হৈসলের পবিত্র স্থাপত্য-সমাহার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হৈসলের পবিত্র স্থাপত্য-সমাহার
ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
অবস্থানকর্ণাটক, ভারত
মানদণ্ডসাংস্কৃতিক: i, ii, iv
সূত্র১৬৭০
তালিকাভুক্তকরণ২০২৩ (৪৭তম সভা)

হৈসলের পবিত্র স্থাপত্য-সমাহার হল বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে স্বীকৃত দক্ষিণ ভারতের হৈসল-শৈলীর তিনটি মন্দির, যেগুলি হৈসল সাম্রাজ্যের অধীনে ১২তম শতাব্দী থেকে ১৩তম শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। মন্দির তিনটির স্থাপত্য-শৈলীটি প্রারম্ভিক হৈসলের শাসকগণ - যারা তাদের নতুন রাজ্য ও শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন - দ্বারা একটি স্বতন্ত্র ও অভিনব পবিত্র স্থাপত্য হিসাবে বিকশিত হয়েছিল, যা মন্দিরগুলিকে সমসাময়িক রাজ্য ও রাজবংশসমূহের থেকে আলাদা করে।

অসামান্য স্থাপত্য, অতি-বাস্তব ভাস্কর্য ও পাথরের খোদাইয়ের কারণে, হৈসলের পবিত্র স্থাপত্য-সমাহার শিরোনামে মন্দির তিনটি ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নথিভুক্ত করা হয়েছিল।[১]

অবস্থান[সম্পাদনা]

হৈসলের পবিত্র স্থাপত্য-সমাহার কর্ণাটকের দুটি জেলার তিনটি স্থানে অবস্থিত। হাসান জেলায় দুটি মন্দির এবং মহীশূর জেলায় একটি মন্দির রয়েছে।

চেন্নাকেশব মন্দিরটি হাসান জেলার কার্যালয় হাসান শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার (২২ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে বেলুরুর অবস্থিত। মন্দিরটি হালেবিদু মন্দির থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার (৯.৯ মাইল) দূরে। মন্দিরের নিকটবর্তী বিমানবন্দর হল বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর, বিমানবন্দর থেকে পশ্চিমে অগ্রসর ৭৫ নং জাতীয় সড়কের মধ্যমে প্রায় ২২০ কিলোমিটার (১৩৭ মাইল) দীর্ঘ পথ প্রায় ৩.৫ ঘন্টার গাড়ি যাত্রায় পৌঁছানো যায়। হৈসলেশ্বর মন্দিরটি কর্ণাটক রাজ্যের হাসান জেলার হালেবিড়ু শহরে অবস্থিত। এটি হাসানের প্রায় ৩০ কিলোমিটার (১৯ মা) উত্তর-পশ্চিমে এবং বেলুরুর মন্দির থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার (৯.৯ মা) দূরে অবস্থিত। বেঙ্গালুরু বিমানবন্দর থেকে পশ্চিমে অগ্রসর ৭৫ নং জাতীয় সড়কের মধ্যমে প্রায় ২১০ কিলোমিটার (১৩০ মা) দীর্ঘ পথ প্রায় ৪ ঘন্টার গাড়ি যাত্রায় মন্দিরে পৌঁছানো যায়। হাসান জেলার মন্দির দুটির হল নিকটবর্তী শহর হল হাসান, যা কর্ণাটকের প্রধান শহরগুলির সঙ্গে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক দ্বারা সংযুক্ত।

কেশব মন্দিরটি মাইসুরু শহর থেকে ৩৮ কিলোমিটার (২৪ মাইল) পূর্বে সোমনাথপুরায় অবস্থিত।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

হৈসল রাজবংশ ১১তম শতাব্দী থেকে ১৪তম শতাব্দীর মধ্যে বর্তমান কর্ণাটক রাজ্যের বিশাল অংশ শাসন করেছিল। ১২তম শতাব্দীর শেষের দিকে, তারা তাদের রাজ্যের কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে প্রসারিত করেছিল এবং কর, রাজস্ব ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাও স্থাপন করতে শুরু করেছিল, এইভাবে রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। একই সাথে, হৈসল রাজারা শিল্প, স্থাপত্য ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে তাদের রাজ্যের একটি নতুন ও স্বতন্ত্র পরিচয় প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা করেছিল। মন্দিরের স্থাপত্যের একটি নতুন রূপের বিকাশ ঘটেছিল, যা উদ্ভাবনী মন্দির পরিকল্পনার সাথে উচ্চতর খোদাই ও উচ্চতর অলঙ্করণকে একত্রিত করে। এই স্থাপত্য শৈলী দেশের বিভিন্ন অংশে প্রচলিত স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যগুলিকে উদ্ভাবনী উপায়ে মূল উপাদানগুলির সাথে সংশ্লেষিত ও একত্রিত করেছিল।[২]

হৈসল রাজাদের মধ্যে একজন ছিলেন বিষ্ণুবর্ধন, যিনি ১১১০ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি ১১১৭ খ্রিস্টাব্দে বিষ্ণুকে উত্সর্গীকৃত চেন্নাকেশব মন্দিরটি উদ্বোধন করেন, এই মন্দিরকে তার উত্তরাধিকারের "পাঁচটি ভিত্তি" হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[৩][৪] বেলুরুর প্রধান চেন্নাকেশব মন্দিরটি ১১১৭ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ হয়েছিল, যদিও কমপ্লেক্সটি ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রসারিত হতে থাকে। বিষ্ণুবর্ধন ১৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা না যাওয়া পর্যন্ত নির্মাণ কাজ অব্যাহত ছিল। রাজা বিষ্ণুবর্ধনের কর্মরত কেতামাল্লা ১১৫০ খ্রিস্টাব্দে হৈসলেশ্বর মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এটি আরও উল্লেখ করেছে যে রাজা ১১২১ খ্রিস্টাব্দে শিব মন্দিরের নির্মাণ, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জমি প্রদান করেছিলেন। এটি হিন্দু দেবতা শিবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হৈসল রাজাদের দ্বারা নির্মিত বৃহত্তম মন্দির। সোমানাথপুরার কেশব মন্দির ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ করেছিলেন, এর নির্মাণ করেন রাজা সোমনাথ। তিনি জমির চারপাশে একটি দুর্গ প্রাচীরও নির্মাণ করেছিলেন, কিন্তু সেগুলো এখন ধ্বংসস্তূপ। হৈসলার রাজারা অনেক বিখ্যাত স্থপতি ও কারিগর নিয়োগ করেছিল, যারা একটি নতুন স্থাপত্য ঐতিহ্য গড়ে তুলেছিল, যাকে শিল্প ইতিহাসবিদ অ্যাডাম হার্ডি কর্ণাট দ্রাবিড় ঐতিহ্য বলে অভিহিত করেছেন।

মন্দিরগুলি ১৪তম শতকের গোড়ার দিকে আলাউদ্দিন খিলজির দিল্লি সালতানাত বাহিনী[৫] এবং ১৩২৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলকের আরেকটি দিল্লি সালতানাত সেনাবাহিনী দ্বারা লুণ্ঠন ও ধ্বংসের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছিল।[৬]

১৫তম শতাব্দীর শিলালিপি অনুসারে, কেশব মন্দিরটিও খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এটি ১৬তম শতাব্দীতে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সম্রাটদের আর্থিক সহায়তা ও অনুদানে মেরামত করা হয়েছিল। বারান্দা ও উত্তর টাওয়ার এবং মূল মন্দিরের প্ল্যাটফর্মের কিছু অংশে পাথরের বিভিন্ন রঙ এবং কাজের গুণমান দ্বারা মেরামতের প্রমাণ পাওয়া যায়। মেরামত করা মন্দিরটি ১৯তম শতকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তারপর ২০তম শতকের গোড়ার দিকে ঔপনিবেশিক যুগের মহীশূর সরকার পুনরায় মেরামত করেছিল।[৭]

মন্দির[সম্পাদনা]

মন্দির, ধর্মীয় অনুষঙ্গ ও অভিষেকের বছর
ক্রম আধুনিক মন্দিরের নাম ধর্ম দেবতা সম্পন্ন করা হয়েছে চিত্র
চেন্নাকেশব মন্দির হিন্দুধর্ম বিষ্ণু ১১১৭
হৈসলেশ্বর মন্দির হিন্দুধর্ম শিব ১১৬০
কেশব মন্দির হিন্দুধর্ম বিষ্ণু ১২৫৮

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Three Hoysala temples of Karnataka inscribed as UNESCO World Heritage sites"www.thehindu.com (ইংরেজি ভাষায়)। মহীশূর: দ্য হিন্দু। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ 
  2. Nomination Dossier – Sacred Ensembles of the Hoysalas। Department of Archaeology, Museums and Heritage। পৃষ্ঠা 41–136। 
  3. Foekema (1996), p. 47
  4. Kamath (2001), p. 124
  5. Roshen Dalal (২০০২)। The Puffin History of India for Children, 3000 BC - AD 1947। Penguin Books। পৃষ্ঠা 195। আইএসবিএন 978-0-14-333544-3 
  6. B. L. Rice (২০০১)। Gazetteer of Mysore। Asian Educational Services। পৃষ্ঠা 353–354। আইএসবিএন 978-81-206-0977-8 
  7. M.H. Krishna 1965, পৃ. 18-19।

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]