বিষয়বস্তুতে চলুন

শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা

স্থানাঙ্ক: ২৪°২২′০৮″ উত্তর ৮৮°৩৮′২৬″ পূর্ব / ২৪.৩৬৮৮১২° উত্তর ৮৮.৬৪০৪২৪° পূর্ব / 24.368812; 88.640424
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা
শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা’র প্রধান প্রবেশ পথ
মানচিত্র
স্থাপিত১৯৭৬
অবস্থানরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২৪°২২′০৮″ উত্তর ৮৮°৩৮′২৬″ পূর্ব / ২৪.৩৬৮৮১২° উত্তর ৮৮.৬৪০৪২৪° পূর্ব / 24.368812; 88.640424
ধরনমুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগ্রহশালা
সংগ্রহ
  • আলোকচিত্র
  • প্রতিকৃতি
  • কোলাজ
  • ভাস্কর্য
  • পাণ্ডুলিপি
সভাপতিঅধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন
স্থপতিমাহবুবুল হক
মালিকরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগ্রহশালা। স্বাধীনতা যুদ্ধে শিক্ষক, ছাত্র, কর্মচারীদের স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্তরে গড়ে উঠেছে দেশের সর্বপ্রথম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক জাদুঘরটি। স্বাধীনতা যুদ্ধের ও ইতিহাসের বিভিন্ন উপকরণ সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সালে এই সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার কমপ্লেক্স এলাকায়।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

১৯৭৬ সালে জাদুঘরটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় ১৯৭৬ সালের ২ জানুয়ারি এটি স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ফেব্রুয়ারি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় এই স্মৃতি সংগ্রহশালাটি। একই বছরের ৬ মার্চ তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা আবুল ফজল সংগ্রহশালাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। শহীদ শিক্ষকগণের সহধর্মিণী বেগম ওয়াহিদা রাহমান, বেগম মাস্তুরা খানম ও শ্রীমতী চম্পা সমাদ্দার ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এর স্থায়ী প্রদর্শনী গ্যালারী উদ্বোধন করেন।[] এটির স্থপতি মাহবুবুল হক।[]

অবকাঠামো

[সম্পাদনা]

শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালাটির মোট ৩ টি গ্যালারী আছে। পাশাপাশি অবস্থিত সংগ্রহশালার তিনটি গ্যালারীর মোট আয়তন ৬ হাজার ৬শ বর্গফুট।[] প্রতিটিই গ্যালারী ই এখানে আলাদা আলাদাভাবে মুক্তিযুদ্ধোর নানা স্মৃতি দিয়ে সাজানো। মূল গ্যালারী ছাড়াও এটির কোল ঘেসে একটি পূর্বনির্মিত উন্মুক্ত মঞ্চ আছে।[]

সংগ্রহ

[সম্পাদনা]
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ব্যবহৃত গাড়ী

প্রথম গ্যালারী

[সম্পাদনা]

শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার প্রথম গ্যালারীতে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ ড. মো. সামসুজ্জোহার বিভিন্ন ছবি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন পোশাক ছাড়াও এখানে রয়েছে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের আলোকচিত্র, নিহত শহীদ আসাদের কিছু দুর্লভ ছবি, বিভিন্ন শিল্পীর আঁকা মুক্তিযুদ্ধের ছবি, ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নির্মিত রাজশাহীর প্রথম শহীদ মিনারের ছবি এবং রাজশাহীতে উত্তোলিত প্রথম জাতীয় পতাকাটি।[] প্রথম গ্যালারিতে আলোকচিত্র ৫৯টি, প্রতিকৃতি ৬টি, কোলাজ ২টি, শিল্পকর্ম ৮টি, পোশাক ও অন্যান্য বস্তু ৭টি, ভাস্কর্য ১টি, ডায়েরি ও অন্যান্য পাণ্ডুলিপি ৪টি এবং বাঁধাইকৃত আলোকচিত্র রয়েছে ২টি।

দ্বিতীয় গ্যালারী

[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় গ্যালারীতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও পোশাক। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রতীকী ভাস্কর্যও এই সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে। রয়েছে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর ছবি। রাজশাহীর শহীদ সিদ্ধার্থ সেন, ডা. মিহির কুমার সেন, ডা. হুমায়ুন কবির, অ্যাডভোকেট নাজমুল হক সরকার সহ আরও অনেকের ছবি রয়েছে এখানে। একাত্তরের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের কিছু দুর্লভ ছবি স্থান পেয়েছে এই গ্যালারিতে।[] দ্বিতীয় গ্যালারিতে আলোকচিত্র ১০৮টি, প্রতিকৃতি ৩৫টি, শিল্পীকর্ম ৯টি, বাঁধাইকৃত আলোকচিত্র ১৯টি, ভাস্কর্য ৩টি, পোশাক ও অন্যান্য বস্তু ৯৯টি ও ডায়েরি ৫টি।

তৃতীয় গ্যালারী

[সম্পাদনা]

তৃতীয় গ্যালারীতে রয়েছে একাত্তরের গণহত্যায় নিহত অসংখ্য শহীদের মাথার খুলি আর হাড়। যার বেশির ভাগই উদ্ধার করা হয়েছে জোহা হলের পাশে অবস্থিত গণকবর থেকে। অপরদিকে গ্যালারির একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন ঐতিহাসিক আলোকচিত্র। রয়েছে একাত্তরে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের বিভিন্ন আলোকচিত্র ও বিজয়ী মুক্তিসেনাদের ছবি।[] তৃতীয় গ্যালারিতে আলোকচিত্র ১১২টি, প্রতিকৃতি ১টি, শিল্পীকর্ম ১১টি, বাঁধাইকৃত আলোকচিত্র ১টি, ভাস্কর্য-৬টি, ডায়েরি ও পাণ্ডুলিপি ৪০টি, পোশাক ও অন্যান্য বস্তু রয়েছে ৫৬টি।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা পাঠাগার

[সম্পাদনা]

এ সংগ্রহশালার একটি প্রধান অংশ হচ্ছে গবেষকদের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা পাঠাগার। এখানে আছে ১৯৪৭-১৯৭১ এর ওপর প্রায় ৩০০০ কপি বই, গ্রন্থমালা, পুস্তিকা, ইশতেহার ও সংকলন। বইয়ের পাশাপাশি এখানে উল্লিখিত সময়ের উপর বিভিন্ন পত্রিকা বাঁধাইকৃত আছে। এই সংগ্রহে আরও রয়েছে ভাষা আন্দোলন গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সংশ্লিষ্ট বিষয়ভিত্তিক পত্রিকার কাটিং ফাইল। ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিদর্শন পরম যত্নে সংরক্ষণ করছে এই সংগ্রহশালা।

উন্মুক্ত মঞ্চ

[সম্পাদনা]
শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা এর নামফলক সহ উন্মুক্ত মঞ্চ
শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালার নামফলক

সংগ্রহশালার পূর্বদেয়াল ঘেঁসে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ আছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়।[]

পরিচালনা

[সম্পাদনা]

এই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মিউজিয়ামটি পরিচালনার জন্য ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদাধিকার বলে কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সংগ্রহশালাটি প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত খোলা থাকে।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. চৌধুরী, তমা (ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩)। "শহীদদের স্মৃতি নিয়ে সংগ্রহশালা"প্রথম আলো। ঢাকা, বাংলাদেশ: মতিউর রহমান। 
  2. "শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা"। পরিকল্পনা বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১২ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৬ 
  3. "চার মূলনীতির ওপর দাঁড়িয়ে রাবির শহীদ মিনার"জাগো নিউজ। ২০২১-০২-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১২ 
  4. আলম, নুর (১৪ ডিসেম্বর ২০১৪)। "প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক জাদুঘর রাবি'র শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা"বিডি২৪লাইভ। ঢাকা বাংলাদেশ: বিডি২৪লাইভ মিডিয়া (প্রাঃ) লিঃ। ২৫ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১৬