নাচিয়ার তিরুমলি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নাচিয়ার তিরুমলি
অণ্ডালের মূর্তি, তিরুমালা।
তথ্য
ধর্মহিন্দুধর্ম
রচয়িতাঅন্ডাল রঙ্গনায়কী
ভাষাতামিল
যুগখ্রিষ্টীয় ৯ম-১০ম শতক
শ্লোক১৪৩

নাচিয়ার তিরুমলি ( তামিল: நாச்சியார் திருமொழி  ; অনু. নারী/দেবীর পবিত্র স্তব[১] )[২] হলো শ্রী বৈষ্ণব ঐতিহ্যের দ্বাদশ আলবরের মাঝে একজন অন্ডাল কর্তৃক রচিত ১৪৩টি শ্লোকের একটি স্তোত্রসংকলন। তার রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, কানন (কৃষ্ণ) প্রাপ্তির জন্য তার ব্যাকুলতা ও আগ্রহের বশে অন্ডাল বিভিন্ন বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন যার দ্বারা তিনি কৃষ্ণের সাথে মিলিত হতে পারেন। তিরুমলিসমূহের মধ্যে বরনম আইরাম খুব সুপরিচিত এবং এর একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এতে তার জন্মের উদ্দেশ্য ( কান্নাপিরানকে বিয়ে করা) বাস্তবায়নের পথে তার সখীদের সাথে তার স্বপ্নের বর্ণনার সংলাপ দেওয়া আছে।

এই ১৪৩টি শ্লোক নালায়রা দিব্য প্রবন্ধমের ৪,০০০টি ঐশ্বরিক স্তোত্রের অংশ। শ্লোকগুলিকে চৌদ্দ দশকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে, যথা বালির দুর্গ ধ্বংস না করার জন্য কামের কাছে প্রার্থনা, বস্তপ্রহরণ, কৃষ্ণের সাথে মিলন, দেবতাকে ডাকার জন্য একটি কোকিলকে অনুরোধ, অন্ডালের বিবাহ, বিষ্ণুর শঙ্খের প্রশংসা, মেঘসন্দেশ, বিচ্ছেদের যন্ত্রণা। কৃষ্ণকে পাওয়ার জন্য তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা ও রঙ্গনাথের প্রশংসা।

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

তামিল কাব্যিক শৈলীতে তিরুমলির আক্ষরিক অর্থ "পবিত্র শ্লোক বা স্তব" এবং নাচিয়ার অর্থ "নারি" বা দেবী। অতএব শিরোনামের অর্থ হয় "নারী বা দেবীর পবিত্র শ্লোক"। এই কাব্যটি অন্ডালের ঐশ্বরিক প্রেমিক বিষ্ণুর প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছে। শাস্ত্রীয় তামিল কাব্যিক প্রথা ও বেদ , পুরাণের আন্তঃসম্পর্কিত গল্পগুলি ব্যবহার করে আন্ডাল শ্লোকগুলি এমনভাবে চিত্রায়িত করেছেন যা সম্ভবত ভারতীয় ধর্মসাহিত্যের সমগ্র স্বরগ্রামে অতুলনীয়।[৩][৪]

শ্লোকগঠন প্রণালী[সম্পাদনা]

নাচিযার তিরুমলি ১৪৩টি পশুরমের (শ্লোক) ১৪ ভাগে গঠিত। প্রতিটি ভাগকে তিরুমলি বলা হয়। প্রতিটি তিরুমলি একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর প্রতি আলোকপাত করে।[৫] প্রথম দশকে আছে, কৃষ্ণকে তার পতিরূপে অনুসন্ধানের লক্ষ্যে কামের কাছে প্রার্থনার শ্লোকের সংকলন। অন্ডাল বলেন, কৃষ্ণ ব্যতীত অন্য কাউকে বিবাহ করলে তিনি তার জীবন ত্যাগ করবেন। দ্বিতীয় দশকটি হলো, নদীর উপর নির্মিত বালির দুর্গ সংরক্ষণের জন্য অন্ডালের প্রার্থনার একটি সংকলন। তৃতীয় দশকের বিষয়বস্তু প্রায় বস্ত্রপ্রহণের অনুরূপ কৃষ্ণের জীবনের লীলাময় অধ্যায়ের ন্যায়, যখন তিনি গোপিকাদের বস্ত্র হরণ করে নিয়েছিলেন এবং তারা কৃষ্ণের কাছে তাদের বস্ত্র পুনরায় প্রদানের অনুরোধ করেছিলেন। চতুর্থ দশকের কাব্যে তিনি কৃষ্ণের সাথে তার মিলনেচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কুইল পাট্টু বা কোকিলের গান পঞ্চম দশকের বিষয়বস্তু যেখানে অন্ডাল কোকিলকে কৃষ্ণের প্রশংসামূলক গীত গাওয়ার অনুরোধ করেন। বিশেষজ্ঞরা পঞ্চরাত্র আগমকে( বৈষ্ণব মন্দিরগুলিতে প্রচলিত উপাসনার একটি পদ্ধতি) শ্লোকগুলির উৎস বলে অনুমান করেছেন। ষষ্ঠ দশকে, তিনি আধ্যাত্মিক গতিশীলতার নীতি স্থাপনকারী আরাধ্যকে বিবাহ করার স্বপ্নের ইঙ্গিত দিয়েছেন। "ভিন্নিলা মেলাপ্পু" নামক অষ্টম তিরুমলিতে কবি তার দুর্দশার কথা মেঘের কাছে বলেছিলেন এবং তিরুমালায় স্থিত গোবিন্দের কাছে তার বার্তাবাহক হিসাবে তাদের প্রেরণ করার বর্ণনা প্রদান করেন। অবশিষ্ট তিরুমলি পেরুমলের সাথে তার মিলনকে গতিশীল করার জন্য অন্ডালের বিভিন্ন প্রচেষ্টার বর্ণনায় পরিপূর্ণ। এই ধারাবাহিকতায়, তিনি অধৈর্যভাবে অপেক্ষা করেন, এবং অবশেষে পট্টি মেইন্দর করেরুর তিরুমলিতে তিনি বিষ্ণুর সাথে পুনরায় মিলিত হন।[৬]

সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ[সম্পাদনা]

অন্ডালের কিছু শ্লোক বিষ্ণুর প্রতি প্রেমকে প্রকাশ করে যা আদিরসাত্বক কাম-প্রেম ভাব ও চমকপ্রদ আকাঙ্ক্ষা, ক্ষুধা ও অনুসন্ধানকে উপলক্ষ করে রচিত।

আজও তার অনেক প্রেমমূলক কবিতা খুব অল্পই প্রকাশ্যে উপস্থাপন করা হয়।[৭]

এপ্রকার কোনও শ্লোকে আন্ডাল রূপক দিয়ে কল্পনা করেন যে, তিনি স্বয়ং কৃষ্ণের বুকে শুয়ে তাঁর প্রতি প্রেম প্রকাশ করছেন। (পৃ. ১৪০)  [৮]

আর এক কাব্যে অন্ডাল দেবতাকে মালা দ্বারা সম্মানিত করে তার প্রশংসা করছেন।[৯][১০][১১][১২][১৩]

আর একটি কাব্যে, অন্ডাল বলেছেন তার স্ফীত স্তন শুধুমাত্র প্রভুর জন্যই পূর্ণ হয়ে উঠবে, নশ্বর প্রাণীদের প্রতি প্রেম করার ধারণাকে তিনি তিরস্কার করে ব্রাহ্মণদের হোম কার্যে জঙ্গলের উচ্ছৃঙ্খল শৃগালদলের বিশৃঙ্খলতার সাথে তুলনা করেন।[১৪] অপর একটি শ্লোকে, তিনি তার স্ফীত স্তন শঙ্খধারী কৃষ্ণকে উৎসর্গ করেন। [১৫]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে[সম্পাদনা]

নালায়রা দিব্য প্রবন্ধমের স্তোত্রগুলি প্রতিদিন দক্ষিণ ভারতের সমস্ত বিষ্ণু মন্দিরে তথা বিভিন্ন উৎসবের সময়ও গাওয়া হয়।[১৬][১৭] দক্ষিণ ভারতের শ্রী বৈষ্ণব ঐতিহ্যে অন্ডালকে দেবীরূপে পূজা করা হয় এবং বেশ কয়েকটি বিষ্ণু মন্দিরে তিনি স্থাপিত আছেন। তিরুপ্পবাইনাচিয়ার তিরুমলির শ্লোকগুলি সাধারণত মারগাই মাসে (ডিসেম্বর - জানুয়ারি) সমস্ত গৃহে ও মন্দিরে গাওয়া হয়।[১৮]

কমল হাসানের চলচ্চিত্র হে রামে ইলাইয়ারাজার সংগীতের স্বরগ্রামে বরনম্ আয়রামের একটি অংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল যেখানে শ্রীবিলিপুথুর অন্ডাল চলচ্চিত্রের গীতিকারদের একজন হিসাবে স্বীকৃত হয়েছিলেন।[১৯][২০]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Madras, University of (১৯২৪–১৯৩৬)। "Tamil lexicon"dsal.uchicago.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১০ 
  2. "Andal-Nacciyar Tirumoli – Poetry Makes Worlds" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-০১ 
  3. Rao, Shivshankar (৩১ মার্চ ২০১৩)। "Saints - Andal"Sushmajee: Dictionary Of Hindu Religion। US Brahman Group। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১৫ 
  4. Andal (১৪ অক্টোবর ২০০০)। Andal: Tiruppavai/Nachiyar Tirumozhi। Penguin Books Australia। আইএসবিএন 0140245723 
  5. Sadagopan (২০০৮)। Nachiyar Thirumozhi (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৮ 
  6. Vankeepuram|2005, pp. 9-12
  7. Rajarajan, R K K (২০১৫)। "Art and Literature: Inseparable Links": 53–61। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০১৭ 
  8. Dehejia, Vidya (২০০৮)। The Body Adorned: Sacred and Profane in Indian Art। Columbia University Press। পৃষ্ঠা 141আইএসবিএন 9780231512664। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ 
  9. Kandasamy, Meena (২০১০)। Ms Militancy। Narayana। আইএসবিএন 9788189059347 
  10. Mulchandani, Sandhya (২০১৪)। "Divine Love"। ১৭ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১৫ 
  11. Bilwakesh, Champa (১৬ মার্চ ২০১১)। "Ms Militancy, by Meena Kandasamy"। ১৮ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০১৫ 
  12. Chabria, Priya Sarukkai (২০১৬)। Andal: The Autobiography of a Goddess। Zubaan Books। আইএসবিএন 9789384757670 
  13. Venkatesh, Arundhati (১৭ মে ২০১৬)। "Andal: The Tamil Female Saint Brought To You In A Very Satisfying Translation [Book Review]"Women's Web। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ 
  14. Ghai, Anuj। "Reflections on Andal"Academia.edu। সংগ্রহের তারিখ ২২ জুলাই ২০১৫ 
  15. Rajarajan, R.K.K. (জানুয়ারি ২০১৬)। "Art and Literature: Inseparable Links" (ইংরেজি ভাষায়)। 
  16. Dalal 2011, pp. 20-21
  17. Ramaswamy, Vijaya (২০০৭)। Historical Dictionary of the Tamils। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 211। আইএসবিএন 9780810864450 
  18. "Emotional Ecstasy and Those Mystic Muses"। New Delhi: Mint। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। ১৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৮HighBeam Research-এর মাধ্যমে। 
  19. Rangan, Baradwaj (২৮ আগস্ট ২০১৫)। "He taught me to sing with abandon"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  20. "Hey! Ram (2000)"Turner Classic Movies। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ 

উৎস[সম্পাদনা]