প্রভঞ্জন (দেবীগর্জন), মামা (গর্ভবতী জননী), কেদার (আজ বসন্ত), সুরেন ডাক্তার (চলো সাগরে) প্রভৃতি।

নাট্যনির্দেশক হিসাবেও তিনি সমান সফল ছিলেন। গণনাট্য সঙ্ঘে তাঁর নাটক জবানবন্দী এবং নবান্ন ছিল অসাধারণ দুটি প্রযোজনা। পরে তিনি তাঁর নিজের গ্রুপ থিয়েটারেও বহু নাটকের সফল প্রযোজক এবং নির্দেশক ছিলেন।

রচিত নাটক

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ